মাধ্যমিক ভূগোল – বর্জ্য ব্যবস্থাপনা – বিষয়সংক্ষেপ

Souvick

আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক (দশম শ্রেণীর) ভূগোল বইয়ের চতুর্থ অধ্যায়, “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” এর “বিষয়সংক্ষেপ” নিয়ে আলোচনা করব। যা এই অধ্যায়ের বিষয়বস্তু অধ্যায়টির কাঠামো ও প্রধান বিষয়াবলি বুঝতে সাহায্য করবে, যা আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সংক্ষিপ্ত বিবেচনা আপনাদের প্রস্তুতি আরও ভালো করতে সাহায্য করবে।

মাধ্যমিক ভূগোল - বর্জ্য ব্যবস্থাপনা - বিষয়সংক্ষেপ

‘বর্জ্য’ কথাটির অর্থ ‘যা বর্জনযোগ্য’। যে-কোনো কঠিন, তরল কিংবা গ্যাসীয় পদার্থ, যেগুলি আমাদের কাজে লাগে না, অপ্রয়োজনীয় এবং ব্যবহারের অযোগ্য, তাই ফেলে দেওয়া প্রয়োজন, সেগুলিকেই বলে বর্জ্য পদার্থ।

বর্জ্য পদার্থ তিন প্রকার, যথা –

  • কঠিন বর্জ্য – (যেমন – ভাঙা কাচ, ধাতব টুকরো, ভাঙা প্লাস্টিক ইত্যাদি),
  • তরল বর্জ্য – (যেমন – পোড়া তেল, প্রাণীর মলমূত্র, সাবান ও ডিটারজেন্ট মিশ্রিত জল প্রভৃতি) এবং
  • গ্যাসীয় বর্জ্য – (যেমন – সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড প্রভৃতি)। বিষক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে বর্জ্য পদার্থকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় –
  • বিষাক্ত বর্জ্য – (যেমন – পারদ, বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক পদার্থ প্রভৃতি) এবং
  • বিষহীন বর্জ্য – (যেমন – ছেঁড়া কাপড়, ফলের খোসা, ছেঁড়া কাগজ প্রভৃতি।

প্রধানত সাতটি ক্ষেত্র থেকে বর্জ্য পদার্থ সৃষ্টি হয়। এগুলি হল –

  1. গৃহস্থালির বর্জ্য – শাকসবজির অবশিষ্টাংশ, পলিথিন ব্যাগ ইত্যাদি শিল্প বর্জ্য – চামড়া কারখানার ক্রোমিয়াম যৌগ,
  2. কৃষিজ বর্জ্য – সার ও কীটনাশক ধোয়া জল, গাছের গোড়া প্রভৃতি,
  3. পৌরসভার বর্জ্য – ভাঙা শিশি বোতল, টুকরো প্লাস্টিক প্রভৃতি,
  4. জৈব বর্জ্য – মাছের উচ্ছিষ্ট, মাংস উৎপাদন কেন্দ্র থেকে নির্গত পশুর দেহাবশেষ প্রভৃতি,
  5. চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য – পরিত্যক্ত সূঁচ, সিরিঞ্জ, গজ, ব্যান্ডেজ প্রভৃতি এবং
  6. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য – পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ছাই, ভারী জল প্রভৃতি।

মানুষ ও পরিবেশের ওপর বর্জ্যের নানান ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, যেমন –

  1. চারপাশে বর্জ্য পদার্থ জমে থাকলে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় (আমাশয়, কলেরা, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি নানা রকম রোগ হয়),
  2. জল ও মাটি দূষিত হয়,
  3. বায়ুদূষণ ঘটে,
  4. জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ বিনষ্ট হয়,
  5. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থের মাধ্যমে ক্যানসারসহ বিভিন্ন প্রকার দুরারোগ্য ব্যাধি হয় ও বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হয়,
  6. পরিত্যক্ত বর্জ্য পদার্থ ও পচা আবর্জনা থেকে পরিবেশ নোংরা হয়।

যে কার্যকরী পরিচালন পদ্ধতির মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থের সংগ্রহ, অপসারণ, পরিবহণ, শোধন, ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস ও পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করা হয়, তাকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলে। প্রকৃতপক্ষে, বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা কোনো একক কাজ নয়, অনেকগুলি কাজের সমষ্টি। এই ব্যবস্থাপনার প্রধান দিকগুলি হল –

  1. বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস,
  2. বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার এবং
  3. বর্জ্যের পুনর্নবীকরণ।

কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগুলি হল –

  1. বর্জ্য পৃথকীকরণ,
  2. ভরাটকরণ বা ল্যান্ডফিল এবং
  3. কম্পোস্টিং।

এ ছাড়া নিকাশি পদ্ধতির মাধ্যমে তরল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা এবং স্ক্রাবারের মাধ্যমে গ্যাসীয় বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করা হয়।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তাগুলি হল –

  1. বর্জ্যের পরিমাণ কমানো,
  2. বিভিন্ন প্রকার রোগব্যাধি প্রতিরোধ করা,
  3. বায়ুদূষণ, জলদূষণ ও মৃত্তিকাদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা,
  4. বর্জ্যের সাহায্যে বিদ্যুৎ ও জৈবসার উৎপাদন করা,
  5. বাস্তুতন্ত্র ও জৈববৈচিত্র্য রক্ষা করা এবং
  6. পরিবেশ পরিচ্ছন্ন ও নির্মল রাখার জন্য বর্জ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনা বিশেষ প্রয়োজনীয়।

শিক্ষার্থীরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কতকগুলি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যেমন –

  1. বর্জ্য সম্পর্কে নিজে সচেতন হওয়া এবং অন্যদের সচেতন করা,
  2. বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ কমানো,
  3. বাড়ি, বিদ্যালয়, রাস্তা প্রভৃতি স্থান ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখা,
  4. বর্জ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রভৃতি।

ভাগীরথী-সুগলি নদীর দুই তীরের অসংখ্য কলকারখানা ও পৌর এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণে বর্জ্য পদার্থ ভাগীরথী-হুগলি নদীতে চলে আসে। এর ফলে –

  1. নদীর জল মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে,
  2. নদীর নাব্যতা ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে,
  3. বেশি করে জলবাহিত রোগের সংক্রমণ ঘটছে।

তবে বর্তমানে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান, নমামি গঙ্গে প্রভৃতি কর্মসূচি রূপায়ণের মাধ্যমে ভাগীরথী-চুগলি নদীসহ সমগ্র গঙ্গানদীকেই দূষণমুক্ত করার প্রচেষ্টা চলেছে। 


আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক (দশম শ্রেণীর) ভূগোল বইয়ের চতুর্থ অধ্যায়, “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” এর “বিষয়সংক্ষেপ” নিয়ে আলোচনা করেছি। যা এই অধ্যায়ের বিষয়বস্তু অধ্যয়নের সময় অধ্যায়টির কাঠামো ও প্রধান বিষয়াবলি বুঝতে সাহায্য করবে, যা আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সহায়ক হয়েছে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সহায়তার প্রয়োজন হয়, নিচে মন্তব্য করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত।

Categories -
Please Share This Article

Related Posts

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Geography Suggestion 2026 – বামদিক ডানদিক মেলাও

Madhyamik Geography Suggestion 2026 – একটি অথবা দুটি শব্দে উত্তর দাও [Marks – 1]

Madhyamik Geography Suggestion 2026 – শূন্যস্থান পূরণ

Madhyamik Geography Suggestion 2026 Wbbse – শুদ্ধ ও অশুদ্ধ

Madhyamik Geography MCQ Suggestion 2026 Wbbse