নবম শ্রেণি বাংলা – আমরা – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের পঞ্চম পাঠের তৃতীয় অধ্যায়, ‘আমরা’ -এর কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে।

নবম শ্রেণি - বাংলা - আমরা - রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
Contents Show

‘আমরা’ কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো।

ভূমিকা – সাহিত্যক্ষেত্রে তার ভাববস্তুর পরিচয় নামকরণেই পাওয়া যায়। তাই সাহিত্যক্ষেত্রে নামকরণ হয়ে ওঠে বিষয়ের প্রতিবিম্ব, ভাবের প্রতিফলিত রূপ।

ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘আমরা’ কবিতাতে বাঙালি জীবনের জয়গাথা রচনা করেছেন। উত্তম পুরুষের বহুবচন ‘আমরা’ শব্দটিকে শিরোনামে ব্যবহার করা হয়েছে। ‘আমরা’ বলতে কবি বঙ্গবাসী বা বাঙালিদের বুঝিয়েছেন। সাতটি স্তবক জুড়ে 64 পঙক্তির এ কবিতায় তিনি বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি-শিল্প-বিজ্ঞানের ঔজ্জ্বল্য এবং সফল বাঙালি জীবনের জয়গান গেয়েছেন।

বিষয়বস্তু – বাংলার অবস্থান তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ণনার মধ্যে দিয়ে কবি শুরু করেছেন আলোচ্য কবিতাটি। বাঙালি জাতির ইতিহাস, তাদের বীরত্ব, স্বভূমিকে রক্ষার জন্য আত্মবলিদান বর্ণিত হয়েছে এখানে। অবদমিত ও তথাকথিত অনার্য জাতি বাঙালি কীভাবে নিজের সাধনায় ও প্রতিভায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল কবি তা ব্যক্ত করেছেন কবিতার প্রতিটি ছত্রে।

বাঙালির ঐতিহ্যে, শিল্প সংস্কৃতি, স্থাপত্য আজও ভারতীয় সভ্যতার ইতিহাসে উজ্জ্বল। ধমচর্চায়, জ্ঞানচর্চায়, বিজ্ঞান সাধনায় লোকজ সংগীত রচনায় বাঙালির অস্তিত্ব বিশ্বপ্রাঙ্গণে গৌরবোজ্জ্বল। মহামারি, দুর্ভিক্ষ, মন্বন্তরের করাল ছায়াকে উপেক্ষা করে তারা জীবনীশক্তি জ্বালিয়ে রেখেছে। দেবতা তাদের সখ্য, বাঙালি তার কুটিরে মানবলীলায় দেবলীলা উপলব্ধি করেছে।

কবি আশা করেছেন অতীতের ঐতিহ্যকে বাঙালি ভবিষ্যতেও বজায় রাখবে। তারা আবার হৃত গৌরব অর্জন করবে নিজের প্রচেষ্টায়, বাহুবল বা বিদ্বেষ দিয়ে নয়। মহামিলনের গানে তারাই বিশ্বমানবকে একসূত্রে বেঁধে রাখবে।

নামকরণের সার্থকতা – কবির বিশ্বাস অতীত থেকে আজ এবং আগামীতেও বাঙালির এই সাফল্য চিরপ্রবহমান। তিনি তাই বলেছেন – ‘বিধাতার বরে ভরিবে ভুবন বাঙালির গৌরবে।’ বঙ্গবাসীর এই গৌরব গাথা কবিতার বিষয়বস্তুর মূল কেন্দ্রবিন্দু। তাই কবিতার শিরোনাম ‘আমরা’ হওয়া তাই সঙ্গত হয়েছে। সাহিত্যশিল্পের নামকরণ স্রষ্টার অভিপ্রায়ের প্রকাশক। স্বজাতির মাহাত্ম্যকথা প্রচার করতে গিয়ে কবি বাঙালিয়ানা ও বাঙালির ঐক্যবদ্ধতায় আস্থা রেখেছেন। সেই আস্থা প্রকাশে তিনি কবিতায় মোট 21 বার ‘আমরা’, ‘আমাদের’, ‘মোরা’, ‘মোদের’ ইত্যাদি সর্বনাম ধ্রুবপদের মতো ব্যবহার করেছেন। বাঙালি জাতির সর্বাঙ্গীণ আত্মকথনের প্রকাশে তাই নামকরণটিও উপযুক্ত হয়ে উঠেছে।

‘আমরা’ কবিতায় কবির ইতিহাসচেতনার কী পরিচয় পাওয়া যায় লেখো।

অথবা, ‘আমরা’ কবিতায় কবি বাঙালির কৃতিত্বকে যেভাবে বর্ণনা করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

ভূমিকা – কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘আমরা’ কবিতায় বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল অতীত তথা ইতিহাসের বর্ণনা করে পরাধীন মানুষের মনে স্বজাত্যবোধের সঞ্চার করতে চেয়েছেন। আত্মবিশ্বাসহীন বাঙালির সামনে তার পূর্বপুরুষের বীরগাথা তুলে ধরতে ইতিহাসের আশ্রয় নিয়েছেন কবি। বলিষ্ঠ বাচনভঙ্গিতে এ কবিতায় কবি বাঙালির একটি আদর্শ ভাবমূর্তি নির্মাণ করতে পেরেছেন।

সংগ্রামের ইতিহাস – প্রথমেই তিনি বলেছেন বাঙালি জাতির প্রাচীনত্বের ইতিহাস। বাঘ, সাপ ইত্যাদি বন্যজন্তুসংকুল এলাকায় বাঙালি বাস করত। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে জয় করেছে বাঙালি। তারপর তিনি বলেছেন অনার্য বাঙালির আর্য আক্রমণের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথা –

‘আমাদের সেনা যুদ্ধ করেছে সজ্জিত চতুরঙ্গে, ক
দশানন জয়ী রামচন্দ্রের প্রপিতামহের সঙ্গে।’

বাঙালির বীরসন্তান বিজয়সিংহ পিতার কাছ থেকে বিতাড়িত হয়ে লঙ্কাপ্রদেশে যান, সেখানে বাহুবলে তিনি নতুন রাজ্য স্থাপন করেন। তার নামানুযায়ী লঙ্কাপ্রদেশের নাম হয় সিংহল। মগ দস্যুদের আক্রমণ প্রতিরোধকারী বাঙালির কথা কবি যেমন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, তেমনই বলেছেন চাঁদ রায় ও প্রতাপাদিত্যের কথা। শ্রীপুরের রাজা কেদার রায়ের ভাই চাঁদ রায় মোগলের সঙ্গে যুদ্ধে মারা গেলেও কেদার মোগলদের বাংলা থেকে দূর করেন। অপর এক ভূঁইয়া প্রতাপাদিত্য মোগলদের যুদ্ধে পরাস্ত করেছিলেন।

জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিহাস – শুধু সংগ্রামের ইতিহাস নয় বাঙালি জাতি জ্ঞান-বুদ্ধি শিক্ষায় শ্রেষ্ঠত্বের শীর্ষে অবতরণ করেছিল। আদি বিজ্ঞান সাংখ্যকার কপিল। মুনির আশ্রম এই বাংলায় অবস্থিত। আবার বাঙালি কিশোর রঘুনাথ মিথিলার তাকির্ক পণ্ডিতকে পরাজিত করে ইতিহাস রচনা করেন। অন্যদিকে বাঙালি বৌদ্ধভিক্ষুক অতীশ দীপঙ্কর সুদূর তিব্বতে জ্ঞানের আলো প্রসারিত করেন। জয়দেব কবির কোমল শান্ত মধুর পদাবলী আজও বিশ্বসাহিত্য দরবারে সমাদর পেয়ে এসেছে। বিশ্ববিজ্ঞান চর্চায় বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু ও প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের অবদান অনস্বীকার্য। তাদের আবিষ্কার আধুনিক বিজ্ঞানের প্রগতির অন্যতম বাহক।

শিল্পের ইতিহাস – বাঙালি স্থাপত্য-ভাস্কর্য ও শিল্পের ক্ষেত্রেও ইতিহাসে স্বনামধন্য হয়েছে। বাঙালির শিল্প শৈলীর নিদর্শন বহন করেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ার অবস্থিত ‘বরভূত্রের’ স্তূপ ও আঙ্কোরভাট মন্দির। পাল যুগের শ্রেষ্ট ভাস্কর ধীমান ও তার পুত্র বিটপাল তাদের সৃষ্টির জন্য অবিস্মরণীয়। বাঙালি রাজা বিজয়সিংহের চিত্র অঙ্কিত রয়েছে অজন্তার গুহাচিত্রে কোনো বাঙালি পটুয়ার পরশে।

বাংলার নিজস্ব সংগীত বাউল বিশ্ব প্রাঙ্গনে মানবমনের নিভৃত বাণীর প্রচার করেছে।

মানবতার ইতিহাস – মানুষের মাঝে সমন্বয় ও ঐক্য স্থাপনে মানবধর্মাবতার শ্রীচৈতন্যদেব যেমন ব্রতী হয়েছিলেন। তেমনি যুগপুরুষ বিবেকানন্দ বিশ্বসভায় তাঁর বাণীতে – “ব্যাঘ্ৰে বৃষভে ঘটাবে সমন্বয়।” বাঙালির কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও মানবতার বাণী প্রচার করেছেন তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে।

এভাবেই বাঙালির অতীত ইতিহাস ও বীরত্ব প্রকাশ কবি ঐতিহাসিকতাকে আশ্রয় করেছেন।

‘আমরা’ কবিতায় ফুটে ওঠা বাঙালির গৌরবগাথার পরিচয় দাও।

ভূমিকা – কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘আমরা’ কবিতায় বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল অতীত তথা ইতিহাসের বর্ণনা করে পরাধীন মানুষের মনে স্বজাত্যবোধের সঞ্চার করতে চেয়েছেন। আত্মবিশ্বাসহীন বাঙালির সামনে তার পূর্বপুরুষের বীরগাথা তুলে ধরতে ইতিহাসের আশ্রয় নিয়েছেন কবি। বলিষ্ঠ বাচনভঙ্গিতে এ কবিতায় কবি বাঙালির একটি আদর্শ ভাবমূর্তি নির্মাণ করতে পেরেছেন।

সংগ্রামের ইতিহাস – প্রথমেই তিনি বলেছেন বাঙালি জাতির প্রাচীনত্বের ইতিহাস। বাঘ, সাপ ইত্যাদি বন্যজন্তুসংকুল এলাকায় বাঙালি বাস করত। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে জয় করেছে বাঙালি। তারপর তিনি বলেছেন অনার্য বাঙালির আর্য আক্রমণের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথা –

‘আমাদের সেনা যুদ্ধ করেছে সজ্জিত চতুরঙ্গে, ক
দশানন জয়ী রামচন্দ্রের প্রপিতামহের সঙ্গে।’

বাঙালির বীরসন্তান বিজয়সিংহ পিতার কাছ থেকে বিতাড়িত হয়ে লঙ্কাপ্রদেশে যান, সেখানে বাহুবলে তিনি নতুন রাজ্য স্থাপন করেন। তার নামানুযায়ী লঙ্কাপ্রদেশের নাম হয় সিংহল। মগ দস্যুদের আক্রমণ প্রতিরোধকারী বাঙালির কথা কবি যেমন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, তেমনই বলেছেন চাঁদ রায় ও প্রতাপাদিত্যের কথা। শ্রীপুরের রাজা কেদার রায়ের ভাই চাঁদ রায় মোগলের সঙ্গে যুদ্ধে মারা গেলেও কেদার মোগলদের বাংলা থেকে দূর করেন। অপর এক ভূঁইয়া প্রতাপাদিত্য মোগলদের যুদ্ধে পরাস্ত করেছিলেন।

জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিহাস – শুধু সংগ্রামের ইতিহাস নয় বাঙালি জাতি জ্ঞান-বুদ্ধি শিক্ষায় শ্রেষ্ঠত্বের শীর্ষে অবতরণ করেছিল। আদি বিজ্ঞান সাংখ্যকার কপিল। মুনির আশ্রম এই বাংলায় অবস্থিত। আবার বাঙালি কিশোর রঘুনাথ মিথিলার তাকির্ক পণ্ডিতকে পরাজিত করে ইতিহাস রচনা করেন। অন্যদিকে বাঙালি বৌদ্ধভিক্ষুক অতীশ দীপঙ্কর সুদূর তিব্বতে জ্ঞানের আলো প্রসারিত করেন। জয়দেব কবির কোমল শান্ত মধুর পদাবলী আজও বিশ্বসাহিত্য দরবারে সমাদর পেয়ে এসেছে। বিশ্ববিজ্ঞান চর্চায় বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু ও প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের অবদান অনস্বীকার্য। তাদের আবিষ্কার আধুনিক বিজ্ঞানের প্রগতির অন্যতম বাহক।

শিল্পের ইতিহাস – বাঙালি স্থাপত্য-ভাস্কর্য ও শিল্পের ক্ষেত্রেও ইতিহাসে স্বনামধন্য হয়েছে। বাঙালির শিল্প শৈলীর নিদর্শন বহন করেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ার অবস্থিত ‘বরভূত্রের’ স্তূপ ও আঙ্কোরভাট মন্দির। পাল যুগের শ্রেষ্ট ভাস্কর ধীমান ও তার পুত্র বিটপাল তাদের সৃষ্টির জন্য অবিস্মরণীয়। বাঙালি রাজা বিজয়সিংহের চিত্র অঙ্কিত রয়েছে অজন্তার গুহাচিত্রে কোনো বাঙালি পটুয়ার পরশে।

বাংলার নিজস্ব সংগীত বাউল বিশ্ব প্রাঙ্গনে মানবমনের নিভৃত বাণীর প্রচার করেছে।

মানবতার ইতিহাস – মানুষের মাঝে সমন্বয় ও ঐক্য স্থাপনে মানবধর্মাবতার শ্রীচৈতন্যদেব যেমন ব্রতী হয়েছিলেন। তেমনি যুগপুরুষ বিবেকানন্দ বিশ্বসভায় তাঁর বাণীতে – “ব্যাঘ্ৰে বৃষভে ঘটাবে সমন্বয়।” বাঙালির কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও মানবতার বাণী প্রচার করেছেন তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে।

এভাবেই বাঙালির অতীত ইতিহাস ও বীরত্ব প্রকাশ কবি ঐতিহাসিকতাকে আশ্রয় করেছেন।

‘আমরা’ কবিতাটি একটি দেশাত্মবোধক কবিতা – আলোচনা করো।

অথবা, ‘আমরা’ কবিতায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের স্বজাত্যবোধের কী পরিচয় পাও আলোচনা করো।
অথবা, ‘আমরা’ কবিতাটি কার, কোন্ কাব্যের অন্তর্গত? বাঙালি জাতির কোন্ গর্বের কথা কবি উল্লেখ করেছেন তা কবিতা অবলম্বনে লেখো।

ভূমিকা – স্বদেশের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা ও অনুরাগ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের সাহিত্যরচনার এক বিশেষ দিক। কখনও পৌরাণিক, কখনও ঐতিহাসিক, কখনও প্রাকৃতিক দৃশ্য বর্ণনায় আবার কখনও এদের সম্মিলনে স্বদেশের দুঃখদুর্দশা, আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটিয়েছেন কবি। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত ‘কুহু ও কেকা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত পাঠ্য ‘আমরা’ কবিতাটিও এমনই এক স্বদেশপ্রেমমূলক বা দেশাত্মবোধক কবিতা।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কবিতায় বাঙালির গৌরবোজ্জল অতীত তথা ইতিহাসের বর্ণনা করে পরাধীন মানুষকে স্বজাত্যবোধে উজ্জীবিত করতে চেয়েছেন।

বাঙালির সর্বজনীনতা – বঙ্গবাসী ও বঙ্গদেশের চরিত্রমাহাত্ম্য কীর্তিত হয়েছে ‘আমরা’ কবিতায়। বাঙালির অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, স্থাপত্য, বিজ্ঞান, মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্তগুলি উল্লেখ করে কবি এ কবিতায় বাঙালির সর্বজনীনতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। মাতৃভূমি কবির বর্ণনাগুণে –

‘সাগর যাহার বন্দনা রচে শত তরঙ্গ ভঙ্গে,-
আমরা বাঙালি বাস করি সেই বাঞ্ছিত ভূমি বঙ্গে।’

মহত্তম বাঙালি – বাঙালি এক সুপ্রাচীন ঐতিহ্যসম্পন্ন জাতি। বহু মিশ্রণ-বিমিশ্রণ সত্ত্বেও সে তার বৈশিষ্ট্য হারায়নি। কবি বাঙালির গৌরবগাথা প্রচারে তাই বাঙালিকে গুণে-ধর্মে-কর্মে-কীর্তিতে মহত্তম বলে উল্লেখ করেছেন।

বাঙালির ভবিষ্যৎ – এ বঙ্গের মঙ্গলে বাঙালি বেতালের প্রশ্ন সমাধান করে শ্মশানের বুকে পঞ্চবটী রোপণ করেছে। বাঙালির মহামিলনমন্ত্রে জগৎপ্রাণের হাটে সাড়া মিলেছে। সমস্ত কবিতায় বাঙালির অতীত গৌরব ও বর্তমান সমৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে শেষপর্বে কবি বলেছেন আশাময় উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা। প্রত্যয়ী উচ্চারণ করেছেন –

‘বিধাতার বরে ভরিবে ভুবন বাঙালির গৌরবে।’

এভাবে বাঙালি ও মাতৃভূমি বাংলাদেশের জয়গানে মুখরিত এ কবিতাকে তাই স্বাভাবিকভাবেই দেশাত্মবোধক কবিতা বলা চলে।

‘আমরা’ কবিতা অবলম্বনে বঙ্গপ্রকৃতির বর্ণনা দাও।

অথবা, ‘আমরা’ বাঙালি বাস করি সেই বাঞ্ছিত ভূমি বঙ্গে।’ – কবি বাংলা প্রকৃতির রূপের যে বর্ণনা দিয়েছেন ‘আমরা’ কবিতা অবলম্বনে তা বিবৃত করো।

বঙ্গপ্রকৃতির বর্ণনা – সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতায় প্রকৃতির অতুলনীয় রূপ বারবার প্রকাশিত হয়েছে। পাঠ্য ‘আমরা’ কবিতাটি প্রকৃতিমুখ্য না হলেও প্রাকৃতিক বর্ণনার অন্যতম প্রতিভাস সৃষ্টি করেছে। বাঙালি তাঁর তীর্থবরদ মাতৃভূমি বাংলাদেশে বাস করে। মুক্তবেণী গঙ্গার অবারিত গতিধারা ও পবিত্র জলরাশি বঙ্গজনকে দিয়েছে অনাবিল মুক্তির স্বাদ। তাঁর বামদিকে অর্থাৎ পূর্বদিকে শ্রীহট্ট কমলালেবু উৎপাদনে বিশ্বখ্যাত এবং ডানদিকে অর্থাৎ পশ্চিমে বিহারপ্রদেশে মহুয়া উৎপন্ন হয়। তাই কবি বলেছেন – “বাম হাতে যার কমলার ফুল, ডাহিনে মধুক মালা”।

বঙ্গমাতৃকার সুশোভন রূপ, তাঁর অপার সৌন্দর্যের স্নিগ্ধ শ্যামলিমার কথা বলতে গিয়ে কবি বলেছেন –

‘কোল-ভরা যার কনক ধান্য, বুক-ভরা যার স্নেহ’

এই শস্যশালিনী স্নেহময়ী মায়ের সন্তান আমাদের মতো কবিও। শস্যশ্যামলা বাংলাদেশ সুফলা ধানে এবং পদ্ম ও অপরাজিতার মতো ফুলের সৌন্দর্যে বিভূষিত। তার ভালে অর্থাৎ কপালে বা শিরোদেশে কাঞ্চনজঙ্ঘা কাঞ্চন-মুকুটের মতো শোভা পায়। পাদদেশে বঙ্গোপসাগরের শতসহস্র ঢেউয়ের বিচরণ। কবিকল্পনার চমৎকারিত্বে বঙ্গমাতৃকার এই আপাদমস্তক রূপ কবিতায় প্রাকৃতিক বর্ণনাচ্ছলে অঙ্কিত।

‘আমরা’ কবিতায় প্রাপ্ত বিজয়সিংহের কীর্তির পরিচয় দাও।

পরিচয় – বিজয়সিংহ রাঢ় দেশের রাজপুত্র ছিলেন। তাঁর পিতা, রাজা সিংহবাহু তাকে নির্বাসন দেন। সাতশো অনুচর-সহ নির্বাসিত বিজয়সিংহ সমুদ্রপথে লঙ্কাদ্বীপে গিয়ে উপস্থিত হন। আদিম অধিবাসীদের পরাস্ত করে সিংহল জয়ী বিজয়সিংহ সেখানকার এক রাজকুমারীকে বিয়ে করেন। তাঁর নামানুয়ায়ী লঙ্কাপ্রদেশের নতুন নাম হয় সিংহল। বিজয়সিংহের লঙ্কাবিজয়ের প্রাককালে লঙ্কায় অবতরণের একটি চিত্র অজন্তা গুহায় অঙ্কিত আছে। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পাঠ্য ‘আমরা’ কবিতায় বাঙালির অতীত গৌরব স্মরণ করতে গিয়ে বিজয়সিংহের শৌর্যের পরিচয় দিয়েছেন।

উপসংহার – বসুন্ধরা বীরভোগ্যা আর বাঙালিও দুর্বলচিত্ত নয়। সে যেমন যুদ্ধ করে রামচন্দ্রের প্রপিতামহের সঙ্গে। আবার বিদেশী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গঠনের ক্ষমতাও রাখে। বিজয়সিংহের কীর্তি বাঙালির সেই রণজয়ী ইতিহাসের স্মারক, যা কবি এ কবিতায় তুলে ধরেছেন বাঙালির কীর্তিপ্রচারকালে।

‘জ্ঞানের নিধান আদিবিদ্বান্ কপিল সাস্থ্যকার’ – কপিলের পরিচয় উল্লেখ করে মন্তব্যটির অর্থ তাৎপর্য বোঝাও।

পরিচয় – বিখ্যাত ঋষি কপিল সাংখ্যদর্শনের প্রণেতা। কর্দম প্রজাপতি ও দেবহুতির সন্তান কপিল তাঁর সাংখ্যদর্শনে নিরীশ্বরবাদের কথা প্রচার করেন। তাঁর মতে জগৎ জড়প্রকৃতি থেকে উদ্ভূত।

সগর রাজার কাহিনী – একাগ্রচিত্তে তপস্যা করার জন্য কপিল মুনি পাতালে আশ্রম স্থাপন করেন। সগর রাজার অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া ইন্দ্র চুরি করে সেখানে রেখে এলে সগরের ষাট হাজার সন্তান মুনিকে অশ্ব অপহরণকারী ভাবে। তাদের আক্রমণে রেগে গিয়ে কপিল ষাট হাজার সগর সন্তানকে পুড়িয়ে ছাই করে দেন। সগরপৌত্র অংশুমান মুনিকে শান্ত করে যজ্ঞাশ্ব ফেরত আনে সগরবংশীয় ভগীরথ তপস্যা বলে জানতে পারে গঙ্গার পবিত্র জলধারার স্পর্শে পূর্বপুরুষদের পাপ দূর হবে। ভগীরথ স্বর্গের গঙ্গাকে মর্ত্যে আনতে তপস্যা করেন এবং শিবকে অনুরোধ করেন গঙ্গার ধারাকে সংহত করতে। শিব গঙ্গাকে নিজের জটায় ধারণ করেন। ভগীরথ গঙ্গাকে সাধনাবলে মর্ত্যে আনেন এবং গঙ্গার স্পর্শে পূর্বজন্মের শাপ ও পাপ মুক্ত করেন। সগরসন্তানদের উদ্ধারলাভের ফলে স্থানটির নাম হয় সাগর।

তাৎপর্য – ‘সাংখ্যদর্শন’ প্রণেতা মহর্ষি কপিল প্রথম বিদ্বান ও জ্ঞানের আধার বলে পরিচিত। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ তাঁকে এই আখ্যা দিয়েছে। ঋষি কপিল তাঁর অমূল্য দর্শনসূত্রগুলি বাংলার মাটিতে বসেই রচনা করেছেন। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর স্বজাতিমাহাত্ম্য প্রচারক ‘আমরা’ কবিতায় কপিলকে বাঙালি জ্ঞানেই গ্রহণ করেছেন এবং উপনিষদসূত্রে জ্ঞাত তাঁর পরিচয়টিকেই কাব্যভাষা দান করে বলেছেন কপিল জ্ঞানের নিধান বা আধার, আদিবিদ্বান এবং সাংখ্যকার বা সাংখ্যদর্শনের রচয়িতা।

পক্ষধরের পক্ষশাতন কাহিনিটি নিজের ভাষায় লিখে তা কীভাবে বাঙালিকে যশের মুকুট পরায় বুঝিয়ে দাও।

পক্ষধরের কাহিনি – ‘ছন্দের জাদুকর’ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর স্বদেশভাবাত্মক ‘আমরা’ কবিতায় বাঙালির অতীত গৌরবের স্মৃতিচারণ প্রসঙ্গে ‘পক্ষধরের পক্ষশাতন’ প্রসঙ্গটি এনেছেন। নব্যন্যায়ের প্রবর্তক গঙ্গেশ উপাধ্যায়ের শিষ্য ছিলেন জয়দেব মিশ্র। তিনি একপক্ষের পাঠ একদিনে আয়ত্ত করতেন এবং তর্কযুদ্ধে দুর্বল পক্ষ অবলম্বন করেও জয়ী হতেন। এ জন্য তিনি পক্ষধর মিশ্র নামে খ্যাত হন। পক্ষধর মিথিলার রাজা ভৈরব সিংহের সভাসদ এবং বিদ্যাপতির সহাধ্যায়ী ছিলেন। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে রচিত তাঁর ‘প্রসন্নরাঘর’ নাটক তাঁকে প্রভূত যশ ও খ্যাতির অধিকারী করেছিল।

বাঙালি-কিশোর রঘুনাথের কৃতিত্ব – নবদ্বীপ নিবাসী বাঙালি কিশোর রঘুনাথ শিরোমণি পক্ষধর মিশ্রের ছাত্র ছিলেন। গুরু পক্ষধর তাঁর ছাত্রের পাণ্ডিত্যে ঈর্ষান্বিত ছিলেন। তিনি তাঁর ছাত্রকে তাঁরই সঙ্গে তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হতে বাধ্য করেন। রঘুনাথ গুরুকে ন্যায়তর্কে পরাস্ত করেন। বাঙালির বিজয়গাথা গাইতে বসে কবি কিশোর রঘুনাথের কীর্তিতে অভিভূত হয়ে বলেছেন –

‘কিশোর বয়সে পক্ষধরের পক্ষশাতন করি’
বাঙালির ছেলে ফিরে এল দেশে যশের মুকুট পরি।’

কবি সত্যেন্দ্রনাথ পক্ষধরের পরাজয়কে পক্ষধরের (পক্ষ বা ডানা ধারণকারী অর্থে ব্যবহার করে) পক্ষশাতন বা ছেদন বলেছেন। অর্থাৎ পক্ষধরের জ্ঞান-অহংকার চূর্ণ করা ডানাধারীর ডানা কাটার শামিল। কিন্তু রঘুনাথের যশোলাভ কেবল এতেই শেষ হয়নি। পরাজিত পক্ষধর রঘুনাথকে মিথিলা থেকে বাংলায় কোনো পুথি আনতে দেননি। রঘুনাথ ন্যায়ের সমস্ত পুথি কণ্ঠস্থ করে বাংলার নবদ্বীপে ফিরে নব্যন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন।

‘বাংলার রবি জয়দেব কবি কান্ত কোমল পদে’ – জয়দেবের পরিচয় দাও। তাঁকে ‘বাংলার রবি’ বলা হয়েছে কেন? ‘কান্ত কোমল পদ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

পরিচয় – দ্বাদশ শতকে কেন্দুবিল্বনিবাসী ভোজদেব ও বামাদেবীর সন্তান হলেন জয়দেব। তাঁর পত্নী পদ্মাবতী। দ্বাদশ শতকের শেষার্ধে লক্ষ্মণ সেনের রাজসভার পঞ্চরত্নের অন্যতম ছিলেন তিনি। 1159 খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘গীতগোবিন্দম্’ কাব্য রচনা করেন। কৃষ্ণকথা নিয়ে রচিত এই কাব্য শুধুমাত্র পাঠক ও ভক্তদের গ্রহণযোগ্য তা নয়, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম চর্চার বিষয় ‘এই গীতগোবিন্দম্’। কবি বুদ্ধদেব বসু জয়দেবকে ‘আধুনিক ভারতীয় সাহিত্যের পূর্বরাগ’ বলে চিহ্নিত করেছেন। জয়দেবের গ্রন্থ বৈষ্ণবসমাজের অতি প্রিয়, পরম আদৃত। সহজিয়ারা জয়দেবকে আদি গুরু এবং নবরসিকের অন্যতম বলেন। জয়দেব নিজের পদাবলিকে বলেছিলেন ‘মধুর কোমল কান্ত পদাবলি’। কবি জয়দেবের কাব্যের ভাষা বাংলা না হলেও তিনি একান্তরূপে বাঙালি। বাংলাদেশই তাঁর মাতৃভূমি এবং তাঁর পদাবলিতেও বাঙালিয়ানারই প্রকাশ।

‘বাংলার রবি’ বলার কারণ – কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘আমরা’ কবিতায় অগ্রজ কবির যথার্থ মূল্যায়ন করেছেন। কবি জয়দেব বাঙালি কবি না, ওড়িয়া কবি সেই বিষয় নিয়ে গবেষকদের মতভেদ রয়েছে। কোনো কোনো গবেষকদের মতে, তিনি গৌড়ের কেন্দুবিল্ব গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তা ছাড়া তাঁর কাব্যবৈশিষ্ট্যের সঙ্গে বাংলা সাহিত্য বৈশিষ্ট্যের যথেষ্ট মিল রয়েছে। মনে করা হয় গৌড়ে মুসলিম অভিযানের পর তিনি সপত্নী উড়িষ্যায় প্রস্থান করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁকে বাঙালি কবি বলেছেন। ‘রবি’ যেমন তারাদলে প্রধান, কবি জয়দেবও তেমন সমকালীন কবিকুলে শ্রেষ্ঠত্বের আসন-অধিকারী। রবিতেজে বিশ্ব আলোকিত, জয়দেবের কাব্যে বাঙালিসহ সমগ্র ভারতীয় বাঙালিসহ সমগ্র ভারতীয় পাঠক ও ভক্তও বিমোহিত; রবি যেমন অবিনশ্বর, জয়দেবও তেমনই শাশ্বত। এ কথাগুলি বোঝাতেই কবি তাঁকে ‘বাংলার রবি’ আখ্যা দিয়েছেন।

‘কান্তকোমল পদ’ -এর তাৎপর্য – ‘কান্তকোমল পদ’ বলতে কবি জয়দেব রচিত ‘গীতগোবিন্দম্’ কাব্যটিকে বুঝিয়েছেন কবি সত্যেন্দ্রনাথ। একে স্বয়ং জয়দেব ‘মধুর কোমল কান্ত পদাবলি’ বলে আখ্যাত করেছেন। ভারতবর্ষের কাব্যধারায় এই একটি কাব্যগুণেই জয়দেব চিরস্মরণীয়। এ কাব্য বৈষ্ণবদের নিত্য আরাধ্য, সংগীতরূপে গেয়, পরম আকর গ্রন্থের মতো পূজিত। এই মধুর-কোমল-পদাবলির আদর্শে বাংলাদেশে, মিথিলায় ও অন্যত্র রাধাকৃষ্ণ পদাবলি ও অনুরূপ গীতিকবিতার ধারা প্রবাহিত হয়েছিল।

‘আমরা’ কবিতায় বাঙালির প্রাচীন স্থাপত্য-ভাস্কর্য শিল্প কীর্তির কথা কবি কীভাবে বর্ণনা করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

ভূমিকা – কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘আমরা’ কবিতাটি বাঙালির প্রশস্তিগাথা। বাঙালির চিরকালীন গৌরবময় ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করতে গিয়ে তিনি স্থাপত্যশিল্পে বাঙালির বিশ্বময় বিস্তৃত খ্যাতির কথা বলেছেন। ‘স্থপতি’ শব্দের অর্থ স্থাপনাকারী বা নির্মাতা এবং ব্যবহারিক অর্থ শিল্পনির্মাতা। এঁরা মাটি, পাথর, কাঠ, ধাতু ইত্যাদি দিয়ে নানা শিল্পকীর্তি নির্মাণ করেন। স্থপতি কালের নিয়মে বিলীয়মান হন। তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতির সাক্ষ্য দেয় তাঁর স্থাপত্য, সৃষ্টি।

‘বরভূধর’ কীর্তি – স্থাপত্যের কথা বলতে গিয়ে তিনি প্রথমেই বলেছেন ‘বরভূধর’ -এর কথা। এই স্তূপ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জাভাদ্বীপ তথা ইন্দোনেশিয়ায় খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে শৈলেন্দ্র রাজবংশের আমলে তৈরি হয়। ছোটো পাহাড়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বৌদ্ধস্তূপটি ছিল রাজবংশের ঐশ্বর্য ও ক্ষমতার প্রতীক। বরভূধরের দেবমূর্তিগুলির সঙ্গে বঙ্গদেশীয় স্থাপত্যের মিল লক্ষ করা যায় এবং বাংলার শিল্প শৈলীর সঙ্গেও এর শিল্প শৈলীর কোনো পার্থক্য নেই। এই কারণে সম্ভবত কবি একে বঙ্গদেশীয় স্থাপত্য বলে চিহ্নিত করেছেন।

‘ওঙ্কার-ধাম’ কীর্তি – আবার ‘শ্যাম-কম্বোজ’ তথা বর্তমানের কম্বোডিয়ার অবস্থিত রাজা দ্বিতীয় সূর্যবর্মনের রাজত্বকালে গড়ে ওঠা আঙ্কোরভাট একটি বিষ্ণু মন্দির। পরিখাবেষ্টিত শিল্প নৈপুণ্যে পূর্ণ এই মন্দিরটি স্থাপত্যের সঙ্গে বাংলার মিল পাওয়া যায়। কবি প্রাচীন বাংলার স্থাপত্যকীর্তির অন্যতম উদাহরণ হিসেবে এই ‘আঙ্কোর ভাট’ বা ‘ওঙ্কার-ধাম’ (কবির ভাষায়)-কে উল্লেখ করেছেন।

ভাস্কর্য ও চিত্রশিল্প – অপরদিকে পালবংশীয় ধীমান ও তাঁর পুত্র বিটপাল গৌড়ীয় শিল্পকে নিজেদের ভাস্কর্যে জগৎবিখ্যাত করেছিলেন। কবির ধারণা অনুযায়ী, কোনো এক বাঙালি পটুয়ার অসামান্য শৈল্পিক গুণে বাঙালি রাজা বিজয়সিংহের কীর্তি খোদিত রয়েছে অজন্তার গুহাচিত্রে। এইভাবে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘আমরা’ কবিতায় প্রাচীন বাংলার স্থাপত্য-ভাস্কর্য শিল্পের পরিচয় দিয়েছেন।

নিমাই কে? তিনি কীভাবে ‘বাঙালির হিয়া অমিয় মথিয়া’ কায়া ধারণ করেছেন? 

নিমাই -এর পরিচয় – নদীয়ার নবদ্বীপের জগন্নাথ মিশ্র ও শচীদেবীর কনিষ্ঠ পুত্র চৈতন্যদেব (1486-1533 খ্রিস্টাব্দ)। তাঁর বাল্যকালীন গৃহনাম ছিল নিমাই। তাঁর পিতৃদত্ত নাম ছিল বিশ্বম্ভর। গায়ের রঙের উজ্জ্বলতার জন্য গৌরাঙ্গ, পরবর্তীতে মহাপ্রভু এবং শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বা সংক্ষেপে চৈতন্যদেব নামেই পরিচিত হন তিনি। গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের জনক নিমাই তাঁর প্রথমা পত্নী লক্ষ্মীপ্রিয়ার অকালমৃত্যুর পর বিষ্ণুপ্রিয়াকে বিবাহ করেন। গয়ায় ঈশ্বরপুরীর কাছে গোপালমন্ত্রে এবং কাটোয়ায় মাত্র 24 বছর বয়সে কেশব ভারতীর কাছে তিনি সন্ন্যাস দীক্ষা নেন। জীবনের শেষপর্ব জগন্নাথ ধামেই কাটিয়েছিলেন। জয়ানন্দের ‘চৈতন্যমঙ্গল’ কাব্যে উল্লিখিত যে, রথের সামনে ভাবাবেগে বিহ্বল নৃত্যকালে তাঁর পায়ে ইটের কুচি বিদ্ধ হওয়ায় ব্যাধিকবলিত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

অবদান – চৈতন্যদেব বৈষ্ণবধর্মের নতুন দিক উন্মোচন করলেন। যেখানে সংস্কারধর্মীতা থেকে প্রধান হয়ে উঠল মানবতা ও সর্বধর্মমিলন। তিনি বিভাজিত বঙ্গসমাজকে হরিমন্ত্রের আবেশে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। জাতি ও ধর্ম নির্বিশেষে তাঁর এই ভক্তিসাধনা পরবর্তী বাঙালি জীবন-শিল্প ও ধর্মকে পরিবর্তন করেছিল। ষোড়শ শতাব্দী তাই চৈতন্য রেনেসাঁ নামে পরিচিত।

নিমাইয়ের কায়ারূপ ধারণ – তৎকালীন মুসলমান শাসকের অত্যাচার, ব্রাহ্মণ্যধর্মের সংকীর্ণতা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় বহু মানুষ চৈতন্যদেবের শিষত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ব্রাহ্মণ, শূদ্র, চণ্ডাল এমনকি উচ্চবংশীয়রাও চৈতন্য প্রবর্তিত ধর্মমতকে আপন করেছিলেন। ধর্মের বিভেদ মুছে তিনি উদাত্তকণ্ঠে বলে উঠেছিলেন – ‘চণ্ডালোহপি দ্বিজশ্রেষ্ঠ হরিভক্তি পরায়ণম।’ সেদিনের বঙ্গসমাজের নিপীড়িত বাঙালির অন্তরসত্ত্বা থেকে আবির্ভূত হয়েছিলেন চৈতন্যদেব। কবি এই অর্থে ‘আমরা’ কবিতায় বলেছেন – ‘বাঙালির হিয়া অমিয় মথিয়া নিমাই ধরেছে কায়া।’ ‘অমিয় মথিয়া’ শব্দের অর্থ ‘অমৃত মন্থন’। চৈতন্যের স্পর্শে ষোড়শ শতাব্দীতে বঙ্গ সমাজে যেমন একতা ফিরে এসেছিল তেমনি বাংলা সাহিত্য-শিল্প সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল। রাধাকৃষ্ণের লোকজ কথায় স্থান পেয়েছিল আধ্যাত্মিকতা। মানুষের বাস্তব জীবনাভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে নতুনভাবে রচিত হয়েছিল পদাবলী, মানবতা যার আধার। আলোচ্য কবিতায় কবি একেই ‘মানুষের ঠাকুরালি’ বলেছেন। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত চৈতন্যদেবকে বাঙালির শুভবোধের চিরন্তন প্রতীকরূপে দেখিয়েছেন। ‘আমরা’ কবিতায় তাই ‘নিমাই’ হলেন বাঙালির হৃদয়ামৃতের মূর্তবিগ্রহ।

‘বেতালের মুখে প্রশ্ন যে ছিল আমরা নিয়েছি কেড়ে,’ – বেতালের আখ্যানটি সংক্ষেপে লেখো। বেতালের প্রশ্ন কেড়ে নেওয়ার তাৎপর্য কী?

বেতালকাহিনি – ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’ গ্রন্থের দ্বাত্রিংশৎ পুত্তলিকায় প্রাপ্ত কাহিনিতে রাজা বিক্রমাদিত্য ও বেতালের কাহিনি জানা যায়। উজ্জয়িনীর রাজা বিক্রমাদিত্যকে বধ করে সন্ন্যাসী শান্তশীল তার সিংহাসন অধিকার করতে চেয়েছিলেন। শবসাধক শান্তশীলের আমন্ত্রণে তার সাধনায় সাহায্য করার জন্য বিক্রমাদিত্য কৃষ্ণা চতুর্দশীর রাতে শ্মশানে যান। শ্মশানের শিরীষ গাছে ঝুলন্ত শব (যাকে শান্তশীল মন্ত্রবলে প্রেতে পরিণত করেছিল।) আনতে গেলে শব রাজাকে শর্ত দেয় যে, সে তাকে কতকগুলি গল্প বলবে ও গল্পের শেষে একটা করে প্রশ্ন করবে। প্রশ্নের ঠিক উত্তর দিলে সে তখনই গাছে ফিরে যাবে। উত্তর জেনেও না বললে উত্তরদাতা বুক ফেটে মরে যাবে। রাজা রাজি হয়ে গল্প শোনেন, প্রশ্নের উত্তর দেন আর বেতাল গাছে ফিরে যায়। এভাবে পঁচিশবার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে সন্তুষ্ট বেতাল রাজাকে শান্তশীলের আসল উদ্দেশ জানায় ও তাকে বধ করে মুক্তির উপায় বলে দেয়। বেতালকে নিয়ে রাজা শান্তশীলের কাছে গেলে শান্তশীল বেতালের শবকে উত্তপ্ত তেলের কড়াইতে ডুবিয়ে দিয়ে দেবীর চরণে প্রণাম করতে বলেন। রাজা জানতেন প্রণাম করতে নত হলেই শান্তশীল রাজার মাথা কেটে ফেলবে এবং তাকেও মন্ত্রপূত তেলের মধ্যে ফেলে ‘তাল’ নামক প্রেতে পরিণত করবে। শান্তশীলকে রাজা বলেন তিনি রাজার ছেলে, প্রণামের কৌশল জানেন না। শান্তশীল প্রণামের কৌশল দেখাতে গেলে রাজা খাঁড়া দিয়ে তার মুণ্ডচ্ছেদ করেন এবং তেলের কড়াইতে ফেলে দেন। অমনি কড়াই থেকে তাল ও বেতাল নামে দুই প্রেত উঠে এসে রাজার বশ্যতা, দাসত্ব স্বীকার করে।

তাৎপর্য – ‘আমরা’ কবিতায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বাঙালি জাতির উৎকর্ষতার প্রমাণ দেওয়ার জন্য ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’র উল্লেখ করেছেন। কাহিনি অনুযায়ী বেতাল রাজা বিক্রমাদিত্যকে যে প্রশ্ন করবে তার সঠিক উত্তর তাকে দিতে হবে। উত্তর জেনেও না বললে রাজার মৃত্যু হবে। রাজা শর্তানুসারে বেতালের করা সমস্ত প্রশ্নের উত্তর নির্ভুল দিয়েছিলেন এবং কাহিনির শেষে উভয়সংকট কাটিয়ে উঠেছিলেন। এই কাহিনির সূত্র ধরে কবি তাঁর ‘আমরা’ কবিতাটিতে বলেছেন – পরাধীন ভারতীয়রাও সেই উভয়সংকটে ছিল – স্বাধীনতা না চিরকাল পরাধীনতা? স্বাধীনতা চাইলে কঠোর শ্রম, আত্মত্যাগ। পরাধীনতা চাই বললে মিথ্যাচার। এই উভয়সংকট মোচনে ভারতীয়রা সত্যাগ্রহী হয়েছিল। সংকটকালীন মুহূর্তে গড়ে ওঠা কঠিন প্রশ্নগুলির জবাব দিয়েছে সত্যাগ্রহী বাঙালি জাতি। শুধু তাই নয় তারা বিশ্বের সকল সমস্যা ভয়হীনভাবে সমাধানের পথ দেখিয়েছে। কবির চেতনায় বাঙালি জাতি জগৎশ্রেষ্ঠ। তাদের গৌরবময় ইতিহাস এবং জ্ঞান-বুদ্ধির পরিচয় দিতে গিয়ে এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন কবি।

‘বাঁচিয়া গিয়েছি সত্যের লাগি’ – সত্যের জন্য কারা, কীভাবে বেঁচে গিয়েছে কবিতা অনুসরণে ব্যাখ্যা করো।

যারা বেঁচে গিয়েছে – ‘ছন্দের জাদুকর’ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘আমরা’ কবিতায় বাঙালির গৌরবগাথা প্রকাশ করেছেন। অতীত ঐতিহ্য, গৌরব ও কীর্তির পাশাপাশি বর্তমানের উজ্জ্বল জীবনযাত্রার কথা প্রকাশ করতে করতে কবি বাঙালির ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও অমলিন আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। পরাধীন ভারত বাঙালিকে এই দ্বিধা ও দ্বন্দ্বময়তায় উন্নীত করেছিল। সংকটময় এই মুহূর্ত থেকে বাঙালি জাতি সত্যকে অবলম্বন করে নিজেদের রক্ষা করেছিল।

যেভাবে সত্য রক্ষা করেছে – কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘আমরা’ কবিতায় বলেছেন ব্রিটিশ অধীনস্থ বাঙালি পরাধীনতার যন্ত্রণার সঙ্গে প্রবল আত্মিক দ্বন্দ্ব ও মানসিক সংকটে জড়িয়ে পড়েছিল। তারা তাদের সর্বস্ব পণ করেছিল সত্যের ভরসায়। মর্মে ও কর্মে সত্যাগ্রহে দীক্ষিত বাঙালি সত্যের পথে আসা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছিল। সত্যাশ্রয়ী বাঙালি জাতি নিজেদের সংকল্পে অবিচল থেকে সমগ্র মানসিক অস্থিরতা কাটিয়ে উঠে শ্মশান-সদৃশ সমাজে নতুন প্রাণের বীজ বপন করেছিল। এভাবেই সত্য অবলম্বনকারী বাঙালি বিপদমুক্ত হয়েছিল।

‘অতীতে যাহার হয়েছে সূচনা সে ঘটনা হবে হবে, বিধাতার বরে ভরিবে ভুবন বাঙালির গৌরবে।’ – প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মন্তব্যটির তাৎপর্য বোঝাও।

ভূমিকা – কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘আমরা’ কবিতায় বাঙালির গৌরব প্রকাশ করেছেন। বাঙালির অতীত গৌরবের স্মৃতিচারণ করে তিনি দেখিয়েছেন সুদূর অতীতকাল থেকে বাঙালি অবিনশ্বর কৃতিত্বের অধিকারী।

প্রসঙ্গ – পাঠ্য কবিতায় বাঙালির চরিত্রের এক সার্বিক উন্মোচন ঘটিয়েছেন কবি। বাঙালি বীরত্ব, যুদ্ধদক্ষতা, স্থাপত্য-শিল্প-সাহিত্য-বিজ্ঞান-সবেতেই শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। সুদূর অতীতে বাঙালি জাতির গৌরবময় যাত্রার সূচনা। আজও বাঙালির শিখরারোহণ চলছে। কবির বিশ্বাস, ভবিষ্যতেও বিশ্বনির্মাতার আশিসে বাঙালি বিশ্বভুবনে আত্মগৌরব প্রকাশ করবে।

ব্যাখ্যা – বাঙালির অতীত যেমন গৌরবময় ছিল ভবিষ্যৎও তেমনই হবে। বিশ্বস্রষ্টা বা বিধাতা স্বয়ং বাঙালিকে সেই আশিস দিয়েছেন। বিধাতার আশীর্বাদ এবং জাতির কঠোর তপস্যার জোড়ে বাঙালি আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করবে। তারজন্য বাহুবল বা বিদ্বেষ নিষ্প্রয়োজন। বাঙালির মহামিলনমন্ত্র, সত্যাগ্রহের আদর্শ বিশ্ববাসীকে মহামিলনের মন্ত্রে দীক্ষিত করবে। মানবতার এই মন্ত্র অতীত বাঙালি ধর্ম-দর্শন-স্থাপত্য-বিজ্ঞান-শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদির মধ্য দিয়ে মহাবিশ্বকে জানিয়েছিল। ভবিষ্যতেও তারা নিজেদের উৎকর্ষতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত আলোচ্য উদ্ধৃতিতে এই আশাই করেছেন।

‘মিলনের মহামন্ত্রে মানবে দীক্ষিত করি’ ধীরে-/মুক্ত হইব দেব-ঋণে মোরা মুক্তবেণীর তীরে।’ – মিলনের মহামন্ত্র কী? উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

ভূমিকা – কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘আমরা’ কবিতায় বাঙালির ঐতিহ্যময় ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন। বাঙালির অতীত গৌরবের পাশাপাশি তিনি সর্বময় বর্তমানকেও তুলে ধরেছেন। অতীত এবং বর্তমানের এই অনন্য মেলবন্ধনে আস্থাবান হয়ে কবি বলেছেন বাঙালির আশাময় ভবিষ্যতের কথা।

মহামন্ত্র – বিধাতার আশীর্বাদে বাঙালি বিশ্বের দরবারে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবে। অতীত ইতিহাসে বাঙালির উৎকর্ষতার পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। অতীশ দীপঙ্করের প্রজ্ঞায়, বিজয়সিংহের বাহুবলে, চৈতন্যদেবের ধর্মব্যাখ্যায়, রঘুনাথের কীর্তিতে, আধুনিক বিজ্ঞানচিন্তায়, বিবেকানন্দের বাণীতে। বাঙালি জাতি তাদের কর্মে ধর্মে ও মননে একতা ও অভেদকে প্রকাশ করে এসেছে। তারা এক জাতি, এক প্রাণ, জগৎ জুড়ে একই মানবের অস্তিত্বে বিশ্বাসী। এই জীবনাদর্শকেই তারা আবার বিশ্বময় প্রচার করবে। কবি তাকেই মিলনের মহামন্ত্র বলেছেন।

তাৎপর্য – আলোচ্য কবিতায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন বাঙালি জাতি বিধাতার আশিষপুষ্ট। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলায় জন্মগ্রহণ করে তারা কৃতজ্ঞ। বাংলা মায়ের স্নেহধন্য পূর্বপুরুষদের গৌরবময় ইতিহাস। শুধু বর্তমানে নয়, ভবিষ্যৎ বাঙালিকেও সমৃদ্ধ করবে। বিধাতা পুরুষ -এর পরমকৃপায় বাঙালি আজ এই সৌভাগ্যের অধিকারী। তাই সে দেবতার প্রতি ঋণী। বাঙালি জাতির মর্মে রয়েছে একতা, মানুষকে বেঁধে চলার ক্ষমতা। তাই সমগ্র বিশ্বমানবকে তারা মিলনের এই মহামন্ত্রে দীক্ষিত করে, দেব-ঋণ হতে মুক্তি পাবে। পূর্বে বাঙালি স্বমহিমায় জগৎ জুড়ে বিরাজ করছে। ভবিষ্যতেও তারা নিজেদের গৌরব বজায় রাখতে পারবে বলে কবি মনে করেছেন। বাঙালিই মানবতার বাণী প্রচারে আবার সকল মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করবে। কারণ বিধাতার বরপ্রাপ্ত সন্তান তারা। এই কর্তব্য পালন করেই মুক্তবেণী গঙ্গার তীরে তারা দেব-ঋণ মুক্ত হবে।

আমরা কবিতাতে কবি বঙ্গভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যে বর্ণনা করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

সৌন্দর্যের বর্ণনা – “আমরা” কবিতায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কাছে বঙ্গভূমি ভৌগোলিক সীমায় আবদ্ধ একটি ভূখণ্ড মাত্র নয়; এই দেশ তাঁর কাছে মাতৃরূপে ধরা দিয়েছে।
মুক্তধারা গঙ্গানদী বাংলার ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়ে সমুদ্রে মিশেছে। কবির মতে, গঙ্গা এদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে গিয়ে আনন্দে উচ্ছল হয়েছে এবং তার পবিত্র জলের স্পর্শে এখানকার মানুষকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তিদান করেছে।

কবির কল্পনায় বাংলামায়ের বাম হাতে আছে ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর পদ্মফুল, আর তাঁর ডানদিকে মধুলোভী অসংখ্য মধুকরের আনাগোনা। বাংলার উত্তরে থাকা বরফে ঢাকা হিমালয় পর্বতমালা সূর্যের কিরণে সোনার মুকুটের মতো ঝলমল করে। সেই মুকুট থেকে ঠিকরে পড়া আলোয় বিশ্বচরাচর আলোকিত হয়। বাংলার দিগন্তবিস্তৃত সোনালি ধানখেতকে কবি বাংলামায়ের কোলভরা সোনার ধান বলেছেন। মায়ের দেহ অতসী-অপরাজিতা ফুলে শোভিত। বাংলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর যেন তটভূমিতে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের মাধ্যমে বাংলা-মাকে তার প্রণাম জানায়, আর ঢেউয়ের কলতানে রচিত হয় মায়ের বন্দনাগীতি। এভাবেই কবি সারা পৃথিবীর মানুষের বাঞ্ছিত ভূমি বাংলার রূপ বর্ণনা করেছেন।

আমরা কবিতাটিতে কবির জাতীয়তাবাদী মানসিকতার যে প্রকাশ ঘটেছে তা আলোচনা করো।

নিজ দেশ ও জাতির জন্য অনুভূত গর্ববোধের মধ্য দিয়ে “আমরা” কবিতাটিতে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের জাতীয়তাবাদী মানসিকতারই প্রকাশ ঘটেছে।

স্বদেশের শ্রেষ্ঠত্ব – কবিতাটির প্রথম স্তবকেই কবি তাঁর মাতৃভূমি বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা করে তাকে সারা পৃথিবীর মানুষের বাঞ্ছিত ভূমি বলে অভিহিত করেছেন। এভাবে তিনি স্বদেশের শ্রেষ্ঠত্বকেই প্রমাণ করতে চেয়েছেন।

গৌরবগাথা – পরবর্তী স্তবকগুলিতে বাঙালি জাতির গৌরবগাথা রচনা করতে গিয়ে গঙ্গাসাগরে সাংখ্যদর্শন প্রণেতা কপিলমুনির আশ্রম থাকায় কবি বাংলাকেই তাঁর কর্মভূমি বলে গর্ববোধ করেছেন।

বীরত্বের কাহিনী – কবি বলেছেন যে রামচন্দ্রের প্রপিতামহ রঘুর সঙ্গে বাঙালি যুদ্ধ করেছে। আবার মুঘল শাসকের সঙ্গে বাংলার চাঁদ রায়, প্রতাপাদিত্যের লড়াইয়ের কথাও তিনি গর্বের সঙ্গে স্মরণ করেছেন। এর থেকে কবির জাতীয়তাবাদী মানসিকতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ – প্রাচীন যুগ থেকে তাঁর সমসাময়িক যুগ পর্যন্ত প্রায় সব কৃতী বাঙালির কৃতিত্বের উল্লেখ করে কবি আশা করেছেন যে, আগামীদিনে বাঙালি বিশ্বের দরবারে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান পাবে। ভাস্কর বিট্পাল, ধীমান থেকে শুরু করে বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, চৈতন্য অথবা বাঙালি বিজ্ঞানীদের অবদান ও সাফল্য কবির কাছে গর্বের বিষয় হয়েছে। সাহিত্য, শিল্প, বিজ্ঞানে বাঙালির প্রতিভার দ্যুতিকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেছেন কবি। তিনি বিশ্বাস রেখেছেন যে বাঙালি তার প্রতিভা ও কর্মপ্রচেষ্টার দ্বারাই নিজেকে বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে প্রমাণ করবে।

আমরা কবিতায় কবি বাঙালির কৃতিত্বকে যেভাবে বর্ণনা করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

অথবা, কবিতা অবলম্বনে বাঙালির অতীত গৌরবগাথা আলোচনা করো।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের “আমরা” কবিতাটিতে কবি বাঙালির গৌরবগাথা রচনা করেছেন।

বীরত্ব – জলে-জঙ্গলে পূর্ণ বাংলায় বাঙালি জাতি সাপ ও বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে। রাঢ় বাংলার সিংহপুরের রাজপুত্র বাঙালি বিজয়সিংহ লঙ্কা জয় করেন এবং তাঁর নামানুসারেই লঙ্কার নামকরণ সিংহল করা হয়। বারোভূঁইয়ার অন্যতম চাঁদ রায়, প্রতাপাদিত্যকে পরাজিত করতে দিল্লির মুঘল সম্রাটকে রীতিমতো লড়াই করতে হয়েছিল।

শিক্ষা – বাঙালি পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর তিব্বতে গিয়ে বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও শিক্ষাবিস্তার করেন। নবদ্বীপের রঘুনাথ শিরোমণি মিথিলার বিখ্যাত পণ্ডিত পক্ষধর মিশ্রকে তর্কযুদ্ধে পরাজিত করে বাংলার গৌরব বৃদ্ধি করেন। বাঙালি কবি জয়দেবের লেখা কাব্য গীতগোবিন্দ সংস্কৃত সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

স্থাপত্য-আধ্যাত্মিকতা-বিজ্ঞান – স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও শিল্পকলাতেও বাঙালি জাতি কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে। পাল যুগের বিখ্যাত দুই ভাস্কর ছিলেন বিট্পাল ও ধীমান। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব, শ্রীরামকৃষ্ণদেব আধ্যাত্মিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাঙালিকে অপূর্ব মহিমা দান করেছেন। স্বামী বিবেকানন্দের বাণী মুগ্ধ করেছে বিশ্ববাসীকে। বাঙালি বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু গাছের মধ্যে প্রাণের স্পন্দন আবিষ্কার করেছেন। ড. প্রফুল্লচন্দ্র রায় রসায়নশাস্ত্রে অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। বাঙালির কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তাঁর কবিতায় মানুষের মহামিলনের কথা বলেছেন। সবশেষে কবি আশা প্রকাশ করেছেন যে বাঙালি একদিন তার প্রতিভা ও কর্মপ্রচেষ্টায় বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা লাভ করবে।

আমরা বাঙালি বাস করি সেই তীর্থে — বরদ বঙ্গে বঙ্গের বাঙালিদের যে কীর্তিগাথা কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত আমরা কবিতায় তুলে ধরেছেন, তা নিজের ভাষায় লেখো।

শুরুর কথা – সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘আমরা’ কবিতায় বাঙালি জাতির দুঃসাহসিক কীর্তিগাথাকে ইতিহাসকে অবলম্বন করে তুলে ধরেছেন।

যুদ্ধ জয় – বাঙালির ছেলে বিজয়সিংহ লঙ্কা জয় করে নিজের শৌর্যের পরিচয় রেখে গেছেন। বারো ভূঁইয়ার অন্যতম চাঁদ রায়, সওদাগর এবং প্রতাপাদিত্যের দাপটে পিছু হটতে হয়েছে মোগল সম্রাটদেরও।

জ্ঞানের বিকাশ – কপিলমুনিও এখানেই সাংখ্যদর্শনের প্রবর্তন করেছিলেন। তর্কশাস্ত্রে বাঙালির বিজয়পতাকা উড়িয়েছিলেন রঘুনাথ শিরোমণি। জয়দেব তাঁর ‘গীতগোবিন্দ’-এর পদে সংস্কৃত সাহিত্যকে সহজভাবে তুলে ধরেছেন।

শিল্পে কৃতিত্ব – বিটপাল আর ধীমান ভাস্কর্যে বাঙালির দক্ষতাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করেছেন।

বাউল সংগীত – কীর্তন আর বাউলের গানে বাঙালি হৃদয়ের মানবিক অনুভূতিগুলি উন্মুক্ত হয়ে উঠেছে।

আধ্যাত্মিক বাণী প্রচার – চৈতন্যদেব বাঙালির আত্মার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। স্বামী বিবেকানন্দ পৃথিবী জুড়ে প্রচার করেছেন বাঙালির বিবেকের বাণী। প্রাণবিজ্ঞান কিংবা রসায়নশাস্ত্রেও বাঙালি অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।

মহামিলনের গাথা – রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে মানবজাতির মিলনের গাথা। এইভাবেই কবি ‘আমরা’ কবিতায় বাঙালির কীর্তির জয়গান গেয়েছেন।

বাঙালির হিয়া অমিয় মথিয়া নিমাই ধরেছে কায়া। — নিমাই – এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। বাঙালির হিয়া অমিয় মথিয়া নিমাই কীভাবে কায়া ধারণ করেছেন বুঝিয়ে দাও।

নিমাই-এর পরিচয় – 1486 খ্রিস্টাব্দে নবদ্বীপে নিমাই জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি শ্রীচৈতন্য নামে পরিচিত হন। তিনি ঈশ্বরপুরীর কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। চৈতন্য ছিলেন গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। গোটা ভারত পরিক্রমা করে তিনি কৃষ্ণনাম প্রচার করেন। জীবনের শেষ চব্বিশ বছর চৈতন্যদেব পুরীতে অতিবাহিত করেন।

নিমাইয়ের কায়া ধারণ – চৈতন্যদেব বাঙালিকে মানবপ্রেম ও আত্মোন্নতির শিক্ষা দিয়েছিলেন। তাঁর প্রচারিত কৃষ্ণপ্রেম মূলত মানবপ্রেমেরই প্রকাশ। কৃষ্ণনামকে সম্বল করেই তিনি বিরুদ্ধতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাহস জুগিয়েছেন। বাঙালি দেবতাকে যেমন আপন করে নিয়েছে, তেমনি প্রিয়জনকে দেবতুল্য মর্যাদা দিয়েছে। এভাবেই গড়ে উঠেছে বাঙালির ভক্তিসুলভ মানবিকতা। চৈতন্যদেবের দৃষ্টিভঙ্গি বাঙালিকে মানবতার নতুন দিশা দেখিয়েছে। বাঙালি তাঁর মধ্যে প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ববিধাতার ছায়া। এভাবেই বাঙালি-আত্মার মূর্ত প্রতীক হয়েছেন নিমাই বা শ্রীচৈতন্য।

বিফল নহে এ বাঙালি জনম বিফল নহে এ প্ৰাণ। — এই উক্তির আলোকে বাঙালি সম্পর্কে কবির গর্ববোধের কারণ লেখো।

শুরুর কথা – কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বাঙালির গৌরবময় কৃতিত্বকে তাঁর ‘আমরা’ কবিতায় তুলে ধরেছেন।

বাঙালির যুদ্ধ জয় – প্রকৃতির বিরূপতার সঙ্গে লড়াই করে বাঙালি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। বিজয়সিংহ শ্রীলঙ্কা জয় করে এর ‘সিংহল’ নামকরণের ভিত্তি রচনা করেন। চাঁদ রায়, প্রতাপাদিত্যের মতো বাঙালি শাসকরা মোগল সাম্রাজ্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন।

জ্ঞানভাণ্ডার – অতীশ দীপঙ্কর তিব্বতে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন এবং মিশরে তর্কযুদ্ধে বিজয়ী হন। জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’ সংস্কৃত সাহিত্যের চিরস্মরণীয় সম্পদ।

শিল্পকার্যে দক্ষতা – পালযুগের ভাস্কর বিটপাল ও ধীমান স্থাপত্য ও ভাস্কর্যকলায় অসাধারণ দক্ষতায় বাঙালির ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন।

আধ্যাত্মিক ও সামাজিক সমৃদ্ধি – শ্রীচৈতন্যদেব আধ্যাত্মিক ও সামাজিক জাগরণ এনেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের বাণী বিশ্বকে আলোকিত করেছে।

বিজ্ঞানে কৃতিত্ব – আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু উদ্ভিদের প্রাণস্পন্দন আবিষ্কার করেন। ড. প্রফুল্লচন্দ্র রায় রসায়নশাস্ত্রে যুগান্তকারী অবদান রাখেন।

মহামিলনের মন্ত্র – রবীন্দ্রনাথ বিশ্বমানবতার মিলনের বাণী প্রচার করেছেন। বাঙালির এইসব অর্জন কবিকে গর্বিত করেছে।

শেষের কথা – সে কারণেই জাতির প্রতি গর্ববোধ কবি ‘আমরা’ কবিতায় প্রকাশ করেছেন।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের পঞ্চম পাঠের তৃতীয় অধ্যায়, ‘আমরা’ -এর কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

নবম শ্রেণি - বাংলা - ইলিয়াস - রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি – বাংলা – ইলিয়াস – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি - বাংলা - ইলিয়াস - ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – ইলিয়াস – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি - বাংলা - ইলিয়াস - অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – ইলিয়াস – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

নবম শ্রেণি – বাংলা – ইলিয়াস – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – ইলিয়াস – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – ইলিয়াস – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – ইলিয়াস – বিষয়সংক্ষেপ

নবম শ্রেণি বাংলা – আমরা – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর