আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘তোমার প্রিয় বই‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

তোমার প্রিয় বই
সুকুমার রায়ের রচনা বৈশিষ্ট্য – বুদ্ধিদীপ্ত ‘ননসেন্স’ রচনার জনক সুকুমার রায়ের রচনা আশৈশব আমাকে এক অপার্থিব হাস্যরসের খনির সন্ধান দিয়ে চলেছে। কেবল শিল্পের জন্য শিল্প নয়, জীবনের আনন্দঘন আপাত সারবত্তাহীন বিষয়সমূহকে নির্ভেজাল হাস্যরসমণ্ডিত করে শিল্প রসোত্তীর্ণ করার বিরল কৃতিত্ব সুকুমার রায়ের রচনার বৈশিষ্ট্য। সাধারণভাবে মনে হয় সব বয়সের মানুষকে সমানভাবে আকর্ষণ করার ক্ষমতা রয়েছে সুকুমার রায়ের। তাঁর ‘আবোল তাবোল’ পড়েনি এমন বাঙালি বিরল।
‘আবোল তাবোল’ -এর বৈচিত্র্য – ‘আবোল তাবোল’ কবিতাটিতেই সমগ্র কাব্যগ্রন্থের মূল সুরটি বিধৃত হয়ে রয়েছে – “আয়রে ভোলা খেয়াল খোলা/স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়/আয়রে পাগল আবোল তাবোল/মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়”। কল্পনা ও স্বপ্নরাজ্যে অবাধ বিচরণের চাবিকাঠি যেন পাঠককুলের হাতে তুলে দিলেন সুকুমার। আর সেই সঙ্গে তাদের নিয়ে যেতে চাইলেন – “আয় যেখানে ক্ষ্যাপার গানে/নাইকো মানে নাইকো সুর,/আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায়/মন ভেসে যায় কোন্ সুদূর।” এইভাবে ‘বেয়াড়া’ ‘সৃষ্টিছাড়া’ ‘নিয়মহারা হিসাবহীন’ রাজ্যে অবাধ যাতায়াত সম্ভব হয়ে ওঠে সুকুমার রায়ের সাহিত্যের ইন্দ্রজালে।
ব্যঙ্গ বনাম নির্মল হাস্যরস – ‘আবোল তাবোল’ গ্রন্থের প্রতিটি কবিতা যেন এই জগতের আনন্দহীন বেঁচে থাকাকে ব্যঙ্গ করে চলে। ‘হুঁকো মুখো হ্যাংলা’, ‘একুশে আইন’, ‘হ-য-ব-র-ল’, ‘গোঁফ চুরি’, ‘সৎপাত্র’, ‘খুড়োর কল’ প্রভৃতি কবিতাগুলির ছত্রে ছত্রে নির্মল হাস্যরস প্রবাহিত হয়েছে। তবে কোনো-কোনো কবিতায় সমকালীন রাজনৈতিক-সামাজিক প্রেক্ষাপটের প্রতি সূক্ষ্ম শ্লেষের ছায়াও কি চোখে পড়ে না? ‘শিব ঠাকুরের আপন দেশে,/আইন কানুন সর্বনেশে!/কেউ যদি যায় পিছলে প’ড়ে/প্যায়দা এসে পাড়ে ধরে,” – এ কি রাষ্ট্রীয় শাসনের গলদের চিত্রটিকেই সূক্ষ্মতমভাবে ইঙ্গিত করে না?
উপসংহার – প্রকৃত প্রস্তাবে সুকুমার রায়ের নানান রচনার মতো ‘আবোল তাবোল’ গ্রন্থের রচনাগুলিও নিছক ‘ননসেন্স ভার্স’ নয়-সমাজচেতনা ও কালচেতনার ফল্গুধারা এর মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে। তীব্র ব্যাঙ্গের কশাঘাত নয়, নির্মল হাস্যরসের মৃদু অথচ অব্যর্থ আঘাতে মানবসমাজের অসংলগ্নতা, তুচ্ছতা ও ক্ষুদ্রতাকে তুলে ধরেছেন কবি। বাঙালির জীবন ও সাহিত্যে হাস্যরসের এই ধারায় সুকুমার রায় এক এবং অদ্বিতীয় বলেই আমার কাছে ‘আবোল তাবোল’ প্রিয় গ্রন্থের তালিকায় শীর্ষস্থান অধিকার করে রয়েছে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘তোমার প্রিয় বই‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন