এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “জিব্বেরেলিন হরমোনের প্রধান কাজগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

জিব্বেরেলিন হরমোনের প্রধান কাজগুলি লেখো।
জিব্বেরেলিন হরমোনের কাজ –
1. মুকুল ও বীজের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ – বীজ বা মুকুল যখন সুপ্তাবস্থায় (Dormant) থাকে, তখন সাময়িকভাবে তার অঙ্কুরোদগম ঘটে না। এই সময়কালে জিব্বেরেলিন হরমোন α-অ্যামাইলেজ উৎসেচককে সক্রিয় করে বীজের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করে এবং বীজের অঙ্কুরোদ্গম ঘটাতে সাহায্য করে।

2. পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্যবৃদ্ধি – এই হরমোন বংশগতভাবে খর্ব উদ্ভিদের পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্যের বৃদ্ধি ঘটিয়ে সমগ্র উদ্ভিদটির দৈর্ঘ্যবৃদ্ধিতে সাহায্য করে। টম্যাটো, লেটুস শাক, আখ প্রভৃতি উদ্ভিদের ক্ষেত্রে পর্বমধ্যের বৃদ্ধি ঘটাতে জিব্বেরেলিন হরমোন প্রয়োগ করা হয়। জিব্বেরেলিনের প্রভাবে পর্বমধ্যের বৃদ্ধি ঘটানোকে বোল্টিং বলে। এ ছাড়া এই হরমোন মটর, ধান, ভুট্টা প্রভৃতি উদ্ভিদের বংশগত খর্বতা দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
3. ফলের বৃদ্ধি – জিব্বেরেলিন হরমোন প্রয়োগ করে দ্রুত ফলের বৃদ্ধি ঘটানো সম্ভব হয়। স্ট্রবেরি উদ্ভিদে জিব্বেরেলিন প্রয়োগ করে তাড়াতাড়ি ফুল ও ফল উৎপাদন করা হয়। ফল পাকার আগে জিব্বেরেলিন প্রয়োগ করলে ফল পাকতে বিলম্ব ঘটে।
4. পুষ্প প্রস্ফুটন ও লিঙ্গপ্রকাশ – জিব্বেরেলিন উদ্ভিদে (স্ট্রবেরি) নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই ফুল ফোটাতে সাহায্য করে। জিব্বেরেলিন উদ্ভিদে (ভুট্টা) পুরুষ ফুল উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
জিব্বেরেলিন হরমোন কী?
জিব্বেরেলিন হল উদ্ভিদ হরমোন বা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রককারী রাসায়নিক পদার্থের একটি গোষ্ঠী। এগুলি উদ্ভিদের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যেমন – বৃদ্ধি, অঙ্কুরোদগম ও পুষ্পায়ন নিয়ন্ত্রণ করে।
জিব্বেরেলিন হরমোন কোথায় তৈরি হয়?
এটি প্রধানত উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঞ্চল যেমন অঙ্কুরের মেরিস্টেম, তরুণ পাতায়, এবং অঙ্কুরোদগমরত বীজে সংশ্লেষিত হয়।
সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ বলতে কী বোঝায়?
সুপ্তাবস্থা হল বীজ বা মুকুলের একটি সাময়িক বিশ্রাম বা বিকাশ-বিরামকাল। পরিবেশ অনুকূল হলেও এ সময় অঙ্কুরোদগম বা বৃদ্ধি ঘটে না। জিব্বেরেলিন α-অ্যামাইলেজ উৎসেচককে সক্রিয় করে এন্ডোস্পার্মে সঞ্চিত খাদ্য ভেঙে দেয়, ফলে বীজের সুপ্তাবস্থা শেষ হয়ে অঙ্কুরোদগম শুরু হয়।
“বোল্টিং” কী?
বোল্টিং হল জিব্বেরেলিনের প্রভাবে কিছু উদ্ভিদের (যেমন – লেটুস, আখ) পর্বমধ্য দ্রুত লম্বা হয়ে ফুল আসার প্রস্তুতি গ্রহণ করার প্রক্রিয়া। এটি সাধারণত খাটো উদ্ভিদকে দ্রুত ফুল ফোটানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
জিব্বেরেলিন কিভাবে বংশগত খর্বতা দূর করে?
বংশগতভাবে খাটো (যেমন – কিছু ধান বা মটর জাত) উদ্ভিদের মধ্যে নির্দিষ্ট জিনের অভিব্যক্তি বা এনজাইম উৎপাদনের ঘাটতি থাকে, ফলে তাদের বৃদ্ধি সীমিত হয়। জিব্বেরেলিন হরমোন প্রয়োগ করলে এই রাসায়নিক সংকেতটি পুনরায় সক্রিয় হয়, যা কোষ প্রসারণ ঘটিয়ে উদ্ভিদের স্বাভাবিক দৈর্ঘ্য অর্জনে সহায়তা করে।
জিব্বেরেলিন ফলের বৃদ্ধিতে কী ভূমিকা পালন করে?
জিব্বেরেলিন ফলের বৃদ্ধিতে ভূমিকা –
1. এটি ফলকোষের বিভাজন ও প্রসারণ ত্বরান্বিত করে ফলের আকার বৃদ্ধি করে।
2. ফলের আগাম উৎপাদনের জন্য (যেমন – স্ট্রবেরিতে) ব্যবহৃত হয়।
3. কিছু ক্ষেত্রে ফল পাকার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে, যার ফলে ফলের আয়ু ও সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি পায়।
জিব্বেরেলিন কি সব উদ্ভিদে ফুল ফোটাতে পারে?
না, জিব্বেরেলিন মূলত দীর্ঘদিনালো উদ্ভিদ (যারা ফুল ফোটাতে দীর্ঘ আলো প্রয়োজন) এবং কিছু দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদে (যেমন – স্ট্রবেরি) ফুল ফোটাতে সাহায্য করে। তবে সব উদ্ভিদের ফুল ফোটানোয় এর ভূমিকা সমান নয়, অনেক উদ্ভিদের ফুল ফোটানোতে অন্য হরমোন (যেমন – ফ্লোরিজেন)ও গুরুত্বপূর্ণ।
জিব্বেরেলিন হরমোনের কৃষি বা উদ্যানপালনে ব্যবহারিক গুরুত্ব কী?
জিব্বেরেলিন হরমোনের কৃষি বা উদ্যানপালনে ব্যবহারিক গুরুত্ব –
1. বীজের অঙ্কুরোদগমের হার বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
2. আঙুরের মতো ফলকে বীজহীন ও বড় আকৃতির করতে ব্যবহৃত হয়।
3. আখের কাণ্ড লম্বা করে চিনির ফলন বাড়াতে সাহায্য করে।
4. টম্যাটো, লেটুসের মতো শাকসবজিতে আগাম ফলন ও দ্রুত বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়।
5. ফুল ও ফলের গুণগত মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
জিব্বেরেলিনের অন্যান্য হরমোন (অক্সিন, সাইটোকাইনিন) থেকে পার্থক্য কী?
জিব্বেরেলিনের অন্যান্য হরমোন (অক্সিন, সাইটোকাইনিন) থেকে পার্থক্য –
1. অক্সিন মূলত অগ্রমুকুলের প্রাধান্য বজায় রাখে এবং মূল গঠনে সহায়তা করে।
2. সাইটোকাইনিন কোষ বিভাজনে প্রধান ভূমিকা পালন করে এবং অগ্রমুকুলের প্রাধান্য কমায়।
3. জিব্বেরেলিন সম্পূর্ণ উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি (বিশেষ করে পর্বমধ্য), সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ করা এবং ফুল ফোটানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “জিব্বেরেলিন হরমোনের প্রধান কাজগুলি লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন