এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে টীকা লেখো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে টীকা লেখো।
ভারতে কমিউনিস্ট দমনার্থে ব্রিটিশ সরকার যেসব প্রয়াস নিয়েছিল, 1929 খ্রিস্টাব্দের মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা ছিল সেগুলির মধ্যে অন্যতম।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার পটভূমি –
ভারতে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে শ্রমিক আন্দোলনের বিপুল অগ্রগতি ব্রিটিশ সরকারকে শঙ্কিত করে তোলে। শ্রমিকদের থেকে কমিউনিস্টদের আলাদা করা এবং তাদের দমন করার জন্য সরকার ‘জন নিরাপত্তা বিল’ ও ‘শিল্প বিরোধ বিল’ নামে দুটি দমনমূলক আইন পাস করে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে 33 জন কমিউনিস্ট নেতাকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (1929 খ্রিস্টাব্দ) রুজু করা হয়।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত –
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মুজাফ্ফর আহমেদ, এস. এ. ডাঙ্গে, পি. সি. যোশী, মিরাজকার, নলীনি গুপ্ত প্রমুখ ভারতীয় কমিউনিস্ট নেতা। অন্যদিকে, ফিলিপ স্প্যাট ও বেঞ্জামিন ব্রাডলি নামে দু-জন ব্রিটিশ কমিউনিস্ট নেতাকেও এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার রায় –
দীর্ঘ সাড়ে চার বছর ধরে (1929-1933 খ্রিস্টাব্দ) পর্যন্ত বিচার প্রক্রিয়া চলার পর শেষপর্যন্ত অধিকাংশ অভিযুক্ত দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং 1934 খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিক্রিয়া –
এই মামলা হ্যারল্ড ল্যাস্কি, আইনস্টাইন, এইচ. জি. ওয়েলস প্রমুখ মণীষীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। দেশে-বিদেশে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পণ্ডিত নেহরু একে ‘জুডিসিয়াল স্ক্যানডেল’ বলে সমালোচনা করেছেন।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার মন্তব্য –
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা ভারতীয় কমিউনিস্টদের সাময়িক দমিত করলেও তাদের অঙ্কুরে বিনাশ করতে পারেনি। কমিউনিস্টরা অচিরেই কংগ্রেস সমাজতন্ত্রীদলের মধ্যে থেকে শ্রমিক-কৃষকদের নিয়ে গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে পূর্ণ উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা কী?
এটি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক 1929 সালে ভারতের কমিউনিস্ট নেতাদের বিরুদ্ধে রুজু করা একটি রাজনৈতিক মামলা, যার উদ্দেশ্য ছিল কমিউনিস্ট আন্দোলন দমন করা।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার পটভূমি কী ছিল?
ভারতের শ্রমিক আন্দোলনে কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্রিটিশ সরকার আতঙ্কিত হয়ে দুটি দমনমূলক আইন পাস করে—জন নিরাপত্তা বিল ও শিল্প বিরোধ বিল। এরপর 33 জন কমিউনিস্ট নেতাকে গ্রেপ্তার করে এই মামলা করা হয়।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় কারা অভিযুক্ত ছিলেন?
উল্লেখযোগ্য অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন মুজাফ্ফর আহমেদ, এস. এ. ডাঙ্গে, পি. সি. যোশী, মিরাজকার, নলীনি গুপ্ত প্রমুখ। এছাড়াও দুজন ব্রিটিশ কমিউনিস্ট নেতা—ফিলিপ স্প্যাট ও বেঞ্জামিন ব্রাডলিও অভিযুক্ত ছিলেন।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার রায় কী ছিল?
দীর্ঘ 4.5 বছর (1929-1933 খ্রিস্টাব্দ) বিচারকার্য চলার পর অধিকাংশ অভিযুক্তকে দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড দেওয়া হয়। 1934 সালে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
বিশ্বব্যাপী ব্রিটিশ সরকারের সমালোচনা হয়। হ্যারল্ড ল্যাস্কি, আইনস্টাইন, এইচ. জি. ওয়েলস প্রমুখ ব্যক্তিত্ব এই মামলার নিন্দা করেন। জওহরলাল নেহরু একে “জুডিসিয়াল স্ক্যানডেল” (বিচারিক কেলেঙ্কারি) বলে অভিহিত করেন।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা কমিউনিস্ট আন্দোলনকে সাময়িকভাবে দমিত করলেও দীর্ঘমেয়াদে তা ব্যর্থ হয়। কমিউনিস্টরা পরবর্তীতে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল -এর মাধ্যমে শ্রমিক-কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলেন।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হওয়ার পর কী হয়েছিল?
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কমিউনিস্টরা গোপনে ও অন্যান্য সংগঠনের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যান এবং পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন