এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ট্যাকটিক চলন, ট্রপিক চলন ও ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে তুলনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ট্যাকটিক চলন
যখন কোনো বাহ্যিক উদ্দীপকের (যেমন – আলো, তাপমাত্রা) প্রভাবে উদ্ভিদ বা উদ্ভিদ-অঙ্গের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন ঘটে, তখন তাকে ট্যাকটিক চলন বা আবেশ চলন বলে।
- মূল বৈশিষ্ট্য – এতে উদ্ভিদের সম্পূর্ণ দেহ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করে।
- উদাহরণ – আলোর প্রভাবে ক্ল্যামাইডোমোনাস (Chlamydomonas) বা ভলভক্স (Volvox) নামক শ্যাওলার স্থান পরিবর্তন (একে ফটোট্যাকটিক চলন বলে)।
ট্রপিক চলন (Tropic Movement)
উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন উদ্দীপকের উৎসের গতিপথ বা দিক (Direction) অনুসারে হয়, তখন তাকে ট্রপিক চলন বা দিকনির্ণীত চলন বলে।
- মূল বৈশিষ্ট্য – এই চলনে উদ্ভিদ অঙ্গের বৃদ্ধি ঘটে এবং এটি উদ্দীপকের উৎসের দিকে বা বিপরীত দিকে বেঁকে যায়।
- উদাহরণ –
- গাছের কান্ড আলোর দিকে বেঁকে যায় (ফটোট্রপিক)।
- গাছের মূল অভিকর্ষের টানে মাটির নিচে যায় (জিওট্রপিক)।
ন্যাস্টিক চলন (Nastic Movement)
উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন উদ্দীপকের উৎসের দিক অনুসারে না হয়ে উদ্দীপকের তীব্রতা (Intensity) বা স্থায়িত্বের ওপর নির্ভর করে হয়, তখন তাকে ন্যাস্টিক চলন বা ব্যাপ্তি চলন বলে।
- মূল বৈশিষ্ট্য – উদ্দীপক কোন দিক থেকে আসছে তা এখানে মুখ্য নয়, উদ্দীপক কতটা তীব্র তার ওপর ভিত্তি করে এই নড়াচড়া হয়।
- উদাহরণ –
- লজ্জাবতী লতা – লজ্জাবতী গাছের পাতা স্পর্শ করলেই (কম্পন বা স্পর্শের তীব্রতায়) নুয়ে পড়ে বা গুটিয়ে যায় (সিসমোন্যাস্টিক)।
- পদ্ম ফুল – তীব্র আলোতে ফোটে এবং কম আলোতে বুজে যায় (ফটোন্যাস্টিক)।
ট্যাকটিক চলন, ট্রপিক চলন ও ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে তুলনা করো।
ট্যাকটিক চলন, ট্রপিক চলন ও ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে তুলনা –
| বিষয় | ট্যাকটিক চলন | ট্রপিক চলন | ন্যাস্টিক চলন |
| উদ্দীপকের প্রভাব | উদ্দীপকের উৎসের গতিপথ ও তীব্রতা দ্বারা প্রভাবিত হয়। | উদ্দীপকের উৎসের গতিপথ দ্বারা | উদ্দীপকের উৎসের তীব্রতা দ্বারা প্রভাবিত হয়। |
| অক্সিন হরমোনের সাথে সম্পর্ক | অক্সিন হরমোন দ্বারা প্রভাবিত নয়। | অক্সিন হরমোনের প্রভাবে ঘটে। | অক্সিন হরমোনের কোনো প্রভাব নেই। |
| অঙ্গের বৃদ্ধি | অঙ্গের বৃদ্ধি ঘটে না। | অঙ্গের বৃদ্ধি ঘটে। | অঙ্গের বৃদ্ধি ঘটে না। |
| প্রভাবস্থল | সমগ্র উদ্ভিদদেহ বা দেহাংশ। | অপরিণত বর্ধনশীল অঙ্গ। | পরিণত উদ্ভিদের দেহাংশ (জননাঙ্গ)। |
| প্রকৃতি | সামগ্রিক চলন। | আবিষ্ট চলন। | আবিষ্ট বক্রচলন। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
কোন ধরনের চলনে অক্সিন হরমোন প্রধান ভূমিকা পালন করে এবং কেন?
ট্রপিক চলনে (যেমন – আলোক অনুদিক্রিয়া, ভূ-অনুদিক্রিয়া) অক্সিন হরমোন প্রধান ভূমিকা পালন করে। কারণ অক্সিন অসমভাবে বণ্টিত হয়ে কোষের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ঘটায়, যার ফলে উদ্ভিদ অঙ্গ উদ্দীপকের দিকে বা বিপরীতে বেঁকে যায়।
ন্যাস্টিক চলন স্থায়ী না অস্থায়ী? ব্যাখ্যা করো।
ন্যাস্টিক চলন সাধারণত অস্থায়ী হয়। এটি প্রায়শই বিপরীতমুখী। উদাহরণস্বরূপ, লজ্জাবতী গাছের পাতা স্পর্শ করলে নুয়ে পড়ে, কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এটি স্থায়ী বৃদ্ধি নয়, বরং টারগর চাপের পরিবর্তনের ফলে ঘটে।
“আবিষ্ট চলন” বলতে কী বোঝায়? কোন দুটি চলন আবিষ্ট ধরনের?
যে চলন উদ্দীপকের প্রভাবে শুরু হয় কিন্তু চলনের দিক উদ্দীপকের গতিপথ দ্বারা নির্ধারিত হয় না, তাকে আবিষ্ট চলন বলে। ট্রপিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলন উভয়েই আবিষ্ট চলনের উদাহরণ।
কোন ধরনের চলনে অঙ্গের স্থায়ী বৃদ্ধি ঘটে?
ট্রপিক চলনে অঙ্গের স্থায়ী বৃদ্ধি ঘটে। আলোক অনুদিক্রিয়ায় কান্ড আলোর দিকে বেঁকে বাড়ে, যা কোষ বিভাজন ও কোষ দীর্ঘীকরণের ফলে ঘটে এবং এটি স্থায়ী।
লজ্জাবতী গাছের পাতার চলন কোন ধরনের? কেন?
লজ্জাবতী গাছের পাতার চলন হলো ন্যাস্টিক চলন (বিশেষভাবে সিসমোন্যাস্টি)। কারণ স্পর্শ করার মতো উদ্দীপকের তীব্রতায় পাতার গোড়ার পুলভিনাসে টারগর চাপের পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে পাতা নুয়ে পড়ে। এই চলনের দিক স্পর্শের দিকের উপর নির্ভরশীল নয়।
সূর্যের দিকে ফুল ফোটার ঘটনাটি কোন চলনের উদাহরণ? ব্যাখ্যা করো।
সূর্যের দিকে সূর্যমুখী ফুলের মুখ ঘোরাকে (হিলিওট্রপিজম) ট্রপিক চলন হিসেবে বিবেচনা করা যায়, কারণ এটি আলোর গতিপথের দিকে অঙ্গের বৃদ্ধিজনিত বক্রতা। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এটিকে ন্যাস্টিক চলনের সাথেও তুলনা করা হয়, কারণ এটি দিনের বিভিন্ন সময়ে আলোর পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ট্যাকটিক চলন, ট্রপিক চলন ও ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে তুলনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন