এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নিউক্লিয় বিভাজন কাকে বলে? নিউক্লিয় বিভাজনের একটি উদাহরণ দাও। নিউক্লিয় বিভাজনের উপকারিতা কী?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “নিউক্লিয় বিভাজন কাকে বলে? নিউক্লিয় বিভাজনের একটি উদাহরণ দাও। নিউক্লিয় বিভাজনের উপকারিতা কী?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায় “পরমাণুর নিউক্লিয়াস“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

নিউক্লিয় বিভাজন কাকে বলে? নিউক্লিয় বিভাজনের একটি উদাহরণ দাও।
যে নিউক্লিয় বিক্রিয়ায় কোনো ভারী নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয়ে দুটি কাছাকাছি ভরের নিউক্লিয়াস উৎপন্ন হয় এবং তার সঙ্গে নিউট্রন জাতীয় কয়েকটি ক্ষুদ্র কণা এবং প্রচুর পরিমাণে শক্তি নির্গত হয় তাকে নিউক্লিয় বিভাজন বলে।
নিউক্লিয় বিভাজনের একটি উদাহরণ – যেমন \({}_{92}^{235}U\) -এর নিউক্লিয়াসকে ধীরগতির নিউট্রন দিয়ে আঘাত করলে ভারী নিউক্লিয়াসটি ভেঙে গিয়ে প্রায় সমান ভরের দুটি নিউক্লিয়াস বেরিয়াম \({}_{56}^{141}Ba\) এবং ক্রিপটন \({}_{36}^{92}Kr\) -এ ভেঙে যায় এবং প্রচুর শক্তি উৎপন্ন হয়।
নিউক্লিয় বিভাজনের বিক্রিয়ার সমীকরণ –
\({}_{92}^{235}U+{}_0^1n\rightarrow{}_{56}^{141}Ba+{}_{36}^{92}Kr+3{}_0^1n+\) শক্তি
নিউক্লিয় বিভাজনের উপকারিতা কী?
অথবা, মানবকল্যাণে নিউক্লিয় বিভাজনের একটি ব্যবহার উল্লেখ করো।
নিউক্লিয় বিভাজনের উপকারিতা – পারমাণবিক চুল্লিতে নিয়ন্ত্রিত বিভাজন ঘটিয়ে তাপ উৎপন্ন হয়। এই তাপের সাহায্যে স্টিম টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
নিউক্লীয় বিভাজন কী?
যে নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় কোনো ভারী নিউক্লিয়াস (যেমন — ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম) বিভাজিত হয়ে দুইটি অপেক্ষাকৃত হালকা নিউক্লিয়াসে পরিণত হয় এবং একই সঙ্গে কয়েকটি নিউট্রন ও প্রচুর পরিমাণে শক্তি নির্গত হয় — তাকে নিউক্লীয় বিভাজন বলা হয়।
নিউক্লীয় বিভাজনে কী পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়?
নিউক্লীয় বিভাজনে অত্যন্ত প্রচুর পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়া (যেমন — কয়লা বা তেল পোড়ানো) থেকে যে শক্তি পাওয়া যায় তার তুলনায় নিউক্লীয় বিভাজনে লক্ষ লক্ষ গুণ বেশি শক্তি মুক্তি পায়।
নিউক্লীয় বিভাজনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার বা উপকারিতা কী?
নিউক্লীয় বিভাজনের প্রধান উপকারিতা হল বিদ্যুৎ উৎপাদন। পারমাণবিক চুল্লিতে (Nuclear Reactor) নিউক্লীয় বিভাজন নিয়ন্ত্রিতভাবে ঘটিয়ে প্রচুর তাপশক্তি উৎপন্ন করা হয়। সেই তাপ দিয়ে পানি গরম করে বাষ্প সৃষ্টি করা হয় এবং বাষ্পটি টারবাইন ও জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
নিউক্লীয় বিভাজন শৃঙ্খল বিক্রিয়া কী?
যখন কোনো নিউক্লিয়াসের বিভাজনে যে নিউট্রনগুলো মুক্ত হয়, সেগুলো আশেপাশের আরও বিভাজনযোগ্য নিউক্লিয়াসকে আঘাত করে এবং সেগুলোও বিভাজিত হয়ে আরো নিউট্রন উৎপন্ন করে—এই প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে চললে তাকে শৃঙ্খল বিক্রিয়া (চেইন বিক্রিয়া) বলা হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রে এই বিক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালিত হয়, কিন্তু পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণে এটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঘটে।
নিউক্লীয় বিভাজনের অসুবিধা বা ক্ষতিকর দিকগুলি কী?
নিউক্লীয় বিভাজনের অসুবিধা বা ক্ষতিকর দিকগুলি হল –
1. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য – বিভাজন প্রক্রিয়ায় যে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য তৈরি হয়, তা অনেক হাজার বছর পর্যন্ত তেজস্ক্রিয় থাকতে পারে এবং এর সুরক্ষিত নিষ্পত্তি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
2. দুর্ঘটনার ঝুঁকি – চেরনোবিল বা ফুকুশিমার মতো দুর্ঘটনা ঘটলে বিপজ্জনক পরিমাণে তেজস্ক্রিয় রশ্মি পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
3. অস্ত্রগত ব্যবহার – অনিয়ন্ত্রিত শৃঙ্খল বিক্রিয়া পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে, যা একটি বৃহৎ হুমকি।
নিউক্লীয় বিভাজন বিক্রিয়া কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়?
নিয়ন্ত্রণ দণ্ড (Control Rods) -এর মাধ্যমে। এই দণ্ড সাধারণত ক্যাডমিয়াম বা বোরনের মতো পদার্থ দিয়ে তৈরি হয় যা নিউট্রন শোষণ করতে পারে। শৃঙ্খল বিক্রিয়ার গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য দণ্ডগুলোকে চুল্লির ভিতরে ঢোকানো বা বাইরে টেনে আনা হয়। বেশি নিউট্রন শোষণ করলে বিক্রিয়া ধীর হয়, আর কম শোষণ করলে বিক্রিয়া দ্রুত ঘটে।
পারমাণবিক চুল্লি (Nuclear Reactor) কী?
পারমাণবিক চুল্লি হলো একটি বিশেষ যন্ত্র যেখানে নিয়ন্ত্রিতভাবে নিউক্লীয় বিভাজন শৃঙ্খল বিক্রিয়া ঘটিয়ে তাপশক্তি উৎপন্ন করা হয়। এই তাপশক্তি বিদ্যুৎ উৎপাদন, জাহাজ চালানো কিংবা বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হয়।
নিউক্লীয় বিভাজনে শক্তি কীভাবে সৃষ্টি হয়?
এটি ভর-শক্তি সমতুল্যতার সূত্র (E = mc²)-এর উপর ভিত্তি করে। বিভাজনের পর উৎপন্ন নিউক্লিয়াস ও কণাগুলির মোট ভর, মূল নিউক্লিয়াস ও নিউট্রনের মোট ভরের তুলনায় সামান্য কম হয়। এই ভর হ্রাসকেই ভরত্রুটি (Mass Defect) বলা হয়। ভরত্রুটির কারণে যে অংশটি হারিয়ে যায়, তা শক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং বিপুল শক্তি নির্গত হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নিউক্লিয় বিভাজন কাকে বলে? নিউক্লিয় বিভাজনের একটি উদাহরণ দাও। নিউক্লিয় বিভাজনের উপকারিতা কী?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “নিউক্লিয় বিভাজন কাকে বলে? নিউক্লিয় বিভাজনের একটি উদাহরণ দাও। নিউক্লিয় বিভাজনের উপকারিতা কী?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায় “পরমাণুর নিউক্লিয়াস“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন