মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – চলতড়িৎ – তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ “তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ” নিয়ে আলোচনা করব। এই অংশটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ” অংশটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের ষষ্ঠ অধ্যায় “চলতড়িৎ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই “তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ” থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান - চলতড়িৎ - তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ

তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ বলতে কী বোঝো? আবিষ্ট প্রবাহ কী?

তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ – চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে একটি বদ্ধ পরিবাহীকে গতিশীল করা হলে পরিবাহীটির মধ্য দিয়ে একটি তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। সাধারণভাবে এই ঘটনাকেই তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ বলে।

তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের ফলে সৃষ্ট তড়িৎপ্রবাহকে আবিষ্ট প্রবাহ বলে।

তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ সংক্রান্ত ফ্যারাডের সূত্রগুলি লেখো।

ফ্যারাডের প্রথম সূত্র – কোনো কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত চৌম্বক প্রবাহের পরিবর্তন ঘটলে কুণ্ডলীতে একটি তড়িৎচালক বল আবিষ্ট হয় এবং যতক্ষণ চৌম্বক প্রবাহের পরিবর্তন ঘটে, ততক্ষণই আবিষ্ট তড়িৎচালক বল স্থায়ী হয়।

দ্বিতীয় সূত্র – কোনো কুণ্ডলীতে আবিষ্ট তড়িৎচালক বলের মান কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত চৌম্বক প্রবাহের পরিবর্তনের হারের সমানুপাতিক।

তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ সংক্রান্ত লেঞ্জের সূত্রটি বিবৃত করো।

লেঞ্জের সূত্র – তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের ক্ষেত্রে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ এমন হয় যে, যে কারণে আবিষ্ট তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয়, আবিষ্ট প্রবাহমাত্রা সর্বদা সেই কারণকে বাধা দেয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ কী?

চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে একটি বদ্ধ পরিবাহীকে নড়াচড়া করালে বা পরিবাহীর চারপাশের চৌম্বকক্ষেত্রের পরিবর্তন ঘটালে সেই পরিবাহীর মধ্য দিয়ে যে তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয়, সেই ঘটনাকেই তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ বলে।

আবিষ্ট প্রবাহ কী?

তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের ফলে কোনো বদ্ধ বর্তনী বা কুণ্ডলীতে যে তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয়, তাকেই আবিষ্ট প্রবাহ বলে।

চৌম্বক প্রবাহ (Magnetic Flux) কী? এটি আবেশের সাথে কীভাবে সম্পর্কিত?

কোনো ক্ষেত্রফলের সাথে লম্বভাবে অতিক্রমকারী মোট চৌম্বক ক্ষেত্ররাশিকেই চৌম্বক প্রবাহ বলে। এটি Φ (ফাই) চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং এর একক হলো ওয়েবার (Weber)।
সম্পর্ক – ফ্যারাডের সূত্র অনুযায়ী, আবিষ্ট তড়িৎচালক বল (emf) আসলে চৌম্বক প্রবাহের পরিবর্তনের হার (dΦ/dt) -এর ওপর নির্ভর করে, সরাসরি চৌম্বকক্ষেত্রের ওপর নয়। অর্থাৎ চৌম্বক প্রবাহের পরিবর্তনই তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের মূল কারণ।

চৌম্বক প্রবাহের পরিবর্তন কীভাবে ঘটে?

প্রধানত তিনটি উপায়ে চৌম্বক প্রবাহের পরিবর্তন ঘটানো যায়:
1. চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন – একটি স্থির কুণ্ডলীর মধ্যে পরিবর্তনশীল চৌম্বকক্ষেত্র স্থাপন করলে।
2. ক্ষেত্রফলের পরিবর্তন – একটি স্থির চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে কুণ্ডলীর ক্ষেত্রফল পরিবর্তন করলে (যেমন কুণ্ডলীকে প্রসারিত বা সংকুচিত করা)।
3. আপেক্ষিক গতি – একটি স্থির চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে কুণ্ডলীকে ঘোরানো বা সরালে (ফলে কুণ্ডলী দ্বারা অতিক্রান্ত কার্যকর ক্ষেত্রফল পরিবর্তিত হয়)।

আবিষ্ট তড়িৎচালক বল (Induced EMF) এবং আবিষ্ট প্রবাহ (Induced Current) -এর মধ্যে পার্থক্য কী?

আবিষ্ট তড়িৎচালক বল (Induced EMF) এবং আবিষ্ট প্রবাহ (Induced Current) -এর মধ্যে পার্থক্য হল –
1. আবিষ্ট তড়িৎচালক বল (emf) – এটি হলো সেই শক্তি যা একটি বর্তনীতে তড়িৎপ্রবাহ সৃষ্টির জন্য দায়ী। চৌম্বক প্রবাহের পরিবর্তন ঘটলেই এটি উৎপন্ন হয়, এমনকি বর্তনী খোলা থাকলেও।
2. আবিষ্ট প্রবাহ – এটি কেবল তখনই সৃষ্টি হয় যখন বর্তনীটি বদ্ধ থাকে এবং আবিষ্ট তড়িৎচালক বল ওই বদ্ধ বর্তনীতে ইলেকট্রন প্রবাহিত করতে পারে।

লেঞ্জের সূত্র কি শক্তির সংরক্ষণ নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ?

হ্যাঁ, সম্পূর্ণভাবে। লেঞ্জের সূত্র শক্তির সংরক্ষণ নীতির সরাসরি ফলাফল। আবিষ্ট প্রবাহ সর্বদা সেই পরিবর্তনকে বাধা দেয় যা তাকে সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ চৌম্বকক্ষেত্র পরিবর্তন করতে হলে বাইরে থেকে আমাদের কাজ করতে হয় (শক্তি সরবরাহ করতে হয়)। সেই কৃতকাজই আবিষ্ট প্রবাহ ও তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। যদি আবিষ্ট প্রবাহ পরিবর্তনকে সাহায্য করত, তবে তা শক্তি সৃষ্টি করত, যা শক্তির সংরক্ষণ নীতির পরিপন্থী হতো।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ “তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই অংশটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ” অংশটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের ষষ্ঠ অধ্যায় “চলতড়িৎ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই “তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ” অংশটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শনাক্ত করবে কীভাবে?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শনাক্ত করবে কীভাবে?

দেখাও যে H₂S গ্যাস অম্লধর্মী। অথবা, দেখাও যে H₂S দ্বি ক্ষারীয় অ্যাসিড?

দেখাও যে H₂S গ্যাস অম্লধর্মী। অথবা, দেখাও যে H₂S দ্বি ক্ষারীয় অ্যাসিড?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শুষ্ক করতে গাঢ় H₂SO₄ বা অনার্দ্র ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করা হয় না কেন?

হাইড্রোজেন সালফাইড শুষ্ক করতে কেন গাঢ় H₂SO₄ বা অনার্দ্র CaCl₂ ব্যবহার করা হয় না?

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শনাক্ত করবে কীভাবে?

দেখাও যে H₂S গ্যাস অম্লধর্মী। অথবা, দেখাও যে H₂S দ্বি ক্ষারীয় অ্যাসিড?

হাইড্রোজেন সালফাইড শুষ্ক করতে কেন গাঢ় H₂SO₄ বা অনার্দ্র CaCl₂ ব্যবহার করা হয় না?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস প্রস্তুতিতে গাঢ় HNO₃ ব্যবহার করা হয় না কেন?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস প্রস্তুতিতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয় না কেন?