শ্রীমতী লক্ষ্মী স্বামীনাথন স্মরণীয় কেন?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “শ্রীমতী লক্ষ্মী স্বামীনাথন স্মরণীয় কেন?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “শ্রীমতী লক্ষ্মী স্বামীনাথন স্মরণীয় কেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

শ্রীমতী লক্ষ্মী স্বামীনাথন স্মরণীয় কেন?
Contents Show

শ্রীমতী লক্ষ্মী স্বামীনাথন স্মরণীয় কেন?

ভূমিকা –

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নারী বাহিনীর ভূমিকা এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এই বাহিনীর নেত্রী ছিলেন মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা ও সিঙ্গাপুরে কর্মরত চিকিৎসক ডাঃ লক্ষ্মী স্বামীনাথন বা লক্ষ্মী সায়গল। এটিই ছিল ‘এশিয়ার প্রথম নারী বাহিনী’।

পরিকল্পনা –

সুভাষচন্দ্র মনে করতেন যে দেশের মুক্তি সংগ্রামে নারী-পুরুষ সকলের সমান অধিকার রয়েছে। এই ভাবনা থেকে আজাদ হিন্দ বাহিনীতে তিনি একটি নারী বিভাগ গঠনে উদ্যোগী হন। 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের নেত্রী ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈয়ের স্মৃতিতে এই বাহিনীর নাম রাখেন ‘ঝাঁসির রানি ব্রিগেড’ বা ঝাঁসি বাহিনী।

ঝাঁসির রানি ব্রিগেড গঠন –

1943 খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্র সিঙ্গাপুরে এসে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়কত্বের পদ লাভকরেন। 12 জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেন ঝাঁসির রানি বাহিনী। নানা ধর্ম ও প্রদেশের সম্ভ্রান্ত ঘরের প্রায় 1500 নারী এই বাহিনীতে যোগ দেন।

বিশিষ্ট সমাজসেবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী স্বামীনাথনের কন্যা ডাঃ লক্ষ্মী স্বামীনাথনকে এর নেতৃত্বপদ দান করা হয়। বেলা দত্ত হাবিলদারের পদ লাভ করেন। বাঙালি নারীদের মধ্যে প্রতিমা সেন, মমতা মেহতা, অরুণা গঙ্গোপাধ্যায়, করুণা মুখোপাধ্যায়, মায়া বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ ছিলেন এই বাহিনীর সমস্যা। এই বাহিনীর সদস্যগণ ‘রানি’ নামে পরিচিত ছিলেন।

প্রশিক্ষণ –

এই বাহিনীকে সিঙ্গাপুর, ব্যাঙ্কক, রেঙ্গুন, বার্মার জঙ্গলে প্রশিক্ষণদানের ব্যবস্থা হয়। নেতাজি এই বাহিনীর হাতে তুলেদেন বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধাস্ত্র, যেমন – রাইফেল, বন্দুক, পিস্তল, টিমগান, হ্যান্ড গ্রেনেড প্রভৃতি।

অভিযান –

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আই এন এ বাহিনী এবং লক্ষ্মী সায়গলের নেতৃত্বে ঝাঁসি বাহিনীও ব্রহ্মদেশের দিকে এগোতে থাকে। নেতাজির স্লোগান ‘কদম কদম বাড়ায়ে যা’, ‘তিরঙ্গা ঝাণ্ডা উঁচা রহে’ ধ্বনি কণ্ঠে এই বাহিনী এগিয়ে চলে।

বিপর্যয় –

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির হাতে জাপান কোণঠাসা হয়ে পড়লে স্বদেশ রক্ষার জন্য জাপানি সেনাও স্বদেশমুখী হয়। ফলে আই এন এ বাহিনীও সংকটের মুখে পড়ে। ঝাঁসি বাহিনীর সেনানীরা জঙ্গলের লতাপাতা ফলমূল খেয়েও যুদ্ধ চালিয়ে যান।

শেষ পর্যন্ত আই এন এ বাহিনীর পরাজয় ঘটলে 1945 খ্রিস্টাব্দের মে মাসে ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী স্বামীনাথন ইংরেজ সেনার হাতে ধরা পড়েন ও বার্মার জেলে বন্দি হন।

উপসংহার –

লক্ষ্মী স্বামীনাথনের নেতৃত্বে ঝাঁসির রানি ব্রিগেড মাতৃভূমিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে পারেনি সত্য, তবে এই বাহিনীর বীরত্ব, আত্মত্যাগ চিরকাল চিরশ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। 1998 খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মবিভূষণ’ উপাধি দান করে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

লক্ষ্মী স্বামীনাথন কে ছিলেন?

লক্ষ্মী স্বামীনাথন (পরবর্তীতে লক্ষ্মী সায়গল) ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী, চিকিৎসক এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের ‘ঝাঁসির রানি ব্রিগেড’-এর নেত্রী।

শ্রীমতী লক্ষ্মী স্বামীনাথন বিখ্যাত কেন?

তিনি বিখ্যাত কারণ –
1. আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম ও একমাত্র নারী বাহিনী ‘ঝাঁসির রানি ব্রিগেড’ -এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
2. ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করেছিলেন।
3. পরবর্তীতে একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সমাজসেবী হিসেবে কাজ করেছেন।

ঝাঁসির রানি ব্রিগেড কী?

এটি ছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু গঠিত আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনী, যা 1857 সালের বিদ্রোহের নেত্রী রানি লক্ষ্মীবাইয়ের নামে নামকরণ করা হয়। এই বাহিনীতে প্রায় 1500 নারী যোদ্ধা ছিলেন।

লক্ষ্মী স্বামীনাথন কীভাবে ঝাঁসির রানি ব্রিগেডের নেতৃত্ব পান?

তিনি মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেছিলেন এবং সিঙ্গাপুরে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর দক্ষতা ও দেশপ্রেম দেখে তাঁকে এই দায়িত্ব দেন।

ঝাঁসির রানি ব্রিগেডের ভূমিকা কী ছিল?

ঝাঁসির রানি ব্রিগেডের ভূমিকা ছিল –
1. সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
2. যুদ্ধক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
3. আহত সৈন্যদের চিকিৎসা করতেন।

আজাদ হিন্দ ফৌজের পতনের পর লক্ষ্মী সায়গলের কী হয়েছিল?

1945 সালে তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন এবং বার্মার (মিয়ানমার) কারাগারে বন্দি হন। পরে মুক্তি পান।

স্বাধীনতার পর লক্ষ্মী সায়গল কী করেছিলেন?

1. তিনি চিকিৎসক হিসেবে কাজ চালিয়ে যান।
2. কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার সাথে যুক্ত ছিলেন।
3. 1971 সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বাংলাদেশি শরণার্থীদের সহায়তা করেন।

লক্ষ্মী সায়গলকে কোন সম্মানে ভূষিত করা হয়?

1998 সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মবিভূষণ (দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার) প্রদান করে।

লক্ষ্মী স্বামীনাথনের ব্যক্তিগত জীবন কেমন ছিল?

তিনি কর্নেল প্রেম কুমার সায়গলকে বিয়ে করেন, যিনি আজাদ হিন্দ ফৌজের একজন অফিসার ছিলেন।

লক্ষ্মী সায়গলের উত্তরাধিকার কী?

তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের অবদানের প্রতীক এবং আজও নারীশক্তির অনুপ্রেরণা হিসেবে স্মরণীয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “শ্রীমতী লক্ষ্মী স্বামীনাথন স্মরণীয় কেন?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “শ্রীমতী লক্ষ্মী স্বামীনাথন স্মরণীয় কেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।

কীভাবে কাশ্মীর সমস্যার সৃষ্টি হয় অথবা কাশ্মীর কিভাবে ভারতভুক্ত হয়

কাশ্মীর কিভাবে ভারতভুক্ত হয়?

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (1950 খ্রিস্টাব্দ) উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে কতদূর ফলপ্রসূ হয়েছিল?

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (1950 খ্রিস্টাব্দ) উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে কতদূর ফলদায়ক হয়েছিল?

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।

কাশ্মীর কিভাবে ভারতভুক্ত হয়?

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (1950 খ্রিস্টাব্দ) উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে কতদূর ফলদায়ক হয়েছিল?

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় কীভাবে দেশভাগের স্মৃতি বর্ণিত হয়েছে?

উদ্‌বাস্তু সমস্যার স্বরূপ নিয়ে ভারতের পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা করো।