এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “STH বা বৃদ্ধিপোষক হরমোনের সাধারণ কাজগুলি উল্লেখ করো। এই হরমোনের ক্ষরণে যে অসুস্থতা দেখা যায়, সেগুলি সংক্ষেপে লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

STH বা বৃদ্ধিপোষক হরমোনের সাধারণ কাজগুলি উল্লেখ করো। এই হরমোনের ক্ষরণে যে অসুস্থতা দেখা যায়, সেগুলি সংক্ষেপে লেখো।
বৃদ্ধিপোষক হরমোন বা সোমাটোট্রপিক হরমোন (STH) -এর কাজ –
- অস্থিবৃদ্ধি – দেহে অস্থির অগ্রভাগে অবস্থিত তরুণাস্থি কলার কোশগুলির বিভাজন ঘটিয়ে ও তরুণাস্থির ধাত্রে ক্যালশিয়াম লবণ ও প্রোটিন অধঃক্ষিপ্ত করে একে অস্থিতে রূপান্তরিত করে, ফলে অস্থির দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়।
- দেহের অঙ্গ বৃদ্ধি – দেহের পেশিকলা, যকৃৎ, বৃক্ক, থাইমাস ইত্যাদির বৃদ্ধিতে STH অংশগ্রহণ করে।
- বিপাকের ওপর ক্রিয়া – STH প্রোটিন সংশ্লেষে অংশগ্রহণ করে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি ঘটায়, প্লাজমায় লিপিডের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, ফলে দেহে সঞ্চিত ফ্যাটের পরিমাণ কমে। অর্থাৎ, এটি প্রোটিনের ভাঙন রোধ করে ও ফ্যাটের ভাঙন বৃদ্ধি করে (Protein sparing effect)। এটি ঐচ্ছিক পেশি ও হৃদপেশিতে গ্লাইকোজেন সঞ্চয়ে সাহায্য করে।
- দেহে খনিজ পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি – হরমোনটি দেহে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফেট, সোডিয়াম, পটাশিয়াম প্রভৃতি আয়নের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
STH -এর ক্ষরণের তারতম্যে অসুস্থতা –
- বামনত্ব বা ডোয়ার্ফিজম – শিশু অবস্থায় STH -এর কম ক্ষরণে দেহের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে যে অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে বামনত্ব বা ডোয়ার্ফিজম বলে।
- উপসর্গ – দেহের উচ্চতা 3-4 ফুটের বেশি হয় না; দেহ অস্বাভাবিক মেদবহুল হয় এবং মুখে গোঁফদাড়ি হয় না; মুখমণ্ডল ফোলা ফোলা হয়।
- অতিকায়ত্ব বা জাইগ্যানটিজম – শিশু অবস্থায় STH -এর অধিক ক্ষরণে দেহের অত্যধিক বৃদ্ধির ফলে যে অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে অতিকায়ত্ব বা জাইগ্যানটিজম বলে।
- উপসর্গ – দেহের উচ্চতা 7-8 ফুট হয়; রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- অ্যাক্রোমেগালি – প্রাপ্তবয়স্ক লোকের STH -এর ক্ষরণ বৃদ্ধি পেলে মুখের নীচের চোয়াল, হাত, পা ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়, চামড়া মোটা হয় এবং দেহের আন্তরযন্ত্রীয় অঙ্গের বৃদ্ধিজনিত যে অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে অ্যাক্রোমেগালি বলে।
- উপসর্গ – নীচের চোয়ালের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে; হাত ও পায়ের আঙুলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ঘটে; মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে দেহ কুঁজো হয়ে যায়; মুখ ও দেহের অন্যান্য স্থানের চামড়া মোটা হয়ে কুঁচকে যায়, ফলে গোরিলার মতো দেখায়।


কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বৃদ্ধিপোষক হরমোন (STH) কী?
এটি একটি পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন, যার বৈজ্ঞানিক নাম সোমাটোট্রপিন বা গ্রোথ হরমোন (GH)। এটি দেহের বৃদ্ধি, কোষ পুনর্নির্মাণ ও বিপাক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
STH-এর ঘাটতি (অপুষ্টি) হলে কী রোগ হয়?
বামনত্ব (ডোয়ার্ফিজম) – শিশু অবস্থায় হরমোনের অভাব হলে দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম থাকে (সাধারণত ৪ ফুটের কম)।
STH-এর আধিক্য (অতিক্ষরণ) হলে কী রোগ দেখা দেয়?
অতিকায়ত্ব (জাইগ্যান্টিজম) – শিশু বা কিশোর বয়সে অত্যধিক ক্ষরণ হলে অস্বাভাবিক দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি (৭-৮ ফুট পর্যন্ত) ঘটে।
অ্যাক্রোমেগালি – প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় অতিক্ষরণ হলে হাত-পা, চোয়াল, নাক ইত্যাদি স্থুল ও বড় হয়, ত্বক মোটা হয়।
STH-এর সাথে অন্য কোন হরমোনের সম্পর্ক আছে?
এটি IGF-1 (ইনসুলিন-লাইক গ্রোথ ফ্যাক্টর) উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে, যা বৃদ্ধি প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশ নেয়। থাইরয়েড হরমোন ও সেক্স হরমোনও এর কার্যকারিতায় সহায়তা করে।
গ্রোথ হরমোনের ভারসাম্যহীনতার লক্ষণগুলো কী?
গ্রোথ হরমোনের ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ –
1. ঘাটতির লক্ষণ – শিশুদের বৃদ্ধিহীনতা, চেহারা তুলনামূলক ছোট, মেদবহুলতা।
2. আধিক্যের লক্ষণ – হাত-পায়ের আঙুল মোটা হওয়া, জয়েন্টে ব্যথা, মাথাব্যথা, দৃষ্টিসীমা কমে আসা।
গ্রোথ হরমোনের স্বাভাবিক ক্ষরণ কিভাবে বজায় থাকে?
পর্যাপ্ত ঘুম (বিশেষত গভীর নিদ্রা), ব্যায়াম, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি প্রাকৃতিকভাবে GH ক্ষরণ বাড়াতে সাহায্য করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “STH বা বৃদ্ধিপোষক হরমোনের সাধারণ কাজগুলি উল্লেখ করো। এই হরমোনের ক্ষরণে যে অসুস্থতা দেখা যায়, সেগুলি সংক্ষেপে লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন