এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “এক্সপথ্যালমিক গয়টার বা বহিঃচক্ষু গলগণ্ড কী? এক্সপথ্যালমিক গয়টারের উপসর্গ কী কী?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

এক্সপথ্যালমিক গয়টার বা বহিঃচক্ষু গলগণ্ড কী?
এক্সপথ্যালমিক গয়টার বা বহিঃচক্ষু গলগণ্ড বা গ্রেভস বর্ণিত রোগ একটি অটোইমিউন রোগ যা হাইপারথাইরয়েডিজম এর অন্যতম মূল কারণ। রক্তে অধিকমাত্রায় TSI (থাইরয়েড স্টিমুলেটিং অ্যান্টিবডি) -এর উপস্থিতি এই রোগকে নির্দেশ করে। TSI থাইরয়েড গ্রন্থিকে থাইরক্সিন হরমোন ক্ষরণে উদ্দীপনা জোগায়। অতিরিক্ত থাইরক্সিন ক্ষরণের ফলে বিস্ফারিত চক্ষুসহ গলগণ্ড হয়।
এক্সপথ্যালমিক গয়টারের উপসর্গ কী কী?
এক্সপথ্যালমিক গয়টারের উপসর্গগুলি হল – অক্ষিগোলকের বহিঃস্ফীতি, অতিরিক্ত ঘাম বের হওয়া ও দেহত্বকের আর্দ্রভাব, তাপ অসহিষ্ণুতা, অত্যধিক অবসাদ, BMR ও হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, হাড় সচ্ছিদ্র হওয়া ও ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
এক্সপথ্যালমিক গয়টার এবং সাধারণ গলগণ্ডের মধ্যে পার্থক্য কী?
সাধারণ গলগণ্ড শুধুমাত্র থাইরয়েড গ্রন্থির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বোঝায়, যার পেছনে আয়োডিনের অভাব বা অন্য কারণ থাকতে পারে। অন্যদিকে, এক্সপথ্যালমিক গয়টার একটি অটোইমিউন রোগ যেখানে থাইরয়েড অতিসক্রিয় (হাইপারথাইরয়েডিজম) হয়ে যায় এবং প্রায়শই চোখ ফুলে যাওয়া (এক্সপথ্যালমিক) বা চোখের অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেয়।
এক্সপথ্যালমিক গয়টার কি শুধু মহিলাদের হয়?
না, পুরুষ ও নারী উভয়ই আক্রান্ত হতে পারেন, তবে মহিলাদের মধ্যে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা পুরুষদের তুলনায় 5-8 গুণ বেশি।
এক্সপথ্যালমিক রোগের চিকিৎসা কী?
চিকিৎসার তিনটি প্রধান উপায় রয়েছে –
1. অ্যান্টিথাইরয়েড ওষুধ – যা হরমোন উৎপাদন কমায়।
2. রেডিওঅ্যাকটিভ আয়োডিন থেরাপি – অতিসক্রিয় থাইরয়েড কোষ ধ্বংস করে।
3. অপারেশন (থাইরয়েডেক্টমি) – থাইরয়েড গ্রন্থির একটি অংশ বা সম্পূর্ণ অংশ ফেলে দেওয়া।
চোখের চিকিৎসা আলাদাভাবে করা হয়, যেমন: কৃত্রিম অশ্রু, স্টেরয়েড, রেডিওথেরাপি বা অস্ত্রোপচার।
গর্ভাবস্থায় এক্সপথ্যালমিক রোগ হলে কী করণীয়?
গর্ভাবস্থায় গ্রেভস ডিজিজ মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। অ্যান্টিথাইরয়েড ওষুধ দিয়ে সাধারণত চিকিৎসা করা হয়, কিন্তু কিছু ওষুধ শিশুর ক্ষতি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় রেডিওআয়োডিন থেরাপি দেওয়া যায় না। গর্ভধারণের আগেই থাইরয়েড বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।
এক্সপথ্যালমিক কি ক্যান্সার বা মারাত্মক রোগ?
এক্সপথ্যালমিক গয়টার নিজে থাইরয়েড ক্যান্সার নয়। কিন্তু দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত হাইপারথাইরয়েডিজম হার্টের উপর চাপ, অস্টিওপরোসিস (হাড় ভঙ্গুরতা) এবং থাইরয়েড স্টর্ম নামক একটি জীবন-হুমকির অবস্থা তৈরি করতে পারে। তাই সময়মতো চিকিৎসা অত্যাবশ্যক।
এক্সপথ্যালমিক রোগটি কি পুরুষের তুলনায় নারীদের বেশি হয়?
হ্যাঁ, গ্রেভস ডিজিজ বা এক্সপথ্যালমিক গয়টার নারীদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় প্রায় 5-8 গুণ বেশি দেখা যায়।
এক্সপথ্যালমিক কি বংশগত রোগ?
এক্সপথ্যালমিক গয়টার সরাসরি বংশগত না হলেও, অটোইমিউন রোগের জন্য একটি জেনেটিক প্রবণতা (প্রিডিসপোজিশন) বংশে থাকতে পারে। পরিবারে থাইরয়েড বা অন্য কোনো অটোইমিউন রোগ (যেমন – টাইপ-1 ডায়াবেটিস, ভিটিলিগো) থাকলে ঝুঁকি বাড়তে পারে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “এক্সপথ্যালমিক গয়টার বা বহিঃচক্ষু গলগণ্ড কী? এক্সপথ্যালমিক গয়টারের উপসর্গ কী কী?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন