এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “প্রাণীদেহের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণে হরমোনের ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাণীদেহের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণে হরমোনের ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
হরমোন প্রাণীদেহে রাসায়নিক সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে এবং বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় বা বিপাকীয় কাজ সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন –
- ত্বকের লোম খাড়া হয়ে যাওয়া – জরুরিকালীন বা আপৎকালীন অবস্থায় অ্যাড্রিনালিন হরমোনের অধিক ক্ষরণের জন্য অ্যারেকটোরেস পিলাই পেশির সংকোচনের ফলে ত্বকের লোম খাড়া হয়ে যায়।
- রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বজায় রাখা – অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস অব্ ল্যাঙ্গারহানসের α কোশ থেকে ক্ষরিত গ্লুকাগন এবং β কোশ থেকে ক্ষরিত ইনসুলিন পরস্পর অ্যান্টাগোনাস্টিক ক্রিয়ার মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের সঠিক মাত্রা বজায় রাখে।
- BMR নিয়ন্ত্রণ – BMR নিয়ন্ত্রণে থাইরক্সিন, অ্যাড্রিনালিন এবং টেস্টোস্টেরন হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- জনন গ্রন্থির বৃদ্ধি ও ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ – অগ্র পিটুইটারি নিঃসৃত GTH বা গোনাডোট্রপিক হরমোন স্ত্রীদেহে এবং পুরুষদেহে যথাক্রমে ডিম্বাশয় এবং শুক্রাশয়ের বৃদ্ধি এবং স্বাভাবিক কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। টেস্টোস্টেরন হরমোন বয়ঃসন্ধিতে পুরুষদেহে প্রাথমিক এবং গৌণ জননাঙ্গগুলি বৃদ্ধিতে সাহায্য করার পাশাপাশি শুক্রাণু উৎপাদনে সাহায্য করে। স্ত্রীদেহে ইস্ট্রোজেন ডিম্বাণু উৎপাদনে এবং ডিম্বাশয়ের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
হরমোন কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?
হরমোন হল প্রাণীদেহের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত রাসায়নিক দূত বা বার্তাবাহক। এরা রক্তের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন লক্ষ্য কোষ, কলা বা অঙ্গে গিয়ে উৎপত্তিস্থল থেকে দূরে অবস্থিত নির্দিষ্ট শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। এরা খুব অল্প পরিমাণেও কার্যকর।
হরমোনের কাজকে “রাসায়নিক সমন্বয়” বলা হয় কেন?
স্নায়ুতন্ত্র বৈদ্যুতিক সংকেতের মাধ্যমে দ্রুত সমন্বয় করে, কিন্তু হরমোন রাসায়নিক দূত হিসেবে ধীরে ও দীর্ঘস্থায়ীভাবে বিপাক, বৃদ্ধি, প্রজনন ইত্যাদি কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে। এই দুই পদ্ধতি একত্রে দেহের সামগ্রিক সমন্বয় সাধন করে বলে হরমোনের ভূমিকাকে “রাসায়নিক সমন্বয়” বলে।
“অ্যান্টাগোনাস্টিক ক্রিয়া” বলতে কী বোঝায়?
অ্যান্টাগোনাস্টিক ক্রিয়া বলতে দুটি হরমোনের বিপরীত বা পরস্পর বিরোধী কাজ করাকে বোঝায়, যার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট শারীরবৃত্তীয় মান (হোমিওস্ট্যাসিস) বজায় থাকে।
উদাহরণ – রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে প্যারাথাইরয়েড হরমোন (ক্যালসিয়াম মাত্রা বাড়ায়) এবং ক্যালসিটোনিন (ক্যালসিয়াম মাত্রা কমায়) অ্যান্টাগোনাস্টিক হরমোন হিসেবে কাজ করে।
অ্যাড্রিনালিন হরমোনের জরুরি অবস্থায় ভূমিকা কী? এর আর কী কী কাজ আছে?
জরুরি বা আপৎকালীন অবস্থায় (যেমন – ভয়, রাগ, উত্তেজনা) অ্যাড্রিনালিন হরমোন নিঃসৃত হয় এবং “ফাইট অর ফ্লাইট” প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। যেমন – হৃদস্পন্দন ও শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বৃদ্ধি, রক্তচাপ বাড়ানো, পেশিতে রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি, এবং উল্লিখিত ত্বকের লোম খাড়া করা। এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়েও শক্তির জোগান দেয়।
BMR (বেসাল মেটাবলিক রেট) নিয়ন্ত্রণে থাইরক্সিন কীভাবে কাজ করে?
থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত থাইরক্সিন হরমোন দেহকোষগুলির বিপাকীয় হার বাড়ায়, অর্থাৎ খাদ্য থেকে শক্তি উৎপাদন ও ব্যবহারের হার নিয়ন্ত্রণ করে। এটি বৃদ্ধি, বিকাশ এবং শারীরবৃত্তীয় বিভিন্ন প্রক্রিয়ার জন্য অত্যাবশ্যক। থাইরক্সিনের অভাবে ওজন বৃদ্ধি, ক্লান্তি এবং ঠান্ডা সহ্য না করতে পারার মতো লক্ষণ দেখা দেয়।
পিটুইটারি গ্রন্থিকে “মাস্টার গ্রন্থি” বলা হয় কেন?
পিটুইটারি গ্রন্থি (প্রধানত অগ্রপিটুইটারি) নিঃসৃত ট্রপিক হরমোন (যেমন – GTH বা গোনাডোট্রপিন, TSH, ACTH) অন্যান্য অনেক অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির (যেমন – থাইরয়েড, অ্যাড্রিনাল, ডিম্বাশয়, শুক্রাশয়) বৃদ্ধি ও কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। অন্য গ্রন্থিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার এই ক্ষমতার কারণেই একে “মাস্টার গ্রন্থি” বলে।
হরমোনের অসাম্য বা ভারসাম্যহীনতার ফলে কী সমস্যা হতে পারে?
হরমোনের সামান্য অসাম্যতাও বড় রোগ ডেকে আনতে পারে।
1. ডায়াবেটিস মেলাইটাস – ইনসুলিন হরমোনের ঘাটতি বা কর্মক্ষমতা হ্রাসের কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পায়।
2. গলগণ্ড (Goitre) – থাইরক্সিন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় আয়োডিনের অভাব বা থাইরয়েডের অন্যান্য সমস্যার কারণে থাইরয়েড গ্রন্থি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “প্রাণীদেহের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণে হরমোনের ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন