এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তড়িৎপ্রবাহের উপর চুম্বকের ক্রিয়া দেখাতে একটি সহজ পরীক্ষার বর্ণনা করো। অথবা, চিত্রসহ বার্লোর চক্রের কার্যপ্রণালী বর্ণনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তড়িৎপ্রবাহের উপর চুম্বকের ক্রিয়া দেখাতে একটি সহজ পরীক্ষার বর্ণনা করো। অথবা, চিত্রসহ বার্লোর চক্রের কার্যপ্রণালী বর্ণনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের ষষ্ঠ অধ্যায় “চলতড়িৎ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

তড়িৎপ্রবাহের উপর চুম্বকের ক্রিয়া দেখাতে একটি সহজ পরীক্ষার বর্ণনা করো।
অথবা, চিত্রসহ বার্লোর চক্রের কার্যপ্রণালী বর্ণনা করো।
বার্লোর চক্রের গঠন ও কার্য প্রণালী –
নীতি – কোনো স্থির শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রের প্রভাবে তড়িৎবাহী পরিরাহীর বিক্ষেপের জন্য অবিরাম ঘূর্ণনগতির সৃষ্টি হয়। বার্লোর চক্রে এই নীতির প্রয়োগ হয়। এই যন্ত্রে তড়িৎ শক্তি যান্ত্রিক শক্তি তথা গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

বর্ণনা – বার্লোর চক্রে লম্বা লম্বা দাঁতবিশিষ্ট একটি তামার পাতের চক্র থাকে। এই চক্রটি একটি ধাতব দণ্ডের সঙ্গে এমনভাবে আটকানো থাকে যাতে চক্রটি একটি অনুভূমিক অক্ষের চারদিকে ঘুরতে পারে। চক্রের নীচে একটি কাঠের পাটাতন থাকে। পাটাতনে একটি সরু লম্বা গর্ত (M) করে তার মধ্যে পারদ রাখা হয়। চক্রটিকে এমনভাবে রাখা হয় যাতে চক্রটি ঘোরার সময় ওর দাঁতগুলির অগ্রভাগ পারদ স্পর্শ করে যায়। পারদপূর্ণ গর্তটি একটি শক্তিশালী অশ্বক্ষুরাকৃতি চুম্বকের (NS) N মেরু ও S মেরুর মধ্যে থাকে। দুটি বন্ধনী স্ক্রু S1 ও S2 -এর সাহায্যে তড়িৎপ্রবাহ চক্র ও পারদের মধ্য দিয়ে ব্যাটারিতে ফিরে আসে।
কার্য প্রণালী – চিত্রানুযায়ী তড়িৎপ্রবাহ তির চিহ্নিত পথে চলতে থাকলে ফ্লেমিং -এর বামহস্ত নিয়ম অনুযায়ী পারদ সংলগ্ন দাঁতের উপর লম্বভাবে একটি বল ক্রিয়া করে। এর ফলে চক্রটি ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরে যায়। একটি দাঁত পারদ থেকে উঠে এলে তা বর্তনী থেকে ছিন্ন হয়। কিন্তু গতি জাড্যের জন্য পরের দাঁতটি আবার পারদ স্পর্শ করে। ফলে আবার বর্তনী সম্পূর্ণ হয় এবং তড়িৎপ্রবাহ যতক্ষণ চালু থাকে ততক্ষণ চক্রটি তির চিহ্নের অভিমুখে ঘুরতে থাকবে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
তড়িৎপ্রবাহের উপর চুম্বকের ক্রিয়া দেখানোর একটি সহজ পরীক্ষা কী?
একটি খুব সহজ পরীক্ষা হল –
1. উপকরণ – একটি শক্তিশালী স্থায়ী চুম্বক (অশ্বখুরাকার হলে ভালো), একটি ব্যাটারি (সেল), এবং এক টুকরো তামার তার।
2. পদ্ধতি – তামার তারটিকে একটি নির্দিষ্ট আকারে (U-আকৃতি বা লুপ করে) এমনভাবে স্থাপন করুন যাতে তারের দুই প্রান্ত ব্যাটারির দুই মেরুর সাথে সংযোগ করা যায় এবং তারের ঐ অংশটি শক্তিশালী চুম্বকের দুই মেরুর মাঝখানে থাকে।
3. পর্যবেক্ষণ – যখন তারটির মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ পাঠানো হবে (ব্যাটারির সাথে সংযোগ করলে), আপনি দেখতে পাবেন যে তারটি বা তারের লুপটি নিজে থেকে নড়ে ওঠে বা সরে যায়। এটি প্রমাণ করে যে চুম্বকক্ষেত্রের মধ্যে থাকা একটি তড়িৎবাহী পরিবাহীর উপর একটি বল (চৌম্বকীয় বল) কাজ করে।
বার্লোর চক্র কী?
বার্লোর চক্র হল একটি বৈজ্ঞানিক যন্ত্র যা তড়িৎশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে (ঘূর্ণনশক্তি) রূপান্তরিত করে। এটি তড়িৎপ্রবাহ ও চুম্বকক্ষেত্রের মধ্যেকার মিথস্ক্রিয়ার নীতির উপর কাজ করে। এটি ইলেকট্রিক মোটরের একটি প্রাথমিক রূপ।
বার্লোর চক্রের প্রধান নীতি কী?
কোনো স্থির শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রের প্রভাবে তড়িৎবাহী পরিবাহীর বিক্ষেপের জন্য অবিরাম ঘূর্ণনগতির সৃষ্টি হয়।’ সহজ ভাষায়, চুম্বকের ক্ষেত্রের মধ্যে থাকা একটি তারে যখন বিদ্যুৎ চলে, তখন তার উপর একটি বল কাজ করে যা তাকে ঠেলে দেয়, ফলে সেটি ঘুরতে থাকে।
বার্লোর চক্রে পারদের ব্যবহার কেন করা হয়?
পারদ একটি তরল ধাতু এবং এটি উৎকৃষ্ট তড়িৎ পরিবাহী। বার্লোর চক্রের দাঁতগুলো যখন ঘুরতে থাকে, তখন সেগুলো পর্যায়ক্রমে পারদের সংস্পর্শে আসে এবং বেরিয়ে যায়। এই পদ্ধতিতে একটি স্থির (fixed) তারের সংস্পর্শ না এনেও, ঘূর্ণনশীল চক্রের সাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে তড়িৎ সংযোগ বজায় রাখা সম্ভব হয়। পারদ তরল হওয়ায় এটি দাঁতগুলোর সাথে সহজেই সংস্পর্শে আসতে পারে এবং কম ঘর্ষণের সৃষ্টি করে।
বার্লোর চক্রের ঘূর্ণনের দিক কীভাবে নির্ধারিত হয়?
বার্লোর চক্রের ঘূর্ণনের দিক ফ্লেমিং-এর বামহস্ত নিয়ম দ্বারা নির্ধারিত হয়।
1. বাম হাতের তর্জনি, মধ্যমা ও অঙ্গুষ্ঠকে পরস্পর লম্বভাবে রাখতে হবে।
2. তর্জনি চৌম্বকক্ষেত্রের দিক নির্দেশ করবে (উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরুর দিকে)।
3. মধ্যমা তড়িৎপ্রবাহের দিক নির্দেশ করবে (ধনাত্মক টার্মিনাল থেকে ঋণাত্মক টার্মিনালের দিকে)।
4. অঙ্গুষ্ঠ পরিবাহীর গতি বা বলের দিক নির্দেশ করবে।
বার্লোর চক্রে যদি তড়িৎপ্রবাহের দিক উল্টে দেওয়া হয়, তাহলে কী হবে?
তড়িৎপ্রবাহের দিক পরিবর্তন করলে, ফ্লেমিং-এর বামহস্ত নিয়ম অনুযায়ী, চক্রের উপর প্রযুক্ত বলের দিকও পরিবর্তিত হবে। এর ফলে চক্রটির ঘূর্ণনের দিকও বিপরীত হয়ে যাবে (যদি আগে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরত, এখন ঘুরবে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে)।
বার্লোর চক্রের ব্যবহার বা গুরুত্ব কী?
বার্লোর চক্র নিজেই একটি পরীক্ষাগারে প্রদর্শনের যন্ত্র, কিন্তু এটি যে নীতিকে কাজে লাগায় সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
1. এটি ডি.সি. মোটর (ডাইরেক্ট কারেন্ট মোটর)-এর কার্যপ্রণালী বোঝার ভিত্তি প্রদান করে।
2. এটি শক্তির রূপান্তরের (তড়িৎশক্তি → যান্ত্রিক শক্তি) একটি স্পষ্ট ও কার্যকরী উদাহরণ।
3. এটি বৈজ্ঞানিক শিক্ষায় তড়িৎ ও চুম্বকত্বের মধ্যেকার সম্পর্ক বুঝতে অত্যন্ত সহায়ক।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “তড়িৎপ্রবাহের উপর চুম্বকের ক্রিয়া দেখাতে একটি সহজ পরীক্ষার বর্ণনা করো। অথবা, চিত্রসহ বার্লোর চক্রের কার্যপ্রণালী বর্ণনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তড়িৎপ্রবাহের উপর চুম্বকের ক্রিয়া দেখাতে একটি সহজ পরীক্ষার বর্ণনা করো। অথবা, চিত্রসহ বার্লোর চক্রের কার্যপ্রণালী বর্ণনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের ষষ্ঠ অধ্যায় “চলতড়িৎ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন