এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অনুশীলন সমিতির ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অনুশীলন সমিতির ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অনুশীলন সমিতির ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো।
বাংলাদেশে কয়েকটি বিপ্লবী গুপ্ত সমিতি গড়ে ওঠে বিংশ শতাব্দীতে। এই গুপ্ত সমিতিগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে অনুশীলন সমিতি।
সূচনা –
1902 খ্রিস্টাব্দের 24 মার্চ উত্তর কলকাতার 12 নং মদন মিত্র লেনে সতীশচন্দ্র বসু অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠা করেন, এই কাজে তার অন্যতম সহায়ক ছিলেন প্রমথনাথ মিত্র।
অনুশীলন সমিতির উল্লেখযোগ্য সদস্য –
বিংশ শতাব্দীর বহু বিখ্যাত বাঙালি বিপ্লবীই ছিলেন এই সমিতির সদস্য। অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্র কুমার ঘোষ, যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখরা ছিলেন এই সংগঠনের সদস্য।
অনুশীলন সমিতির উদ্দেশ্য –
এই সংগঠনের মূল লক্ষ ছিল ভারতের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা এবং তারা মনে করত একমাত্র বিপ্লবী আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই তা পাওয়া সম্ভব; এই সমিতির সদস্যরা লাঠি খেলা এবং ব্যায়াম চর্চা করত, গোপনে অস্ত্রশিক্ষা চর্চা এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পদ্ধতির বিষয়ে আলোচনা করত।
অনুশীলন সমিতির শাখা সংগঠন –
বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন স্থানে অনুশীলন সমিতির বিভিন্ন শাখা তৈরি হয়, পুলিন বিহারী দাসের নেতৃত্বে 1906 খ্রিস্টাব্দে ঢাকা অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়, এ ছাড়া রাজশাহি, চট্টগ্রাম, রংপুর, কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহেও অনুশীলন সমিতির বিভিন্ন শাখা গড়ে ওঠে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অনুশীলন সমিতি কী এবং কখন, কোথায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়?
অনুশীলন সমিতি ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় 1902 খ্রিস্টাব্দের 24 শে মার্চ, কলকাতার 12 নং মদন মিত্র লেনে। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সতীশচন্দ্র বসু এবং অন্যতম প্রধান সহযোগী ছিলেন প্রমথনাথ মিত্র।
অনুশীলন সমিতির প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?
অনুশীলন সমিতির মূল লক্ষ্য ছিল ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা (Complete Independence) অর্জন। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করত যে এই লক্ষ্য অর্জনের একমাত্র পথ হল সশস্ত্র বিপ্লবী সংগ্রাম। গান্ধীজীর অহিংস নীতির বিপরীতে তারা সহিংস পথকেই প্রধান মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করত।
অনুশীলন সমিতির কিছু বিখ্যাত সদস্যের নাম লেখো।
অনুশীলন সমিতির কিছু বিখ্যাত সদস্যের নাম হল –
1. অরবিন্দ ঘোষ (পরবর্তীতে শ্রী অরবিন্দ, আধ্যাত্মিক নেতা),
2. বারীন্দ্র কুমার ঘোষ (অরবিন্দ ঘোষের ছোট ভাই),
3. যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (বাগা যতীন নামে বিখ্যাত),
4. প্রমথনাথ মিত্র (প্রতিষ্ঠাতা সহযোগী),
5. পুলিন বিহারী দাস (ঢাকা শাখার প্রতিষ্ঠাতা)।
অনুশীলন সমিতির সদস্যরা কী ধরনের প্রশিক্ষণ নিতেন?
সমিতির সদস্যরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কঠোর প্রস্তুতি নিতেন। তাদের প্রশিক্ষণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল –
1. লাঠি খেলা (ব্যায়াম ও আত্মরক্ষার জন্য),
2. কঠোর ব্যায়াম চর্চা,
3. গোপনে অস্ত্রশিক্ষা (বন্দুক, বোমা ইত্যাদি চালনা),
4. ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের গুপ্ত কৌশল ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা ও পরিকল্পনা করা।
অনুশীলন সমিতি শুধু কলকাতাতেই সীমাবদ্ধ ছিল কি? এর শাখাগুলি কোথায় গড়ে উঠেছিল?
না, অনুশীলন সমিতি শুধু কলকাতায় সীমাবদ্ধ ছিল না। 1905 সালের বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় এর ব্যাপক প্রসার ঘটে, বিশেষ করে পূর্ববঙ্গে (বর্তমান বাংলাদেশ)। পুলিন বিহারী দাসের নেতৃত্বে 1906 সালে ঢাকায় একটি প্রধান শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রংপুর, কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহে এর গুরুত্বপূর্ণ শাখা গড়ে ওঠে।
ঢাকা অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
ঢাকা অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পুলিন বিহারী দাস। তিনি 1906 সালে এই শাখাটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং পূর্ববঙ্গে বিপ্লবী কার্যক্রম সংগঠিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুশীলন সমিতির ভূমিকা কী ছিল?
অনুশীলন সমিতির ভূমিকা ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ –
1. গুপ্ত বিপ্লবী আন্দোলনের মেরুদণ্ড – এটি ছিল বাংলা তথা সমগ্র ভারতের গুপ্ত বিপ্লবী আন্দোলনের একটি কেন্দ্রীয় ও সংগঠিত কাঠামো।
2. সশস্ত্র সংগ্রামের ধারা প্রবর্তন – তারা সশস্ত্র পথে স্বাধীনতা অর্জনের ধারাটিকে শক্তিশালী করেছিল এবং বহু তরুণকে এই আদর্শে অনুপ্রাণিত করেছিল।
3. ব্রিটিশ ভীতির সৃষ্টি – তাদের সাহসিকতাপূর্ণ (এবং কখনো কখনো সহিংস) কর্মকাণ্ড ব্রিটিশ প্রশাসনের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছিল এবং ভারতীয়দের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করেছিল।
4. জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ – তাদের আত্মত্যাগ ও আদর্শ জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
5. অন্যান্য সংগঠনের অনুপ্রেরণা – তাদের সাফল্য ও কাঠামো পরবর্তীতে গঠিত অন্যান্য বিপ্লবী সংগঠনগুলির জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।
অনুশীলন সমিতির ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
অনুশীলন সমিতি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী অধ্যায়। এটি প্রমাণ করেছিল যে সংগঠিত গুপ্ত বিপ্লবী পদ্ধতিও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে। এর মাধ্যমে গড়ে ওঠা বিপ্লবীরা এবং তাদের আদর্শ পরবর্তী প্রজন্মের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। এটি বাংলায়, বিশেষ করে পূর্ববঙ্গে, জাতীয়তাবাদী ও বিপ্লবী চেতনার এক অত্যন্ত শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অনুশীলন সমিতির ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অনুশীলন সমিতির ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন