আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের সপ্তম অধ্যায় “উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র” -এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ “ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

উপগ্রহের সেন্সর শ্রেণিবিভাগ করো।
আলোর উৎস অনুসারে সেন্সরকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় –
- নিবৃত সেন্সর (passive sensor) – যেসব সেন্সর দিনের বেলায় বস্তুর ওপর পতিত সূর্যালোকের প্রতিফলনের সাহায্যে বস্তুর তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ গ্রহণ করে প্রতিকৃতি গঠন করে, তাদের নিবৃত সেন্সর বলে।
- সক্রিয় সেন্সর (active sensor) – এই সেন্সরগুলি নিজস্ব শক্তি বা আলোর সাহায্যে বস্তুর প্রতিফলন সংগ্রহ করে। যেমন – রেডার রাত্রিবেলায় শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
ভারতে উপগ্রহ চিত্র কোন্ কোন্ কাজে ব্যবহার করা হয়?
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) এবং জাতীয় রিমোট সেন্সিং এজেন্সি (NRSA) ভারতে উপগ্রহ চিত্র প্রস্তুত এবং এই সংক্রান্ত গবেষণা করে।
এইসব উপগ্রহ চিত্র থেকে –
- আবহমণ্ডলের নানা অবস্থা পর্যবেক্ষণ,
- বন্যা ও খরার মানচিত্র অঙ্কন,
- কৃষি ও শস্য তালিকা প্রস্তুত,
- জলাভূমি ও ভূমি আচ্ছাদন সম্পর্কে মানচিত্র অঙ্কন,
- উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা,
- পার্বত্য অঞ্চলের মানচিত্র তৈরি,
- মাটি, বনভূমি, পতিত ভূমি, বাস্তুতান্ত্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা,
- ভূতাত্বিক মানচিত্র অঙ্কন প্রভৃতি করা হয়।
ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
- ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে কোনো একটি স্থানের প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ থাকে। তাই এই মানচিত্র পাঠ করলে ওই অঞ্চল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা করা সম্ভব।
- নদনদীর ছবিতে নদীর প্রবাহদিক, নদীর প্রকৃতি ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা থাকে।
- ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র থেকে কোনো অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি, গড় উচ্চতা, ব্যাপ্তি ও স্থানিক উচ্চতা সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
- বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকর্ম যেমন – কৃষি, পরিবহণ, বসতি, শিল্পকারখানা সম্পর্কে এই মানচিত্র থেকে ধারণা পাওয়া যায়।
ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের স্কেলগুলি কী?
ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন স্কেলগুলিকে নীচের সারণিতে দেখানো হল –
শিটের নাম | R.F. | বিবৃতিমূলক স্কেল | বিস্তার (অক্ষাংশ × দ্রাঘিমা) | মানচিত্রের নম্বরের উদাহরণ |
মিলিয়ন শিট | 1 : 1000000 | 1 সেমিতে 10 কিমি | 1° × 1° | 73 |
সিকি ইঞ্চি বা ডিগ্রি শিট | 1 : 250000 | 1 সেমিতে 2.5 কিমি | 4° × 4° | 73M |
আধ ইঞ্চি বা অর্ধ ডিগ্রি শিট | 1 : 100000 | 1 সেমিতে 1 কিমি | 30′ × 30′ | 73M/NE |
ইঞ্চি শিট | 1 : 50000 | 1 সেমিতে 500 মি | 15′ × 15′ | 73M/5 |
বিশেষ ধরনের ম্যাপ | 1 : 25000 | 4 সেমিতে 10 কিমি | 15′ × 7’30” | 73M/5/2 |
জিওস্টেশনারি বা ভূসমলয় উপগ্রহের বৈশিষ্ট্য কী?
ভূসমলয় উপগ্রহের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
- এগুলি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 36,000 কিমি ওপরে তোলা হয় এবং সেখানেই অবস্থান করে।
- নিরক্ষরেখার ঠিক সোজাসুজি ওপরে অবস্থান করে। এরা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।
- পৃথিবী যেদিকে ঘোরে বা পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে অর্থাৎ সমলয়ে এরাও 24 ঘণ্টায় একবার আবর্তন করে।
- অনেক ওপরে থাকে বলে একটি গোলার্ধের (পৃথিবীর অর্ধাংশের) সম্পূর্ণ চিত্র সংগ্রহ করা যায়।
- একই জায়গায় অবস্থান করে প্রতি ঘণ্টায় এই উপগ্রহগুলি প্রচুর ছবি তুলে পাঠায়। ফলে আবহবিদদের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া সহজ হয়।
সান সিনক্রোনাস বা সূর্যসমলয় উপগ্রহের বৈশিষ্ট্য লেখো।
সূর্যসমলয় উপগ্রহের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
- এইসব উপগ্রহগুলি ভূপৃষ্ঠ থেকে 700-900 কিমি ওপরে অবস্থান করে।
- এরা একটি কক্ষপথে এক মেরু থেকে অন্য মেরু পরিক্রমণ করে।
- এইসব উপগ্রহগুলির দ্বারা প্রাপ্ত চিত্র ভূসম্পদ জরিপ ও সমীক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক মানচিত্র তৈরিতে এইসব উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করা হয়। ভারতের IRS সিরিজের উপগ্রহগুলি এই ধরনের।

উপগ্রহ চিত্রের গুরুত্ব কতখানি?
উপগ্রহ চিত্রের গুরুত্ব অসীম।
- এই চিত্র আবহাওয়ার পূর্বাভাস, ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা দেয়। এর ফলে ক্ষয়ক্ষতি এবং জীবনহানি রোধ করা যায়।
- ভূসম্পদের জরিপ ও বণ্টনের প্রকৃতি নির্ধারণ করে। দুর্গম ও দুর্ভেদ্য এলাকার তথ্য সংগ্রহ এবং মানচিত্র তৈরি করা ছাড়াও অরণ্যভূমি, শস্য উৎপাদন, মাটির প্রকৃতি, ক্ষয় ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা দেয়। এজন্য পরিবেশ এবং ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের ধারণা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভবিষ্যৎ ভূমি ব্যবহার সম্পর্কে পরিকল্পনা নেওয়া সহজ হয়।
- আঞ্চলিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত কাজে উপগ্রহ চিত্রের গুরুত্ব খুব বেশি।
- পরিবেশ, আবহাওয়া ও মহাকাশবিজ্ঞানে উপগ্রহ চিত্রের ব্যবহার আগামীতে আমাদের পরিকল্পনা প্রস্তুতে যেমন সুবিধা দেবে তেমনি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারেও সাফল্য পাওয়া যাবে।
উপগ্রহ চিত্রে রঙের ব্যবহার সম্পর্কে লেখো।
উপগ্রহ চিত্রে দুই ধরনের রং ব্যবহার করা হয় –
- প্রকৃত রং
- ছদ্ম রং।
- প্রকৃত রঙের ব্যবহার – ভূপৃষ্ঠস্থ বস্তুগুলির যা প্রকৃত রং, উপগ্রহ চিত্রে যদি ওই বস্তুগুলিকে সেই রঙেই উপস্থাপন করা হয় তাহলে সেই উপগ্রহ চিত্র প্রকৃত রঙে উপস্থাপন করা হয়েছে বলা যায়। এই ধরনের চিত্রে নীল, সবুজ, লাল তরঙ্গরশ্মি ও তাদের সমন্বয়কে ব্যবহার করে চিত্র প্রস্তুত করা হয়।
- ছদ্ম রঙের ব্যবহার – ভূপৃষ্ঠস্থ বস্তুগুলির যা প্রকৃত রং উপগ্রহ চিত্রে যদি সেগুলিকে অন্য রঙের সাহায্যে দেখানো হয়, তাহলে চিত্রটিতে ছদ্ম রং ব্যবহার করা হয়েছে বলা হয়। যেমন – উদ্ভিদের রং সবুজের পরিবর্তে লাল বা লালচে রঙে প্রকাশ করা হয়।
উপগ্রহ চিত্র তোলার বিভিন্ন পর্যায়গুলি ব্যাখ্যা করো।
উপগ্রহ চিত্র তোলার কয়েকটি পর্যায় রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে কৃত্রিম উপগ্রহের সেন্সর বিভিন্ন বস্তুর তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণকে গ্রহণ করে। নিবৃত সেন্সর দিনেরবেলা বিভিন্ন বস্তুর ওপর পতিত সূর্যালোকের প্রতিফলনের ওপর নির্ভর করে তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ গ্রহণ করে এবং সক্রিয় সেন্সর রাতেরবেলা রেডারের সাহায্যে বস্তুর ওপর আলো ফেলে প্রতিফলন সংগ্রহ করে। এই প্রতিফলন সাংখ্যিক (Digital) তথ্যের আকারে সংগৃহীত হয়। স্ক্যানিং -এর মাধ্যমে কৃত্রিম উপগ্রহ তথ্য সংগ্রহ করে। ভূপৃষ্ঠের যে অংশ কৃত্রিম উপগ্রহ স্ক্যান করে, সেই অংশকে অনেকগুলি গ্রিডে ভাগ করে নেয়। পরবর্তী পর্যায়ে সেন্সরে সংগৃহীত তথ্য তথ্যগ্রহণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। তথ্যগ্রহণ কেন্দ্রে যে এলাকার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তার ভৌগোলিক অবস্থানকে চিহ্নিত করা হয় ও কম্পিউটারের সাহায্যে তথ্য বিশ্লেষণ করে ব্যবহার উপযোগী উপগ্রহ চিত্র প্রস্তুত করা হয়।
উপগ্রহ চিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
উপগ্রহ চিত্রের যেসব বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা যায়, সেগুলি হল –
- দূর সংবেদনব্যবস্থা – কৃত্রিম উপগ্রহে সংস্থাপিত সংবেদকের সাহায্যে দূর থেকে বস্তুর সংস্পর্শে না এসেও সংগৃহীত তথ্য থেকে উপগ্রহ চিত্র পাওয়া যায়।
- সঠিক তথ্য – পৃথিবীপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলের নানা তথ্য সঠিকভাবে পাওয়া যায়।
- ছবি তোলার সময় – দিনেরবেলায় সূর্যালোকের ওপর নির্ভর করে বস্তুর তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণকে কাজে লাগিয়ে ছবি তোলা যায়। রাতেরবেলায় রেডারের সাহায্যে ছবি তোলা যায়।
- দ্রুত চিত্রগ্রহণ – খুব দ্রুত দূর সংবেদন প্রক্রিয়ায় আলোকচিত্র তোলা যায়। এতে সময় খুব কম লাগে এবং লোকজনও খুব কম প্রয়োজন হয়।
- দুর্গম অঞ্চলে জরিপ – দুর্গম স্থানে যেখানে পায়ে হেঁটে পৌঁছোনো সম্ভব হচ্ছে না, কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে পৃথিবীপৃষ্ঠের সেইসব দুর্গম অঞ্চলের ছবি তোলা যায়।
- আবহাওয়ার পূর্বাভাস – উপগ্রহ থেকে ধারাবাহিকভাবে ছবি পাওয়া যায় বলে ভূপৃষ্ঠের ওপরে মেঘের অবস্থান বা বায়ুমণ্ডলীয় গোলোযোগ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এতে আবহাওয়া-সংক্রান্ত ঘটনার পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়।
উপগ্রহ চিত্রের ব্যবহার লেখো।
অথবা, উপগ্রহ চিত্রের তিনটি ব্যবহার আলোচনা করো।
বিভিন্ন উদ্দেশ্যে উপগ্রহ চিত্রকে ব্যবহার করা যায় –
- ভূমির আবরণ ও ভূমির ব্যবহার-সংক্রান্ত তথ্যলাভ –
- ভূমির আবরণ সম্পর্কে জানা যায় এবং শ্রেণিবিভাগ করা যায়।
- ভূমি ব্যবহারের মানচিত্র তৈরি করা যায়।
- LANDSAT উপগ্রহে তোলা ছবি থেকে ভূমির ব্যবহার-সংক্রান্ত পরিবর্তন জানা যায়।
- আবহাওয়া, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত ব্যবহার –
- মেঘাচ্ছন্নতার পরিমাণ সম্পর্কে জানা যায়।
- ঝড়ের গঠন ও গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে জানা যায়।
- আবহাওয়ার বিভিন্ন তথ্য উপগ্রহ চিত্র থেকে পাওয়া যায়, যা আবহাওয়ার নির্ভুল পূর্বাভাস দেয়।
- কান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ করা এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
- বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, ভূমি ধসপ্রভাবিত অঞ্চলের উপগ্রহ চিত্র ওইসব ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে উদ্ধার কাজ ও পুনর্গঠনের কাজে লাগে।
- কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার –
- বিভিন্ন ফসল চিহ্নিত করা, তাদের শ্রেণিবিভাগ করা এবং মানচিত্র প্রস্তুতে উপগ্রহ চিত্র কাজে লাগে।
- উপগ্রহ চিত্রের সাহায্যে রোগগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত ফসলকে চিহ্নিত করা যায় বলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
- অরণ্যের পরিমাপ ও সংরক্ষণ –
- অরণ্যের অবস্থান ও আয়তন নির্ণয়,
- উদ্ভিদের প্রকৃতি ও প্রজাতি শনাক্তকরণ,
- বনভূমি ধ্বংসের পরিমাণ ও পরিবর্তন,
- দাবানলের কারণে উদ্ভিদের ক্ষয়ক্ষতি উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে সহজেই বোঝা যায়।
- অন্যান্য –
- উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে সমুদ্রে মাছের ঝাঁকের অবস্থান নির্ণয়, প্ল্যাঙ্কটনের উপস্থিতি, সমুদ্রজলের উষ্ণতা নিরূপণ, সমুদ্রে ভাসমান হিমশৈলের অবস্থান এমনকি সমুদ্রগর্ভের ভূপ্রকৃতি নির্ণয় করা যায় বলে মৎস্যজীবীদের খুব সুবিধা হয়।
- খনিজ সম্পদ জরিপ ও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়।
- শত্রুপক্ষের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে জানা যায়।
উপগ্রহ চিত্র এবং ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের মধ্যে পার্থক্য করো।
উপগ্রহ চিত্র এবং ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে –
বিষয় | উপগ্রহ চিত্র (satellite image) | ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র (topographical map) |
ধারণা | দূর সংবেদনের মাধ্যমে উপগ্রহ থেকে তোলা কোনো নির্দিষ্ট স্থানের চিত্র হল উপগ্রহ চিত্র। | ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থানের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি প্রচলিত প্রতীক চিহের সাহায্যে মানচিত্রে প্রদর্শন করা হলে, তাকে ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র বলে। |
প্রতীক চিহ্ন | উপগ্রহ চিত্রে বিভিন্ন বিষয়গুলিকে প্রকৃত রং বা ছদ্ম রঙে প্রকাশ করা হয়। | প্রচলিত প্রতীক চিহের সাহায্যে ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র প্রকাশ করা হয়। |
তথ্য সংগ্রহের সময় | দিনরাত্রি যে-কোনো সময় তথ্য সংগ্রহ করা যায়। | কেবলমাত্র দিনেরবেলাতেই তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। |
স্কেল | নির্দিষ্ট উচ্চতায় স্থাপিত কৃত্রিম উপগ্রহ অত্যাধুনিক সেন্সর ব্যবহার করে বলে এদের তৈরি মানচিত্রগুলির স্কেল ত্রুটিমুক্ত হয়। | ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে সব স্কেল সব সময় সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত হয় না। বিশেষ করে নদী, সড়কপথ, রেলপথ নিখুঁত ফেলে আঁকা যায় না। |
চিত্র বিশ্লেষণ | উপগ্রহ চিত্রের সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করা বেশ জটিল। তাই এগুলির বিশ্লেষণে বিশেষজ্ঞ মানুষের প্রয়োজন হয়। | ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের তথ্য বিশ্লেষণ করা তুলনামূলকভাবে সহজ। প্রচলিত প্রতীক চিহ্ন সম্পর্কে ধারণা থাকলে ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র পাঠ করা সম্ভব হয়। |
টোপোগ্রাফিক্যাল বা ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র পাঠ ভূগোল শাস্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ কেন?
ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র পাঠ ভূগোলশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যে-কোনো অঞ্চল সম্পর্কে বিস্তারিত এবং সুস্পষ্টভাবে জানার ক্ষেত্রে এই মানচিত্রের অনস্বীকার্য ভূমিকা হল –
- যে-কোনো অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ও ভূপ্রাকৃতিক বিষয়ের সুন্দর ধারণা এই ধরনের মানচিত্র থেকে পাওয়া যায়। এতে পাহাড়, পর্বত, মালভূমি, সমভূমি, নদী উপত্যকা, হ্রদ, জলাশয়, বনাঞ্চল, রাস্তাঘাট, রেলপথ, সেতু, মন্দির, মসজিদ, গির্জা, মানুষের নানা ধরনের বসতি প্রভৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া থাকে।
- এ ছাড়া সেনাবাহিনীর কাছেও এই মানচিত্রের ভূমিকা অসীম। প্রশাসনিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বা ভূপ্রকৃতিগতভাবে দুর্গম স্থানের ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র সেনাবাহিনীর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জিওস্টেশনারি বা ভূসমলয় উপগ্রহ এবং সান সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
জিওস্টেশনারি বা ভূসমলয় উপগ্রহ এবং সান সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য হল-
বিষয় | জিওস্টেশনারি | সান সিনক্রোনাস |
উচ্চতা | সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 36000 কিমি উচ্চতায় থাকে। | সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 700-900 কিমি উচ্চতায় থাকে। |
আবর্তন | নিরক্ষরেখা বরাবর পৃথিবীর মতো সমগতিতে পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘোরে। | পৃথিবীর এক মেরু থেকে অন্য মেরুতে অর্থাৎ উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরুতে নির্দিষ্ট বেগে পৃথিবীকে আবর্তন করে। |
তথ্য সংগ্রহ | পৃথিবীর গতিতে ঘোরে বলে একই দ্রাঘিমারেখায় স্থির থাকে, অর্থাৎ একই জায়গায় অবস্থান করে এবং এজন্য প্রতি ঘণ্টায় একই জায়গায় বহু চিত্র সংগ্রহ করে। | এই অক্ষাংশে একই স্থানীয় সময় ধরে এবং নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে তথ্য সংগ্রহ করে। |
গুরুত্ব | আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য ও পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। তাই এর নাম Environmental Moni-toring Satellite | বেশি উঁচুতে থাকে না বলে এর দ্বারা সংগৃহীত চিত্রে ভূপৃষ্ঠের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ থাকে। ফলে সহজেই ভূসম্পদ পর্যবেক্ষণ ও তার পরিবহণ বোঝা যায়। তাই এর অপর নাম Resource Monitoring Satellite |
উদাহরণ | INSAT-1A, 1B ইত্যাদি উপগ্রহ। | IRS-1A, 1B ইত্যাদি উপগ্রহ। |
আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের সপ্তম অধ্যায় “উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র” -এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ “ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন