অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি সম্পর্কে টীকা লেখো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি সম্পর্কে টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি সম্পর্কে টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি সম্পর্কে টীকা লেখো।
Contents Show

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি সম্পর্কে টীকা লেখো।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম অঙ্গ রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির প্রেক্ষাপট –

কার্জনের বঙ্গভঙ্গের অপসিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বাঙালি ছাত্রসমাজ ব্যাপক মাত্রায় বয়কট আন্দোলনে শামিল হলে ব্রিটিশ সরকার ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। আন্দোলন থেকে ছাত্র সমাজকে দূরে রাখার উদ্দেশ্যে একে একে জারি করা হয় দমনমূলক কার্লাইল সার্কুলার (10 অক্টোবর, 1905 খ্রিস্টাব্দ), লিওন সার্কুলার (16 অক্টোবর, 1905 খ্রিস্টাব্দ) এবং পেডলার সার্কুলার (21 অক্টোবর, 1905 খ্রিস্টাব্দ)। এই সকল সার্কুলার জারি করে ছাত্রদের সভা-সমিতিতে যোগদান, ‘বন্দেমাতরম্’ ধ্বনি দেওয়া, বিদেশি পণ্যাগারের সামনে পিকেটিং প্রভৃতির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় এবং বলা হয় যে, নির্দেশ অমান্য করলে বেত্রাঘাত, বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার, শিক্ষকদের চাকুরি থেকে অপসারণ-এমনকী সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলির যাবতীয় অনুদান ও অনুমোদন বাতিল করা হবে।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠা –

সরকারের ‘ফতোয়ারাজে’র বিরুদ্ধে রিপন কলেজের ছাত্রনেতা শচীন্দ্রপ্রসাদ বসুর নেতৃত্বে 1905 খ্রিস্টাব্দের 4 নভেম্বর কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির সাংগঠনিক কাঠামো –

বিশিষ্ট ব্রাহ্মনেতা কৃষ্ণকুমার মিত্র এই সংগঠনের সভাপতি এবং শচীন্দ্রপ্রসাদ স্বয়ং এর সম্পাদক নিযুক্ত হন। কৃষ্ণকুমার মিত্রের বাড়িতেই ছিল এই সমিতির কার্যালয়।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির কর্মসূচি –

এই ছাত্র সংগঠনের প্রধান কর্মসূচি ছিল-

  • স্বদেশি আন্দোলনে যোগদানের ‘অপরাধে’ বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত ছাত্রদের বিকল্প শিক্ষার ব্যবস্থা করা;
  • বক্তৃতা, সঙ্গীত, শোভাযাত্রার মাধ্যমে দেশবাসীর মধ্যে স্বদেশির আদর্শ প্রচার;
  • বিদেশী পণ্যাগারের সামনে পিকেটিং;
  • শহর ও গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বদেশি বস্ত্র সরবরাহ করা প্রভৃতি।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির সক্রিয়তা –

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির উদ্যোগে ব্রিটিশ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নতুন গতি আসে। শচীন্দ্রপ্রসাদ 1906 খ্রিস্টাব্দে একটি জাতীয় পতাকার নকশাও অঙ্কন করেন। তাঁর অতিসক্রিয়তায় ব্রিটিশ সরকার 1908 খ্রিস্টাব্দে তাঁকে গ্রেপ্তার করে রাওয়ালপিন্ডির জেলে বন্দি করে।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির মন্তব্য –

ব্রিটিশের চণ্ডনীতি, শচীন্দ্রপ্রসাদের গ্রেপ্তার এবং সর্বোপরি বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তের প্রত্যাহার অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির সাফল্য এবং প্রাসঙ্গিকতাকে সীমিত করলেও ঔপনিবেশিক বাংলা তথা ভারতের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে এর অবদান কোনোমতেই অস্বীকার করা যায় না।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি কী?

এটি ছিল একটি ছাত্র সংগঠন, যা 1905 সালের 4 নভেম্বর কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ সরকারের দমনমূলক সার্কুলারগুলির (কার্লাইল, লিওন ও পেডলার সার্কুলার) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং স্বদেশি আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এটি গঠিত হয়েছিল।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন দমনের জন্য ছাত্রদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে (যেমন – সভা-সমিতি নিষিদ্ধ, ‘বন্দেমাতরম্’ ধ্বনি দেওয়া বন্ধ, পিকেটিং বন্ধ ইত্যাদি)। এর প্রতিবাদে এবং ছাত্রদের স্বদেশি আন্দোলনে যুক্ত রাখতেই এই সংগঠন গড়ে তোলা হয়।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?

রিপন কলেজের ছাত্রনেতা শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু এর নেতৃত্বে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির প্রধান কর্মসূচি কী ছিল?

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির প্রধান কর্মসূচিগুলি ছিল —
1. স্বদেশি আন্দোলনে যুক্ত হওয়ায় বহিষ্কৃত ছাত্রদের জন্য বিকল্প শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
2. বক্তৃতা, সঙ্গীত ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে স্বদেশি আদর্শ প্রচার।
3. বিদেশি পণ্য বর্জন ও পিকেটিং করা।
4. গ্রামে-গঞ্জে স্বদেশি কাপড় বিতরণ।

শচীন্দ্রপ্রসাদ বসুর বিশেষ অবদান কী ছিল?

তিনি 1906 সালে একটি জাতীয় পতাকার নকশা তৈরি করেন এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ায় 1908 সালে তাঁকে গ্রেপ্তার করে রাওয়ালপিন্ডি জেলে পাঠানো হয়।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির গুরুত্ব কী?

এটি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনকে সংগঠিত করেছিল এবং স্বদেশি চেতনা ছড়িয়ে দিয়েছিল। যদিও বঙ্গভঙ্গ রদ (1911 খ্রিস্টাব্দ) ও সরকারি দমননীতির কারণে এর প্রভাব সীমিত হয়ে পড়ে, তবুও এটি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্রদের ভূমিকাকে উজ্জ্বল করে তোলে।

ব্রিটিশ সরকারের দমনমূলক সার্কুলারগুলি কী কী ছিল?

ব্রিটিশ সরকারের দমনমূলক সার্কুলারগুলি ছিল –
1. কার্লাইল সার্কুলার (10 অক্টোবর, 1905 খ্রিস্টাব্দ),
2. লিওন সার্কুলার (16 অক্টোবর, 1905 খ্রিস্টাব্দ),
3. পেডলার সার্কুলার (21 অক্টোবর, 1905 খ্রিস্টাব্দ),
এই সার্কুলারগুলির মাধ্যমে ছাত্রদের রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ করা হয় এবং শাস্তির হুমকি দেওয়া হয়।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির অবদান কী?

এটি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল এবং স্বদেশি আন্দোলনকে জনপ্রিয় করেছিল। এটি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্রদের অংশগ্রহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি সম্পর্কে টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি সম্পর্কে টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – রচনাধর্মী প্রশ্ন

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – স্তম্ভ মেলাও

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – সত্য মিথ্যা