এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।
স্বাধীনতার ঊষালগ্নে নিজাম শাসিত হায়দ্রাবাদের তেলেঙ্গানায় অত্যাচারিত, দারিদ্র্য-পীড়িত কৃষকরা শোষক নিজাম সেনা ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে 1946 খ্রিস্টাব্দের জুলাই থেকে 1951 খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর পর্যন্ত সময়কালে যে প্রবল গণআন্দোলনে শামিল হয়েছিল, তা তেলেঙ্গানা আন্দোলন নামে পরিচিত।
তেলেঙ্গানা আন্দোলন
তেলেঙ্গানা আন্দোলনের কারণ –
- জমিদারদের শোষণ ও অত্যাচার – তেলেঙ্গানার হতভাগ্য কৃষককুলকে বেআইনী শোষণ ও জমিদারি জুলুমের শিকার হতে হয়েছিল বহু কাল, যা থেকে মুক্তির আশায় তারা বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।
- বেট্টি প্রথা – ‘বেট্টি’ ছিল জামিদার ও দেশমুখদের জমিতে বেগার খাটার বহুপ্রাচীন প্রথা। এই অন্যায় জুলুমের হাত থেকে রক্ষা পেতে তেলেঙ্গানাবাসী বিদ্রোহে শামিল হয়।
তেলেঙ্গানা আন্দোলনের প্রসার –
বিদ্রোহের মূল কেন্দ্র ছিল ওয়ারঙ্গল, নালগোন্ডা ও খাম্মাম। ক্রমে হায়দ্রাবাদের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিদ্রোহের আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পরে।
তেলেঙ্গানা আন্দোলনের অবসান –
নির্মম দমন নীতি গ্রহণ করেও নিজাম সরকার তেলেঙ্গানার বিদ্রোহকে বাগে আনতে পারেনি। শেষপর্যন্ত 1950 খ্রিস্টাব্দে 26 জানুয়ারি হায়দ্রাবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতভুক্ত হলে 1951 খ্রিস্টাব্দে আন্দোলন প্রত্যাহৃত হয়।
তেলেঙ্গানা আন্দোলনের ফলাফল –
- বেট্টি প্রথার অবসান ঘটে।
- জায়গিরদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়।
- তেলেঙ্গানা থেকে সামন্ততান্ত্রিক শোষণের অবসান ঘটে।
- ভাষাভিত্তিক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের পথ প্রশস্ত হয়।
তেলেঙ্গানা আন্দোলনের তাৎপর্য –
- কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির প্রকাশ – ভারতীয় সমাজের প্রধান চালিকাশক্তি কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির সংঘবদ্ধ আন্দোলনের কাছে শাসকের রক্তচক্ষু যে কতটা অসহায়, তা প্রমাণ করেছিল রক্তাক্ত তেলেঙ্গানা।
- সামাজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা – আন্দোলনকালে সমাজের নিম্নবর্গীয় শ্রেণির মধ্যে যে অভূতপূর্ব ঐক্য স্থাপিত হয়, তা নিজাম শাসনের বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করে।
- নিজাম শাসনের অবসান – তেলেঙ্গানার ফলশ্রুতি স্বরূপ নেহরু-প্যাটেলের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে হায়দ্রাবাদের ভারতভুক্তি ঘটে।
তেলেঙ্গানা আন্দোলনের মন্তব্য –
তেলেঙ্গানা আন্দোলনে কমিউনিস্টদের সদর্থক ভূমিকা কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে নতুন মাত্রা সংযোজিত করে। সুপ্রকাশ রায়ের পরিভাষায়, “তেলেঙ্গানার এই গণসংগ্রামই ভারতে জনগণতন্ত্র স্থাপনের প্রথম প্রয়াস।”
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
তেলেঙ্গানা আন্দোলন কী?
তেলেঙ্গানা আন্দোলন ছিল 1946 সাল থেকে 1951 সাল পর্যন্ত হায়দ্রাবাদ রাজ্যের (নিজাম শাসিত) তেলেঙ্গানা অঞ্চলে কৃষকদের একটি সশস্ত্র গণআন্দোলন। এটি জমিদার, নিজাম সরকার ও রাজাকার বাহিনীর শোষণের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়েছিল।
তেলেঙ্গানা আন্দোলনের প্রধান কারণগুলি কী ছিল?
তেলেঙ্গানা আন্দোলনের প্রধান কারণগুলি ছিল –
1. জমিদারদের শোষণ ও অত্যাচার।
2. বেগার প্রথা (বেট্টি প্রথা)।
3. কৃষকদের উপর করের বোঝা।
4. নিজামের স্বৈরাচারী শাসন।
তেলেঙ্গানা আন্দোলনের নেতৃত্ব কে দিয়েছিলেন?
তেলেঙ্গানা আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (CPI) -এর নেতৃত্বে কৃষকরা সংগঠিত হয়েছিল। রেবতী, চন্দ্র রাজেশ্বর রাও (সি.আর. রাও) এবং অন্যান্য নেতারা এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
তেলেঙ্গানা আন্দোলন কোথায় ছড়িয়ে পড়েছিল?
তেলেঙ্গানা আন্দোলন মূলত ওয়ারঙ্গল, নালগোন্ডা ও খাম্মাম জেলায় ছড়িয়ে পড়েছিল এবং পরে সমগ্র তেলেঙ্গানা অঞ্চলে প্রসারিত হয়।
তেলেঙ্গানা আন্দোলন কীভাবে শেষ হয়?
1948 সালে ভারত সরকার “অপারেশন পোলো” চালিয়ে হায়দ্রাবাদকে ভারতভুক্ত করে। এরপর 1951 সালে কমিউনিস্ট পার্টি আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়।
তেলেঙ্গানা আন্দোলনের ফলাফল কী ছিল?
তেলেঙ্গানা আন্দোলনের ফলাফল ছিল –
1. বেট্টি প্রথা (বেগার খাটা) বিলুপ্ত হয়।
2. জায়গিরদারি প্রথা (সামন্ততান্ত্রিক শোষণ) বন্ধ হয়।
3. হায়দ্রাবাদ ভারতের সাথে একীভূত হয় (1948 খ্রিস্টাব্দে)।
4. পরবর্তীতে ভাষার ভিত্তিতে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের পথ সুগম হয়।
তেলেঙ্গানা আন্দোলনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?
তেলেঙ্গানা আন্দোলনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য –
1. এটি ছিল ভারতে কমিউনিস্ট নেতৃত্বাধীন বৃহত্তম কৃষক বিদ্রোহ।
2. এটি সামন্ততান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে একটি সফল সংগ্রাম ছিল।
3. এটি হায়দ্রাবাদের নিজাম শাসনের পতন ত্বরান্বিত করে।
4. ভারতের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে এটি একটি মাইলফলক।
তেলেঙ্গানা আন্দোলন ও টেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের মধ্যে সম্পর্ক কী?
তেলেঙ্গানা আন্দোলন তেলুগুভাষী মানুষের স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে শক্তিশালী করেছিল, যা পরবর্তীতে 2014 সালে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের দাবিকে এগিয়ে নেয়।
তেলেঙ্গানা আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা কী ছিল?
তেলেঙ্গানা আন্দোলনে নারীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন, বিশেষ করে অন্নপূর্ণামা, রামসাকালী-এর মতো নেত্রীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
তেলেঙ্গানা আন্দোলনকে ভারতের প্রথম গণতান্ত্রিক সংগ্রাম বলা হয় কেন?
কারণ এটি ছিল সাধারণ কৃষক ও শ্রমিকদের স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলন, যা শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে সংঘটিত হয়েছিল।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন