এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সমযোজী যৌগের দ্রাব্যতা ধর্ম উল্লেখ করো। সমযোজী যৌগের তড়িৎ পরিবাহিতা ধর্মের উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সমযোজী যৌগের দ্রাব্যতা ধর্ম উল্লেখ করো।
দ্রাব্যতা – সমযোজী যৌগ সাধারণত ধ্রুবীয় দ্রাবকে (যেমন – জলে) দ্রবীভূত হয় না, কিন্তু অধুবীয় দ্রাবকে (অ্যালকোহল, ইথার ইত্যাদি) দ্রবীভূত হয়। যেমন – কার্বন টেট্রাক্লোরাইড জলে অদ্রাব্য কিন্তু বেঞ্জিনে দ্রাব্য। আবার আয়নীয় যৌগ NaCl ধ্রুবীয় দ্রাবক জলে দ্রবীভূত হয়।
সমযোজী যৌগের তড়িৎ পরিবাহিতা ধর্মের উল্লেখ করো।
সমযোজী যৌগে কোনো ইলেকট্রন আলগাভাবে আবদ্ধ না থাকায় সমযোজী যৌগ তড়িৎ পরিবহণ করে না। আবার গলিত বা অধুবীয় দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নিত হয় না। ফলে এরূপ অবস্থায়ও সমযোজী যৌগ তড়িৎ পরিবহণে অক্ষম, তবে কিছু কিছু সমযোজী পদার্থ যেমন – HCl গ্যাস, NH3 গ্যাস ইত্যাদি জলীয় দ্রাবকে জলের অণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে আয়নিত হয় বলে এদের জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
সমযোজী যৌগ সাধারণত কোন ধরনের দ্রাবকে দ্রবণীয় হয়?
সমযোজী যৌগ সাধারণত অধ্রুবীয় দ্রাবক -এ (যেমন – বেঞ্জিন, ইথার, অ্যালকোহল, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড) দ্রবণীয় হয়। এরা ধ্রুবীয় দ্রাবক যেমন জলে সাধারণত অদ্রবণীয়।
সমযোজী যৌগ জলে দ্রবণীয় না হওয়ার মূল কারণ কী?
সমযোজী যৌগ জলে দ্রবণীয় না হওয়ার মূল কারণ হল মেরুতা (Polarity)। জলের অণুগুলি অত্যন্ত ধ্রুবীয় হওয়ায় এটি অন্যান্য ধ্রুবীয় পদার্থ বা আয়নিক যৌগকে দ্রবীভূত করতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ সমযোজী যৌগ অধ্রুবীয় বা খুবই কম ধ্রুবীয় হয়, তাই এদের সাথে জলের আকর্ষণ বল দুর্বল থাকে। ফলে সমযোজী যৌগ জলে দ্রবীভূত হতে পারে না।
সমযোজী যৌগ সাধারণত তড়িৎ অপরিবাহী হয় কেন?
সমযোজী যৌগে ইলেকট্রনগুলি পরমাণুগুলির মধ্যে শক্তভাবে আবদ্ধ (শেয়ার্ড) থাকে। এগুলিতে মুক্ত বা চলমান আয়ন বা ইলেকট্রনের অভাব থাকে। তড়িৎ পরিবহনের জন্য মুক্ত আয়ন বা ইলেকট্রনের প্রয়োজন। তাই, কঠিন, গলিত বা অধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় সমযোজী যৌগ তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না।
চিনি একটি সমযোজী যৌগ হওয়া সত্ত্বেও জলে দ্রবণীয় হয় কেন?
চিনির অণুতে অনেকগুলি -OH (হাইড্রক্সিল) গ্রুপ থাকে যা অত্যন্ত ধ্রুবীয়। এই ধ্রুবীয় গ্রুপগুলি জলের ধ্রুবীয় অণুগুলির সাথে শক্তিশালী হাইড্রোজেন বন্ধন গঠন করতে পারে। এই আকর্ষণ বল এতটাই শক্তিশালী যে এটি চিনির কেলাস জালক ভেঙে দিতে পারে, ফলে চিনি জলে দ্রবীভূত হয়। এটি “লাইক ডিজল্ভস লাইক” নীতির একটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ, যেখানে একটি সমযোজী যৌগ তার ধ্রুবীয় প্রকৃতির কারণে ধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রবণীয় হয়।
আয়নীয় যৌগ এবং সমযোজী যৌগের তড়িৎ পরিবাহিতার মধ্যে মূল পার্থক্যটি কী?
আয়নীয় যৌগ এবং সমযোজী যৌগের তড়িৎ পরিবাহিতার মধ্যে মূল পার্থক্যটি হল মুক্ত আয়নের উপস্থিতি।
1. আয়নীয় যৌগ – গলিত অবস্থায় বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় মুক্ত আয়নে বিচ্ছিন্ন হয়, তাই তড়িৎ পরিবহণ করে।
2. সমযোজী যৌগ – সাধারণত শুষ্ক, গলিত বা অধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় মুক্ত আয়ন তৈরি করে না, তাই তড়িৎ পরিবহণ করে না। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “সমযোজী যৌগের দ্রাব্যতা ধর্ম উল্লেখ করো। সমযোজী যৌগের তড়িৎ পরিবাহিতা ধর্মের উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন