জাতীয়তাবাদের উন্মেষে স্বামী বিবেকানন্দের রচিত ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটির অবদান – বর্তমান ভারত কীভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে উদ্দীপ্ত করেছিল?

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “জাতীয়তাবাদের উন্মেষে স্বামী বিবেকানন্দের রচিত ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটির অবদান ব্যাখ্যা করো। বর্তমান ভারত কীভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে উদ্দীপ্ত করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “জাতীয়তাবাদের উন্মেষে স্বামী বিবেকানন্দের রচিত ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটির অবদান ব্যাখ্যা করো। বর্তমান ভারত কীভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে উদ্দীপ্ত করেছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

জাতীয়তাবাদের উন্মেষে স্বামী বিবেকানন্দের রচিত 'বর্তমান ভারত' গ্রন্থটির অবদান ব্যাখ্যা করো। বর্তমান ভারত কীভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে উদ্দীপ্ত করেছিল?
Contents Show

জাতীয়তাবাদের উন্মেষে স্বামী বিবেকানন্দের রচিত ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটির অবদান ব্যাখ্যা করো।

ভূমিকা –

আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ হয়েও বিবেকানন্দের মধ্যে এক গভীর জাতীয়তাবাদী মনোভাব জাগ্রত ছিল। দেশমাতার শৃঙ্খলা মুক্তির জন্য তিনি চিন্তিত ছিলেন। তার বর্তমান ভারত গ্রন্থে এই ছবিই ফুটে ওঠে। 1899 খ্রিস্টাব্দে উদ্বোধন পত্রিকায় এবং পরে 1905 খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থাকারে ‘বর্তমান ভারত’ প্রকাশিত হয়।

স্বদেশচেতনা –

বর্তমান ভারত গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি দেশবাসীর মধ্যে স্বদেশচেতনা ও দেশপ্রেম জাগ্রত করতে চেয়েছিলেন। তিনি ভারতবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন ‘কেবলমাত্র শক্তিমানরাই স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে।’ তিনি আরও বলেন “ওঠা, জাগো যতক্ষণ না কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছোেচ্ছ ততক্ষণ থেমে থেকো না।”

সামাজিক সংহতি –

সমাজের অস্পৃশতা ও জাতিভেদ প্রথা অবসানের জন্য তিমি ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থে বলেছেন “ভুলিও না নীচ জাতি, মুর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি – মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই।” তিনি অনুভব করেছিলেন, ভারত বাসীর গ্লানিমোচনের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন ভারতীয়দের ঐক্য।

দেশের জন্য আত্মত্যাগ –

বর্তমান ভারত গ্রন্থে স্বামী বিবেকানন্দ দেশবাসীকে দেশের জন্য আত্মত্যাগে উদবুদ্ধ করে বলেছেন, “তুমি জন্ম হইতেই মায়ের জন্য বলিপদও।” এবং ” দেশসেবাই হবে তোমাদের প্রধান কর্তব্য।”

দেশ গঠনের আহ্বান –

স্বামী বিবেকানন্দ বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত ভারতবর্ষকে নতুনভাবে গঠন করার জন্য যুবসমাজের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেছিলেন, “এখন সকলের ধ্যানজ্ঞান হওয়া উচিত সব আরাধ্য দেবতার পূজাপাঠ বন্ধ রেখে দেশমাতৃকার মুক্তিসংকল্পে ঝাঁপিয়ে পড়া।”

উপসংহার –

সুতরাং এভাবে স্বামী বিবেকানন্দের দেশাত্মবোধক দর্শন দেশবাসীকে দিয়েছে প্রেরণ, জুগিয়েছে সাহস ও দেখিয়েছে আত্মশক্তি অর্জনের পথ। বিপিনচন্দ্র পালের মতে, তিনি ছিলে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অগ্রদূত। গান্ধিজি বলেছেন, “বিবেকানন্দের রচনাবলি পড়ে মাতৃভূমির প্রতি তার ভালোবাসা সহস্রগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।”

বর্তমান ভারত কীভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে উদ্দীপ্ত করেছিল?

বর্তমান ভারত -এ স্বামীজি ভারত ও বিশ্বের ইতিহাস মন্থন করে ‘শূদ্রের শাসন’কে অবশ্যম্ভাবী বলে ঘোষণা করেছেন। এইভাবে নিপীড়িত ভারতাত্মার জয়গান ঘোষিত হয়েছে তাঁর লেখনীতে। সেই সঙ্গে গ্রন্থের উপসংহারে স্বামীজি দেশবাসীকে স্বদেশমন্ত্র উপহার দিয়েছেন। দেশ ও দেশবাসীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে তিনি লিখেছেন – ‘ভারতবর্ষ আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ-ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ’। স্বামীজির এই স্বদেশমন্ত্রে পরাধীন দেশবাসী পেয়েছে নতুন করে বাঁচার প্রেরণা।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

বর্তমান ভারত গ্রন্থটি কখন প্রকাশিত হয়?

1899 সালে ‘উদ্বোধন’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় এবং 1905 সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশ পায়।

স্বামী বিবেকানন্দ কেন ‘বর্তমান ভারত’ রচনা করেছিলেন?

ভারতবাসীর মধ্যে স্বদেশপ্রেম, আত্মবিশ্বাস ও জাতীয় ঐক্য জাগ্রত করার জন্য তিনি এই গ্রন্থ রচনা করেন।

বর্তমান ভারত গ্রন্থে স্বামী বিবেকানন্দের মূল বার্তা কী ছিল?

বর্তমান ভারত গ্রন্থে স্বামী বিবেকানন্দের মূল বার্তা ছিল—
1. শক্তিমান হওয়া, আত্মবিশ্বাস অর্জন করা।
2. জাতিভেদ ও সামাজিক বিভেদ দূর করা।
3. দেশের জন্য আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের প্রেরণা দেওয়া।

বর্তমান ভারত গ্রন্থটি কীভাবে জাতীয়তাবাদকে প্রভাবিত করেছিল?

1. ভারতীয়দের মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে।
2. সামাজিক বিভেদ দূর করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলে।
3. যুবসমাজকে দেশসেবায় উদ্বুদ্ধ করে।

স্বামী বিবেকানন্দের ‘শূদ্রের শাসন’ ধারণা কী?

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ভারতের নিপীড়িত ও দলিত শ্রেণীর জাগরণ ঘটবে এবং তারাই ভবিষ্যতে শাসনক্ষমতা লাভ করবে। এটি জাতীয়তাবাদকে গণমুখী করে তুলেছিল।

বর্তমান ভারত -এ স্বামীজির স্বদেশমন্ত্র কী ছিল?

বর্তমান ভারত -এ স্বামীজির স্বদেশমন্ত্র ছিল – “ভারতবর্ষ আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ—ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ।”

মহাত্মা গান্ধী ও বিপিনচন্দ্র পাল কী বলেছেন ‘বর্তমান ভারত’ সম্পর্কে?

বিপিনচন্দ্র পাল বলেছেন, স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন “ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অগ্রদূত”গান্ধিজি বলেছেন, “বিবেকানন্দের রচনা পড়ে আমার দেশপ্রেম হাজার গুণ বেড়ে গেছে।”

বর্তমান ভারত গ্রন্থে স্বামীজি যুবসমাজকে কীভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন?

বর্তমান ভারত গ্রন্থে স্বামীজি যুবসমাজকে বলেছেন— “এখন সকলের ধ্যানজ্ঞান হওয়া উচিত সব আরাধ্য দেবতার পূজাপাঠ বন্ধ রেখে দেশমাতৃকার মুক্তিসংকল্পে ঝাঁপিয়ে পড়া।”

স্বামী বিবেকানন্দের মতে ভারতের মুক্তির প্রধান শর্ত কী?

স্বামী বিবেকানন্দের মতে, “শক্তিমান হওয়া, ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং আত্মবিশ্বাসী হওয়াই ভারতের মুক্তির প্রধান শর্ত।”

বর্তমান ভারত গ্রন্থের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

এটি শুধু একটি দার্শনিক গ্রন্থ নয়, বরং ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ভিত্তি রচনা করেছিল এবং পরবর্তী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রেরণা যুগিয়েছিল।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “জাতীয়তাবাদের উন্মেষে স্বামী বিবেকানন্দের রচিত ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটির অবদান ব্যাখ্যা করো। বর্তমান ভারত কীভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে উদ্দীপ্ত করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “জাতীয়তাবাদের উন্মেষে স্বামী বিবেকানন্দের রচিত ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটির অবদান ব্যাখ্যা করো। বর্তমান ভারত কীভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে উদ্দীপ্ত করেছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের ভারতভুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।

দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের ভারতভুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

ভারতের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর উপকূলীয় সমভূমির প্রভাব লেখো।

দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের ভারতভুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।

উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে ভারতে সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে?