এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অষ্টক সূত্রের ব্যতিক্রমের কয়েকটি সমযোজী যৌগের উদাহরণ দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অষ্টক সূত্রের ব্যতিক্রমের কয়েকটি সমযোজী যৌগের উদাহরণ দাও।
অনেক সমযোজী যৌগেই অষ্টক নিয়মের ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয় –
- অসম্পূর্ণ ইলেকট্রন অষ্টক – 2 ও 13 নং শ্রেণির সমযোজী যৌগগুলির ক্ষেত্রে অষ্টক সূত্রের ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। এই যৌগগুলির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় পরমাণুর যোজ্যতা কক্ষে 8 -এর কম সংখ্যক ইলেকট্রন থাকা সত্ত্বেও যৌগগুলি স্থায়ী হয়। এই সকল যৌগে অষ্টক সূত্রের সংকোচন ঘটে। এদের ইলেকট্রন ঘাটতি বিশিষ্ট বা হাইপোভ্যালেন্ট যৌগ বলে। উদাহরণ – BeF2, BF3, AlCl3 ইত্যাদি।
- অষ্টক সূত্রের সম্প্রসারণ – 15, 16 ও 17 নং শ্রেণির অনেক সমযোজী যৌগের কেন্দ্রীয় পরমাণুর যোজ্যতা কক্ষে 8টির বেশি ইলেকট্রন থাকা সত্ত্বেও যৌগগুলি স্থায়ী হয়। এইসব যৌগে অষ্টক সূত্রের সম্প্রসারণ ঘটে। এই যৌগগুলিকে হাইপার ভ্যালেন্ট যৌগ বলে। উদাহরণ – PCl5, SF6, IF, ইত্যাদি।
- অষ্টক সূত্রের সংকোচন – কয়েকটি মৌল যেমন – কার্বন, নাইট্রোজেন ইত্যাদি মৌলগুলি সমযোজী যৌগ গঠনের মাধ্যমে তাদের পরমাণুর অষ্টক পূর্তি ঘটালেও তারা আবার এরূপ সমযোজী যৌগ উৎপন্ন করে যে যৌগগুলিতে তাদের পরমাণুর অষ্টক সূত্রের সংকোচন ঘটে। যেমন – CO, NO ইত্যাদি।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অষ্টক সূত্র কী? এবং এটি কেন ব্যতিক্রম হয়?
অষ্টক সূত্র অনুসারে, সমযোজী বন্ধন গঠনের সময় মৌল পরমাণুগুলি তাদের নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভের চেষ্টা করে, অর্থাৎ তাদের যোজ্যতা শেলে 8টি ইলেকট্রন থাকে। তবে এই সূত্রটি সর্বজনীন নয়। মূলত তিনটি কারণে ব্যতিক্রম ঘটে –
1. কেন্দ্রীয় পরমাণুতে যোজ্যতা ইলেকট্রনের সংখ্যা খুব কম বা খুব বেশি হলে।
2. বিজোড় সংখ্যক ইলেকট্রন থাকলে।
3. স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য (যেমন – কার্বন মনোক্সাইডে)।
‘অসম্পূর্ণ অষ্টক’ বা ‘হাইপোভ্যালেন্ট যৌগ’ বলতে কী বোঝায়? উদাহরণ দাও।
যে সমস্ত যৌগের কেন্দ্রীয় পরমাণুর চারপাশে 8টির কম ইলেকট্রন (সাধারণত 4 বা 6টি) থাকে, তাদের অসম্পূর্ণ অষ্টক যৌগ বা হাইপোভ্যালেন্ট যৌগ বলে। এগুলি সাধারণত গ্রুপ 2 (বেরিলিয়াম) এবং গ্রুপ 13 (বোরন, অ্যালুমিনিয়াম) এর মৌলগুলির যৌগে দেখা যায়।
উদাহরণ – BeCl₂ (বেরিলিয়ামের চারপাশে 4টি ইলেকট্রন), BF₃ (বোরনের চারপাশে 6টি ইলেকট্রন), AlCl₃ (অ্যালুমিনিয়ামের চারপাশে 6টি ইলেকট্রন)।
‘বিস্তৃত অষ্টক’ বা ‘হাইপারভ্যালেন্ট যৌগ’ কী? উদাহরণ দাও।
যে সমস্ত যৌগের কেন্দ্রীয় পরমাণুর চারপাশে 8টির বেশি ইলেকট্রন (যেমন 10, 12 বা তার বেশি) থাকে, তাদের বিস্তৃত অষ্টক যৌগ বা হাইপারভ্যালেন্ট যৌগ বলে। এটি সাধারণত তৃতীয় বা তার পরের পর্যায়ের মৌলগুলির (যেমন ফসফরাস, সালফার, আয়োডিন) সাথে দেখা যায়, কারণ তাদের d-অরবিটাল বিদ্যমান থাকে।
উদাহরণ – PCl₅ (ফসফরাসের চারপাশে 10টি ইলেকট্রন), SF₆ (সালফারের চারপাশে 12টি ইলেকট্রন), IF₇ (আয়োডিনের চারপাশে 14টি ইলেকট্রন)।
বিজোড় ইলেকট্রন যুক্ত অণুগুলিও কি অষ্টক সূত্রের ব্যতিক্রম?
হ্যাঁ, যে সমস্ত অণুতে মোট ইলেকট্রন সংখ্যা বিজোড়, সেগুলিতে অষ্টক পূরণ করা সম্ভব নয় এবং তারা অষ্টক সূত্রের ব্যতিক্রম। এগুলিকে ‘মুক্তমূলক’ বা Radical বলে।
উদাহরণ – নাইট্রিক অক্সাইড (NO), নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO₂)। NO অণুটিতে মোট 15টি যোজ্যতা ইলেকট্রন থাকে, তাই উভয় পরমাণুই সম্পূর্ণ অষ্টক লাভ করতে পারে না।
CO (কার্বন মনোক্সাইড) অণুটি অষ্টক সূত্রের ব্যতিক্রম হয় কীভাবে?
CO অণুতে কার্বন ও অক্সিজেন পরমাণুর মধ্যে একটি ডেটিভ কোভ্যালেন্ট বন্ধনসহ মোট তিনটি বন্ধন থাকে (একটি সিগমা ও দুটি পাই বন্ধন)। গঠন দেখে মনে হবে কার্বনের অষ্টক পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু ফরমাল চার্জ হিসাব করলে দেখা যায় কার্বন ও অক্সিজেন উভয়েরই অষ্টক পূর্ণ হলেও ইলেকট্রন বণ্টন অষ্টক সূত্রের সাধারণ নিয়মের সাথে খাপ খায় না। এটি একটি বিশেষ ধরনের ব্যতিক্রম যেখানে স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য বন্ধনের একটি অস্বাভাবিক বিন্যাস ঘটে।
কেন দ্বিতীয় পর্যায়ের মৌলগুলি (যেমন – C, N, O, F) সাধারণত বিস্তৃত অষ্টক গঠন করে না?
দ্বিতীয় পর্যায়ের মৌলগুলির (যেমন কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফ্লোরিন) যোজ্যতা শেল হল n = 2। এই শেলের জন্য শুধুমাত্র s এবং p অরবিটাল (মোট 4টি অরবিটাল) বিদ্যমান, যা সর্বোচ্চ 8টি ইলেকট্রন ধারণ করতে পারে। এদের d-অরবিটাল না থাকায় 8টির বেশি ইলেকট্রন ধারণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অষ্টক সূত্রের ব্যতিক্রমের কয়েকটি সমযোজী যৌগের উদাহরণ দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন