এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারতমাতা’ চিত্র কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারতমাতা’ চিত্র কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারতমাতা’ চিত্র কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?
ভারতবাসীর স্বদেশচিন্তা কেবলমাত্র কাব্য, নাটক, উপন্যাস আর প্রবন্ধের রেখায় প্রকাশিত হয়নি; ভারতীয় চিত্রকলাতেও সেদিন লেগেছিল স্বাদেশিকতার ছোঁয়া। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারতমাতা’ চিত্রটি দেশপ্রেমের এইরকমই এক মহাযজ্ঞ।
ভারতমাতা চিত্রের প্রেক্ষাপট –
স্বদেশি আন্দোলনের উন্মাদনার দিনে গোটা বাংলাদেশ যখন মাতৃবন্দনায় উদবেল হয়ে উঠেছে, সেই প্রেক্ষাপটে 1905 খ্রিস্টাব্দে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর অঙ্কন করলেন ‘বঙ্গমাতা’র ছবি। পরে ভগিনি নিবেদিতা ও অন্যান্য বিশিষ্ট ভারত চিন্তকদের সমর্থনে তা পরিচিতি পেল ‘ভারতমাতা’ নামে।

ভারতমাতা চিত্রের বর্ণনা –
গৈরিক বস্ত্রে মণ্ডিতা এই মাতৃমূর্তি চতুর্ভুজা। তার চার হাতের এক-একটিতে ধরা আছে ধানের শিষ, শ্বেতবস্ত্র, পুস্তক এবং জপের মালা অর্থাৎ সন্তানের প্রতি মায়ের দান অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা ও দীক্ষা। ভারতমাতা যেন পৃথিবীর উপর দাঁড়িয়ে, পশ্চাৎপটে সোনালি-হলুদ রঙের মোলায়েম কিন্তু দীপ্ত আবরণ। মাথার পিছনে বৌদ্ধিক জ্যোতির্বলয়, রবিরশ্মির মতো উজ্জ্বল। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। পা দুখানি উজ্জ্বলতাবহ, পদপ্রান্তে প্রস্ফুটিত শ্বেত পদ্ম।
ভারতমাতা চিত্রে জাতীয়তাবোধের জাগরণ –
অবনীন্দ্রনাথের ‘ভারতমাতা’ নয়া জাতীয়তাবাদের প্রতীকে পরিণত হয়, দেশবাসী মাতৃমূর্তি পায়। স্বদেশি বাংলায় এই ছবি নিয়ে শোভাযাত্রা বের হত। এই চিত্রের মধ্য দিয়ে অভয় ও সমৃদ্ধিদানকারী মাতৃদেবীর রূপকে কল্পনা করা হয়েছে। ভারতমাতা এখানে একাধারে মানবী ও দেবী রূপে কল্পিত হয়েছেন। অবনীন্দ্রনাথের ‘ভারতমাতা’ তপস্বীনি। তিনি কল্যাণময়ী ও করুণারূপিনী।
ভারতমাতা চিত্রের সমালোচনা –
অবনীন্দ্রনাথের ‘ভারতমাতা’ -কে ব্রাহ্মসমাজের অনেকেই মূর্তিপূজার বাড়াবাড়ি বলে সমালোচনা করেছেন। মুসলিম সমাজেও ভারতমাতার ‘হিন্দু’ ধর্মীয়রূপকে সমালোচনায় বিদ্ধ করা হয়েছে।
ভারতমাতা চিত্রের মন্তব্য –
নানাবিধ সমালোচনা সত্ত্বেও পরিশেষে বলা যায় জাতীয়তাবোধের উজ্জীবনে ও স্বাদেশিকতার প্রচারে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভারতমাতা চিত্র নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় চিত্রকলার পুনর্জন্ম ঘটেছে তাঁরই হাতে। তিনি যথার্থই ‘নব্যবঙ্গীয় চিত্রকলার অগ্রদূত।’
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারতমাতা’ চিত্রটি কখন আঁকা হয়েছিল?
1905 সালে, স্বদেশি আন্দোলনের সময়, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ভারতমাতা’ চিত্রটি অঙ্কন করেন। প্রথমে এটি ‘বঙ্গমাতা’ নামে পরিচিত ছিল, পরে ভগিনী নিবেদিতার প্রভাবে এটি ‘ভারতমাতা’ নামে জনপ্রিয় হয়।
ভারতমাতা চিত্রে মাতৃমূর্তির বর্ণনা কী?
ভারতমাতা চিত্রে মাতৃমূর্তির বর্ণনা –
1. চতুর্ভুজা মাতৃমূর্তি, গৈরিক বস্ত্রধারিণী।
2. চার হাতে ধানের শিষ (অন্ন), শ্বেতবস্ত্র (বস্ত্র), পুস্তক (শিক্ষা) ও জপমালা (দীক্ষা)।
3. মাথার পিছনে জ্যোতির্মণ্ডল, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা।
4. পদপ্রান্তে শ্বেত পদ্ম ও পটভূমিতে স্বর্ণালি আভা।
ভারতমাতা চিত্রটি কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা ছড়িয়েছিল?
1. স্বদেশি আন্দোলনের সময় ‘ভারতমাতা’ শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত হত, যা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করত।
2. মাতৃরূপে ভারতকে কল্পনা করে দেশপ্রেমের আবেগ জাগ্রত করা হয়েছিল।
3. হিন্দু ও বৌদ্ধ শিল্পরীতির সমন্বয়ে একটি সর্বভারতীয় প্রতীক তৈরি করা হয়েছিল।
ভারতমাতা চিত্রটির সমালোচনা কী ছিল?
ভারতমাতা চিত্রটির সমালোচনা ছিল –
1. ব্রাহ্মসমাজের কিছু ব্যক্তি এটিকে মূর্তিপূজার বাড়াবাড়ি বলে সমালোচনা করেছিলেন।
2. মুসলিম সমাজের কেউ কেউ এটিকে অত্যধিক হিন্দু ধর্মীয় রূপ হিসেবে দেখেছিলেন।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারতমাতা’ চিত্রের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারতমাতা’ চিত্রের ঐতিহাসিক গুরুত্ব –
1. এটি ভারতীয় চিত্রকলায় জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সূচনা করেছিল।
2. ‘ভারতমাতা’ ধারণাটি পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।
3. অবনীন্দ্রনাথকে ‘নব্যবঙ্গীয় চিত্রকলার অগ্রদূত’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
ভারতমাতা চিত্রটি বর্তমানে কোথায় সংরক্ষিত আছে?
এই চিত্রটি কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।
ভারতমাতা ধারণাটি কি শুধুমাত্র হিন্দুদের জন্য ছিল?
অবনীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্য ছিল সর্বভারতীয় প্রতীক তৈরি করা, তবে এর শৈল্পিক রূপে হিন্দু ও বৌদ্ধ প্রভাব থাকায় কিছু সম্প্রদায় এটিকে নিজেদের মতো করে নিতে পারেনি। তবে, এটি মূলত ভারতের ঐক্য ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে গৃহীত হয়েছিল।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারতমাতা’ চিত্র কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভারতমাতা’ চিত্র কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন