বিভিন্ন প্রকার ন্যাস্টিক চলন সংক্ষেপে আলোচনা করো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “বিভিন্ন প্রকার ন্যাস্টিক চলন সংক্ষেপে আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বিভিন্ন প্রকার ন্যাস্টিক চলন সংক্ষেপে আলোচনা করো।

বিভিন্ন প্রকার ন্যাস্টিক চলন সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উদ্দীপকের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে ন্যাস্টিক চলন বিভিন্ন প্রকারের হয়। যথা –

ফোটোন্যাস্টিক চলন –

বক্রচলনকে ফোটোন্যাস্টিক চলন বলে। আলোক উদ্দীপকের তীব্রতা অনুযায়ী উদ্ভিদদেহে সংঘটিত

উদাহরণ – পদ্মফুল দিনের আলোকে উন্মুক্ত হয় কিন্তু, অন্ধকারে মুদে যায়।

ফোটোন্যাস্টিক চলন

সিসমোন্যাস্টিক চলন –

আঘাত, স্পর্শ, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি উদ্দীপকের তীব্রতায় উদ্ভিদ অঙ্গে যে চলন ঘটে, তাকে স্পর্শব্যাপ্তি বা সিসমোন্যাস্টিক চলন বলে।

উদাহরণ – লজ্জাবতীর পাতা স্পর্শ করলে পত্রকগুলি মুড়ে যায় এবং পাতাটি নুয়ে পড়ে।

সিসমোন্যাস্টিক চলন

কেমোন্যাস্টিক চলন –

রাসায়নিক পদার্থের তীব্রতার ওপর ভিত্তি করে উদ্ভিদ অঙ্গে যে বক্রচলন ঘটে তাকে কেমোন্যাস্টিক চলন বলে।

উদাহরণ – পতঙ্গভুক উদ্ভিদের পাতায় কোনো পতঙ্গ এসে বসলে, পতঙ্গের দেহ নিঃসৃত প্রোটিনের প্রভাবে উদ্ভিদের পত্রফলক বন্ধ হয়ে যায়।

কেমোন্যাস্টিক চলন

থার্মোন্যাস্টিক চলন –

উষ্ণতার তীব্রতা দ্বারা উদ্ভিদদেহে সংঘটিত বক্রচলনকে থার্মোন্যাস্টিক চলন বলে।

উদাহরণ – অধিক উষ্ণতায় টিউলিপ ফুল উন্মোচিত হয় এবং কম উষ্ণতায় মুদে যায়।

থার্মোন্যাস্টিক চলন

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ন্যাস্টিক চলন বলতে কী বোঝায়?

ন্যাস্টিক চলন হলো উদ্ভিদের এমন এক ধরনের নির্দিষ্ট দিকবিহীন চলন যা বাহ্যিক উদ্দীপকের (আলো, স্পর্শ, তাপ, রাসায়নিক) তীব্রতার পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় সংঘটিত হয়। এর গতির দিক উদ্দীপকের আগমনের দিকের উপর নির্ভর করে না।

ন্যাস্টিক চলন ও ট্রপিক চলনের প্রধান পার্থক্য কী?

ন্যাস্টিক চলন ও ট্রপিক চলনের প্রধান পার্থক্য –
1. দিক – ন্যাস্টিক চলনের গতির দিক উদ্দীপকের দিক দ্বারা নির্ধারিত হয় না। ট্রপিক চলন (যেমন ফটোট্রপিজম) সর্বদা উদ্দীপকের দিকের প্রতি (বা বিপরীতে) সংঘটিত হয়।
2. প্রভাবক – ন্যাস্টিক চলন উদ্দীপকের তীব্রতার পরিবর্তনে সাড়া দেয়। ট্রপিক চলন উদ্দীপকের দিকের প্রতি সাড়া দেয়।
3. উদাহরণ – লজ্জাবতী পাতার স্পর্শে মুড়ে যাওয়া (ন্যাস্টিক) বনাম গাছের কান্ড আলোর দিকে বেঁকে যাওয়া (ট্রপিক)।

ফোটোন্যাস্টিক ও ফটোট্রপিক চলনের মধ্যে কী পার্থক্য?

ফোটোন্যাস্টিক ও ফটোট্রপিক চলনের মধ্যে পার্থক্য –
1. ফোটোন্যাস্টিক চলন আলোর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি (দিন-রাত চক্র) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং গতির দিক আলোর দিকনির্ভর নয়। যেমন – পদ্মফুল খোলা ও বন্ধ হওয়া।
2. ফটোট্রপিক চলন আলোর দিকের প্রতি একটি নির্দেশিত বক্রতা। যেমন – গাছের ডালপালা আলোর দিকে বাড়ে।

সিসমোন্যাস্টিক চলন কি স্থায়ী?

না, সাধারণত সিসমোন্যাস্টিক চলন (যেমন লজ্জাবতীর পাতার নড়াচড়া) অস্থায়ী। কিছু সময় পর উদ্ভিদ অঙ্গটি পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। এটি একটি বিপরীতমুখী (reversible) প্রক্রিয়া।

ন্যাস্টিক চলন সাধারণত কোন ধরনের উদ্ভিদ অঙ্গে দেখা যায়?

এসব চলন সাধারণত পুষ্পদণ্ড (পেডিসেল), পত্রবৃন্ত, পুষ্পপত্র (পেটাল) বা পত্রক (লজ্জাবতীর মতো সংবেদনশীল পাতায়) ইত্যাদিতে বেশি পরিলক্ষিত হয়।

ন্যাস্টিক চলনের নিয়ন্ত্রণ কীভাবে হয়?

ন্যাস্টিক চলন সাধারণত টার্গর প্রেশার এর দ্রুত পরিবর্তনের কারণে ঘটে। উদ্দীপকের প্রতিক্রিয়ায় পাতার গোড়ার বিশেষ কোষগুলো (পালভিনাস) থেকে জল বেরিয়ে গিয়ে বা কোষে জল প্রবেশ করে কোষের ফুলে থাকার অবস্থার পরিবর্তন ঘটায়, ফলে অঙ্গটি নড়ে বা বেঁকে যায়।

নিকটিন্যাস্টিক চলন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

তাপ এবং আলোক উভয় উদ্দীপকের তীব্রতা অনুযায়ী উদ্ভিদ অঙ্গের যে চলন ঘটে, তাকে নিকটিন্যাস্টিক চলন বলে।
উদাহরণ – বাবলা, রাধাচূড়া এবং তেঁতুল প্রভৃতির পত্রকগুলি দিনের বেলা তাপ ও আলোর প্রভাবে খুলে যায় এবং রাতে মুদে যায়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “বিভিন্ন প্রকার ন্যাস্টিক চলন সংক্ষেপে আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়াপ্রদান” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

চলন ও গমন বলতে কী বোঝো? "চলন হলে গমন নাও হতে পারে, কিন্তু গমন হলে চলন হবেই"-ব্যাখ্যা করো।

“চলন হলে গমন নাও হতে পারে, কিন্তু গমন হলে চলন হবেই” – ব্যাখ্যা করো।

ট্যাকটিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলন কাকে বলে? ট্যাকটিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

ট্যাকটিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলন কাকে বলে? ট্যাকটিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে পার্থক্য

প্রকরণ চলন এবং বৃদ্ধিজ চলন কাকে বলে? প্রকরণ চলন এবং বৃদ্ধিজ চলনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

প্রকরণ চলন এবং বৃদ্ধিজ চলন কাকে বলে? প্রকরণ চলন এবং বৃদ্ধিজ চলনের মধ্যে পার্থক্য

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

“চলন হলে গমন নাও হতে পারে, কিন্তু গমন হলে চলন হবেই” – ব্যাখ্যা করো।

ট্যাকটিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলন কাকে বলে? ট্যাকটিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে পার্থক্য

বিভিন্ন প্রকার ন্যাস্টিক চলন সংক্ষেপে আলোচনা করো।

প্রকরণ চলন এবং বৃদ্ধিজ চলন কাকে বলে? প্রকরণ চলন এবং বৃদ্ধিজ চলনের মধ্যে পার্থক্য

ট্রপিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলন কাকে বলে? ট্রপিক চলন এবং ন্যাস্টিক চলনের মধ্যে পার্থক্য