বদ্বীপ সৃষ্টি হওয়ার অনুকূল পরিবেশ উল্লেখ করো।

নদী যখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সমুদ্রের কাছে পৌঁছায়, তখন ভূমির ঢাল কমে যায় এবং নদীর গতিও ধীর হয়ে যায়। এই অবস্থাকে নদীর নিম্নগতি বলে। এই নিম্নগতিতে নদী প্রচুর পরিমাণে বালি, পলি, কাদা বহন করে। নদীর গতি কমে যাওয়ায়, এই বালি, পলি, কাদা নদীর তলদেশে জমা হতে থাকে।

দীর্ঘদিন ধরে এই বালি, পলি, কাদা জমা হয়ে নদীর মোহনার কাছে এক ধরণের ভূমিরূপ তৈরি করে। এই ভূমিরূপের আকৃতি মাত্রাহীন ‘ব’ অক্ষর বা গ্রীক অক্ষর ডেল্টার (∆) মত হয়। এই ভূমিরূপকেই বদ্বীপ বলা হয়।

বদ্বীপ সৃষ্টি হওয়ার অনুকূল পরিবেশ উল্লেখ করো।

বদ্বীপ সৃষ্টি হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অনুকূল পরিবেশগুলি হল —

  • পলি: নদীতে যদি প্রচুর পলি থাকে, তাহলে সেই পলি সমুদ্রগর্ভে জমা হতে থাকে। দীর্ঘ নদীপথ, বৃহৎ অববাহিকা, এবং অনেক উপনদী থাকলে নদীতে পলির পরিমাণ বেড়ে যায়।
  • অগভীর সমুদ্র: যদি সমুদ্র খুব গভীর হয়, তাহলে পলি তলিয়ে গিয়ে বদ্বীপ তৈরি হতে পারে না। তাই, মোহনার কাছে সমুদ্র অগভীর হওয়া দরকার।
  • বায়ুর সাহায্য:যখন নদীর মুখোমুখি বাতাস বয়, তখন পলি মোহনায় জমা হতে সাহায্য করে।
  • শান্ত সমুদ্র: জোয়ারভাটা ও সমুদ্রস্রোত যদি কম থাকে, তাহলে পলি সহজে জমা হতে পারে।
  • বিশেষ প্রবাহ: Hypopycnal প্রবাহে, নদীর জলের চেয়ে সমুদ্রের জলের ঘনত্ব বেশি থাকে। এই প্রবাহ বদ্বীপ গঠনে সাহায্য করে।
  • মৃদু ঢাল: নদীর মোহনার ঢাল যদি খুব কম হয়, তাহলে পলি সহজে জমা হয়ে বদ্বীপ তৈরি করে।
  • উপনদীর ভূমিকা: যত বেশি উপনদী মূল নদীতে মিলবে, তত বেশি পলি জমা হবে এবং বদ্বীপ দ্রুত তৈরি হবে।
  • লবণের প্রভাব: সমুদ্রের জলে লবণের পরিমাণ বেশি হলে জলের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এর ফলে পলি দ্রুত জমা হতে পারে।
  • দীর্ঘ নদীপথ: নদীর গতিপথ যদি দীর্ঘ হয়, তাহলে পলির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং বদ্বীপ গঠন সহজ হয়।
  • পরিবেষ্টিত সমুদ্র: স্থলভাগ দ্বারা পরিবেষ্টিত সমুদ্রে পলি সহজে জমা হয় এবং বদ্বীপ তৈরি হয়।

আরও পড়ুন – নদীর নিম্নগতিতে কীভাবে বদ্বীপ সৃষ্টি হয়?

বদ্বীপ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ কোনটি?

পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ হলো গঙ্গা-পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপ। এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অবস্থিত এবং এর আয়তন প্রায় 1,05,000 বর্গ কিলোমিটার।

সুন্দরবন কি?

সুন্দরবন হলো বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন যা গঙ্গা-পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপের অংশ। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত এবং 10,000 বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।

গাঙ্গেয় বদ্বীপ কী?

গঙ্গা নদী দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরে পতিত হওয়ার সময় প্রচুর পরিমাণে পলি বহন করে। এই পলি বঙ্গোপসাগরের মোহনা অঞ্চলে জমা হয়ে গ্রিক অক্ষর ডেল্টা (∆) বা বাংলা অক্ষর ‘ব’-এর আকৃতির বিশাল ভূমিরূপ তৈরি করে। এই ভূমিরূপকেই গাঙ্গেয় বদ্বীপ বলা হয়।

গাঙ্গেয় বদ্বীপের ক্ষেত্রফল কত?

গাঙ্গেয় বদ্বীপের ক্ষেত্রফল প্রায় 1,34,094.4 বর্গ কিলোমিটার

বদ্বীপ সমভূমি কী?

মোহনার নিকটে নদী প্রচুর পরিমাণে পলি সঞ্চয়ের ফলে কতগুলি বদ্বীপ একত্রে যুক্ত হয়ে যে সমভূমির গঠন করে তাকে বদ্বীপ সমভূমি বলে।

Share via:

মন্তব্য করুন