আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘তোমার প্রিয় ঋতু’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে।

তোমার প্রিয় ঋতু – প্রবন্ধ রচনা
“তোমার নাম জানি নে, সুর জানি।
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তুমি শরৎ প্রাতের আলোর বাণী।।”
ভূমিকা –
বাংলাদেশে ঋতুবৈচিত্র্য প্রকৃতি ও মানবজীবনে নিয়ে আসে বহু বর্ণময়তা। কালবৈশাখীর রুদ্র রূপ থেকে বর্ষার যৌবনোচ্ছ্বাস কিংবা পলাশরাঙা বসন্ত-প্রকৃতির যে নানা প্রকাশ তার আবেদন ও প্রভাবকে কেউই অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু তারই মধ্যে শরৎ আমার প্রিয় ঋতু। গ্রীষ্ম, বর্ষা বা শীতের চরম চরিত্রের পাশে শরৎ তার প্রশান্ত উপস্থিতি আর স্নিগ্ধ মাধুর্য দিয়ে তৈরি করে দেয় হৃদয়ের আনন্দগান।
শরতের আগমন –
বর্ষার প্রমত্ত উচ্ছ্বাসে যখন দিশেহারা মানববিশ্ব, সর্বনাশের প্রহর গোনার সেই দিনযাপন শেষ হয় শরতের আগমনে। আনন্দিত কবিচিত্ত বলে ওঠে – “আজি শরততপনে প্রভাত স্বপনে কী জানি পরান কী যে চায়।” নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলা নিয়ে শরৎ আসে। এক নির্মল প্রসন্নতায় ভরে ওঠে বিশ্ব চরাচর, শোনা যায় শরতের আবাহন গীত –
“আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা –
নবীন ধানের মঞ্জরী দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা।।
এসো গো শারদলক্ষ্মী, তোমার শুভ্র মেঘের রথে,
এসো নির্মল নীলপথে।”
উৎসবের ঋতু শরৎ –
উঠোন জুড়ে পরে থাকা সোনা রঙের রোদ, শিউলি ফুল আর আন্দোলিত কাশফুলে থাকে উৎসবের আগমনি। এই শরতেই হয় দুর্গাপুজো। এই উপলক্ষ্য দেবী দুর্গাকে কন্যা উমারূপে পূজা করা হয়। প্রতি বছর চারদিনের জন্য পিতৃগৃহে আগমন হয় দেবী উমার। কিন্তু দুর্গাপুজোর আনন্দ কোনো ধর্মের সীমায় আবদ্ধ থাকে না। জাতিধর্মনির্বিশেষে সমস্ত মানুষ উৎসবে মেতে ওঠে প্রাণের আনন্দে। নতুন জামাকাপড়পরা, মণ্ডপে ঠাকুর দেখা, বিজয়ার ভাসান-এ সবের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব কখন যেন হয়ে ওঠে শারদোৎসব। শুধু তো আনন্দ উদযাপন নয়, প্রতিমা ও মণ্ডপ নির্মাণ, আলোকসজ্জা, প্রচার থেকে ফুল বিক্রেতা, ঢাকি কত মানুষের দিনান্তের সঞ্চয় সম্ভব হয় এই উৎসবকে কেন্দ্র করে। শরৎ তাই প্রাণেরই নয়, জীবনেরও ঋতু। শুধু দুর্গাপুজো নয়, এই শরতেই বাঙালি আবাহন করে সম্পদের দেবী লক্ষ্মীকে, অশুভ শক্তিকে নাশ করার দেবী নৃমুণ্ডমালিনী শ্যামাকে। এই শরতেই হয় ভাইফোঁটা।
শারদ সাহিত্য এবং অন্য আয়োজন –
শরতের উৎসবমুখরতার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই প্রকাশিত হয় শারদ সাহিত্য। নামি-অনামি নানা পত্রিকার পুজো সংখ্যায় বিখ্যাত লেখকদের পাশাপাশি বহু নতুন লেখকেরও আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই সুযোগে বাঙালিও আরেকবারের জন্য ঝালিয়ে নিতে পারে সাহিত্যপ্রীতিকে। একইভাবে পুজোকে সামনে রেখে প্রকাশিত হয় অসংখ্য গানের অ্যালবাম, আয়োজিত হয় জলসা। এককথায় জীবনের তুচ্ছতা থেকে মুক্তির সুযোগ শরতই এনে দেয় বাঙালিকে।
আজ আমাদের ছুটি ও ভাই –
শরৎ শুধু উৎসব নিয়ে আসে না, এনে দেয় উৎসব উদযাপনের অবকাশও। দেবীর বোধনের সঙ্গে সঙ্গে স্কুল-কলেজে ছুটি পড়ে যায়। কর্মব্যস্ত জীবনকে পিছনে ফেলে কিছুদিনের জন্য হলেও ঘরে ফেরে বাঙালি। তাই শরৎ শুধু প্রাণের নয়, পূর্ণতারও ঋতু।
দেখি নাই কভু দেখি নাই –
গ্রীষ্ম-বর্ষা অথবা শীত বৈপরীত্যের সমাহার। আর শরৎ শুধুই কেয়াপাতার নৌকা ফুল দিয়ে সাজিয়ে মুগ্ধতার কাহিনি। শুধু নির্মলতা আর প্রসন্নতার বিচিত্র বিস্তার। বিক্ষত হৃদয়ে শরৎ শুশ্রূষার প্রলেপ। ভাঙনের পরে সুরের গুঞ্জরণ। তাই শরৎ আমার প্রিয় ঋতু, হৃদয়ের ঋতু।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘তোমার প্রিয় ঋতু’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘তোমার প্রিয় ঋতু’ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা।
আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন