এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “নিষ্ক্রিয় গ্যাসের আবিষ্কার থেকে কীভাবে রাসায়নিক বন্ধনের ধারণা পাওয়া যায়?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

নিষ্ক্রিয় গ্যাসের আবিষ্কার থেকে কীভাবে রাসায়নিক বন্ধনের ধারণা পাওয়া যায়?
1868 খ্রিস্টাব্দে P. Jansseu এবং J.N. Lockyer হিলিয়াম আবিষ্কার করেন। 1895 খ্রিস্টাব্দে Lore Rayleigh এবং W.Ramsay আর্গন ও 1898 খ্রিস্টাব্দে নিয়ন, ক্রিপ্টন ও জেনন আবিষ্কার করেন। 1998 খ্রিস্টাব্দে F. E. Dorn রেডন আবিষ্কার করেন। হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, ক্রিপ্টন, জেনন, রেডন এগুলি নিষ্ক্রিয় মৌল নামে পরিচিত এবং এই মৌলগুলি এক পরমাণুক অণু হিসেবে অবস্থান করে। এই মৌলগুলির পরমাণুর সর্ববহিস্থ কক্ষে 8টি এবং He -এর ক্ষেত্রে 2টি ইলেকট্রন বর্তমান, যা খুবই সুস্থিত ইলেকট্রন বিন্যাস। তাই এরা খুব স্থায়ী ও রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয় প্রকৃতির।
সুতরাং নিষ্ক্রিয় মৌলগুলি ছাড়া অন্যান্য সমস্ত মৌলের পরমাণুগুলির সবচেয়ে বাইরের কক্ষে আটটি ইলেকট্রন থাকে না। এই ধরণের পরমাণুগুলি 8টি (বা 2টি) ইলেকট্রন বিশিষ্ট নিষ্ক্রিয় মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভকরার প্রত্যাশায় রাসায়নিকভাবে সংযুক্ত হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলিকে কেন ‘নিষ্ক্রিয়’ বলা হয়?
নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলির (হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন ইত্যাদি) পরমাণুর সর্ববহিস্থ কক্ষপথে ইলেকট্রনের একটি স্থিতিশীল বিন্যাস থাকে (হিলিয়ামের ক্ষেত্রে 2টি, অন্যদের ক্ষেত্রে 8টি)। এই বিশেষ বিন্যাস তাদের অত্যন্ত স্থিতিশীল করে তোলে, যার ফলে তারা সাধারণত অন্য কোনো মৌলের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেয় না। এই রাসায়নিক নিষ্ক্রিয়তার কারণেই এদেরকে নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলা হয়।
নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস রাসায়নিক বন্ধনের ধারণাকে কীভাবে সমর্থন করে?
নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলির স্থিতিশীলতা পর্যবেক্ষণ করে রসায়নবিদরা সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, অন্যান্য মৌলও তাদের সর্ববহিস্থ কক্ষপথে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মতো স্থিতিশীল ইলেকট্রন বিন্যাস (অক্টেট বা ডুয়েট নিয়ম) অর্জনের জন্য রাসায়নিক বন্ধন গঠন করে। অর্থাৎ, পরমাণুগুলি ইলেকট্রন দান, গ্রহণ বা ভাগাভাগির মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের সমতুল্য বিন্যাস লাভ করতে চায়—এটাই রাসায়নিক বন্ধনের মূল প্রেরণা।
‘অক্টেট নিয়ম’ বলতে কী বোঝায় এবং এর ব্যতিক্রম কী কী?
অক্টেট নিয়ম অনুযায়ী, পরমাণুগুলি বন্ধন গঠনের সময় তাদের বহিস্থ কক্ষপথে 8টি ইলেকট্রন পূর্ণ করতে চায় (হিলিয়ামের ক্ষেত্রে 2টি, যা ডুয়েট নিয়ম নামে পরিচিত)। এই ধারণাটি নিষ্ক্রিয় গ্যাসের স্থিতিশীলতা থেকে উদ্ভূত।
ব্যতিক্রম – কিছু মৌল (যেমন – বোরন, ফসফরাস, সালফার) অক্টেটের চেয়ে কম বা বেশি ইলেকট্রন বিশিষ্ট যৌগ গঠন করতে পারে। এছাড়াও, বিজারণ-জারণ বিক্রিয়ার ধারণা অক্টেট নিয়মের চেয়ে আরও গভীরভাবে বন্ধন ব্যাখ্যা করে।
আয়নিক ও সমযোজী বন্ধনের সৃষ্টি নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ধারণা থেকে কীভাবে বোঝানো যায়?
আয়নিক বন্ধন – কিছু পরমাণু তাদের বহিস্থ কক্ষপথ থেকে ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়ন (ক্যাটায়ন) হয়, আবার কিছু পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়ন (অ্যানায়ন) হয়। এই ধনাত্মক-ঋণাত্মক আয়নের মধ্যে আকর্ষণ বলই আয়নিক বন্ধন। এখানে উভয় আয়নই নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করে (যেমন – NaCl -এ Na⁺ নিয়নের আর Cl⁻ আর্গনের বিন্যাস অর্জন করে)।
সমযোজী বন্ধন – যখন দুটি পরমাণু ইলেকট্রন জোড় ভাগাভাগি করে উভয়ের বহিস্থ কক্ষপথে অক্টেট (বা ডুয়েট) পূর্ণ করে, তখন যে বন্ধন গঠিত হয় তাকে সমযোজী বন্ধন বলে (যেমন – Cl₂ অণু)।
নিষ্ক্রিয় গ্যাস কি একদমই কোনো যৌগ গঠন করে না?
প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল নিষ্ক্রিয় গ্যাস কোনো যৌগ গঠন করে না। কিন্তু পরে দেখা যায়, কিছু ভারী নিষ্ক্রিয় গ্যাস (বিশেষ করে জেনন, ক্রিপ্টন ও রেডন) অত্যন্ত সক্রিয় মৌল যেমন ফ্লোরিন ও অক্সিজেনের সাথে বিশেষ পরিস্থিতিতে যৌগ গঠন করতে পারে (যেমন – XeF₂, XeF₄, XeO₃ ইত্যাদি)। তবে হিলিয়াম, নিয়ন ও আর্গন সাধারণত কোনো স্থায়ী যৌগ গঠন করে না।
রাসায়নিক বন্ধনের আধুনিক তত্ত্ব নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ধারণাকে কীভাবে সংশোধন করেছে?
নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ধারণা রাসায়নিক বন্ধনের জন্য একটি প্রেরণা দিয়েছিল—পরমাণুগুলি স্থিতিশীলতা অর্জন করতে চায়। তবে আধুনিক তত্ত্বসমূহ (ভ্যালেন্স বন্ড তত্ত্ব, আণবিক অরবিটাল তত্ত্ব) কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের মাধ্যমে বন্ধনের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করে। এগুলি দেখায়, বন্ধন গঠনের মূল কারণ হল নিউক্লিয়াস ও ইলেকট্রনের মধ্যে সামগ্রিক শক্তির হ্রাস, যা পরমাণুকে আরও স্থিতিশীল করে তোলে। নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মতো ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জন করা এই শক্তি হ্রাসের একটি সহজ ও কার্যকর উপায় মাত্র।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “নিষ্ক্রিয় গ্যাসের আবিষ্কার থেকে কীভাবে রাসায়নিক বন্ধনের ধারণা পাওয়া যায়?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন