এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “স্নায়ুকোশের কোশদেহের গঠন ও কাজ সংক্ষেপে উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

স্নায়ুকোশের কোশদেহের গঠন ও কাজ সংক্ষেপে উল্লেখ করো।
স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত ও কার্যগত একক নিউরোনের কোশদেহের গঠন –
নিউরোন বা স্নায়ুকোশের গোলাকার বা শাঙ্কবাকার বা নক্ষত্রাকার আকৃতিবিশিষ্ট নিউক্লিয়াসযুক্ত অংশ, যা ডেনড্রনের মাধ্যমে আগত স্নায়ুস্পন্দন গ্রহণ করে অ্যাক্সনের দিকে প্রেরণ করে, তাকে কোশদেহ বা নিউরোসাইটন বা পেরিক্যানিয়ন বলে। কোশদেহ নিম্নলিখিত অংশ নিয়ে গঠিত –

- কোশপর্দা – কোশপর্দা লিপিড-প্রোটিন-লিপিড দ্বারা গঠিত এককপর্দা, যা কোশদেহকে আবৃত করে রাখে।
- নিউরোপ্লাজম – কোশদেহ মধ্যস্থ দানাদার ও তন্তুময় সাইটোপ্লাজমকে নিউরোপ্লাজম বলে।
- নিউক্লিয়াস – কোশদেহে একটি বৃহদাকার নিউক্লিয়াস দেখা যায়। নিউক্লিয়াসে একটি বা কখনও দুটি নিউক্লিওলাস এবং অল্প পরিমাণে ক্রোমাটিন তন্তু থাকে।
- নিউরোফাইব্রিল – নিউরোনের কোশদেহে অসংখ্য সূক্ষ্ম তন্তু থাকে, যেগুলিকে নিউরোফাইব্রিল বলে।
- নিজল দানা – নিউরোপ্লাজমে রাইবোনিউক্লিয়োপ্রোটিন নির্মিত অসংখ্য সূক্ষ্ম দানা অবস্থিত, এদের নিজল দানা বলে। এরা প্রধানত রাইবোজোমের দানা যা প্রোটিন সংশ্লেষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- কোশ অঙ্গাণু – নিউরোপ্লাজমে মাইটোকন্ড্রিয়া, ER, গলগিবডি, অনুন্নত ও নিষ্ক্রিয় সেন্ট্রোজোম প্রভৃতি কোশ অঙ্গাণু থাকে।
- রঞ্জক – নিউরোপ্লাজমে মেলানিন, লাইপোক্রোম প্রভৃতি রঞ্জকের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
স্নায়ুকোশের কাজ –
- কোশদেহ নিউরোনের সকল প্রকার বিপাকক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে।
- কোশদেহ ডেনড্রনের মাধ্যমে পূর্ববর্তী স্নায়ুকোশ বা নিউরোন থেকে স্নায়ুস্পন্দন গ্রহণ করে।
- কোশদেহ ডেনড্রন কর্তৃক গৃহীত স্নায়ুস্পন্দনকে অ্যাক্সনে প্রেরণ করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
নিউরোন বা স্নায়ুকোশ কী?
নিউরোন বা স্নায়ুকোশ হল স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত ও কার্যগত একক। এটি স্নায়ুপ্রেরণা গ্রহণ, প্রক্রিয়াকরণ ও প্রেরণের কাজ করে।
নিউরোনের প্রধান তিনটি অংশ কী কী?
নিউরোনের প্রধান তিনটি অংশ হল –
1. কোশদেহ (সোমা) – বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে ও স্নায়ুপ্রেরণা প্রক্রিয়াকরণ করে।
2. ডেনড্রাইট – অন্য নিউরোন থেকে স্নায়ুপ্রেরণা গ্রহণ করে কোশদেহের দিকে নিয়ে আসে।
3. অ্যাক্সন – কোশদেহ থেকে প্রক্রিয়াকৃত স্নায়ুপ্রেরণা পরবর্তী নিউরোন বা কার্যস্থলে (যেমন – পেশী) বহন করে নিয়ে যায়।
কোশদেহের দুটি গুরুত্বপূর্ণ গঠন ও তাদের কাজ উল্লেখ করো।
নিজল দানা (নিসল বডি) – রাইবোনিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা গঠিত। প্রোটিন সংশ্লেষের প্রধান স্থান। এটি নিউরনের বিপাকীয় সক্রিয়তার নির্দেশক।
নিউরোফাইব্রিল – সূক্ষ্ম তন্তু যা কোশদেহসহ ডেনড্রাইট ও অ্যাক্সনে থাকে। এরা কোষের কাঠামোগত সমর্থন দেয় এবং উপাদান পরিবহনে সহায়তা করে।
নিউরোপ্লাজম কী?
নিউরোনের কোশদেহের সাইটোপ্লাজমকে বিশেষভাবে নিউরোপ্লাজম বলে। এটি দানাদার ও তন্তুময় এবং এতে নিজল দানা, নিউরোফাইব্রিল, বিভিন্ন কোষ অঙ্গাণু (মাইটোকন্ড্রিয়া, গলজি বডি ইত্যাদি) ও রঞ্জক থাকে।
কোশদেহ কেন “নিউরনের জীবনীশক্তি কেন্দ্র” বলা হয়?
কোশদেহ “নিউরনের জীবনীশক্তি কেন্দ্র” বলা হয় কারণ কোশদেহে নিউক্লিয়াস এবং সমস্ত অত্যাবশ্যকীয় কোষ অঙ্গাণু (মাইটোকন্ড্রিয়া, রাইবোজোম, গলজি বডি ইত্যাদি) থাকে। এটি নিউরনের সকল বিপাকীয় ক্রিয়া (যেমন – শক্তি উৎপাদন, প্রোটিন সংশ্লেষ) নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোষের টিকে থাকা ও কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত উপাদান তৈরি করে।
ডেনড্রাইট ও অ্যাক্সনের কাজের মধ্যে মূল পার্থক্য কী?
ডেনড্রাইট ও অ্যাক্সনের কাজের মধ্যে মূল পার্থক্য –
1. ডেনড্রাইটের কাজ – স্নায়ুপ্রেরণা গ্রহণ করা। এটি অন্য নিউরোনের অ্যাক্সন প্রান্ত থেকে রাসায়নিক সংকেত গ্রহণ করে কোশদেহের দিকে প্রবাহিত করে।
2. অ্যাক্সনের কাজ – স্নায়ুপ্রেরণা প্রেরণ করা। এটি কোশদেহ থেকে প্রক্রিয়াকৃত বৈদ্যুতিক সংকেত (অ্যাকশন পোটেনশিয়াল) পরবর্তী নিউরোনের ডেনড্রাইট বা কার্যস্থলের দিকে বহন করে।
নিউরোনের কোশদেহে কেন “অনুন্নত ও নিষ্ক্রিয় সেন্ট্রোজোম” থাকে?
নিউরোন হলো একটি পার্থক্যকৃত কোষ যা সাধারণত বিভাজিত হয় না। যেহেতু সেন্ট্রোজোম কোষ বিভাজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই নিউরোনে এটির প্রয়োজন পড়ে না এবং এটি অনুন্নত ও নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। এটি প্রমাণ করে যে নিউরোন সাধারণত মাইটোসিসের মাধ্যমে বিভাজিত হয় না।
“পেরিক্যারিয়ন” শব্দটি কী বোঝায়?
“পেরিক্যারিয়ন” হল “কোশদেহ” বা “সোমা”-এর আরেকটি নাম। এটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ “নিউক্লিয়াসের চারপাশের অংশ”।
স্নায়ুপ্রেরণা কোশদেহে কীভাবে প্রবাহিত হয়?
স্নায়ুপ্রেরণা সাধারণত ডেনড্রাইটের মাধ্যমে কোশদেহে প্রবেশ করে। কোশদেহে প্রক্রিয়াকরণের পর, সেই সংকেত অ্যাক্সন হিলক নামক কোশদেহ ও অ্যাক্সনের সংযোগস্থল থেকে অ্যাক্সনের মধ্য দিয়ে বহিঃমুখী হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “স্নায়ুকোশের কোশদেহের গঠন ও কাজ সংক্ষেপে উল্লেখ করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় “জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়” -এর “প্রাণীদের সাড়াপ্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন