এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “উদ্ভিদদেহে চলনের গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

উদ্ভিদদেহে চলনের গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উদ্ভিদদেহে চলনের গুরুত্ব –
- সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতির উপাদান অনুসন্ধানের জন্য কান্ডের অগ্রভাগ আলোর দিকে ধাবিত হয়।
- জল ও জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ অনুসন্ধানের জন্য মূলের অগ্রভাগ জলের দিকে ধাবিত হয়।
- অনুন্নত জলজ উদ্ভিদে ট্যাকটিক চলনের প্রভাবে জনন সম্পন্ন হয়।
- উদ্ভিদের ফুল ফোটা, বুজে যাওয়া, পত্রক খুলে যাওয়া, বা পতঙ্গভুক উদ্ভিদের পতঙ্গের সংস্পর্শে ফাঁদের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়া ন্যাস্টিক চলনের প্রভাবে ঘটে।
- মুকুল অবস্থায় পাতার গুটিয়ে থাকা এবং পরিণত অবস্থায় পত্রফলকের বিস্তৃত হওয়া এই ঘটনাগুলিও চলনের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়।
- রসের তারতম্যের প্রভাব থেকে উদ্ভিদের নরম অঙ্গকে রক্ষা করা।
- পরাগমিলনের পর নিষেকের জন্য পুংজনন কোশের নিউক্লিয়াসের ডিম্বক অভিমুখী হওয়া।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
উদ্ভিদের দেহে চলন বলতে কী বোঝায়?
প্রাণীর মতো স্থান পরিবর্তন করতে না পারলেও উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গ (যেমন কান্ড, মূল, পাতা) বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনার প্রভাবে সাড়া দিয়ে যে সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া বা অবস্থানের পরিবর্তন করে, তাকেই উদ্ভিদদেহে চলন বলে।
উদ্ভিদের চলন প্রধানত কত প্রকার ও কী কী?
উদ্ভিদের চলন প্রধানত দুই প্রকার –
1. বিষমোচী চলন (Tropic Movement) – উদ্দীপকের দিকের উপর নির্ভরশীল দিকনির্দিষ্ট চলন। যেমন – আলোকমোচী, জলের দিকে জলমোচী চলন।
2. ন্যাস্টিক চলন (Nastic Movement) – উদ্দীপকের দিকের উপর নির্ভরশীল নয় কিন্তু উদ্দীপকের তীব্রতার উপর নির্ভরশীল চলন। যেমন – ফুল ফোটা, পাতার গুটিয়ে যাওয়া।
আলোকমোচী চলন উদ্ভিদের কীভাবে সাহায্য করে?
কান্ডের আলোর দিকে বেঁকে যাওয়ার (ধনাত্মক আলোকমোচী) মাধ্যমে পাতাগুলো বেশি আলো পায়। এটি সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আলো ছাড়া এই প্রক্রিয়া ঘটতে পারে না।
জলমোচী চলন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
মূলের জলের দিকে বেঁকে যাওয়া (ধনাত্মক জলমোচী) উদ্ভিদকে মাটি থেকে জল ও জলে দ্রবীভূত প্রয়োজনীয় খনিজ লবণ শোষণ করতে সাহায্য করে, যা তার পুষ্টি ও জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য।
ন্যাস্টিক চলনের দুটি উদাহরণ দাও।
ন্যাস্টিক চলনের দুটি উদাহরণ –
1. পতঙ্গভুক উদ্ভিদ – যেমন ‘ঘটপত্রী’ বা ‘ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপ’-এ পতঙ্গ স্পর্শ করলে ফাঁদের মুখ দ্রুত বন্ধ হয়ে যায় (স্পর্শ-ন্যাস্টি)।
2. ঘটি বা শিউলি ফুল – ফুল দিনে বুজে থাকে ও সন্ধ্যায় ফোটে (তাপ-ন্যাস্টি বা আলো-ন্যাস্টি)।
ট্যাকটিক চলন কী? এর একটি উদাহরণ দাও।
ট্যাকটিক চলন হলো একটি সামগ্রিক চলন, যেখানে উদ্দীপকের দিকের প্রভাবে সমগ্র উদ্ভিদ বা জনন কোশ স্থান পরিবর্তন করে। উদাহরণস্বরূপ, নিষেকের সময় শৈবাল ইত্যাদি অনুন্নত জলজ উদ্ভিদের শুক্রাণু নির্দিষ্ট রাসায়নিকের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ডিম্বাণুর দিকে সাঁতার কেটে যায় (রাসায়নিক-ট্যাক্সিস)।
উদ্ভিদের চলন কীভাবে তার নরম অঙ্গকে রক্ষা করে?
তাপ বা আলোর প্রভাবে পাতার স্টোমা বন্ধ হয়ে গেলে বা পাতাগুলো গুটিয়ে গেলে বাষ্পীভবনের হার কমে। এর ফলে উদ্ভিদদেহে রসের তারতম্য কম হয় এবং নরম অঙ্গগুলি শুকিয়ে যাওয়া বা নেতিয়ে পড়া থেকে রক্ষা পায়।
চলন পরাগনলের বৃদ্ধি ও নিষেকে কী ভূমিকা পালন করে?
পরাগমিলনের পর, পরাগনল থেকে নির্গত পুংজনন কোশের নিউক্লিয়াস একটি রাসায়নিক ট্যাক্সিসের মাধ্যমে ডিম্বকের দিকে আকৃষ্ট হয়। এই চলন নিশ্চিত করে যে পুংজনন কোশ সঠিকভাবে ডিম্বকের সাথে মিলিত হয়ে নিষেক সম্পন্ন করতে পারবে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “উদ্ভিদদেহে চলনের গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন