মাতঙ্গিনী হাজরা স্মরণীয় কেন?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “মাতঙ্গিনী হাজরা স্মরণীয় কেন?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “মাতঙ্গিনী হাজরা স্মরণীয় কেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

মাতঙ্গিনী হাজরা স্মরণীয় কেন?
Contents Show

মাতঙ্গিনী হাজরা স্মরণীয় কেন?

1942 খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যে সকল নারী বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে বাংলার বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরা অন্যতম। গান্ধিবুড়ি নামে পরিচিত মাতঙ্গিনী হাজরা গান্ধিজির ভারত ছাড়ো আন্দোলনে শামিল হয়ে কপালে ও দুই হাতে গুলিবিদ্ধ হন তাও তিনি বন্দেমাতরম ধ্বনি দিতে দিতে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা হাতে সামনে এগিয়ে চলেন।

মাতঙ্গিনী হাজরার পূর্ব পরিচয় –

1870 খ্রিস্টাব্দের 19 শে অক্টোবর মেদিনীপুর জেলার তমলুক মহকুমার হোগলা গ্রামে তার জন্ম হয়। আর্থিক সংকটের জন্য তিনি শিক্ষাগ্রহণ করতে পারেননি। মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি নিঃসন্তান অবস্থায় বিধবা হন।

মাতঙ্গিনী হাজরা স্মরণীয় কেন?

মাতঙ্গিনী হাজরার জাতীয় আন্দোলনে যোগদান –

মাতঙ্গিনী হাজরা 1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে এবং 1932 খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি 6 মাস কারাবাস করেন। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন।

মাতঙ্গিনী হাজরার ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগদান –

1942 খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজীর ডাকে ভারতছাড়ো আন্দোলন শুরু হলে মাতঙ্গিনী হাজরা তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। 1942 খ্রিস্টাব্দের 29 শে সেপ্টেম্বর 73 বছরের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা তমলুক থানা দখল অভিযানে নেতৃত্ব দেন। ব্রিটিশ পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির 144 ধারা জারি করে সমাবেশ ভেঙ্গে দেওয়ার নির্দেশ দিলেও তিনি মিছিলের অগ্রভাগে “বন্দেমাতরম” ধ্বনি দিতে দিতে এগিয়ে চলেন।

মাতঙ্গিনী হাজরার মৃত্যুবরণ –

144 ধারা অমান্য করে পুলিশ মাতঙ্গিনী হাজরার ওপর গুলি চালায়। কপালে ও দুই হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি বন্দেমাতরম ধ্বনি দিতে দিতে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা হাতে সামনে এগিয়ে চলেন।অবশেষে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং শহীদের মতো মৃত্যুবরণ করেন। যার পর থেকেই তিনি গান্ধী বুড়ি নামে পরিচিত হন।

মূল্যায়ন –

পুলিশি অত্যাচার ও আক্রমণ সহ্য করেও মাতঙ্গিনী হাজরা যেভাবে নির্ভিক চিত্তে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, তা ভারতীয় নারীসমাজের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ। এই কারণে মাতঙ্গিনী হাজরা স্মরণীয় হয়ে আছেন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

মাতঙ্গিনী হাজরা কে ছিলেন?

মাতঙ্গিনী হাজরা ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন বীরাঙ্গনা নেত্রী, যিনি 1942 সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।

মাতঙ্গিনী হাজরা কেন বিখ্যাত?

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী ছিলেন মেদিনীপুরের 73 বছরের বিধবা মাতঙ্গিনী হাজরা। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের নারী বাহিনী ‘ভগিনী সেনা’র অন্যতম সদস্যা এই বৃদ্ধার নেতৃত্বে তমলুক থানা ঘেরাও কর্মসূচি গৃহীত হয়। থানা ঘেরাও কালে তিনি পুলিশের গুলিতে লুটিয়ে পড়লেও জাতীয় পতাকাকে ভূলুণ্ঠিত হতে দেননি। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য একজন গ্রাম্য বিধবার এই আত্মত্যাগ তাঁকে ইতিহাসে স্মরণীয় করে রেখেছে। তিনি ‘গান্ধিবুড়ি’ নামে সমধিক পরিচিত।

মাতঙ্গিনী হাজরার জন্ম কবে এবং কোথায় হয়েছিল?

তাঁর জন্ম 1870 সালের 19 অক্টোবর (মতান্তরে 1869 সাল) মেদিনীপুর জেলার তমলুক মহকুমার হোগলা গ্রামে।

মাতঙ্গিনী হাজরা কীভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন?

1. 1905 সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
2. 1932 সালে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে 6 মাস জেল খাটেন।
3. 1942 সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

মাতঙ্গিনী হাজরা কীভাবে শহীদ হন?

1942 সালের 29 সেপ্টেম্বর, তমলুক থানা দখলের সময় ব্রিটিশ পুলিশ 144 ধারা জারি করে গুলি চালালে তিনি আহত হন, কিন্তু পতাকা হাতে এগিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

মাতঙ্গিনী হাজরাকে কেন “গান্ধীবুড়ি” বলা হয়?

গান্ধীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হওয়ায় এবং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্থানীয় মানুষ তাঁকে “গান্ধীবুড়ি” (গান্ধীর বুড়ি) বলে ডাকতেন।

মাতঙ্গিনী হাজরার সংগ্রামের বিশেষত্ব কী ছিল?

তিনি একজন সাধারণ, অশিক্ষিত ও বৃদ্ধা নারী হয়েও অত্যাচারের মুখে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, যা নারীশক্তির প্রতীক হয়ে আছে।

মাতঙ্গিনী হাজরাকে কীভাবে স্মরণ করা হয়?

1. তাঁর নামে পশ্চিমবঙ্গে স্কুল, কলেজ ও সড়ক নামকরণ করা হয়েছে।
2. ভারত সরকার ডাকটিকিট প্রকাশ করে তাঁকে সম্মান জানিয়েছে।
3. স্বাধীনতা দিবস ও শহীদ দিবসে তাঁর বীরত্ব স্মরণ করা হয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “মাতঙ্গিনী হাজরা স্মরণীয় কেন?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “মাতঙ্গিনী হাজরা স্মরণীয় কেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

শ্রীমতী লক্ষ্মী স্বামীনাথন স্মরণীয় কেন?

শ্রীমতী লক্ষ্মী স্বামীনাথন স্মরণীয় কেন?

কার্লাইল সার্কুলার কী? কালাইল সার্কুলার বলতে কী বোঝো?

কালাইল সার্কুলার বলতে কী বোঝো?

মাস্টারদা সূর্য সেন বিখ্যাত কেন? মাস্টারদা সূর্য সেন সম্পর্কে আলোচনা করো।

মাস্টারদা সূর্য সেন সম্পর্কে আলোচনা করো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

শ্রীমতী লক্ষ্মী স্বামীনাথন স্মরণীয় কেন?

কালাইল সার্কুলার বলতে কী বোঝো?

মাস্টারদা সূর্য সেন সম্পর্কে আলোচনা করো।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার সম্পর্কে আলোচনা করো।

অলিন্দ যুদ্ধ কাকে বলে? অলিন্দ যুদ্ধে বিনয়-বাদল-দীনেশের ভূমিকা লেখো।