এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “লোহাকে মরচে পড়া থেকে জিঙ্কলেপন কীভাবে রক্ষা করে? অথবা, লোহার মরচে পড়া রোধ করার জন্য গ্যালভানাইজেশন বা জিঙ্কলেপন করা হয় কেন?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “ধাতুবিদ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

লোহাকে মরচে পড়া থেকে জিঙ্কলেপন কীভাবে রক্ষা করে?
অথবা, লোহার মরচে পড়া রোধ করার জন্য গ্যালভানাইজেশন বা জিঙ্কলেপন করা হয় কেন?
অবিশুদ্ধ লোহা বা লোহার কোনো দ্রব্যকে সাধারণ উষ্ণতায় আর্দ্র বায়ুতে রেখে দিলে তার উপর লালচে-বাদামি আস্তরণ (মরচে) পড়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণিতে জিঙ্ক (Zn) আয়রনের (Fe) ওপরে অবস্থিত হওয়ায় জিঙ্ক আয়রন অপেক্ষা অধিক তড়িৎ-ধনাত্মক অর্থাৎ জিঙ্কের জারিত হওয়ার প্রবণতা আয়রন অপেক্ষা বেশি। সেইজন্য জিঙ্ক ও লোহাকে একসঙ্গে আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শে রাখলে জিঙ্ক লোহার আগে অক্সিজেন ও জলীয় বাষ্পের সঙ্গে বিক্রিয়া করে জারিত হয়ে কিছুটা ক্ষয়প্রাপ্ত হলেও লোহা অবিকৃত থাকে। ফলে লোহা বা লোহার দ্রব্য মরচে পড়া থেকে রক্ষা পায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
জিঙ্ক লেপন বা গ্যালভানাইজেশন কী?
জিঙ্ক লেপন বা গ্যালভানাইজেশন হল লোহা বা ইস্পাতের তৈরি জিনিসপত্রকে মরচে পড়া থেকে রক্ষা করার একটি প্রক্রিয়া, যেখানে লোহার পৃষ্ঠে একটি পাতলা জিঙ্ক (দস্তা) এর প্রলেপ দেওয়া হয়।
লোহা মরচে পড়ে কেন?
লোহা যখন বাতাসের অক্সিজেন ও আর্দ্রতার (জলীয় বাষ্প) সংস্পর্শে আসে, তখন একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে লোহার অক্সাইড তৈরি হয়, যাকে আমরা “মরচে” বলি। এই মরচে লোহাকে দুর্বল ও ক্ষয়প্রাপ্ত করে ফেলে।
জিঙ্ক লেপন কীভাবে লোহাকে মরচে পড়া থেকে রক্ষা করে?
জিঙ্ক লেপন দুটি উপায়ে লোহাকে সুরক্ষা দেয় —
1. অবরোধী সুরক্ষা (Barrier Protection) – জিঙ্কের প্রলেপ লোহার পৃষ্ঠকে বাতাস ও জল থেকে আলাদা করে দেয়, ফলে মরচে পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও জলীয় বাষ্প লোহার সংস্পর্শে আসতে পারে না।
2. গ্যালভানিক বা তড়িৎ–রাসায়নিক সুরক্ষা (Galvanic Protection) – জিঙ্ক, লোহার তুলনায় বেশি তড়িৎ–ধনাত্মক (অর্থাৎ সহজে জারিত হয়)। তাই যদি প্রলেপে কোনো খাঁজ বা স্ক্র্যাচ পড়ে এবং লোহা উন্মুক্ত হয়, তাহলেও জিঙ্ক লোহার আগে জারিত হয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এতে লোহা সুরক্ষিত থাকে।
গ্যালভানিক সুরক্ষা কার্যকর হওয়ার জন্য কী প্রয়োজন?
গ্যালভানিক সুরক্ষা কার্যকর হতে একটি তড়িৎ–বহনকারী মাধ্যম (ইলেক্ট্রোলাইট) প্রয়োজন, যেমন বাতাসের আর্দ্রতা বা পানি। এই মাধ্যমের সাহায্যে জিঙ্ক ও লোহার মধ্যে একটি গ্যালভানিক কোষ তৈরি হয়, যেখানে জিঙ্ক আনোড (Anode) হিসেবে কাজ করে এবং ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, আর লোহা ক্যাথোড (Cathode) হিসেবে কাজ করে ও সুরক্ষিত থাকে।
জিঙ্ক লেপন কতদিন পর্যন্ত সুরক্ষা দেয়?
সুরক্ষার স্থায়িত্ব নির্ভর করে জিঙ্ক প্রলেপের পুরুত্ব, পরিবেশের আর্দ্রতা, বাতাসে লবণ বা দূষণকারীর পরিমাণ ইত্যাদির উপর। সাধারণত একটি ভালো গ্যালভানাইজিং প্রলেপ 10 বছর থেকে কয়েক দশক পর্যন্ত টেকসই সুরক্ষা দিতে পারে।
গ্যালভানাইজড লোহার পৃষ্ঠে সাদা পাউডার জমে কেন?
এটি মূলত জিঙ্ক কার্বনেট (Zinc Carbonate) এর একটি স্তর। জিঙ্ক বাতাসের CO₂ এবং আর্দ্রতার সাথে বিক্রিয়া করে এই যৌগ তৈরি করে। এই স্তরটি জিঙ্ক প্রলেপকে আরও স্থায়ী করে এবং মরচে রোধে অতিরিক্ত সুরক্ষা দেয়।
গ্যালভানাইজড লোহাতে স্ক্র্যাচ পড়লে কী হবে?
গ্যালভানিক সুরক্ষার কারণে স্ক্র্যাচের চারপাশের জিঙ্ক নিজে ক্ষয় হতে শুরু করে এবং উন্মুক্ত লোহার অংশকে সুরক্ষিত রাখে। তবে, যদি জিঙ্কের স্তর সম্পূর্ণভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যায়, তখন লোহা মরচে পড়া শুরু করবে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “লোহাকে মরচে পড়া থেকে জিঙ্কলেপন কীভাবে রক্ষা করে? অথবা, লোহার মরচে পড়া রোধ করার জন্য গ্যালভানাইজেশন বা জিঙ্কলেপন করা হয় কেন?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “ধাতুবিদ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন