এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “প্রোজেস্টেরনের কাজ বর্ণনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রোজেস্টেরনের কাজ বর্ণনা করো।
প্রোজেস্টেরন হরমোনের কাজ –
- জরায়ুতে ভ্রূণের ব্লাস্টোসিস্ট দশায় রোপণ অর্থাৎ Implantation, তার বৃদ্ধি ও পুষ্টিতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরের পুরু গঠন বজায় রাখে।
- জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরকে ভ্রূণ প্রোথিত বা রোপণ করার জন্য উপযোগী করে।
- স্তনের বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে।
- অমরা বা প্লাসেন্টা গঠনে সাহায্য করে।
- এর প্রভাবে গর্ভাবস্থায় ঋতুচক্র বন্ধ থাকে।
- এটি ডিম্বথলির বিকাশে বাধা দেয়। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িতে এটি ব্যবহার করা হয়।
- এটি গর্ভাবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- প্রোজেস্টেরন হাইপোথ্যালামাসের ওপর ক্রিয়া করে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
প্রোজেস্টেরন কী?
প্রোজেস্টেরন হল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেরয়েড হরমোন, যা প্রধানত ডিম্বাশয়ে কর্পাস লুটিয়াম থেকে এবং গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা থেকে নিঃসৃত হয়। এটি মহিলাদের প্রজনন স্বাস্থ্য ও গর্ভাবস্থার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অপরিহার্য।
প্রোজেস্টেরনের অভাবে কী সমস্যা হতে পারে?
প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কম হলে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো হতে পারে –
1. অনিয়মিত বা ভারী মাসিক।
2. গর্ভধারণে সমস্যা বা বারবার গর্ভপাত (মিসক্যারেজ)।
3. মাসিকের আগে তীব্র লক্ষণ (PMS বা PMDD)।
4. একটোপিক প্রেগন্যান্সির ঝুঁকি বাড়তে পারে।
প্রোজেস্টেরন জন্মনিয়ন্ত্রণে কীভাবে কাজ করে?
প্রোজেস্টেরন (বা কৃত্রিম প্রোজেস্টিন) জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, ইঞ্জেকশন বা ইমপ্লান্টে ব্যবহার করে নিম্নোক্তভাবে কাজ করে –
1. ডিম্বস্ফোটন (অভুলেশন) বন্ধ বা বাধা দেয়।
2. জরায়ুর মুখের শ্লেষ্মাকে ঘন করে, যাতে শুক্রাণু জরায়ুতে প্রবেশ করতে না পারে।
3. জরায়ুর আস্তরণকে ভ্রূণ রোপণের অনুপযোগী করে তোলে।
প্রোজেস্টেরন এবং এস্ট্রোজেনের মধ্যে পার্থক্য কী?
প্রোজেস্টেরন এবং এস্ট্রোজেনের মধ্যে পার্থক্য –
1. এস্ট্রোজেন মূলত ডিম্বাশয় থেকে নিঃসৃত হয় এবং মাধ্যমিক যৌন বৈশিষ্ট্য (যেমন – স্তন বিকাশ), ডিম্বস্ফোটন এবং মাসিক চক্রের প্রথমার্ধে জরায়ুর আস্তরণ গঠনের জন্য দায়ী।
2. প্রোজেস্টেরন মাসিক চক্রের দ্বিতীয়ার্ধে (লিউটিয়াল ফেজ) ও গর্ভাবস্থায় প্রাধান্য পায়। এটি এস্ট্রোজেন দ্বারা তৈরি এন্ডোমেট্রিয়ামকে স্থিতিশীল করে, গর্ভাবস্থা রক্ষা করে এবং এস্ট্রোজেনের কিছু প্রভাবকে ভারসাম্য রাখে।
গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরনের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
এটি গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে জরায়ুকে শান্ত ও স্থিতিশীল রাখে, সংকোচন রোধ করে এবং ভ্রূণকে প্রত্যাখ্যান হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয়। প্লাসেন্টার স্বাভাবিক কার্যকারিতার জন্যও এটি অপরিহার্য। প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কম হলে চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূরক (যেমন – জেল, ইনজেকশন, ক্যাপসুল)।
প্রোজেস্টেরন কীভাবে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়?
প্রোজেস্টেরন হাইপোথ্যালামাসে (দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী মস্তিষ্কের অংশ) সরাসরি প্রভাব ফেলে। ডিম্বস্ফোটনের পর প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বাড়লে শরীরের ভিত্তি তাপমাত্রা (BBT) সামান্য—প্রায় 0.3–0.5°C—বৃদ্ধি পায়। এই পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে ডিম্বস্ফোটন হয়েছে কি না তা জানা যায়, যা প্রাকৃতিক পরিবার পরিকল্পনার একটি পদ্ধতি।
প্রোজেস্টেরনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয় কেন?
প্রোজেস্টেরনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয় কারণগুলো হলো —
1. ডিম্বস্ফোটন হয়েছে কিনা নির্ণয় করতে।
2. বন্ধ্যাত্বের কারণ চিহ্নিত করতে।
3. গর্ভাবস্থার ঝুঁকি বা পুনরাবৃত্ত গর্ভপাতের কারণ জানতে।
4. অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি বা ডিম্বাশয়ের নির্দিষ্ট রোগ নির্ণয় করতে।
প্রোজেস্টেরন থেরাপি বা সাপ্লিমেন্ট কখন দেওয়া হয়?
প্রোজেস্টেরন থেরাপি বা সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয় —
1. প্রোজেস্টেরন স্বল্পতা (লিউটিয়াল ফেজ ডেফেক্ট) জনিত বন্ধ্যাত্বে।
2. ঘাটতিজনিত পুনরাবৃত্ত গর্ভপাত প্রতিরোধে।
3. IVF চিকিৎসায় ইমপ্লান্টেশন ও গর্ভধারণ বজায় রাখতে।
4. অনিয়মিত মাসিক বা তীব্র PMS/PMDD নিয়ন্ত্রণে।
5. মেনোপজ-পরবর্তী লক্ষণ উপশমে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির (HRT) অংশ হিসেবে, এস্ট্রোজেনের সঙ্গে যুক্ত করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “প্রোজেস্টেরনের কাজ বর্ণনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন