এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “উদ্ভিদ হরমোনকে মোট ক-টি ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী এবং তাদের সংজ্ঞা দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

উদ্ভিদ হরমোনকে মোট ক-টি ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী এবং তাদের সংজ্ঞা দাও।
উদ্ভিদ হরমোনকে মোট তিনটি ভাগে ভাগ করা হয় সেগুলি হল –
- প্রাকৃতিক হরমোন,
- কৃত্রিম হরমোন,
- প্রকল্পিত হরমোন।
প্রাকৃতিক উদ্ভিদ হরমোন –
যেসমস্ত হরমোন উদ্ভিদদেহে প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্টি হয়, তাদের প্রাকৃতিক হরমোন বলে।
উদাহরণ – অক্সিন, জিব্বেরেলিন, কাইনিন ইত্যাদি।
কৃত্রিম উদ্ভিদ হরমোন –
রসায়নাগারে প্রস্তুত যেসব রাসায়নিক পদার্থ উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটনে সাহায্য করে, তাকে কৃত্রিম হরমোন বলে।
উদাহরণ – ইন্ডোল প্রোপিয়োনিক অ্যাসিড (IPA), ইন্ডোল বিউটারিক অ্যাসিড (IBA)।
প্রকল্পিত হরমোন –
উদ্ভিদদেহে যেসব হরমোনের অস্তিত্ব অনুমান করা গেলেও যাদের সঠিক রাসায়নিক গঠন ও ক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি, তাদের প্রকল্পিত হরমোন বলে।
উদাহরণ – ফ্লোরিজেন, ভার্নালিন ইত্যাদি।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
প্রাকৃতিক উদ্ভিদ হরমোনগুলোর প্রধান কাজ কী কী?
প্রাকৃতিক উদ্ভিদ হরমোনগুলোর প্রধান কাজ –
1. অক্সিন – মূল ও কাণ্ডের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি, কোষ প্রসারণ, প্রস্বেদন রোধ, পত্রমোচন রোধ, ফল গঠনে সাহায্য করে।
2. জিব্বেরেলিন – দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে, বীজের সুপ্ততা ভঙ্গ করে, ফুল ফোটাতে সাহায্য করে।
3. কাইনিন (সাইটোকাইনিন) – কোষ বিভাজন উদ্দীপিত করে, অক্সিনের সাথে সমন্বয় করে কুঁড়ি ও শাখা-প্রশাখার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে, পত্ররন্ধ্র খোলা বন্ধে ভূমিকা রাখে।
4. অ্যাবসিসিক অ্যাসিড (ABA) – বৃদ্ধি রোধক হরমোন। পত্ররন্ধ্র বন্ধ করে প্রস্বেদন রোধ করে, বীজের সুপ্ততা বজায় রাখে, উদ্ভিদকে খরা ও লবণাক্ততা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
5. ইথিলিন – একটি গ্যাসীয় হরমোন যা ফল পাকানো, পত্রমোচন এবং বার্ধক্য প্রক্রিয়ায় প্রধান ভূমিকা পালন করে।
কৃত্রিম হরমোন উদাহরণ IBA এবং NAA এর ব্যবহার কি?
IBA (ইন্ডোল-3-বিউটিরিক অ্যাসিড) এবং NAA (ন্যাপ্থ্যালিন অ্যাসিটিক অ্যাসিড) উভয়ই শক্তিশালী কৃত্রিম অক্সিন। এগুলো সাধারণত কলম কাটিং-এ শিকড় গজানোর হরমোন হিসেবে (রুটিং পাউডার/লিকুইড) ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। এছাড়াও ফল ধরে রাখতে, আগাছানাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
উদ্ভিদ হরমোন এবং মানব/প্রাণী হরমোনের মধ্যে মূল পার্থক্য কি?
উদ্ভিদ হরমোন এবং মানব/প্রাণী হরমোনের মধ্যে মূল পার্থক্য –
1. উৎস ও স্থান – উদ্ভিদ হরমোন সাধারণত নির্দিষ্ট কোষ বা কলায় উৎপন্ন হয় এবং স্থানীয়ভাবে বা পরিবহন কলার মাধ্যমে কাজ করে। প্রাণী হরমোন বিশেষ গ্রন্থিতে উৎপন্ন হয়ে রক্তের মাধ্যমে দূরবর্তী লক্ষ্য অঙ্গে কাজ করে।
2. রাসায়নিক গঠন – উদ্ভিদ হরমোন সাধারণত সরল জৈব অণু (ইথিলিন গ্যাস, টার্পিনয়েড, ইন্ডোল জাতীয়)। প্রাণী হরমোন প্রোটিন, স্টেরয়েড বা অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে তৈরি জটিল যৌগ।
3. বিশেষীকরণ – প্রাণী হরমোন সাধারণত খুব নির্দিষ্ট কাজ ও লক্ষ্য কোষের জন্য বিশেষায়িত। উদ্ভিদ হরমোনগুলোর কাজ প্রায়শই একে অপরের সাথে আন্তঃসম্পর্কিত এবং পরিবেশের উপর নির্ভরশীল।
কৃত্রিম হরমোন ব্যবহারের একটি প্রধান উদ্দেশ্য কী?
কৃষিকাজে ফলন বৃদ্ধি, অঙ্কুরোদগম ত্বরান্বিত করা, ফলের আগাম পরিপক্বতা আনা ইত্যাদি কাজে কৃত্রিম হরমোন (যেমন – IBA) ব্যবহৃত হয়।
প্রকল্পিত হরমোন বলতে কী বোঝায়?
এরা এমন পদার্থ যাদের অস্তিত্ব ও কার্যকারিতা সম্পর্কে পরোক্ষ প্রমাণ আছে, কিন্তু এখনও তাদের সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক সংকেত ও গঠন বৈশিষ্ট্য বিজ্ঞানীদের জানা নেই।
ইথিলিন কোন ধরনের হরমোন?
ইথিলিন একটি গ্যাসীয় প্রাকৃতিক উদ্ভিদ হরমোন, যা ফলের পাকানো, পাতা ও ফুলের ঝরা এবং বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এটি মূল তিনটি বিভাগের বাইরে কিন্তু একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমোন।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “উদ্ভিদ হরমোনকে মোট ক-টি ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী এবং তাদের সংজ্ঞা দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “উদ্ভিদের সাড়াপ্রদান এবং রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন