লবণ সেতু (Salt bridge) কাকে বলে? এর কাজ লেখো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “লবণ সেতু (Salt bridge) কাকে বলে? এর কাজ লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

লবণ সেতু (Salt bridge) কাকে বলে? এর কাজ লেখো।

লবণ সেতু (Salt bridge) কাকে বলে? এর কাজ লেখো।

ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের গতিবেগ সমান এরূপ কোনো তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের (যেমন – KCl, KNO₃, NH₄NO₃ ইত্যাদি) জলীয় দ্রবণ নিয়ে তাতে সামান্য জিলেটিন অথবা অ্যাগার-অ্যাগার (Agar-Agar) মিশ্রিত করা হয়। এরপর এই মিশ্রণকে উত্তপ্ত করে অর্ধকঠিন করার পর মিশ্রণটিকে একটি U-আকৃতির নলে ভরা হয়। U নলের মুখ দুটি সাধারণভাবে সচ্ছিদ্র বস্তু (যেমন – তুলো, গ্লাসউল ইত্যাদি) দ্বারা বন্ধ করে রাখা হয়। একেই লবণ সেতু বলে। ড্যানিয়েল কোশ একটি তড়িৎ রাসায়নিক কোশ, এতে দুটি অর্ধকোশ লবণ সেতুর দ্বারা সংযুক্ত করা থাকে।

লবণ সেতুর কাজ –

  • এটি দুটি অর্ধকোশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে একটি সম্পূর্ণ কোশ গঠন করে।
  • দুটি অর্ধকোশের দ্রবণের মধ্যে তড়িৎ-নিরপেক্ষতা বজায় রাখে।
  • কোনো তড়িৎদ্বারে অতিরিক্ত তড়িদাধান জমতে বাধা দেয় এবং তড়িৎপ্রবাহ অক্ষুণ্ণ রাখতে সাহায্য করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

লবণ সেতু কী দিয়ে তৈরি করা হয়?

লবণ সেতু তৈরি করতে সাধারণত KCl, KNO₃, বা NH₄NO₃ -এর মতো তড়িৎবিশ্লেষ্যের জলীয় দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। এই দ্রবণে জিলেটিন বা অ্যাগার-অ্যাগার মিশিয়ে উত্তপ্ত করে অর্ধকঠিন অবস্থায় আনা হয় এবং একটি U-আকৃতির নলে ভরা হয়। নলের উভয় প্রান্ত তুলা বা গ্লাস উল দিয়ে বন্ধ করা হয়।

লবণ সেতু ছাড়া কি গ্যালভানিক কোশ কাজ করবে?

হ্যাঁ, শুরুতে কাজ করতে পারে, কিন্তু খুব অল্প সময়ের জন্য। লবণ সেতু না থাকলে কোশের দুটি অর্ধকোশে দ্রুত আধান ভারসাম্যহীনতা (Charge Imbalance) তৈরি হবে। এতে করে তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে এবং কোশটির কার্যকারিতা হারিয়ে যাবে।

লবণ সেতুতে অ্যাগার-অ্যাগার বা জিলেটিন ব্যবহারের উদ্দেশ্য কী?

অ্যাগার-অ্যাগার বা জিলেটিন ব্যবহার করা হয় দ্রবণটিকে জেলির মতো অর্ধকঠিন অবস্থায় নিয়ে আসার জন্য। এটি লবণ সেতুর দ্রবণটিকে সরাসরি দুটি অর্ধকোশের দ্রবণের সাথে মিশতে বাধা দেয়, কিন্তু আয়নগুলোর (ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন) স্বাধীনভাবে চলাচলের পথ অবারিত রাখে।

লবণ সেতুতে KCl বা KNO₃ -এর মতো লবণ ব্যবহার করা হয় কেন?

এই লবণগুলো ব্যবহারের প্রধান কারণ হল এদের ক্যাটায়ন (K⁺) এবং অ্যানায়ন (Cl⁻ বা NO₃⁻) -এর আকার ও আধান প্রায় সমান, ফলে এদের গতিবেগও প্রায় সমান। গতিবেগ সমান হওয়ায় তারা সমান তড়িতে কোশের দুটি অর্ধকোশে প্রবেশ করতে পারে, যা সর্বোত্তমভাবে তড়িৎ-নিরপেক্ষতা বজায় রাখে।

লবণ সেতুকে ‘সেতু’ বলা হয় কেন?

এটি দুটি পৃথক অর্ধকোশ বা তড়িৎদ্বারকে একটি পরিবহন মাধ্যম দ্বারা সংযুক্ত করে, ঠিক যেমন একটি সেতু দুটি পারের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। এটি আয়নিক সংযোগের একটি সাঁকো হিসেবে কাজ করে, যা সম্পূর্ণ তড়িৎ রাসায়নিক কোশ গঠনে সহায়তা করে।

লবণ সেতু ছাড়া অন্য কীভাবে দুটি অর্ধকোশ সংযুক্ত করা যায়?

লবণ সেতু ছাড়াও একটি পরটাস ডিস্ক (Porous Disk) বা সচ্ছিদ্র পাত ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি একটি ভিন্ন ধরনের আয়নিক সংযোগ, যেখানে একটি ছিদ্রযুক্ত প্রাচীর আয়ন চলাচলের অনুমতি দেয় কিন্তু দ্রবণ দুটিকে দ্রুত মিশতে বাধা দেয়।

লবণ সেতু কীভাবে তড়িৎ-নিরপেক্ষতা বজায় রাখে?

যখন গ্যালভানিক কোষ থেকে তড়িৎপ্রবাহ হয়, তখন অ্যানোড অর্ধকোষে ধনাত্মক আয়নের (ক্যাটায়ন) পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ক্যাথোড অর্ধকোষে ঋণাত্মক আয়নের (অ্যানায়ন) পরিমাণ বেড়ে যায়। লবণ সেতু নিজের আয়ন সরবরাহ করে এই ভারসাম্যহীনতা দূর করে; এর ঋণাত্মক আয়নগুলো অ্যানোড অর্ধকোষে এবং ধনাত্মক আয়নগুলো ক্যাথোড অর্ধকোষে প্রবেশ করে মোট আধানকে শূন্য রাখে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “লবণ সেতু (Salt bridge) কাকে বলে? এর কাজ লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

অ্যামোনিয়া গ্যাস কীভাবে শনাক্ত করবে?

অ্যামোনিয়া গ্যাস কীভাবে শনাক্ত করবে?

ইউরিয়ার শিল্প উৎপাদন উল্লেখ করো।

ইউরিয়ার শিল্প উৎপাদন উল্লেখ করো।

450°C উষ্ণতায় 200 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে দুটি বর্ণহীন গ্যাসের বিক্রিয়ায় একটি ঝাঁজালো গন্ধবিশিষ্ট গ্যাস উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন গ্যাসটি লঘু HCl -এ সিক্ত কাচদণ্ডের সংস্পর্শে সাদা ধোঁয়ার সৃষ্টি করে। গ্যাস তিনটিকে শনাক্ত করো।

450°C ও 200 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে দুই বর্ণহীন গ্যাসের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন ঝাঁজালো গন্ধবিশিষ্ট গ্যাসটি কোনটি? (HCl-এ সিক্ত কাচদণ্ডে সাদা ধোঁয়া তৈরি হয়)

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

অ্যামোনিয়া গ্যাস কীভাবে শনাক্ত করবে?

ইউরিয়ার শিল্প উৎপাদন উল্লেখ করো।

450°C ও 200 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে দুই বর্ণহীন গ্যাসের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন ঝাঁজালো গন্ধবিশিষ্ট গ্যাসটি কোনটি? (HCl-এ সিক্ত কাচদণ্ডে সাদা ধোঁয়া তৈরি হয়)

অ্যামোনিয়া জলে অত্যন্ত দ্রাব্য এবং এর জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী—একটি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করো।

অ্যামোনিয়ার প্রধান ভৌত ধর্মগুলি লেখো। অ্যামোনিয়ার ব্যবহার উল্লেখ করো।