ইনসুলিনের কম ক্ষরণে মানবদেহে কী অসুবিধা হয়? ইনসুলিনকে ‘অ্যান্টিডায়াবেটিক হরমোন’ বলা হয় কেন?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ইনসুলিনের কম ক্ষরণে মানবদেহে কী অসুবিধা হয়? ইনসুলিনকে ‘অ্যান্টিডায়াবেটিক হরমোন’ বলা হয় কেন?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ইনসুলিনের কম ক্ষরণে মানবদেহে কী অসুবিধা হয়? ইনসুলিনকে 'অ্যান্টিডায়াবেটিক হরমোন' বলা হয় কেন?

ইনসুলিনের কম ক্ষরণে মানবদেহে কী অসুবিধা হয়?

ইনসুলিনের কম ক্ষরণে মানবদেহে সৃষ্ট অসুবিধা –

  • ইনসুলিনের কম ক্ষরণে কলাকোশগুলিতে গ্লুকোজ প্রবেশ বাধা পায়, কারণ সেখানে ইনসুলিন গ্রাহকের হরমোনটির প্রতি সংবেদনশীলতা কমে যায়, ফলে কোশে গ্লুকোজ ঢুকতে না পেরে রক্তে তার আধিক্য ঘটে।
  • কলাকোশে গ্লুকোজের জারণ কমে যায়, যকৃৎ ও পেশিকোশে গ্লাইকোজেনেসিস পদ্ধতির হার কমে গিয়ে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ে।

ইনসুলিনকে ‘অ্যান্টিডায়াবেটিক হরমোন’ বলা হয় কেন?

ইনসুলিনকে ‘অ্যান্টিডায়াবেটিক হরমোন’ বলা হয় কারণ এই হরমোন কোশপর্দার ভেদ্যতা বাড়িয়ে কোশে গ্লুকোজের প্রবেশকে ত্বরান্বিত করে গ্লাইকোজেন সংশ্লেষকে প্রভাবিত করে এবং গ্লাইকোজেন ভাঙন রোধ করে। এ ছাড়াও অস্ত্রে গ্লুকোজ শোষণে বাধা সৃষ্টি করে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস করে ডায়াবেটিস মেলিটাস বা মধুমেহ রোগ সৃষ্টি হতে দেয় না।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ইনসুলিন কী এবং এটি কোথায় তৈরি হয়?

ইনসুলিন হল একটি প্রোটিন হরমোন যা অগ্ন্যাশয়ের ল্যাঙ্গারহ্যান্সের আইলেটসের বিটা (β) কোষ দ্বারা উৎপন্ন ও ক্ষরিত হয়। এর মূল কাজ হল রক্তের গ্লুকোজকে শরীরের বিভিন্ন কোষে প্রবেশে সাহায্য করে শক্তি উৎপাদন ও রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখা।

ইনসুলিনের ঘাটতির ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায় কেন?

ইনসুলিনের অভাবে বা তার কার্যকারিতা কমে গেলে শরীরের কোষগুলো (যেমন – পেশি ও যকৃতের কোষ) রক্ত থেকে গ্লুকোজ গ্রহণ করতে পারে না। ফলে গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ না করে রক্তেই রয়ে যায়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করে। একে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলে।

ইনসুলিনের ঘাটতির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী কী?

ইনসুলিনের ঘাটতি বা কার্যকারিতা দীর্ঘদিন ধরে থাকলে তা ডায়াবেটিস মেলিটাস (বিশেষত টাইপ-1 ডায়াবেটিস) সৃষ্টি করে এবং নিম্নলিখিত জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে –
1. হার্ট ও রক্তনালীর রোগ (হৃদরোগ, স্ট্রোক)
2. নিউরোপ্যাথি (স্নায়ুর ক্ষতি, বিশেষত পায়ে)
3. নেফ্রোপ্যাথি (কিডনি রোগ)
4. রেটিনোপ্যাথি (চোখের রেটিনা ক্ষতি, দৃষ্টিহীনতা পর্যন্ত)
5. পা ফোড়া ও ইনফেকশন, যা পরে পা কেটে ফেলার কারণও হতে পারে।
6. চর্মরোগ ও নিরাময়ে বিলম্ব।

ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স (প্রতিরোধ) কী?

ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হল শরীরের কোষগুলো ইনসুলিনের প্রতি ঠিকভাবে সাড়া না দেয়ার অবস্থা। পর্যাপ্ত ইনসুলিন থাকা সত্ত্বেও কোষগুলো গ্লুকোজ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে অগ্ন্যাশয় আরও বেশি ইনসুলিন তৈরি করে। এটি টাইপ-2 ডায়াবেটিস এর প্রধান কারণ। স্থূলতা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও জিনগত কারণ এটিকে বাড়ায়।

ইনসুলিনের অভাব ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের মধ্যে পার্থক্য কী?

ইনসুলিনের অভাব ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের মধ্যে পার্থক্য –
1. ইনসুলিনের অভাব – অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন উৎপাদনকারী বিটা কোষ নষ্ট হয়ে যায়, ফলে শরীরে ইনসুলিনই তৈরি হয় না বা খুবই কম হয়। এটি টাইপ-1 ডায়াবেটিস -এর বৈশিষ্ট্য।
2. ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স – শরীর পর্যাপ্ত বা বেশি ইনসুলিন তৈরি করে, কিন্তু কোষগুলো তার প্রতি সংবেদনশীল নয়। এটি টাইপ-2 ডায়াবেটিস -এর প্রাথমিক কারণ।

ইনসুলিন ছাড়া রক্তে শর্করা কমানোর অন্যান্য উপায় কী?

ডায়াবেটিসের প্রাথমিক পর্যায়ে নিম্নোক্ত উপায়ে ইনসুলিন ছাড়াই রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব –
1. স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা ও নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম।
2. সুষম, কম গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাদ্যাভ্যাস (পরিশোধিত শর্করা ও মিষ্টি কমিয়ে আঁশযুক্ত খাবার বাড়ানো)।
3. মুখে খাওয়ার ডায়াবেটিস-বিরোধী ওষুধ (যেমন – মেটফরমিন) সেবন।
4. পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ কমানো।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ইনসুলিনের কম ক্ষরণে মানবদেহে কী অসুবিধা হয়? ইনসুলিনকে ‘অ্যান্টিডায়াবেটিক হরমোন’ বলা হয় কেন?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

মানবমস্তিষ্কের প্রধান অংশগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। সুষুম্নাকাণ্ডের অবস্থান লেখো। অথবা, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

স্নায়ু কী? স্নায়ুর অন্তর্গঠন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

স্নায়ু কী? স্নায়ুর অন্তর্গঠন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

সাইন্যাপসের গঠন বর্ণনা করো এবং এর কাজ লেখো।

সাইন্যাপসের গঠন বর্ণনা করো এবং এর কাজ লেখো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন অংশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

স্নায়ু কী? স্নায়ুর অন্তর্গঠন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

সাইন্যাপসের গঠন বর্ণনা করো এবং এর কাজ লেখো।

নিউরোনের কার্যগত প্রকারভেদগুলি লেখো। একজন ব্যক্তির মেডালা অবলংগাটা কোনো দুর্ঘনায় ক্ষতিগ্রস্থ হলে কী কী শারীবৃত্তীয় কার্য বিঘ্নিত হতে পারে?

গঠনগত পার্থক্যের ভিত্তিতে নিউরোনের শ্রেণিবিন্যাস করো।