এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “তড়িৎযোজী যৌগে প্রকৃত অণুর অস্তিত্ব নেই কেন? তড়িৎযোজী বন্ধনকে প্রকৃত বন্ধন বলা যায় না কেন?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তড়িৎযোজী যৌগে প্রকৃত অণুর অস্তিত্ব নেই কেন?
তড়িৎযোজী যৌগের প্রতিটি আয়ন যত বেশি সম্ভব তার বিপরীত আধানযুক্ত আয়নকে স্থির তাড়িতিক আকর্ষণ বল দ্বারা নিজের চারপাশে নির্দিষ্ট দূরত্বে টেনে রাখে। এভাবে অসংখ্য বিপরীত আধানযুক্ত আয়নসমূহের একটি নির্দিষ্ট সুশৃঙ্খল ত্রিমাত্রিক অবস্থানের জন্য বিশালাকার কেলাসের সৃষ্টি হয়। কেলাসের আয়নসমূহের সুশৃঙ্খল ত্রিমাত্রিক সমাবেশের ফলে আয়নীয় যৌগের কেলাসে কোনো বিচ্ছিন্ন অণুর অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।
তড়িৎযোজী বন্ধনকে প্রকৃত বন্ধন বলা যায় না কেন?
তড়িৎযোজী যৌগে বিপরীত আধানযুক্ত ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলির মধ্যে তীব্র তাড়িতিক আকর্ষণ বল ক্রিয়া করে। এই আকর্ষণ বলের ক্রিয়ায় আয়নগুলি ত্রিমাত্রিকভাবে নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকৃতিতে সজ্জিত হয় এবং স্থির তাড়িতিক আকর্ষণ বল সবদিকে সমানভাবে ক্রিয়াশীল থাকায় আয়নীয় বন্ধনের কোনো নির্দিষ্ট অভিমুখ নেই। এই কারণে এই বন্ধনকে প্রকৃত বন্ধন বলা যায় না।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
তড়িৎযোজী যৌগ গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায়ও কী আলাদা অণু তৈরি করে না?
না। গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থাতেও তারা স্বতন্ত্র অণু তৈরি করে না। কেলাসের শক্তিশালী আয়নিক জালক ভেঙে যায়, তবে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন মুক্ত হয়ে যায় এবং জলে দ্রবীভূত হলে হাইড্রেশন শেল দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। কিন্তু তারা কখনোই Al₂Cl₆ -এর মতো প্রকৃত কোভ্যালেন্ট ডাইমার অণু তৈরি করে না।
তড়িৎযোজী যৌগ ভঙ্গুর হয় কেন?
কেলাসের ওপর চাপ প্রয়োগ করলে এক স্তরের আয়ন অন্য স্তরের ওপর সরে যায়। তখন একই আধানযুক্ত আয়ন (যেমন – ক্যাটায়ন-ক্যাটায়ন বা অ্যানায়ন-অ্যানায়ন) মুখোমুখি হয়ে যায়। এর ফলে তাদের মধ্যে বিকর্ষণ বল কাজ করে এবং কেলাস ভেঙে যায়। তাই আয়নিক যৌগ ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়।
তড়িৎযোজী যৌগ কঠিন অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবহন করে না, কিন্তু গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় করে কেন?
কঠিন অবস্থায় আয়নগুলো একটি দৃঢ় জালকে স্থির অবস্থায় বাঁধা থাকে, ফলে তারা মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে না এবং বিদ্যুৎ পরিবহন সম্ভব হয় না। কিন্তু গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় জালক ভেঙে যায়, আয়নগুলো মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে, আর এই চলমান আয়নগুলোই বিদ্যুৎ পরিবহন করে।
সব তড়িৎযোজী যৌগের কী একই রকম কেলাস গঠন থাকে?
না। আয়নের আকার ও আধান অনুযায়ী তাদের সজ্জা ভিন্ন হয়। যেমন – NaCl -এর কিউবিক জালক গঠন, CsCl -এর ভিন্ন ধরনের কিউবিক জালক, আবার ZnS -এর অন্য ধরনের জালক গঠন আছে। প্রতিটি গঠনই আয়নগুলির সর্বোচ্চ স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে তৈরি হয়।
তড়িৎযোজী বন্ধনকে ‘প্রকৃত বন্ধন’ না বলার অর্থ কী?
একেবারেই না। এখানে “প্রকৃত বন্ধন” বলতে অভিমুখী (ডাইরেকশনাল) বন্ধন বোঝানো হয়েছে, যেমন – কোভ্যালেন্ট বন্ধন। তড়িৎযোজী বন্ধন অনভিমুখী (নন-ডাইরেকশনাল), কিন্তু এটি অত্যন্ত শক্তিশালী স্থির তড়িৎ-আকর্ষণ বল। এই আকর্ষণ বলই আয়নিক যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক অনেক বেশি হওয়ার প্রধান কারণ।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “তড়িৎযোজী যৌগে প্রকৃত অণুর অস্তিত্ব নেই কেন? তড়িৎযোজী বন্ধনকে প্রকৃত বন্ধন বলা যায় না কেন?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন