এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “রশিদ আলি দিবসকে কেন্দ্র করে কলকাতা কীভাবে গণআন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “রশিদ আলি দিবসকে কেন্দ্র করে কলকাতা কীভাবে গণআন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

রশিদ আলি দিবসকে কেন্দ্র করে কলকাতা কীভাবে গণআন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর গণআন্দোলনগুলির মধ্যে আজাদী সেনা রশিদ আলির বিচারকে কেন্দ্র করে কলকাতায় গড়ে ওঠা গণঅভ্যুত্থান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
কলকাতা গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপট –
দিল্লির সামরিক আদালত আজাদ হিন্দ ফৌজের ক্যাপ্টেন রশিদ আলিকে 7 বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দণ্ডিত করলে 1946 খ্রিস্টাব্দের 11-13 ফেব্রুয়ারি কলকাতা গণআন্দোলন উত্তাল হয়ে ওঠে।
কলকাতা গণআন্দোলনের ধর্মঘট কর্মসূচি –
ক্যাপ্টেন রশিদ আলির মুক্তির দাবিতে মুসলিম লিগের ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে 11 ফেব্রুয়ারি ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। সেদিন দুপুরে ছাত্ররা মিছিল করে ডালহৌসি স্কোয়োরের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ ছাত্রদের মিছিলের উপর গুলি চালায়। এর প্রতিবাদে পরদিন রশিদ আলি দিবস পালনের ডাক দেওয়া হয়।
কলকাতা গণআন্দোলনে রশিদ আলি দিবস –
12 ফেব্রুয়ারি, 1946 খ্রিস্টাব্দে পালিত হয় রশিদ আলি দিবস। কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের অ-সামরিক প্রশাসন সেদিন ভেঙে পড়ে। ওইদিন অপরাহ্নে এক বিশাল মিছিল ডালহৌসি স্কোয়ারের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে সশস্ত্র গোর্খা সেনাদল তার গতিপথ রুদ্ধ করে এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সেনার সংঘর্ষ শুরু হয়। সরকারি হিসেবে রশিদ আলি দিবসকে কেন্দ্র করে তিন দিনের এই সংঘর্ষে 84 জন নিহত ও 300 আন্দোলনকারী আহত হলেও বাস্তবে এই সংখ্যা ছিল ঢের বেশি।
রশিদ আলি দিবসকে কেন্দ্র করে কলকাতা গণআন্দোলনের মন্তব্য –
ঐতিহাসিক গৌতম চট্টোপাধ্যায় রশিদ আলি দিবসকে কেন্দ্র করে সংঘটিত এই গণআন্দোলনকে ‘প্রায় বিপ্লব’ আখ্যা দিয়েছেন। আর কিশোর কবি সুকান্ত লিখেছেন – “বিদ্রোহ আজ, বিদ্রোহ চারিদিকে/আমি যাই তারই দিন-পঞ্জিকা লিখে।”
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
রশিদ আলি কে ছিলেন?
রশিদ আলি ছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের (INA) একজন ক্যাপ্টেন, যিনি ব্রিটিশ ভারতের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার তাকে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে দিল্লির সামরিক আদালতে বিচার করে 7 বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়।
রশিদ আলি দিবস কী?
1946 সালের 12 ফেব্রুয়ারি রশিদ আলির মুক্তির দাবিতে কলকাতায় ব্যাপক গণআন্দোলন সংঘটিত হয়। এই দিনটিকে “রশিদ আলি দিবস” হিসাবে পালন করা হয়, যেখানে ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে।
কলকাতায় গণআন্দোলন কেন শুরু হয়?
দিল্লির সামরিক আদালত রশিদ আলির শাস্তির রায় ঘোষণা করলে, মুসলিম লিগের ছাত্র সংগঠন 11 ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটের ডাক দেয়। পুলিশের গুলিবর্ষণে উত্তেজনা বাড়ে এবং 12 ফেব্রুয়ারি রশিদ আলি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কলকাতা গণআন্দোলনে সময় কী ঘটেছিল?
1. 11ফেব্রুয়ারি – পুলিশ ছাত্র মিছিলে গুলি চালায়।
2. 12 ফেব্রুয়ারি (রশিদ আলি দিবস) – কলকাতায় ব্যাপক হরতাল ও মিছিল হয়। ডালহৌসি স্কোয়ারের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় গোর্খা সেনাদল ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে।
3. 13 ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত – তিন দিনের সহিংসতায় সরকারি হিসাবে 84 জন নিহত ও 300 এর বেশি আহত হয় (বাস্তবে সংখ্যা আরও বেশি)।
কলকাতা গণআন্দোলনে আন্দোলনের তাৎপর্য কী?
1. এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতের বৃহত্তম গণআন্দোলনগুলির মধ্যে একটি।
2. ঐতিহাসিক গৌতম চট্টোপাধ্যায় এটিকে “প্রায় বিপ্লব” বলে বর্ণনা করেছেন।
3. ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ প্রকাশ পায়, যা পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করে।
সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে কলকাতা গণআন্দোলনের প্রতিফলন কী?
কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তার কবিতায় এই আন্দোলনের প্রেরণা লিখেছেন –
“বিদ্রোহ আজ, বিদ্রোহ চারিদিকে/আমি যাই তারই দিন-পঞ্জিকা লিখে।”
কলকাতা গণআন্দোলনের ফলাফল কী ছিল?
1. ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারে যে ভারতীয় জনগণ আর তাদের শাসন মেনে নেবে না।
2. আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্যদের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি পায়, যা স্বাধীনতা আন্দোলনে নতুন গতি আনে।
রশিদ আলির পরিণতি কী হয়েছিল?
চাপের মুখে ব্রিটিশ সরকার শেষ পর্যন্ত রশিদ আলিসহ অন্যান্য INA সদস্যদের শাস্তি হ্রাস করে এবং পরবর্তীতে তাদের মুক্তি দেয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “রশিদ আলি দিবসকে কেন্দ্র করে কলকাতা কীভাবে গণআন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “রশিদ আলি দিবসকে কেন্দ্র করে কলকাতা কীভাবে গণআন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন