আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল” -এর “বায়ুমণ্ডলের ধারণা ও স্তরবিন্যাস” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “দীর্ঘধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

বায়ুমণ্ডল কী কী উপাদানে গঠিত আলোচনা করো।
বায়ুমণ্ডলের উপাদান –
বায়ুমণ্ডল নানা ধরনের উপাদানে গঠিত। এই উপাদানগুলি হল –

গ্যাসীয় উপাদান –
বায়ুমণ্ডলে যেসব গ্যাসীয় উপাদান আছে সেগুলির মধ্যে নাইট্রোজেন (শতকরা 78.08 ভাগ) এবং অক্সিজেন (শতকরা 20.94 ভাগ) প্রধান। এই দুটি গ্যাস ছাড়া বায়ুমণ্ডলে খুব অল্প মাত্রায় আর্গন (শতকরা 0.93 ভাগ), কার্বন ডাইঅক্সাইড (শতকরা 0.03 ভাগ), হিলিয়াম, হাইড্রোজেন, ক্রিপটন, মিথেন, নিয়ন, ওজোন, জেনন প্রভৃতি গ্যাস আছে। এদের মধ্যে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ও আর্গন বায়ুমণ্ডলের শতকরা প্রায় 99.95 ভাগ স্থান দখল করে আছে।

জলীয়বাষ্প –
জলের গ্যাসীয় অবস্থাকে বলা হয় জলীয়বাষ্প। এই উপাদানটি সাগর, মহাসাগর, নদনদী, হ্রদ এবং অন্যান্য জলাশয়, গাছপালা প্রভৃতি থেকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে মেশে। সাধারণত বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ যদিও খুব সামান্য থাকে তবুও ঋতুভেদে বা অঞ্চলভেদে এই পরিমাণের কিছুটা তারতম্য হয়। যেমন – নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ুতে সারাবছর জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে, যেখানে মেরু অঞ্চলে প্রচণ্ড ঠান্ডায় বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ অত্যন্ত কম। আবার যে-কোনো স্থানে বর্ষাকালে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি থাকে।
ধূলিকণা –
বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে যথেষ্ট পরিমাণে ধূলিকণা থাকে এবং অন্যান্য গ্যাসীয় অণুর মতো ধূলিকণাও বাতাসে ভেসে বেড়ায়। শুষ্ক মরু অঞ্চল বা সমুদ্রতীরের ধুলোবালি, লবণকণা, কলকারখানার পোড়া কয়লার ছাই প্রভৃতি সূক্ষ্ম ধূলিকণারূপে বাতাসে ভেসে বেড়ায়।
বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের প্রভাব বর্ণনা করো।
বায়ুমণ্ডলের উপাদানসমূহের প্রভাব –
বায়ুমণ্ডলের প্রায় প্রতিটি উপাদানই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। যেমন –
নাইট্রোজেন (78.08%) –
- শুঁটিজাতীয় উদ্ভিদের মূলে বসবাসকারী কতকগুলি ব্যাকটেরিয়া (যেমন – রাইজোবিয়াম) বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে মাটির উর্বরাশক্তি বাড়িয়ে দেয়।
- বর্তমানে বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে সার উৎপাদনের কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
- বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন পরোক্ষভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর শরীরে নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ করে।
অক্সিজেন (20.94%) –
- অক্সিজেন ছাড়া জীবজগতের অস্তিত্বই অসম্ভব। কারণ, অক্সিজেন ছাড়া শ্বাসকার্য সম্ভব নয় বলে বেঁচে থাকার জন্য সকল প্রাণীই অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল।
- অক্সিজেন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিলার আবহবিকার বা বিচূর্ণীভবন (জারণ) ঘটায়।
- কেবল অক্সিজেনের উপস্থিতিতেই দহনক্রিয়া জ্বালানো সম্ভব।
- জলীয়বাষ্পের উপস্থিতিতে অক্সিজেন মরিচা সৃষ্টির মাধ্যমে লোহার ক্ষয়সাধন করে।
কার্বন ডাইঅক্সাইড (0.03%) –
- কার্বন ডাইঅক্সাইড ছাড়া উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করতে পারে না (উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় বায়ুর কার্বন ডাইঅক্সাইডের সাহায্যে খাদ্য প্রস্তুত করে)। আর প্রাণীজগৎ খাদ্যের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল।
- বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও এই গ্যাসটির বিশেষ ভূমিকা আছে।
- কার্বন ডাইঅক্সাইড শিলার রাসায়নিক আবহবিকার (কার্বনেশন) ঘটায়।
- কার্বন ডাইঅক্সাইড চুনাপাথর ও ডলোমাইট শিলায় রাসায়নিক আবহবিকার ঘটিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ (স্ট্যালাকটাইট, স্ট্যালাগমাইট প্রভৃতি) গঠন করে।
- অঙ্গারময় খনিজ এবং চুনজাতীয় খনিজ গঠনে কার্বন ডাইঅক্সাইডের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
ওজোন –
ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে 24-40 কিমি-র মধ্যে যে ওজোন গ্যাসের স্তর পৃথিবীকে বেষ্টন করে রয়েছে, তার জন্যেই সূর্য থেকে ছুটে আসা ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি ভূপৃষ্ঠে পৌঁছোতে পারে না। ফলে পৃথিবী ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে।
জলীয়বাষ্প –
- বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্প আছে বলেই মেঘ সৃষ্টি হয় এবং ওই মেঘ থেকেই বৃষ্টি হয়।
- জলের প্রধান উৎস বৃষ্টিপাত। জলের অপর নাম জীবন। জলীয়বাষ্প না থাকলে পৃথিবীতে জীবনের কোনো অস্তিত্ব থাকত না।
- জলীয়বাষ্পের জন্যই পৃথিবীতে শিশির, কুয়াশা, তুহিন ও তুষার সৃষ্টি হয়।
ধূলিকণা –
- বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করেই জলীয়বাষ্প জলবিন্দুতে পরিণত হয় বা মেঘ ও কুয়াশা সৃষ্টি হয়।
- বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণাসমূহ সূর্যরশ্মি দ্বারা সরাসরি উত্তপ্ত হয়ে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে এবং পৃথিবীতে সৌরতাপ বণ্টনে প্রভাব বিস্তার করে।
- ধূলিকণার দ্বারা সূর্যের আলো বিচ্ছুরিত হয়ে দিনেরবেলা পৃথিবীকে আলোকিত করে রাখে।
- বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার উপস্থিতির জন্য উষা ও গোধূলির সৃষ্টি হয়।
- বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণা থাকায় আকাশ নীল দেখায়।
বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
অথবা, তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস করো।
বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস –
তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে ছয়টি স্তরে ভাগ করা যায়। যেমন –

এই বিভিন্ন প্রকার বায়ুমণ্ডলের স্তর সম্বন্ধে নীচের সারণিতে আলোচনা করা হল।

| বায়ুমণ্ডলের স্তরের নাম | অবস্থান | বিস্তার | বৈশিষ্ট্য | 
| ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমণ্ডল | বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের সর্বাপেক্ষা অধিক ঘনত্বযুক্ত স্তরটির নাম ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমণ্ডল। ইংরেজি ‘ট্রপোস্ফিয়ার’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘ট্রপো’ (যার অর্থ ‘পরিবর্তন’ বা ‘অশান্ত’) এবং ‘স্ফিয়ার’ (যার অর্থ ‘অঞ্চল’) থেকে উদ্ভূত। | ক্রান্তীয় অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠ থেকে 18 কিমি ও মেরু অঞ্চলে 8 কিমি (গড় উচ্চতা 12 কিমি)। | 1. এই স্তরে প্রতি 1000 মিটার উচ্চতায় বায়ুর উষ্ণতা 6.5°C হারে কমতে থাকে। এই কারণে ট্রপোস্ফিয়ারের ঊধর্ব বা শেষ সীমায় বায়ুর উষ্ণতা কমে হয় প্রায় -55°C থেকে -66°C। 2. বায়ুমণ্ডলের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। এই স্তরে বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের তিন-চতুর্থাংশ পাওয়া যায়। 3. বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান, জলীয়বাষ্প, ধূলিকণা ও লবণের কণা পাওয়া যায়। মেঘের সৃষ্টি ও বায়ুপ্রবাহ প্রধানত এই স্তরেই দেখা যায়। বায়ুপ্রবাহ, ঘূর্ণবাত, টর্নেডো, মেঘ, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত প্রভৃতি ঘটনা ট্রপোস্ফিয়ারেই কেবল ঘটে। 4. ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমাকে বলে ট্রপোপজ। এখানে উষ্ণতা কমেও না বা বাড়ে না অর্থাৎ প্রায় ধ্রুবক থাকে। | 
| স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল | ট্রপোস্ফিয়ারের ঠিক উর্ধ্বে বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তরটির নাম স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল। ইংরেজি ‘স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার’ শব্দটি গ্রিক ‘স্ট্র্যাটো’ (যার অর্থ ‘শান্ত’ অথবা ‘স্থির’) এবং ‘স্ফিয়ার’ (যার অর্থ ‘অঞ্চল’) থেকে উদ্ভূত। | 12 থেকে 50 কিমি | 1. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের 24-40 কিমি উচ্চতার মধ্যে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব। এই কারণে এই অংশের নাম ওজোনোস্ফিয়ার। এই স্তর সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে জীবজগতকে ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে। 2. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে মেঘ ও বায়ুপ্রবাহ দেখা যায় না। তবে মেরু অঞ্চলে নিম্ন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে বরফের কেলাস দিয়ে গঠিত ‘শুক্তির জননী মেঘ’ নামে একপ্রকার মেঘ দেখা যায়। 3. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে বায়ুপ্রবাহ না থাকায় ঘর্ষণজনিত বাধাও খুব কম এবং এই স্তরের নিম্নাংশ দিয়ে জেট বিমান চলাচল করে। 4. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উষ্ণতা 50 কিমি উচ্চতায় বেড়ে হয় প্রায় -4°C। প্রধানত ওজোনের অণুগুলি দ্বারা অতিবেগুনি রশ্মি শোষিত হওয়ার কারণে এই স্তরে উষ্ণতা বাড়ে। 5. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমার নাম স্ট্যাটোপজ। | 
| মেসোস্ফিয়ার বা মধ্যমণ্ডল | বায়ুমণ্ডলের তৃতীয় স্তর বা স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ঠিক উর্ধ্বের স্তরটির নাম মেসোস্ফিয়ার বা মধ্যমমণ্ডল। ইংরেজি ‘মেসোস্ফিয়ার’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘মেসো’ (যার অর্থ ‘মধ্যম’) এবং ‘স্ফিয়ার’ (যার অর্থ ‘অঞ্চল’ বা ‘মণ্ডল’) থেকে উদ্ভূত। | 50-80 কিমি | 1. এখানে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উষ্ণতা ক্রমশ কমতে থাকে এবং 80 কিমি উচ্চতায় উষ্ণতা কমে হয় প্রায় -90°C। 2. মহাকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে আগত উল্কা এই স্তরে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। 3. মেসোস্ফিয়ারের ঊধর্বসীমাকে বলা হয় মেসোপজ। | 
| আয়নোস্ফিয়ার বা থার্মোস্ফিয়ার | বায়ুমণ্ডলের চতুর্থ স্তর বা মেসোস্ফিয়ারের ঠিক উর্ধ্বের স্তরটিকে আয়নোস্ফিয়ার বা থার্মোস্ফিয়ার বলে। এখানকার গ্যাসীয় কণাগুলি তড়িৎ-আধানযুক্ত বা আয়োনাইজড্ বলে এই স্তরের নাম আয়নোস্ফিয়ার। আর ইংরেজি ‘থার্মোস্ফিয়ার’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘থার্মো’ (যার অর্থ ‘তাপ’) এবং ‘স্ফিয়ার’ (যার অর্থ ‘অঞ্চল’ বা ‘মণ্ডল’) থেকে উদ্ভূত। | 80-600 কিমি | 1. অসংখ্য ধনাত্মক ও ঋণাত্মক তড়িৎগ্রস্ত কণা বা আয়ন থাকায় এই স্তরটিকে আয়নোস্ফিয়ার বলে। আয়নোস্ফিয়ারের 90 থেকে 160 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটির নাম ‘কেনেলি-হেভিসাইড স্তর’। এই স্তর স্বল্প দৈর্ঘ্যের বেতারতরঙ্গগুলিকে প্রতিফলিত করে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে রেডিয়ো যোগাযোগ সম্ভব করেছে। 2. ঊর্ধ্ব থার্মোস্ফিয়ারে চৌম্বকবিক্ষেপ-জনিত কারণে ইলেকট্রন ও প্রোটন কণা অধঃক্ষেপিত হয়ে সুমেরুতে সুমেরুপ্রভা ও কুমেরুতে কুমেরুপ্রভা নামের মেরুজ্যোতির সৃষ্টি করে। 3. এই স্তরে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা অতি দ্রুত হারে বাড়তে থাকে এবং ঊর্ধ্বসীমায় তাপমাত্রা হয় প্রায় 1200°C। | 
| এক্সোস্ফিয়ার বা বহিঃমণ্ডল | বায়ুমণ্ডলের পঞ্চম ভরটির নাম এক্সোস্ফিয়ার। | 600-1500 কিমি | 1. এক্সোস্ফিয়ার স্তর থেকে বায়বীয় কণাগুলি ক্রমাগত মহাশূন্যে নির্গত হয়। 2. এক্সোস্ফিয়ার অত্যন্ত কম ঘনত্বের হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস দ্বারা গঠিত। 3. এই স্তরের উষ্ণতা প্রায় 1200°C থেকে 1600°C। | 
| ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বা চৌম্বকমণ্ডল | এক্সোস্ফিয়ারের পরবর্তী স্তর ম্যাগনেটোস্ফিয়ার নামে পরিচিত। | 1500-10000 কিমি | 1. ম্যাগনেটোস্ফিয়ার স্তরে একটি স্থায়ী তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়েছে। এই স্তরে 2. তড়িৎচুম্বকীয় শক্তির প্রভাবে ইলেকট্রন ও মুক্ত আয়নগুলি সংবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। 3. এই স্তরটি ধীরে ধীরে বায়ুশূন্য হয়ে মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যায়। | 
বায়ুমণ্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তর সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, বায়ুমণ্ডলের ক্ষুব্ধমণ্ডল ও শান্তমণ্ডল স্তরের বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাখ্যা করো।
বায়ুমণ্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের সম্পর্ক –
| বায়ুমণ্ডলের স্তরের নাম | বিস্তার | অবস্থান | বৈশিষ্ট্য | 
| ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমণ্ডল | বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের সর্বাপেক্ষা অধিক ঘনত্বযুক্ত স্তরটির নাম ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমণ্ডল। ইংরেজি ‘ট্রপোস্ফিয়ার’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘ট্রপো’ (যার অর্থ ‘পরিবর্তন’ বা ‘অশান্ত’) এবং ‘স্ফিয়ার’ (যার অর্থ ‘অঞ্চল’) থেকে উদ্ভূত। | ক্রান্তীয় অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠ থেকে 18 কিমি ও মেরু অঞ্চলে 8 কিমি (গড় উচ্চতা 12 কিমি)। | 1. এই স্তরে প্রতি 1000 মিটার উচ্চতায় বায়ুর উষ্ণতা 6.5°C হারে কমতে থাকে। এই কারণে ট্রপোস্ফিয়ারের ঊধর্ব বা শেষ সীমায় বায়ুর উষ্ণতা কমে হয় প্রায় -55°C থেকে -66°C। 2. বায়ুমণ্ডলের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। এই স্তরে বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের তিন-চতুর্থাংশ পাওয়া যায়। 3. বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান, জলীয়বাষ্প, ধূলিকণা ও লবণের কণা পাওয়া যায়। মেঘের সৃষ্টি ও বায়ুপ্রবাহ প্রধানত এই স্তরেই দেখা যায়। বায়ুপ্রবাহ, ঘূর্ণবাত, টর্নেডো, মেঘ, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত প্রভৃতি ঘটনা ট্রপোস্ফিয়ারেই কেবল ঘটে। 4. ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমাকে বলে ট্রপোপজ। এখানে উষ্ণতা কমেও না বা বাড়ে না অর্থাৎ প্রায় ধ্রুবক থাকে। | 
| স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল | ট্রপোস্ফিয়ারের ঠিক উর্ধ্বে বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তরটির নাম স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল। ইংরেজি ‘স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার’ শব্দটি গ্রিক ‘স্ট্র্যাটো’ (যার অর্থ ‘শান্ত’ অথবা ‘স্থির’) এবং ‘স্ফিয়ার’ (যার অর্থ ‘অঞ্চল’) থেকে উদ্ভূত। | 12 থেকে 50 কিমি | 1. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের 24-40 কিমি উচ্চতার মধ্যে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব। এই কারণে এই অংশের নাম ওজোনোস্ফিয়ার। এই স্তর সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে জীবজগতকে ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে। 2. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে মেঘ ও বায়ুপ্রবাহ দেখা যায় না। তবে মেরু অঞ্চলে নিম্ন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে বরফের কেলাস দিয়ে গঠিত ‘শুক্তির জননী মেঘ’ নামে একপ্রকার মেঘ দেখা যায়। 3. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে বায়ুপ্রবাহ না থাকায় ঘর্ষণজনিত বাধাও খুব কম এবং এই স্তরের নিম্নাংশ দিয়ে জেট বিমান চলাচল করে। 4. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উষ্ণতা 50 কিমি উচ্চতায় বেড়ে হয় প্রায় -4°C। প্রধানত ওজোনের অণুগুলি দ্বারা অতিবেগুনি রশ্মি শোষিত হওয়ার কারণে এই স্তরে উষ্ণতা বাড়ে। 5. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমার নাম স্ট্যাটোপজ। | 
পরিবেশের ওপর ওজোনস্তরের প্রভাব আলোচনা করো।
পরিবেশের ওপর ওজোনস্তরের প্রভাবসমূহ –
বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের মধ্যে 20 থেকে 40 কিমি উচ্চতায় ওজোন (O3) গ্যাসের একটি ঘনস্তর বলয়রূপে পৃথিবীকে ঘিরে রয়েছে, যাকে ওজোনমণ্ডল বা ওজোনোস্ফিয়ার বলা হয়। পরিবেশের ওপর এই ওজোনস্তরটির প্রভাব সীমাহীন। যেমন –
- প্রাকৃতিক সৌরপর্দা – সূর্য থেকে ধেয়ে আসা অতিবেগুনি রশ্মি (আলট্রাভায়োলেট-বি এবং সি) পৃথিবীর জীবজগতের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। ওজোনস্তর এই দুই অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ তথা প্রতিহত করে। তাই এই দুই রশ্মি ওজোনস্তর অতিক্রম করে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছোতে পারে না। এভাবে ওজোনস্তর পর্দা বা ছাতার মতো জীবজগৎ তথা পরিবেশকে অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে। এজন্য ওজোনস্তরকে প্রাকৃতিক সৌরপর্দা বা ন্যাচারাল সানস্ক্রিন বলে।
- প্রাণীকূলের ওপর প্রভাব – ওজোনস্তর যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা না-থাকে তাহলে অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে জীবজন্তুর রোগ প্রতিরোধ ও প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং জলজ প্রাণী, যথা চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছ ও প্ল্যাংকটনের বিশেষ ক্ষতি হবে। ফলে জলের বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন হবে।
- উদ্ভিদজগতের ওপর প্রভাব – ওজোনস্তর যদি অতিবেগুনি রশ্মিকে প্রতিহত না করত তাহলে উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য অতি প্রয়োজনীয় সালোকসংশ্লেষ বাধাপ্রাপ্ত হত, ফলে উদ্ভিদ শুকিয়ে যেত।
- মানুষের ওপর প্রভাব – ওজোনস্তর অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে নেয় বলেই দুরারোগ্য ত্বকের ক্যানসার থেকে মানুষ রক্ষা পায় এবং দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট থাকে। এ ছাড়া অসময়ে চোখে ছানি পড়া, প্রজনন ক্ষমতার হ্রাস প্রভৃতি সমস্যা থেকেও এটি মানুষকে রক্ষা করে।
- অন্যান্য প্রভাব – ওজোনস্তরে অতিবেগুনি রশ্মি শোষিত হয় বলে বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে তাপমাত্রা কম থাকে এবং তার ফলে ভূপৃষ্ঠে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সবশেষে বলা যায়, বায়ুমণ্ডলের যে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তর বহুরকমভাবে আমাদের সুরক্ষা প্রদান করেছে, সেই স্তরটির অস্তিত্বই বহুলাংশে এই ওজোনস্তরের ওপর নির্ভরশীল।
আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল” -এর “বায়ুমণ্ডলের ধারণা ও স্তরবিন্যাস” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “দীর্ঘধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
 





মন্তব্য করুন