ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো।
Contents Show

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো।

নারী সমাজের সক্রিয় তথা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ভারত ছাড়ো আন্দোলনের এক উজ্জ্বল ইতিবৃত্ত।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে জাতীয়স্তরে আন্দোলন –

1942 খ্রিস্টাব্দের 9 আগস্ট আন্দোলন শুরুর দিন ভোর রাতে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের গ্রেপ্তার করা শুরু হলে একমাত্র নারী সদস্যা সরোজিনী নাইডুও গ্রেপ্তার বরণ করেন। প্রথম সারির নেতৃবর্গের অনুপস্থিতিতে অরুণা আসফ আলি গোয়ালিয়র ট্যাঙ্ক ময়দানে কংগ্রেসের পতাকা উত্তোলন করে আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। অন্যদিকে ঊষা মেহেতা গোপন বেতার কেন্দ্র পরিচালনার মাধ্যমে গান্ধিজি ও অন্যান্য জাতীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য নিরন্তর প্রচার করে আন্দোলনকে গণভিত্তি দান করে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বাংলায় নারী সমাজের অংশগ্রহণ –

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পর্বে বাংলার নারীদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মেদিনীপুরের 73 বছরের বৃদ্ধা গান্ধিবাদী মাতঙ্গিনী হাজরা তমলুক থানা অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেও জাতীয় পতাকাকে তিনি ভূ-লুণ্ঠিত হতে দেননি। গ্রাম্য বিধবা মাতঙ্গিনীর এই আত্মত্যাগ তাঁকে ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় করে রেখেছে। অহিংস প্রতিরোধে সত্যবতী দেবী, লাবণ্যপ্রভা দত্ত, মায়া ঘোষ, এলা দত্ত প্রমুখ বঙ্গনারীর ভূমিকা যথেষ্ট প্রশংসনীয়।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় নারীদের আসাম ও পাঞ্জাবে আন্দোলন –

আসামের কিশোরী কনকলতা বড়ুয়া, পাঞ্জাবের গৃহবধূ ভোগেশ্বরী দেবী প্রমুখ নারী সংগ্রামী ভারত ছাড়ো আন্দোলনে শুধু যোগদানই করেননি, পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করে নারী সংগ্রামের ইতিহাসকে গৌরবান্বিত করেছেন।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বৈপ্লবিক আন্দোলনে নারী –

1942 এর সেপ্টেম্বর মাস থেকে ভারত ছাড়ো আন্দোলন ক্রমশ হিংসাত্মক হয়ে উঠতে থাকলে বীরাঙ্গনা নারী সমাজও তাতে পূর্ণ উদ্যমে অংশগ্রহণ করেন। শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষিত কংগ্রেসী নেতৃবৃন্দই নয়, দেশের সর্বস্তরের নারীরা সংঘবদ্ধ হন এই আন্দোলনে। লাঠি খেলা, অস্ত্র চালনা, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির জন্য প্রতিবাদী আন্দোলন গঠন, মিটিং-মিছিলে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসাদান, আন্দোলনের প্রয়োজনে অর্থভাণ্ডার গঠন প্রভৃতির মাধ্যমে ভারতীয় নারীরা ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে এক অনন্য মাত্রা দান করেন। মেদিনীপুরের তমলুকে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের অধীনে গড়ে ওঠে সশস্ত্র নারী বাহিনী-‘ভগিনী সেনা’।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় নারীদের মন্তব্য –

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে ভারতীয় নারী সমাজের মধ্যে প্রবল রাজনৈতিক উদ্দীপনার সঞ্চার করে এবং এই আন্দোলনে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-পেশা-নির্বিশেষে নারী সমাজের বিপুল অংশগ্রহণ ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন মাত্রা সংযোজিত করেছে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ভারত ছাড়ো আন্দোলন কী?

1942 সালের 8 আগস্ট মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে “ভারত ছাড়ো” (Quit India Movement) আন্দোলন শুরু হয়। ব্রিটিশ সরকারকে তাৎক্ষণিকভাবে ভারত ত্যাগের দাবি জানানো হয়। এই আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য ছিল।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা কেমন ছিল?

নারীরা এই আন্দোলনে নেতৃত্বদান, প্রতিবাদ মিছিলে অংশগ্রহণ, গোপন বেতার কেন্দ্র পরিচালনা, সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নেওয়া এবং এমনকি পুলিশের গুলিতে প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে জাতীয় স্তরে কোন নারী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?

1. সরোজিনী নাইডু – কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির একমাত্র নারী সদস্যা ছিলেন এবং গ্রেপ্তার হন।
2. অরুণা আসফ আলি – 9 আগস্ট গোয়ালিয়র ট্যাঙ্ক ময়দানে কংগ্রেসের পতাকা উত্তোলন করে আন্দোলনের সূচনা করেন।
3. ঊষা মেহেতা – গোপন “কংগ্রেস রেডিও” চালু করে ব্রিটিশবিরোধী বার্তা প্রচার করেন।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বাংলায় নারীদের ভূমিকা কী ছিল?

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বাংলায় নারীদের ভূমিকা ছিল –
1. মাতঙ্গিনী হাজরা – 73 বছর বয়সে মেদিনীপুরের তমলুক থানা অভিমুখে মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।
2. সত্যবতী দেবী, লাবণ্যপ্রভা দত্ত, মায়া ঘোষ, এলা দত্ত – অহিংস ও সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নেন।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে আসাম ও পাঞ্জাবে নারীদের ভূমিকা কী ছিল?

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে আসাম ও পাঞ্জাবে নারীদের ভূমিকা ছিল –
1. কনকলতা বড়ুয়া (আসাম) – 17 বছর বয়সে পতাকা মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।
2. ভোগেশ্বরী দেবী (পাঞ্জাব) – গৃহবধূ হয়েও আন্দোলনে যোগ দিয়ে গ্রেপ্তার হন ও নির্যাতনের শিকার হন।

নারীরা সশস্ত্র সংগ্রামে কীভাবে অংশ নিয়েছিলেন?

1. মেদিনীপুরে “ভগিনী সেনা” নামে নারী বাহিনী গঠিত হয়, যারা অস্ত্র চালনা ও গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেয়।
2. নারীরা লাঠি খেলা, বোমা তৈরি ও পুলিশি আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের ঐতিহাসিক গুরুত্ব হল –
1. নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের রাজনৈতিক সচেতনতা ও সাহসিকতার পরিচয় দেয়।
2. জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে নারীরা একত্রিত হয়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারীদের ত্যাগ কীভাবে স্মরণীয়?

মাতঙ্গিনী হাজরা, কনকলতা বড়ুয়া, অরুণা আসফ আলির মতো নারীদের আত্মত্যাগ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছে। তাদের সংগ্রাম নারীশক্তির অনন্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

দেশীয় রাজ্য বলতে কী বোঝো? দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল?

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল?

ভারত-বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব ঠিক কী ছিল, তাই নিয়ে আলোচনা করো।

দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব আলোচনা করো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল?

ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

ভাঙ্গর ও খাদার বলতে কি বোঝো? ভাঙ্গর ও খাদারের মধ্যে পার্থক্য

দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব আলোচনা করো।