এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয়েছিল? রশিদ আলি দিবস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয়েছিল? রশিদ আলি দিবস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয়েছিল?
দিল্লির সামরিক আদালত আজাদ হিন্দ ফৌজের ক্যাপ্টেন রশিদ আলিকে 7 বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করলে তার মুক্তির দাবিতে মুসলিম লিগের ছাত্র সংগঠন 1946 খ্রিস্টাব্দের 11 ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়। সেদিন দুপুরে ছাত্ররা মিছিল করে ডালহৌসি স্কোয়ারের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ ছাত্র মিছিলের উপর গুলি চালায়। এর প্রতিবাদে পরদিন অর্থাৎ 12 ফেব্রুয়ারি রশিদ অলি দিবস পালনের ডাক দেওয়া হয়। এই ভাবে রশিদ আলির বিচারকে কেন্দ্র করে 11-13 ফেব্রুয়ারি কলকাতা গণআন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে।
রশিদ আলি দিবস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
রশিদ আলি ছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপ্টেন। ব্রিটিশ সরকারের সামরিক আদালতে তাঁকে 7 বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তার প্রতিবাদে 1946 খ্রিস্টাব্দে 11 থেকে 13 ফেব্রুয়ারী কলকাতায় গণ আন্দোলন শুরু হয় এবং 12 ফেব্রুয়ারী দিনটি রশিদ আলি দিবস হিসেবে পালিত হয়।
রশিদ আলি দিবসের পটভূমি –
আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিচার –
জাপানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আজাদ হিন্দ বাহিনী 1944 খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে ব্রহ্মদেশের সীমান্ত দিয়ে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান শীঘ্রই কোণঠাসা হয়ে পড়লে আজাদ হিন্দ বাহিনী জাপানের সহযোগিতা লাভে বঞ্চিত হয়। ফলে অস্ত্র ও রসদের অভাবে আজাদ হিন্দ বাহিনীর বহু সেনা বিপর্যস্ত হয়ে ব্রিটিশদের হাতে বন্দি হয়। এবং 1945 খ্রিস্টাব্দে দিল্লির লালকেল্লায় বন্দি আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের বিচার শুরু হলে এর প্রতিবাদে সারা ভারত উত্তাল হয়ে ওঠে।
রশিদ আলির সাজা –
বন্দি আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ক্যাপটেন রশিদ আলি। বিচারে তাঁর 7 বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ঘোষণা করা হলে 1946 খ্রিস্টাব্দে12 ফেব্রুয়ারী দিনটি রশিদ আলি দিবস হিসেবে পালিত হয়।
বিক্ষোভ ও বিদ্রোহ –
আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপটেন রশিদ আলিকে ব্রিটিশ সামরিক বিচার বিভাগ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করলে 1946 খ্রিস্টাব্দের 11 থেকে 14 ফেব্রুয়ারি কলকাতা প্রবল প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে। কমিউনিস্ট দলের ছাত্র সংগঠন, মুসলিম লীগের ছাত্র সংগঠন এবং জাতীয় কংগ্রেস একজোট হয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল ।এই ধর্মঘটের সমর্থনে ছাত্র, শ্রমিক, হিন্দু-মুসলিম একত্রিত হয়ে অবরোধ গড়ে তোলে ও প্রতিবাদ মিছিল করে। ট্রাম, বাস ও রিকশা চালকরাও ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়ায়।
শ্রমিকদের যোগদান –
ছাত্রদের এই মিছিলে শ্রমজীবী মানুষরাও যোগ দেন। পুলিশ এই শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর লাঠি ও গুলি চালালে বিক্ষোভকারীরা সরকারি সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগ করে। রশিদ আলির মুক্তির দাবিতে কলকাতা ও শিল্পাঞ্চলগুলিতে শ্রমিক ধর্মঘট পালিত হয়।
জনসভা –
12 ফেব্রুয়ারি ওয়েলিংটন স্কোয়ারে পালন করা হয় ‘রশিদ আলি দিবস’। এইদিন জনসভায় একই মঞ্চে বক্তৃতা দেন গান্ধিবাদী নেতা সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত, কমিউনিস্ট নেতা সোমনাথ লাহিড়ী এবং মুসলিম নেতা হোসেন শহীদ সুরাবর্দি।
আন্দোলনের প্রসার –
ধর্মঘটী ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে কলকাতা ও নিকটবর্তী শিল্পাঞল্পগুলিতেও ধর্মঘট ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছোয় যে, কলকাতার ব্রিটিশ প্রশাসন কার্যত ভেঙে পড়ে। কয়েকদিনের সংঘর্ষে কলকাতায় অন্তত 200 জনের মৃত্যু হয়।
রশিদ আলি দিবসের গুরুত্ব –
- আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপ্টেন এটা ছিল আলির প্রতি অন্যায় বিচারের বিরুদ্ধে একটি সফল প্রতিবাদ।
- এই আন্দোলনে মুসলিম জনতার পাশাপাশি হিন্দু জনগণ, ছাত্র, শ্রমিকদের যোগদানের ফলে সাম্প্রদায়িকতার গণ্ডি ছাড়িয়ে জাতীয় আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল।
- এই আন্দোলনে ছিল মুসলিম লিগ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।
রশিদ আলি দিবসের মূল্যায়ন –
আজাদ হিন্দ বাহিনীর সৈন্য রশিদ আলীর বিচারকে কেন্দ্র করে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, তা ভারতীয় জনমানসে প্রবল উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
রশিদ আলি দিবস কী?
রশিদ আলি দিবস ছিল আজাদ হিন্দ ফৌজের ক্যাপ্টেন রশিদ আলির মুক্তির দাবিতে 1946 সালের 12 ফেব্রুয়ারি কলকাতায় পালিত একটি প্রতিবাদ দিবস। ব্রিটিশ সামরিক আদালত তাকে 7 বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিলে ছাত্র, শ্রমিক ও রাজনৈতিক দলগুলি ব্যাপক বিক্ষোভ করে।
রশিদ আলি কে ছিলেন?
রশিদ আলি ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের একজন ক্যাপ্টেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং দিল্লির সামরিক আদালতে বিচার করা হয়।
রশিদ আলি দিবসের গুরুত্ব কী?
রশিদ আলি দিবসের গুরুত্ব ছিল –
1. এটি ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন।
2. হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির উদাহরণ হিসেবে কাজ করেছিল।
3. আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতি জনসমর্থন বৃদ্ধি পায়।
রশিদ আলি দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?
এটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগ্রাম ও ব্রিটিশ বিরোধী গণজাগরণকে শক্তিশালী করেছিল।
রশিদ আলি দিবস আন্দোলনে কারা অংশগ্রহণ করেছিল?
1. ছাত্র সংগঠন – মুসলিম লিগের ছাত্র সংগঠন, কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র ফেডারেশন।
2. রাজনৈতিক দল – ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, কমিউনিস্ট পার্টি ও মুসলিম লিগ একত্রিতভাবে আন্দোলন করে।
3. শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ – কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকরা ধর্মঘটে যোগ দেয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয়েছিল? রশিদ আলি দিবস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয়েছিল? রশিদ আলি দিবস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন