অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশ-গ্রহণ সম্পর্কে লেখো।

Gopi

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশ-গ্রহণ সম্পর্কে লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশ-গ্রহণ সম্পর্কে লেখো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশ-গ্রহণ সম্পর্কে লেখো।
Contents Show

অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশ-গ্রহণ সম্পর্কে লেখো।

গান্ধি-পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলন সূত্রে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে শ্রমিক অন্দোলন যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করে। ইতিহাসের এই পর্বে মূলত অর্থনৈতিক কারণে একাধিক শ্রমিক আন্দোলন বা ধর্মঘট সংঘটিত হলেও অসহযোগ -এর মন্ত্রই ছিল এইগুলির পশ্চাতের প্রধান প্রেরণা স্বরূপ।

অসহযোগ পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির শিল্প ধর্মঘট –

1920 খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রায় সমস্ত শিল্পক্ষেত্রেই শ্রমিক শ্রেণি ধর্মঘট পালন করে। এই সময় শুধু বাংলাতেই প্রায় 137টি শ্রমিক ধর্মঘট সংঘটিত হয়। কলকাতার ট্রাম কোম্পানির কর্মীরা প্রথমে মজুরী বৃদ্ধির দাবিতে (নভেম্বর 1920 খ্রিস্টাব্দ) এবং পরে শ্রমিক ছাঁটাই-এর প্রতিবাদে (জানুয়ারি 1921 খ্রিস্টাব্দে) ধর্মঘট ডাকে। 1920 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা, দিল্লি ও সিমলার প্রেসে ধর্মঘট পালিত হয়। এক ইউরোপীয় অফিসার শ্রমিকদের মাথা থেকে গান্ধি টুপি খুলে নিলে তার প্রতিবাদে 1921 খ্রিস্টাব্দের 14 ডিসেম্বর কলকাতা বন্দরের প্রায় 5000 জন শ্রমিক কাজ বন্ধ করে ধর্মঘটে শামিল হয়। 1921 খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে প্রিন্স অফ ওয়েলস ভারত সফরে এলে কংগ্রেস বয়কটের ডাক দেয়। কংগ্রেসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভারতব্যাপী শ্রমিক ধর্মঘট পালিত হয়।

1922 খ্রিস্টাব্দে বোনাসের দাবিতে গুজরাটের সুরাটে প্রায় 3000 জন সুতাকল শ্রমিক ধর্মঘট সংগঠিত করে। 1923 খ্রিস্টাব্দে আহমেদাবাদে বস্ত্রশিল্প ক্ষেত্রে মজুরী শতকরা 20 ভাগ কমিয়ে দেওয়া হলে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেয়। 1924 খ্রিস্টাব্দে মজুরী কমানোর প্রতিবাদে বোম্বাইয়ে বস্ত্রশিল্প কারখানাগুলিতে দেড় লক্ষেরও বেশি শ্রমিক ধর্মঘট শুরু করে। বেঙ্গল-নাগপুর রেলওয়ের শ্রমিকরা একটানা 26 দিন ধর্মঘট চালায়। লিলুয়ার রেল শ্রমিকরা এবং চেঙ্গাইল, বাউরিয়ার চটকল শ্রমিকরাও ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষণে ধর্মঘটে শামিল হয়।

অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির মন্তব্য –

অসহযোগ আন্দোলনে ভারতীয় শ্রমিক শ্রেণি যেভাবে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী রাজনৈতিক লড়াইয়ে নিজেদেরকে শামিল করেছিল, ভারতের জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাসে তা এক অনন্য নজির।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির ভূমিকা কী ছিল?

অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণি ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে, বিশেষত ধর্মঘটের মাধ্যমে। তারা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিবাদ জানায়।

অসহযোগ আন্দোলনের সময় কোন কোন শিল্পক্ষেত্রে ধর্মঘট হয়েছিল?

অসহযোগ আন্দোলনের সময় শিল্পক্ষেত্রে ধর্মঘট –
1. কলকাতার ট্রাম কোম্পানি (1920-1921)।
2. কলকাতা, দিল্লি ও সিমলার প্রেস (1920)।
3. কলকাতা বন্দরের শ্রমিকরা (1921)।
4. সুরাটের সুতাকল শ্রমিক (1922)।
5. আহমেদাবাদের বস্ত্রশিল্প (1923)।
6. বোম্বাইয়ের বস্ত্রশিল্প (1924)
7. বেঙ্গল-নাগপুর রেলওয়ে শ্রমিক (26 দিন ধরে ধর্মঘট)।

প্রিন্স অফ ওয়েলসের ভারত সফরের সময় শ্রমিকরা কী করেছিল?

1921 সালের নভেম্বরে প্রিন্স অফ ওয়েলসের ভারত সফরের সময় কংগ্রেসের বয়কটের ডাকে সাড়া দিয়ে ভারতজুড়ে শ্রমিক ধর্মঘট পালিত হয়।

অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমিকদের অংশগ্রহণের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

এটি ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে শ্রমিক শ্রেণির প্রথম বড়ো ধরনের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ। তারা শুধু অর্থনৈতিক দাবিতেই নয়, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা রাখে।

অসহযোগ আন্দোলনে কোন ঘটনায় কলকাতা বন্দরের শ্রমিকরা ধর্মঘট করেছিল?

1921 সালের 14 ডিসেম্বর এক ব্রিটিশ অফিসার একজন শ্রমিকের গান্ধি টুপি খুলে নিলে প্রতিবাদে কলকাতা বন্দরের প্রায় 5000 শ্রমিক ধর্মঘটে যোগ দেয়।

অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমিকদের প্রধান দাবিগুলো কী ছিল?

অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমিকদের প্রধান দাবিগুলো ছিল –
1. শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি।
2. শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ।
3. শ্রমিকদের বোনাস প্রদান।
4. শ্রমিকদের মজুরি কমানোর বিরোধিতা।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশ-গ্রহণ সম্পর্কে লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশ-গ্রহণ সম্পর্কে লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস্ পার্টি সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে শ্রমিকদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে শ্রমিকদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলোচনা করো।

বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলোচনা করো।

About The Author

Gopi

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

জোয়ারভাটা কীভাবে সৃষ্টি হয় চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।

মানবজীবনের ওপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব লেখো।

সমুদ্রস্রোত উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করো।

ঘনীভবন ও অধঃক্ষেপণ কাকে বলে? ঘনীভবন ও অধঃক্ষেপণের মধ্যে পার্থক্য

নিরক্ষীয়, মৌসুমি, ভূমধ্যসাগরীয় ও তুন্দ্রা জলবায়ুর তুলনামূলক আলোচনা করো।