মাধ্যমিক ভূগোল – বায়ুমণ্ডল – আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

Souvick

আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল” -এর “আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মাধ্যমিক ভূগোল - বায়ুমণ্ডল - আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

সম্পৃক্ত বায়ু কাকে বলে?

নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বায়ু নির্দিষ্ট পরিমাণ জলীয়বাষ্প গ্রহণ করতে পারে। যখন কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতার বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের পরিমাণ সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছোয়, তখন তাকে সম্পৃক্ত বা পরিপৃক্ত বায়ু বলা হয়। পরিপৃক্ত বায়ুর উষ্ণতা কমে গেলে ওই বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণ ক্ষমতাও হ্রাস পায়। তখন অতিরিক্ত জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘ সৃষ্টি হয় এবং বৃষ্টিপাত বা তুষারপাত ঘটে।

শিশিরাঙ্ক কী?

যে উষ্ণতায় আর্দ্র বায়ুর জলীয়বাষ্প জলকণায় পরিণত হয়, ওই উষ্ণতাকে শিশিরাঙ্ক বলে। অর্থাৎ যে বিশেষ উষ্ণতায় বায়ু সম্পৃক্ত অবস্থায় পৌঁছায় বা বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা হয় 100% তবে সেই তাপমাত্রা হল শিশিরাঙ্ক।

এই উষ্ণতায় জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু সম্পৃক্ত হয়। বায়ুর তাপমাত্রা শিশিরাঙ্কে পৌঁছালে জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে শিশিরে পরিণত হয়।

আপেক্ষিক আর্দ্রতার গুরুত্ব কী?

বায়ুতে আপেক্ষিক আর্দ্রতার বিশেষ গুরুত্ব আছে। কারণ –

  • তুষারপাত, বৃষ্টিপাত, শিশির প্রভৃতির সম্ভাবনা বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা থেকে বোঝা যায়।
  • ভূপৃষ্ঠের তাপ বিকিরণের হারও আপেক্ষিক আর্দ্রতা থেকে জানা সম্ভব।

জলচক্র কাকে বলে?

ভূপৃষ্ঠের জলরাশি থেকে সূর্যতাপে জলীয়বাষ্প উৎপন্ন হয়ে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। বায়ুমণ্ডলে ঊর্ধ্বে উঠে জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয় ও বৃষ্টিরূপে ঝরে পড়ে। ভূপৃষ্ঠে পতিত বৃষ্টির জল ভূগর্ভে প্রবেশ করে, নদীনালা হ্রদ, সাগর ইত্যাদিতে জমা হয়। এইভাবে চক্রাকারে জলের বিভিন্ন রূপে বারিমণ্ডল, শিলামণ্ডল ও বায়ুমণ্ডলে আবর্তন করাকে জলচক্র বলে।

অধঃক্ষেপণ কাকে বলে?

জলীয়বাষ্পপূর্ণ ঊর্ধ্বগামী বায়ু ওপরে উঠে ধীরে ধীরে প্রসারিত ও শীতল হয় এবং এরপর ঘনীভবনের সাহায্যে কেলাসিত তুষার কণায় পরিণত হয়ে মেঘ সৃষ্টি করে। মেঘের মধ্যে ভেসে থাকা কেলাসিত তুষারকণা যখন আয়তনে আরও বেড়ে যায় তখন তা আর ভেসে থাকতে পারে না, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে। একেই বলা হয় অধঃক্ষেপণ।

  1. বৃষ্টিপাত,
  2. গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি,
  3. তুষারপাত,
  4. শিলাবৃষ্টি প্রভৃতি অধঃক্ষেপণের উদাহরণ।

বায়ুর আর্দ্রতা কী?

জলীয়বাষ্পপূর্ণ বাতাসকে বলে আর্দ্র বায়ু। আর্দ্র বায়ুর সর্বোচ্চ জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা সম্পূর্ণ হলে, তাকে সম্পৃক্ত বায়ু এবং অসম্পূর্ণ থাকলে, তাকে অসম্পৃক্ত বায়ু বলা হয়। বায়ুর এই আর্দ্রতা তিনভাবে প্রকাশ করা হয় –

  1. চরম আর্দ্রতা,
  2. আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং
  3. বিশেষ আর্দ্রতা।

বিশেষ আর্দ্রতা কী?

বিশেষ আর্দ্রতার মাধ্যমে জলীয়বাষ্পের ভর (গ্রাম) ও বায়ুর ভরের (কিলোগ্রাম) সম্পর্ককে প্রকাশ করা হয়। নির্দিষ্ট ভরের বায়ুতে জলীয়বাষ্পের প্রকৃত উপস্থিতির ভরকে বিশেষ আর্দ্রতা বা আর্দ্রতার গুণাঙ্ক বলে।

বিশেষ আর্দ্রতা প্রকাশ করা হয় প্রতি কিলোগ্রাম বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প থাকে তার ওজন যত গ্রাম হয়, সেই গ্রামের দ্বারা। যেমন – দিনের কোনো এক বিশেষ সময়ে 1000 গ্রাম বা 1 কিলোগ্রাম বায়ুতে বিদ্যমান জলীয়বাষ্পের ওজন 15 গ্রাম হলে, সেই সময়ের ওই বায়ুর বিশেষ আর্দ্রতা হল কিলো প্রতি 15 গ্রাম।

অপরিপৃক্ত বা অসম্পৃক্ত বায়ু কী?

বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা উষ্ণতার ওপর নির্ভরশীল। যখন কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনো স্থানের বায়ুতে তার ধারণক্ষমতার তুলনায় কম জলীয়বাষ্প থাকে, তখন তাকে অপরিপৃক্ত বা অসম্পৃক্ত বায়ু বলা হয়। পরিপৃক্ত বা সম্পৃক্ত বায়ুর উষ্ণতা হঠাৎ বেড়ে গেলে তার জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতাও বেড়ে যায়, ফলে ওই বায়ু তখন অপরিপূক্ত বা অসম্পৃক্ত হয়ে যায়।

তুষারপাত কী?

ঊর্ধ্বাকাশে জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হওয়ার সময় যদি বায়ুর উষ্ণতা হিমাঙ্কের (0°C) নীচে নেমে যায়, তাহলে জলকণাসমূহ তুষারে পরিণত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তুষার নীচে পড়ার সময় উষ্ণ বায়ুর সংস্পর্শে আসে বলে গলে যায় এবং বৃষ্টি হিসেবেই মাটিতে পড়ে। তবে উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে বা শীতপ্রধান অঞ্চলের বায়ু খুব শীতল বলে ওপরের তুষার পেঁজা তুলোর মতো ঝিরঝির করে পড়ে। একে তুষারপাত বলা হয়।

শিলাবৃষ্টি বলতে কী বোঝ?

ঊর্ধ্বাকাশে প্রবল ঊর্ধ্বমুখী বায়ুর মাধ্যমে যখন মেঘ বা বৃষ্টির জলকণাসমূহ অনেক উঁচুতে খুব শীতল স্থানে উঠে যায়, প্রচণ্ড শৈত্যে ওই জলকণাসমূহ জমাট বেঁধে ছোটো ছোটো বরফের টুকরোয় পরিণত হয়। বরফের টুকরোগুলি আয়তন বেশ বড়ো হলে বা বায়ুর বেগ কমলে ওই বরফের টুকরোগুলি আরও জলকণা সংগ্রহ করে আয়তনে বেড়ে যায় এবং বৃষ্টির সঙ্গে বিভিন্ন আয়তনের বরফের টুকরোরূপে মাটিতে পড়ে। একেই বলা হয় শিলাবৃষ্টি।

গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি কী?

অনেক সময় সমান আয়তনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা (ব্যাস 0.5 মিলিমিটারেরও কম) বিরামহীনভাবে নিম্বো-স্ট্র্যাটাস ও স্ট্র্যাটোকিউমুলাস মেঘ থেকে ভূপৃষ্ঠে পড়ে। দেখলে যেন মনে হয় জলকণাগুলি বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। একেই বলা হয় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। বর্ষাকালে মাঝে মাঝে এই ধরনের বৃষ্টি হয়।

অতিপৃক্ত বায়ু কাকে বলে?

কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতায় সম্পৃক্ত বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প থাকা প্রয়োজন, কোনো বিশেষ অবস্থায় যদি ওই বায়ুতে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ জলীয়বাষ্প থাকে, তাহলে সেই বায়ুকে অতিপৃক্ত বায়ু বলে।

বৃষ্টিপাত কয়প্রকার ও কী কী?

আকাশের মেঘ ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি অনুযায়ী একে তিনভাগে ভাগ করা যায় –

  1. পরিচলন বৃষ্টিপাত,
  2. শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত এবং
  3. ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত।

সমবর্ষণ রেখা কী?

পৃথিবীর যেসব স্থানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় একইরকম, মানচিত্রে সেইসব স্থানগুলিকে একটি কাল্পনিক রেখা দিয়ে যোগ করলে যে রেখা পাওয়া যাবে সেটিই হবে সমবর্ষণ রেখা। এই রেখার সাহায্যে পৃথিবীতে বৃষ্টিপাতের বণ্টন বোঝা যায়।

সমবর্ষণ রেখা

উষ্ণ এবং শীতল সীমান্ত কাকে বলে?

নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলে দুটি ভিন্নধর্মী বায়ুপুঞ্জ মুখোমুখি অবস্থান করলে উষ্ণ বায়ু যেখানে শীতল বায়ুর মধ্যে বেঁকে প্রবেশ করে সেই সীমান্তকে উষ্ণ সীমান্ত বলে। আর উষ্ণ বায়ুপুঞ্জের পিছনে যেখানে শীতল বায়ু এসে উষ্ণ বায়ুকে আঘাত করে সেই সীমান্তকে শীতল সীমান্ত বলে।

ধোঁয়াশা কী?

ভূ-সংলগ্ন কুয়াশা যখন বায়ুর নিম্নস্তরে ধোঁয়ার সাথে মিশে যায় তখন ধোঁয়া এবং কুয়াশা মিশে তৈরি হয় ধোঁয়াশা। মূলত শহর এবং নগরের বায়ুতে ভাসমান প্রচুর ধোঁয়া, কার্বন কণা এবং ধূলিকণা থাকে। ওইসব পদার্থের সাথে কুয়াশা মিশে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। এটি শরীরের পক্ষে খুব ক্ষতিকারক।

ধোঁয়াশা

অক্লুসান কী?

নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে ঘূর্ণবাত সৃষ্টির একটি পর্যায়ে যখন শীতল সীমান্ত, উষ্ণ সীমান্তের চেয়ে বেশি দ্রুত এগোতে থাকে, তা খুব তাড়াতাড়ি উষ্ণ সীমান্তকে ধরে ফেলে। এই সময় মধ্যবর্তী উষ্ণ বায়ু ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরে উঠে যায়। এই অবস্থাকে অক্লুসান বলে।

দক্ষিণ গোলার্ধের দুটি উষ্ণ মরুভূমির নাম বলো।

দক্ষিণ গোলার্ধের দুটি উষ্ণ মরুভূমি হল – পেরু-চিলির আটাকামা মরুভূমি ও অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম অস্ট্রেলীয় মরুভূমি।

আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও উষ্ণতার সম্পর্ক কী?

আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও উষ্ণতার সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক। অর্থাৎ যদি বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের পরিমাণ স্থির থাকে তাহলে, বায়ুর উষ্ণতা বাড়লে বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা বাড়ে। তাই আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে যায়। আবার বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের পরিমাণ স্থির থেকে বায়ুর উষ্ণতা কমে গেলে বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা কমে। ফলে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা বাড়ে। যেমন – ভোরবেলায় যখন বায়ুর উষ্ণতা সবথেকে কম হয় তখন আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ সর্বোচ্চ হয়। অন্যদিকে, দিনের মধ্যভাগে ও বিকালবেলা যখন উষ্ণতা সর্বোচ্চ হয় তখন আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ সর্বনিম্ন হয়।

মেঘাচ্ছন্নতা কী?

মেঘাচ্ছন্নতা বলতে আকাশে মেঘের আবরণের পরিমাণকে বোঝায়। মেঘাচ্ছন্নতা হিসাব করা হয় অকটা (okta) নামক এককে। বিভিন্ন প্রতীক চিহ্নের সাহায্যে আকাশে মেঘাচ্ছন্নতার পরিমাণ প্রকাশ করা হয়।

মেঘাচ্ছন্নতার প্রতীক চিহ্ন

আপেক্ষিক আর্দ্রতা নির্ণয়ের সূত্রটি কী?

আপেক্ষিক আর্দ্রতা নির্ণয়ের সূত্র –

আপেক্ষিক আর্দ্রতা = {নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে জলীয়বাষ্পের মোট পরিমাণ (চরম আর্দ্রতা) ÷ সম উষ্ণতায় সম পরিমাণ বায়ুকে পরিপৃক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় জলীয়বাষ্পের পরিমাণ} × 100

বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল কাকে বলে?

অথবা, পর্বতের অনুবাত ঢালে কেন বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল তৈরি হয়?

আর্দ্র বায়ু পর্বতের প্রতিবাত ঢালে প্রচুর পরিমাণে (শৈলোৎক্ষেপ) বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে যখন অনুবাত ঢালে পৌঁছোয় তখন সেখানে বৃষ্টিপাত খুব কম হয়। পর্বতের অনুবাত ঢালে অবস্থিত ওই স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত এলাকাকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলে। অনুবাত ঢালে ওই বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল সৃষ্টি হওয়ার কারণ –

  • পর্বত অতিক্রম করে ওই বায়ু যখন অনুবাত ঢালে পৌঁছোয় তার মধ্যে জলীয়বাষ্প কমে যায় এবং
  • পর্বতের ঢাল বেয়ে নীচে নামে বলে ওই বায়ুর উষ্ণতা ও জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা উভয়ই বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ আপেক্ষিক আর্দ্রতা ক্রমশ হ্রাস পায়।

তুহিন কী?

বায়ু যখন শিশিরাঙ্কে পৌঁছোয় তখন বায়ুর জলীয়বাষ্প জলকণায় পরিণত হয়। কিন্তু ওই বায়ুর উষ্ণতা হিমাঙ্কের নীচে নামলে জলকণা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বরফকণায় পরিণত হয়। এইসব বরফকণাকে তুহিন বলে।

লেখচিত্র দেখে কীভাবে গোলার্ধ শনাক্ত করা যায়?

লেখচিত্রে যদি দেখা যায় উষ্ণতা নির্দেশক বক্ররেখাটি উত্তল তবে স্থানটি উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত এবং উষ্ণতা নির্দেশক বক্ররেখাটি যদি অবতল হয় তবে সেটি দক্ষিণ গোলার্ধকে বোঝায়।

তুন্দ্রা জলবায়ুকে কীভাবে উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের লেখচিত্রের সাহায্যে শনাক্ত করা যাবে?

লেখচিত্র অনুসারে যদি উষ্ণতা 8-9 মাস হিমাঙ্কের নীচে থাকে, উষ্ণতার প্রসর বেশি হয় তাহলে বলা যায় যে লেখচিত্রটিতে তুন্দ্রা জলবায়ু দেখানো হয়েছে।

উষ্ণতা-বৃষ্টিপাতের লেখচিত্র থেকে কীভাবে উষ্ণ মরু জলবায়ুকে চিহ্নিত করা যায়?

উষ্ণতা-বৃষ্টিপাতের লেখচিত্রটিতে যদি দেখা যায় শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার ব্যবধান খুব বেশি এবং বৃষ্টিপাত খুবই কম ও অনিয়মিত তাহলে সেটি উষ্ণ মরু জলবায়ুকে নির্দেশ করছে।

বাষ্পীভবন কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

বায়ুতে কী পরিমাণ জলীয়বাষ্প আছে বা জলীয়বাষ্পের পরিমাণ নির্ভর করে বাষ্পীভবনের ওপর। এই বাষ্পীভবন আবার নির্ভর করে ছয়টি বিষয়ের ওপর –

  1. তরলের প্রকৃতি,
  2. পৃষ্ঠদেশের আয়তন,
  3. বায়ুর শুষ্কতা,
  4. বাতাসের গতিবেগ,
  5. বায়ুর উষ্ণতা এবং
  6. বাষ্পচাপ।

পৃথিবীর সব জায়গায় বাষ্পীভবনের হার সমান নয়। ক্রান্তীয় মরু অঞ্চলে বাষ্পীভবনের হার সর্বাধিক।

কোন্ কোন্ যন্ত্রের সাহায্যে আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয়?

  • বায়ুর আর্দ্রতা মাপা হয় হাইগ্রোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে।
  • আপেক্ষিক আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয় শুষ্ক এবং আর্দ্র কুণ্ড থার্মোমিটারের সাহায্যে। একে সাইক্রোমিটারও বলে।
  • এ ছাড়া, বর্তমানে নানা ধরনের হাইগ্রোমিটার আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে –
    • শিশিরাঙ্ক হাইগ্রোমিটার,
    • হেয়ার হাইগ্রোমিটার,
    • রেজিস্ট্যান্স হাইগ্রোমিটার উল্লেখযোগ্য।

 শহরাঞ্চল ও শিল্পাঞ্চলে প্রায়ই কুয়াশা দেখা যায় কেন?

শহরাঞ্চল এবং শিল্পাঞ্চলের বায়ুতে প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা, কার্বন কণা প্রভৃতি ভেসে বেড়ায়। এইসব পদার্থের ওপর ভোরবেলা জলীয়বাষ্প জমে কুয়াশা সৃষ্টি করে। সেজন্য শীতকালে ভোরবেলা ওইসব শিল্পাঞ্চলে কুয়াশা এবং ধোঁয়াশা দেখা যায়। যেমন – চিনের সাংহাই, ভারতের দুর্গাপুর, কলকাতা এবং ইউরোপের শিল্পাঞ্চলগুলিতে এরকম কুয়াশা দেখা যায়।

বায়ুতে আর্দ্রতার গুরুত্ব লেখো।

বায়ুর আর্দ্রতা আছে বলেই –

  1. জলচক্র ঘটে,
  2. আর্দ্রতা আছে বলেই ঘনীভবন হয়,
  3. বিকিরিত তাপশক্তিকে আর্দ্রতা শোষণ করে,
  4. অতিরিক্ত আর্দ্রতা বায়ুতে স্যাঁতসেঁতেভাব তৈরি করে আবার কম আর্দ্রতায় বায়ু শুক হয়,
  5. বায়ুর আর্দ্রতা সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ঘটাতে সাহায্য করে,
  6. বায়ুর আর্দ্রতা কার্পাসবয়ন শিল্পে ব্যবহৃত সুতো তৈরি করার সময় সুতো ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমায়।

নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে প্রায়শ ঘন কুয়াশা ও ঝড়ঝঞ্ঝার সৃষ্টি হয় কেন?

নিউফাউন্ডল্যান্ডের পূর্বে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে এসে মিশেছে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত। এই দুই ভিন্নধর্মী সমুদ্রস্রোতের মিলনের ফলে নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে ঘন কুয়াশা ও ঝড়ঝঞ্ঝা সৃষ্টি হয়।

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু ও ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যের দুটি পার্থক্য লেখো।

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু ও মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যের দুটি পার্থক্য –

ভিত্তিভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুমৌসুমি জলবায়ু
বায়ুচাপএখানে গ্রীষ্মকাল বায়ুর উচ্চচাপ এবং শীতকালে বায়ুর নিম্নচাপ বিরাজ করে।এখানে গ্রীষ্মকাল বায়ুর নিম্নচাপ এবং শীতকালে বায়ুর উচ্চচাপ বিরাজ করে।
বৃষ্টিপাতএখানে বৃষ্টিপাত হয় প্রধানত শীতকালে (বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম, গড়ে 25-90 সেমি), অর্থাৎ শীতকাল আর্দ্র এবং গ্রীষ্মকাল শুষ্ক।এখানে বৃষ্টিপাত হয় প্রধানত গ্রীষ্মকাল (বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি, গড়ে 200 সেমি), অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল আর্দ্র এবং শীতকাল শুষ্ক।

যদি একটি উষ্ণতা-বৃষ্টিপাত সূচক লেখচিত্রে দেখা যায় প্রতিমাসে উষ্ণতা 25°C থেকে 27°C এবং সারা বছরের মোট বৃষ্টিপাত 200 সেমি – তুমি ওই অঞ্চলটির জলবায়ুকে কোন্ জলবায়ু বলবে এবং কেন বলবে? 

অঞ্চলটি নিরক্ষীয় জলবায়ুর অন্তর্গত। এর কারণ –

  • নিরক্ষরেখায় সারা বছর মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে এবং দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান (12 ঘণ্টা দিন ও 12 ঘণ্টা রাত্রি)। এজন্য এখানে প্রচুর পরিমাণে সূর্যরশ্মি পড়ে এবং কোনো ঋতু পরিবর্তনও হয় না, সারা বছরই গ্রীষ্ম ঋতু বিরাজ করে। ফলে তাপমাত্রা সব সময়ই বেশি এবং তাপমাত্রার প্রখরও খুব কম।
  • প্রায় প্রতিদিন অপরাহ্নে পরিচলন বৃষ্টি হয়। তাই বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণও খুব বেশি। সুতরাং অঞ্চলটির জলবায়ু উষ্ণ-আর্দ্র প্রকৃতির, যা একমাত্র নিরক্ষীয় জলবায়ুর মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়।

আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল” -এর “আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Categories -
Please Share This Article

Related Posts

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

ধাতু নিষ্কাশনে তড়িৎবিশ্লেষণের প্রয়োগ উদাহরণসহ উল্লেখ করো।

তড়িৎলেপনের সময় কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নজর রাখা প্রয়োজন?

লোহায় তামার প্রলেপ দিতে কোন ধাতু ক্যাথোড ও অ্যানোড হিসেবে ব্যবহার হয়? তড়িৎবিশ্লেষ্য কী? বিক্রিয়ার সমীকরণ লেখো।

তড়িৎলেপন পদ্ধতি বর্ণনা করো।

ধাতুর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ ও তড়িৎবিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।