এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “হরমোনকে ‘রাসায়নিক বার্তাবহ’ বা ‘রাসায়নিক দূত’ বা ‘কেমিক্যাল মেসেঞ্জার’ বলা হয় কেন? হরমোনকে ‘রাসায়নিক সমন্বায়ক’ কেন বলা হয়?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

হরমোনকে ‘রাসায়নিক বার্তাবহ’ বা ‘রাসায়নিক দূত’ বা ‘কেমিক্যাল মেসেঞ্জার’ বলা হয় কেন?
অথবা, বাহকরূপে হরমোনের ভূমিকা লেখো।
হরমোন সাধারণত অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয় ও জৈবরাসায়নিক প্রকৃতির হয়। দূত যেমন স্থানে স্থানে বার্তা বহন করে নিয়ে যায় হরমোনও তেমন দূতের মতো লক্ষ্য কোশের কোশপর্দায় বা ভিতরে অবস্থিত নিউক্লি লক্ষ্যকোশের শারীরবৃত্তীয় ও বিপাকীয় কাজ প্রভাবিত হয়, এজন্য হরমোনকে রাসায়নিক দূত বলে।
হরমোনকে ‘রাসায়নিক সমন্বায়ক’ কেন বলা হয়?
প্রাণীদেহে হরমোন হল জৈবরাসায়নিক প্রকৃতির যা সাধারণত অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়ে রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে উৎসস্থল থেকে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছোয় এবং সেখানে নির্দিষ্ট শারীরবৃত্তীয় বা বিপাকীয় কাজ সম্পন্ন করার মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গ এবং তন্ত্রের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে থাকে। এই কারণে হরমোনকে রাসায়নিক সমন্বায়ক বলা হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
হরমোনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?
হরমোনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো –
1. এরা সাধারণত অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়।
2. এরা জৈব-রাসায়নিক যৌগ (প্রোটিন, স্টেরয়েড ইত্যাদি)।
3. রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে দূরবর্তী লক্ষ্য কোষে কাজ করে।
4. স্বল্প পরিমাণেও শক্তিশালী প্রভাব ফেলে।
5. এরা শরীরের বৃদ্ধি, বিপাক, প্রজনন ইত্যাদি কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
হরমোনের পরিণতি লেখো।
কাজের পর হরমোন সাধারণত বিভিন্ন উৎসেচকের ক্রিয়ায় নিষ্ক্রিয় হয়, বিনষ্ট হয় বা অন্য যৌগে রূপান্তরিত হয় যেগুলি মূত্রের মাধ্যমে দেহের বাইরে নির্গত হয়।
হরমোন কিভাবে তাদের লক্ষ্য কোষকে চিনতে পারে?
লক্ষ্য কোষের কোষপর্দায় বা ভিতরে বিশেষ প্রোটিন যুক্ত রিসেপ্টর (গ্রাহক) থাকে। হরমোন একটি নির্দিষ্ট আকারের রাসায়নিক গঠন বিশিষ্ট হওয়ায় শুধুমাত্র সেই রিসেপ্টরের সাথে ঠিক তালা-চাবির মতো খাপ খায়। হরমোন ও রিসেপ্টর যুক্ত হওয়ার মাধ্যমেই কোষের ভিতরে বিপাকীয় বা শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন সূচিত হয়।
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি ও বহিঃক্ষরা গ্রন্থির পার্থক্য কী?
অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি ও বহিঃক্ষরা গ্রন্থির পার্থক্য –
1. অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি (যেমন – পিটুইটারি, থাইরয়েড) হরমোন সরাসরি রক্তে ক্ষরণ করে।
2. বহিঃক্ষরা গ্রন্থি (যেমন – লালাগ্রন্থি, পাচক গ্রন্থি) নালির মাধ্যমে তাদের রস (এনজাইম ইত্যাদি) নির্দিষ্ট স্থানে (পাকস্থলী, ত্বক ইত্যাদিতে) নিঃসরণ করে।
হরমোনের কাজের উদাহরণ দাও।
হরমোনের কাজের উদাহরণ –
1. ইনসুলিন – রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়।
2. থাইরক্সিন – দেহের বিপাক হার নিয়ন্ত্রণ করে।
3. এড্রেনালিন – “লড়াই বা পালাও” প্রতিক্রিয়ায় হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ বাড়ায়।
4. এস্ট্রোজেন/টেস্টোস্টেরন – প্রজনন অঙ্গের বিকাশ ও যৌন বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “হরমোনকে ‘রাসায়নিক বার্তাবহ’ বা ‘রাসায়নিক দূত’ বা ‘কেমিক্যাল মেসেঞ্জার’ বলা হয় কেন? হরমোনকে ‘রাসায়নিক সমন্বায়ক’ কেন বলা হয়?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন