এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সমযোজী যৌগ গঠনের শর্তগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সমযোজী যৌগ গঠনের শর্তগুলি লেখো।
সমযোজী যৌগ গঠনের শর্তগুলি হল –
- যোজক ইলেকট্রনের সংখ্যা – সমযোজী যৌগ গঠনের ক্ষেত্রে দুটি পরমাণুর প্রত্যেকটির যোজক ইলেকট্রনের সংখ্যা হাইড্রোজেন পরমাণু ব্যতীত 4, 5, 6, 7 হবে যাতে প্রত্যেকটি পরমাণু 4টি, 3টি, 2টি বা 1টি ইলেকট্রন নিয়ে অন্য পরমাণুর সঙ্গে যথাক্রমে 4টি, 3টি, 2টি বা 1টি ইলেকট্রন জোড় গঠন করে নিষ্ক্রিয় গ্যাসের কাঠামো অর্জন করে। পর্যায়-সারণির 14, 15, 16, 17 নং শ্রেণির অধাতব মৌলগুলি যথাক্রমে 4টি, 3টি, 2টি বা 1টি ইলেকট্রন জোড় তৈরি করে সমযোজী যৌগ গঠন করে।
- ইলেকট্রন আসক্তি – সমযোজী বন্ধন গঠনের জন্য দুটি পরমাণুর ইলেকট্রন আসক্তি প্রায় সমান হওয়া প্রয়োজন অর্থাৎ, দুটি পরমাণুর ইলেকট্রন আকর্ষণ ক্ষমতা প্রায় কাছাকাছি হতে হবে।
- তড়িৎ-ঋণাত্মকতা – দুটি পরমাণুর তড়িৎ-ঋণাত্মকতা যদি সমান বা প্রায় সমান হয় তবে একটি পরমাণু থেকে অপর পরমাণুতে ইলেকট্রন গ্রহণ বা বর্জন সম্ভবপর নয়। এরূপ অবস্থায় পরমাণু দুটি সমযোজী বন্ধন গঠন করে।
- আয়নীভবন বিভব – আয়নীভবন বিভব বেশি এরূপ পরমাণুর ক্ষেত্রে ইলেকট্রন বর্জন করে ক্যাটায়নে পরিণত হওয়া খুব শক্ত ব্যাপার। সেজন্য এরূপ পরমাণুগুলি যখন নিজেদের মধ্যে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয় বা অন্য অধাতব পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হয় তখন কখনো আয়নীয় বন্ধন সৃষ্টি করতে পারে না। সেজন্য এই পরমাণুগুলি নিজেদের মধ্যে অথবা অন্য অধাতব পরমাণুর সঙ্গে সমযোজী বন্ধন দ্বারা যুক্ত হয়ে অণু উৎপন্ন করে।
- নিউক্লিও চার্জ ও নিউক্লিয়াস দুটির মধ্যবর্তী দূরত্ব – সমযোজী বন্ধন গঠনের জন্য নিউক্লিয় আধানের পরিমাণ বেশি ও নিউক্লিয়াস দুটির মধ্যে দূরত্ব কম হতে হবে। সমযোজী বন্ধনে যে ইলেকট্রন জোড় গঠিত হয় তা নিউক্লিয়াস দুটির মধ্যবর্তী অঞ্চলে বেশি ঘনীভূত হয় এবং নিউক্লিয়াস দুটি দ্বারা আকৃষ্ট হয়। নিউক্লিয়াস দুটির আধানের পরিমাণ বেশি ও তাদের মধ্যে দূরত্ব কম হলে এই আকর্ষণ বলের মান বেশি হয়, ফলে সমযোজী বন্ধনও দৃঢ় হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
সমযোজী বন্ধন কী?
সমযোজী বন্ধন হল একটি রাসায়নিক বন্ধন যা দুটি পরমাণুর মধ্যে এক বা একাধিক ইলেকট্রন জোড় ভাগাভাগির মাধ্যমে গঠিত হয়। এই বন্ধনের মূল উদ্দেশ্য হল উভয় পরমাণুই যেন স্থিতিশীল নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জন করতে পারে।
সমযোজী যৌগ গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত কোনটি?
সমযোজী যৌগ গঠনের সবচেয়ে মৌলিক শর্ত হল পরমাণু দুটির তড়িৎ-ঋণাত্মকতার মান প্রায় সমান হওয়া। যখন তড়িৎ-ঋণাত্মকতার পার্থক্য খুব কম (সাধারণত 1.7 -এর কম) হয়, তখন একটি পরমাণু অপরটির কাছ থেকে ইলেকট্রন পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারে না, ফলে ইলেকট্রন ভাগাভাগির মাধ্যমে সমযোজী বন্ধন গঠিত হয়।
কোন মৌলগুলি সাধারণত সমযোজী যৌগ গঠন করে?
সাধারণত অধাতব মৌলগুলি নিজেদের মধ্যে বা অন্য অধাতব মৌলের সাথে সমযোজী যৌগ গঠন করে। পর্যায় সারণির 14, 15, 16 ও 17 নং শ্রেণির (যেমন – কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফ্লোরিন, ক্লোরিন, সালফার, ফসফরাস) মৌলগুলি সমযোজী যৌগ গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
হাইড্রোজেন পরমাণু কেন ব্যতিক্রম?
হাইড্রোজেন পরমাণুর যোজক ইলেকট্রন সংখ্যা 1টি। এটি 1টি ইলেকট্রন শেয়ার করে হিলিয়ামের মতো নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করে। কিন্তু অন্যান্য মৌলের জন্য শর্তে 4, 5, 6, বা 7টি যোজক ইলেকট্রনের কথা বলা হয়েছে, যা হাইড্রোজেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাই হাইড্রোজেনকে এই শর্ত থেকে আলাদা করে উল্লেখ করা হয়।
ইলেকট্রন আসক্তি বলতে কী বোঝায় এবং এটি সমযোজী বন্ধনে কীভাবে প্রভাব ফেলে?
ইলেকট্রন আসক্তি হল একটি মৌলের পরমাণুর ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়ন (অ্যানায়ন) গঠন করার প্রবণতা। যদি দুটি পরমাণুর ইলেকট্রন আসক্তি প্রায় সমান হয়, তবে উভয়েরই ইলেকট্রন গ্রহণের প্রবণতা সমান হয়। ফলে কেউই অপরের কাছ থেকে ইলেকট্রন পুরোপুরি নিয়ে নিতে পারে না। এই অবস্থায় তারা ইলেকট্রন ভাগাভাগি করেই স্থিতিশীলতা অর্জন করে, অর্থাৎ সমযোজী বন্ধন গঠন করে।
উচ্চ আয়নীভবন বিভবের পরমাণুগুলি কেন সমযোজী বন্ধন গঠন করে?
আয়নীভবন বিভব হল একটি পরমাণু থেকে ইলেকট্রন সরিয়ে ধনাত্মক আয়ন (ক্যাটায়ন) গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি। উচ্চ আয়নীভবন বিভব মানে পরমাণুটি তার ইলেকট্রন খুব সহজে ছেড়ে দিতে চায় না। তাই এই ধরনের পরমাণুগুলির (বিশেষ করে অধাতু) পক্ষে ইলেকট্রন ত্যাগ করে আয়নীয় বন্ধন গঠন করা কষ্টসাধ্য। এদের জন্য ইলেকট্রন শেয়ার করার মাধ্যমে সমযোজী বন্ধন গঠনই সহজতর পথ।
নিউক্লিয়াসের মধ্যকার দূরত্ব সমযোজী বন্ধনের শক্তির ওপর কী প্রভাব ফেলে?
নিউক্লিয়াস দুটির মধ্যকার দূরত্ব যত কম হবে, ভাগাভাগিকৃত ইলেকট্রন জোড়টি উভয় নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বলের প্রভাবের মধ্যে তত বেশি সময় থাকবে। এর ফলে নিউক্লিয়াস ও ইলেকট্রন জোড়ের মধ্যে আকর্ষণ বল বৃদ্ধি পায়, যা বন্ধনকে আরও দৃঢ় ও স্থিতিশীল করে তোলে। এই কারণেই সাধারণত ছোট পরমাণুগুলির মধ্যে গঠিত সমযোজী বন্ধন (যেমন – H₂, F₂) শক্তিশালী হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সমযোজী যৌগ গঠনের শর্তগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন