এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “চলন কাকে বলে? জীবদেহে চলনের উদ্দেশ্যগুলি লেখো। উদ্ভিদদেহে কত রকমের চলন পরিলক্ষিত হয় এবং সেগুলি কী কী?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

চলন কাকে বলে? জীবদেহে চলনের উদ্দেশ্যগুলি লেখো।
চলন – যে পদ্ধতিতে জীব সামগ্রিক স্থানান্তরিত না হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা উদ্দীপকের প্রভাবজনিত কারণে নিজ দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালন করে, তাকে চলন বলে।
জীবদেহে চলনের উদ্দেশ্যগুলি হল –
- পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো, জল ও বায়ু ইত্যাদির প্রয়োজনে উদ্ভিদদেহে চলন ঘটে।
- খনিজ লবণ বা আয়ন ইত্যাদির সন্ধানেও জীবদেহে চলন ঘটে।
উদ্ভিদদেহে কত রকমের চলন পরিলক্ষিত হয় এবং সেগুলি কী কী?
উদ্ভিদদেহে প্রাথমিকভাবে দু-রকমের চলন পরিলক্ষিত হয় এবং সেগুলি হল –
- সামগ্রিক চলন বা গমন এবং
- বক্রচলন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
জীবদেহে চলন (Movement) এবং গমন (Locomotion) এর মধ্যে পার্থক্য কী?
জীবদেহে চলন (Movement) এবং গমন (Locomotion) এর মধ্যে পার্থক্য –
1. চলন (Movement) – এটি একটি বিস্তৃত ধারণা। জীব তার দেহের কোনো অংশ বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালিত করলেই তাকে চলন বলে। স্থান পরিবর্তন না ঘটলেও চলন হতে পারে। উদাহরণ – গাছের ডালের দিকে আলোর উৎস সরালে পাতার বেঁকে যাওয়া।
2. গমন (Locomotion) – এটি চলনের বিশেষ একটি রূপ, যেখানে জীব তার সম্পূর্ণ দেহ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেয়। উদাহরণ – মানুষ হাঁটা, পাখির উড়া, মাছের সাঁতার কাটা।
উদ্ভিদদেহে যে ‘বক্রচলন’ (Curvature Movement) দেখা যায়, সেটি কীভাবে ঘটে?
নির্দিষ্ট অংশের কোষগুলোর অসম হারে বৃদ্ধি হওয়ার ফলে ঘটে। একপাশের কোষ দ্রুত বৃদ্ধি পেলে ঐ অংশ বেঁকে যায়।
উদাহরণ – সূর্যের আলোর দিকে সূর্যমুখী ফুলের মাথা ঘোরা।
প্রাণীদেহে চলনের প্রধান উদ্দেশ্যগুলো কী কী?
প্রাণীদের চলন (বিশেষ করে গমন)-এর প্রধান উদ্দেশ্যগুলো হলো –
1. খাদ্য সংগ্রহ – শিকার ধরা বা খাদ্যের সন্ধানে চলাফেরা।
2. উপযুক্ত বাসস্থান ও পরিবেশের সন্ধান – তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও নিরাপত্তার জন্য চলন।
3. শত্রু থেকে রক্ষা – শিকারী প্রাণীর হাত থেকে বাঁচা।
4. সঙ্গী নির্বাচন ও প্রজনন – প্রজননের জন্য সঙ্গীর সন্ধান।
5. বাসা তৈরি ও সন্তান প্রতিপালন – সন্তান লালন-পালনের জন্য প্রয়োজনীয় চলন।
উদ্ভিদের ‘সামগ্রিক চলন’ বলতে কী বোঝায়? উদাহরণ দাও।
উদ্ভিদের সামগ্রিক চলন বলতে সাধারণত গমন (Locomotion) কেই বোঝায়। বেশিরভাগ উদ্ভিদ যদিও স্থানচ্যুত হতে পারে না, তবে কিছু নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ ও এককোষী শৈবাল (যেমন – ক্ল্যামাইডোমোনাস) সিলিয়া বা ফ্ল্যাজেলার সাহায্যে জলে সাঁতরে চলাচল করতে পারে। এটি একটি সামগ্রিক চলনের উদাহরণ।
আলোক চলন ও অভিকর্ষ চলন কাকে বলে?
আলোক চলন (Phototropism) – আলোর উদ্দীপকে উদ্ভিদের যে বক্রচলন ঘটে তাকে আলোক চলন বলে। উদাহরণ – জানালার পাশে রাখা গাছের ডাল আলোর দিকে বেঁকে যাওয়া।
অভিকর্ষ চলন (Geotropism) – অভিকর্ষ বলের উদ্দীপকে উদ্ভিদের যে বক্রচলন ঘটে তাকে অভিকর্ষ চলন বলে। উদাহরণ – অঙ্কুরিত চারার মূল নিচের দিকে এবং কাণ্ড উপরের দিকে বৃদ্ধি পাওয়া।
Volvox (ভলভক্স) -এর চলনকে গমন বলা যেতে পারে, কিন্তু জলের দিকে মূলের চলনকে গমন বলা হয় না কেন?
Volvox (ভলভক্স) -এর ক্ষেত্রে ফ্ল্যাজেলার সঞ্চালনের দ্বারা Volvox (ভলভক্স) ধীরে ধীরে স্থানান্তরিত হয়, তাই Volvox (ভলভক্স) -এর চলন প্রকৃতপক্ষে গমনের ঘটনা। পক্ষান্তরে, উদ্ভিদের মূল মাটির নীচে বৃদ্ধি পেলে একে গমন বলে ধরা যাবে না, কারণ এক্ষেত্রে উদ্ভিদের সমগ্র দেহের স্থান পরিবর্তন হয় না।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “চলন কাকে বলে? জীবদেহে চলনের উদ্দেশ্যগুলি লেখো। উদ্ভিদদেহে কত রকমের চলন পরিলক্ষিত হয় এবং সেগুলি কী কী?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন