আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘মহাকাশ গবেষণায় ভারত‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

মহাকাশ গবেষণায় ভারত
“মহাবিশ্বে মহাকাশে
– রবীন্দ্রনাথ
মহাকাল মাঝে
আমি মানব
একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে…….।”
ভূমিকা – বিপুলা এই ব্রহ্মাণ্ডের বিশালতার মাঝে মানুষের ক্ষুদ্র একক অবস্থান। অস্তিত্বের সীমাবদ্ধতা মানুষের মনে মহাবিশ্বের সম্পর্কে বিস্ময় উদ্রেক করে। এই বিস্ময়ের ডানায় ভর করেই সে মহাকাশের অপার রহস্য উদঘাটনে আগ্রহী হয়। তাই মহাকাশ গবেষণা ভারতীয় ঐতিহ্যের এক আলোকময় অধ্যায়। সেই প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানচর্চা থেকে শুরু করে আধুনিক ভারতীয় বিজ্ঞানচর্চায় মহাকাশ গবেষণায় ভারত তার নিজস্ব স্বাক্ষর রেখেছে।
ভারতীয় মহাকাশচর্চার ইতিহাস – গ্রীক জ্যোতির্বিদ্যাচর্চার মতো ভারতে মহাকাশচর্চার ইতিহাস অনেক পুরোনো। গুপ্তযুগে ভারতবর্ষে মহাকাশচর্চার ব্যাপক বিকাশ হয়। পঞ্চম শতকে ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী আর্যভট্টের লেখা গ্রন্থ ‘আর্যভট্টীয়’ কিংবা ষষ্ঠ শতাব্দীতে ভাস্কর ও বরাহমিহিরের গ্রহ-নক্ষত্র বিষয়ক গবেষণা ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানচর্চার ঐতিহাসিক দলিল।
আধুনিক ভারতের মহাকাশ গবেষণা – ভারতের মহাকাশ গবেষণার সূত্রপাত হয় 1962 সালের 16 ফেব্রুয়ারি। 1957 সালে রাশিয়া মহাকাশে স্পুটনিক উপগ্রহ প্রেরণ করার পরেই ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানের পরিকৃৎ ড. বিক্রম সারভাইয়ের পরামর্শে 1961 সালে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু মহাকাশ গবেষণাকে পারমাণবিক শক্তি দপ্তরের অধীনে নিয়ে আসেন। 1962 সালে ড. বিক্রম সারভাইয়ের তত্ত্বাবধানে তৈরি হয় ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশানাল কমিটি ফর স্পেস রিসার্চ’। 1969 সালের 15 আগস্ট ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ISRO) গড়ে ওঠে। এর পরেই ভারতে মহাকাশ গবেষণার ভিত্তি সুদৃঢ় হয়। 1972 সালে ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানের সাংগঠনিক পর্ব সম্পূর্ণ হয় ‘মহাকাশ বিভাগ’ এর প্রতিষ্ঠা হলে।
ভারতের বিভিন্ন কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণকেন্দ্র – মহাকাশ গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ রকেট উৎক্ষেপনকে গুরুত্ব দিয়ে ISRO ভারতের নানা প্রান্তে যেমন – কেরালার থুম্বা, গুজরাটের আমেদাবাদ, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায় একাধিক রকেট উৎক্ষেপনকেন্দ্র গড়ে তুলেছে।
ভারতের কৃত্রিম উপগ্রহসমূহ – ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘আর্যভট্ট’ 1975 সালের 19 এপ্রিল মহাকাশে প্রেরিত হয়। সোভিয়েত রাশিয়ার কসমোড্রোম থেকে সোভিয়েত মহাকাশযান কসমসের সঙ্গে আর্যভট্ট প্রেরণ করা হয়। এরপর 1978 সালের 7 জুন ‘ভাস্কর’, 1980 সালের 18 জুলাই ‘রোহিনী’ প্রভৃতি কৃত্রিম উপগ্রহগুলি প্রেরিত হয়। ভারতের বিভিন্ন কৃত্রিম উপগ্রহগুলি হল ‘রোহিনী-1’, ‘অ্যাপোলো’, ‘ভাস্কর-1′ রোহিনী-ভি-এ’, ‘ইনসাট’ প্রভৃতি। এখনও পর্যন্ত ভারত প্রায় 1000 -এর বেশি কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে প্রেরণ করে।
ভারতের চন্দ্রাভিযান – ভারতীয় মহাকাশ গবেষণাচর্চার একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য হল ভারতের চন্দ্রাভিযান। 2008 সালের 22 অক্টোবর ভোর 6টা 22 মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে ‘চন্দ্রায়ন-1’ নামে যে চন্দ্রযান PSLVCII রকেটের সাহায্যে শুরু হয়, তা 14 নভেম্বর সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করে।
মহাকাশ গবেষণায় ভারত – ভারত মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে তথ্যানুসন্ধানী রকেট প্রেরণ করেছে। এ ছাড়াও ভারত বিভিন্ন দেশে রকেট ও কৃত্রিম উপগ্রহ বিষয়ে পরিষেবা প্রদান করেছে। মার্কিন গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (GPS) এর অনুসরণে ইন্ডিয়ান। রিজিওনাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম পরিকাঠামো হিসেবে 1.7.2013 এবং 25.7.2013 তারিখে পরপর দুটি উপগ্রহ কক্ষপথে স্থাপন করেছে। 2017 সালের 14 ফেব্রুয়ারি PSLVC 37 একটিমাত্র রকেটের সাহায্যে একশো চারটি উপগ্রহ মহাকাশে প্রেরণ করে। এরপর 2017 সালের 5 জুন ভারত জিস্যাট-19 নামে যোগাযোগ স্থাপনকারী উপগ্রহ প্রেরণ করে। এইভাবেই ভারত পৃথিবীর মহাকাশ বিষয়ক গবেষণায় নিজস্ব কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে।
উপসংহার – ভারতবর্ষ তার নিজস্ব জ্যোতির্বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে বহন করেই মহাকাশ গবেষণায় সারা বিশ্বে নিজস্ব স্বাক্ষর রেখেছে। তার মহাকাশচর্চাকে মানবকল্যাণের উদ্দেশ্যে সার্থক করে তোলার প্রয়াস বাহবাযোগ্য নজির তৈরি করেছে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘মহাকাশ গবেষণায় ভারত‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন