এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ট্রপিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলন কাকে বলে? ট্রপিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ট্রপিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলন কাকে বলে?
ট্রপিক চলন – উদ্দীপকের উৎসের দিকে বা উদ্দীপকের গতিপথের দিকে উদ্ভিদ অঙ্গের চলনকে ট্রপিক চলন বলে।
ন্যাস্টিক চলন – যে প্রকার আবিষ্ট বক্রচলনে উদ্ভিদ অঙ্গের চলন উদ্দীপকের তীব্রতার তারতম্যের দ্বারা প্রভাবিত বা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাকে ন্যাস্টিক চলন বা ব্যাপ্তি চলন বলে। ন্যাস্টিক চলন হল উদ্ভিদ অঙ্গের রসস্ফীতিজনিত বক্রচলন।
ট্রপিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
ট্রপিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে পার্থক্য –
| ট্রপিক চলন | ন্যাস্টিক চলন |
| উদ্দীপক উৎসের গতিপথ দ্বারা এই চলন নিয়ন্ত্রিত হয়। | উদ্দীপক উৎসের তীব্রতা দ্বারা এই চলন নিয়ন্ত্রিত হয়। |
| এটি স্থায়ী বৃদ্ধিজনিত বক্রচলন। | এটি অস্থায়ী, রসস্ফীতি-জনিত বক্রচলন। |
| অক্সিন হরমোন ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে। উদাহরণ – উদ্ভিদের মূল জলের দিকে বর্ধিত হয়। | ন্যাস্টিক চলনে অক্সিন হরমোনের কোনো ভূমিক নেই। উদাহরণ – লজ্জাবতীর পাতারে স্পর্শ করলে তা গুটিয়ে যায়। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ট্রপিক চলনের কয়েকটি উদাহরণ দাও।
ট্রপিক চলনের কয়েকটি উদাহরণ –
1. আলোক প্রবণতা (Phototropism) – উদ্ভিদের কাণ্ড আলোর দিকে বাঁকে।
2. মৃত্বিকাপ্রবণতা (Geotropism) – মূল মাটির অভিকর্ষের দিকে (ধনাত্মক) ও কাণ্ড বিপরীত দিকে (ঋণাত্মক) বাড়ে।
3. রাসায়নিক প্রবণতা (Chemotropism) – পরাগনালী ফুলের গর্ভমুণ্ডের দিকে রাসায়নিকের প্রভাবে বাড়ে।
4. জল প্রবণতা (Hydrotropism) – মূল জলের উৎসের দিকে বাঁকে।
ন্যাস্টিক চলনের কয়েকটি উদাহরণ দাও।
ন্যাস্টিক চলনের কয়েকটি উদাহরণ –
1. স্পর্শজনিত ন্যাস্টিক চলন (Thigmonasty/Seismonasty) – লজ্জাবতী গাছের পাতা স্পর্শ করলে গুটিয়ে যায়।
2. তাপজনিত ন্যাস্টিক চলন (Thermonasty) – টিউলিপ ফুল দিনের তাপমাত্রা বাড়লে খোলে এবং রাতে ঠাণ্ডায় বন্ধ হয়।
3. আলোকজনিত ন্যাস্টিক চলন (Photonasty) – গাঁদা বা কসমস ফুল দিনের আলোয় খোলে ও রাতে বন্ধ হয়।
ট্রপিক চলন ও ন্যাস্টিক চলন উদ্ভিদের কোন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত?
ট্রপিক চলন মূলত বৃদ্ধি (Growth) প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। এটি কোষের বিভাজন ও প্রসারণের ফলে স্থায়ী পরিবর্তন।
ন্যাস্টিক চলন মূলত রসস্ফীতি (Turgor Pressure) এর পরিবর্তনের সাথে জড়িত। এটি কোষে জলের প্রবেশ ও প্রস্থানের ফলে দ্রুত ও অস্থায়ী পরিবর্তন।
অক্সিন হরমোন ট্রপিক চলনে কীভাবে ভূমিকা রাখে?
উদ্দীপকের (যেমন – আলো) উপস্থিতিতে অক্সিন হরমোন কোষের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে। উদাহরণস্বরূপ, আলোকের একপাশে পড়লে অক্সিন অন্ধকারাচ্ছন্ন পার্শ্বে জমা হয়, ফলে সেই দিকের কোষ দ্রুত বাড়ে এবং কাণ্ড আলোর দিকে বাঁকে।
ন্যাস্টিক চলনের “ব্যাপ্তি চলন” নামকরণের কারণ কী?
এখানে “ব্যাপ্তি” অর্থ বিস্তার বা পরিবর্তন। যেহেতু ন্যাস্টিক চলন উদ্দীপকের তীব্রতা বা মাত্রার পরিবর্তনের (যেমন – আলোর কম-বেশি, স্পর্শের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি) ফলে ঘটে, তাই একে “ব্যাপ্তি চলন” বলা হয়।
কি কারণে লজ্জাবতী পাতার ন্যাস্টিক চলন ঘটে?
লজ্জাবতীর পাতার গোড়ার স্ফীতিকা (Pulvinus) নামক বিশেষ রসস্ফীতি-নিয়ন্ত্রক কোষে জল স্থানান্তর (রসস্ফীতির হ্রাস-বৃদ্ধি) ঘটার কারণে পাতা দ্রুত গুটিয়ে যায় বা খোলে। এটি স্পর্শের প্রতিক্রিয়ায় ঘটে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ট্রপিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলন কাকে বলে? ট্রপিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন