অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ছন্নছাড়া – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের ছন্নছাড়া অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে ছন্নছাড়া অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় ছন্নছাড়া অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই ছন্নছাড়া অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।

Table of Contents

এই কবিতায় কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত দুটি ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছেন। প্রথমটি হল শহরের অবহেলিত, ছন্নছাড়া মানুষদের, যারা রাস্তায় পড়ে থাকা রক্তাক্ত ভিখিরির যত্ন নেয়। দ্বিতীয়টি হল শীর্ণ, জীর্ণ, প্রেতচ্ছায়ার মতো একটি গাছের, যা শহরের অমানুষিকতার প্রতীক।

কবিতার শুরুতে আমরা দেখতে পাই এক ব্যক্তি ট্যাক্সিতে করে যাচ্ছেন। হঠাৎ তিনি রাস্তার ধারে রক্তাক্ত ভিখিরির দেহ দেখে ট্যাক্সি থামিয়ে নামেন। ভিখিরির রক্ত যাতে তার পোশাকে না লাগে, সেইজন্য তিনি ট্যাক্সি থেকে নেমে যান। কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে হয়, ভিখিরির রক্ত যদি তার সামাজিক ভাবমূর্তি নষ্ট করে, তাহলে তিনি কেন ট্যাক্সি থেকে নেমে গেলেন? এই ভাবনায় তার মনে লজ্জা ও অপরাধবোধ জাগ্রত হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তার মনে এক অদ্ভুত পরিবর্তন আসে। সেই ছন্নছাড়া মানুষদের প্রতি তার মনে গভীর শ্রদ্ধা জাগ্রত হয়। তিনি শহরের সর্বত্র তাদের উচ্চারিত “প্রাণ আছে, এখনও প্রাণ আছে” বাক্যটি প্রতিধ্বনিত হতে শোনেন। এই বাক্যটিতে তিনি তাদের প্রতি আস্থা, প্রত্যয় ও নির্ভরতার সুর শুনতে পান।

এই ঘটনার পর কবি ট্যাক্সিতে করে তার গন্তব্যস্থলে যাচ্ছেন। পথে তিনি একটি শুষ্ক, জীর্ণ, কঙ্কালসার গাছ দেখতে পান। গাছটির বিগত সবুজের কাঠামোকে ব্যঙ্গ করে কবি তাকে “গাছের প্রেতচ্ছায়া” বলে অভিহিত করেন। কবি গাছটির পাশেই রাস্তার ধারে একদল ছন্নছাড়া বেকার ছেলেদের দেখতে পান। ট্যাক্সি ড্রাইভার তাদের এড়িয়ে যেতে চাইলেও কবি ওদের কাছাকাছি যেতে চান। কারণ তিনি জানেন, এই ছেলেদের জন্যই রাজ্যে কলেজে সিট নেই, অফিসে চাকরি নেই, কারখানায় কাজ নেই।

কবি এই ছেলেদের “স্ফুলিঙ্গহীন ভিজে বারুদের স্তূপ” বলে অভিহিত করেন। ট্যাক্সি ওদের সামনে দাঁড়াতেই ছেলেরা আনন্দে চিৎকার করে গাড়ি চাপা পড়া এক ভিখিরির দিকে ছুটে যায়। ভিখিরির এখনও প্রাণ আছে জেনে তারা আনন্দে নাচতে থাকে। এই দৃশ্য দেখে কবি অবাক হন। কারণ এই ছেলেরা, যারা নিজেরাই অবহেলিত, তারা অন্যের প্রতি এতটা সহানুভূতিশীল হতে পারে? এই ঘটনায় কবির মনে হয়, পাষাণের মতো শীতল হৃদয়েও কোমলতার স্পর্শ লাগতে পারে।

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ছন্নছাড়া – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

ড্রাইভার বললে, ওদিকে যাব না। – ওদিকে না যেতে চাওয়ার কারণ কী?

গলির মোড়ে কতকগুলো বেকার ছন্নছাড়া ছেলে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিল, যারা ট্যাক্সি ড্রাইভারকে দেখতে পেলেই গাড়ি থামিয়ে লিফট চাইবে এবং তারপর ড্রাইভারকে বলবে তাদের ঘুরিয়ে হাওয়া খাইয়ে আনতে-এই আশঙ্কায় ড্রাইভার ওদিকে যেতে চাননি।

তাই এখন পথে এসে দাঁড়িয়েছে সড়কের মাঝখানে। – সড়কের মাঝখানে পথ এসে দাঁড়ানোর কারণ কী?

ছন্নছাড়া কবিতায় উল্লিখিত ছেলেগুলি জীবনে সবদিক থেকে বঞ্চিত। এমনকি মধ্যবিত্ত বাড়ির এক চিলতে রক, যেখানে ওরা একটু বসতে পারত, সেটাও উঠে গিয়েছে বলে তারা এখন সড়কের মাঝখানে, পথে এসে দাঁড়িয়েছে।

আমি বললুম, না ওখান দিয়েই যাব। – কবির ‘ওখান’ দিয়েই যেতে চাওয়ার কারণ কী?

গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসাতে রাজি না হওয়া বিবেকবান লেখক চেয়েছিলেন পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ; চেয়েছিলেন মানবিকতার বাহনে সকলকে সওয়ার করিয়ে প্রকৃত সমাজসংস্কারকের ভূমিকা পালন করতে।

আমি নেমে পড়লুম তাড়াতাড়ি – কবি তাড়াতাড়ি নেমে পড়লেন কেন?

শহুরে ভব্যতা ও লোক-দেখানো শালীনতা শহুরে বাবুদের সহজাত প্রবৃত্তি, তা যেন মরেও মরতে চায় না। গাড়ি চাপা পড়া আহত ব্যক্তির রক্ত পাছে গায়ে বা পোশাকে লাগে, তাই সেই নোংরা ছোঁয়াচ থেকে নিজেকে বাঁচাতে কবি গাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি নেমে পড়লেন।

ফিরে আসতেই দেখি – ফেরার পথে কবি কী দেখতে পেলেন?

ফেরার পথে কবি দেখতে পেলেন সমস্ত নির্জীবতায় প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। জীর্ণ-শীর্ণ ফ্যাকাশে গাছটায় যেন লেগেছে সবুজের প্রলেপ। পরিবেশের সমস্ত কালিমায় লেগেছে শুভ্রতার চমক। যেন বেওয়ারিশ ভিখিরির ‘মূল্যহীন প্রাণ’ সমস্ত ‘মূল্যবান সমাজের’ ধড়ে চেতনার সঞ্চার করেছে, মৃতপ্রায় ক্ষয়িষ্ণু সমাজ যেন ধীরে ধীরে জেগে উঠেছে।

অবিশ্বাস্য চোখে দেখলুম — কবির চোখে অবিশ্বাসের ঘোর কেন?

যাওয়ার সময় যে গাছটিকে নীরস পত্রহীন রুক্ষ অবস্থায় দেখেছিলেন ফেরার সময় তার গায়ে কচি পাতা, ডালভরা সুগন্ধি ফুল এবং পাখিদের সমাবেশ লক্ষ করার মতো অসম্ভব ঘটনা ঘটার জন্যই কবির চোখে অবিশ্বাসের ঘোর ছিল।

ওই পথ দিয়ে/জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে। – কবির যাত্রাপথের অভিজ্ঞতার বিবরণ দাও।

ট্যাক্সি করে যাওয়ার সময় কবির প্রথমেই গলির মোড়ে একটি পত্রহীন রুক্ষ গাছের দিকে চোখ যায় এবং তারপর তিনি লক্ষ করেন রাস্তার মাঝখানে কতকগুলো ছন্নছাড়া যুবক দাঁড়িয়ে আছে। যাদের দেখে ট্যাক্সি ড্রাইভার সেইদিকে গাড়ি চালাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। কিন্তু কবির কথায় ড্রাইভার সেইদিকে গাড়ি নিয়ে এলে তারা সকলে একটি গাড়ি চাপা পড়া ভিখিরির দলা পাকানো রক্তাক্ত দেহটাকে বয়ে এনে গাড়িতে তোলে। কবি অবশ্য এই সময়েই গাড়ি থেকে নেমে যান।

গলির মোড়ে একটা গাছ দাঁড়িয়ে/গাছ না গাছের প্রেতচ্ছায়া – একটি গাছ দাঁড়িয়ে আছে বলেও কেন পরের পঙ্ক্তিতে তাকে ‘গাছের প্রেতচ্ছায়া’ বলা হয়েছে তা বুঝিয়ে দাও।

কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ‘ছন্নছাড়া’ কবিতায় প্রথমে গলির মোড়ে একটি গাছ দাঁড়িয়ে আছে বলেছেন এইজন্যই যে, সেটি মূলত একটি গাছই ছিল। কিন্তু পরের পঙ্ক্তিতে সেটিকে ‘গাছের প্রেতচ্ছায়া’ বলেছেন এই কারণে যে, তাঁর মনে হয়েছে একটি গাছের যেমন ডালপালা, পত্র-কুসুম-লতা প্রভৃতি আবশ্যিক অঙ্গস্বরূপ, এ গাছটির সেসব কিছুই ছিল না-কেবল পত্রহীন নীরস রুক্ষ কয়েকটি ডাল যেন কঙ্কালের মতো শূন্যের দিকে উঠেছিল। যা দেখে লেখক সেই গাছকে ‘গাছের প্রেতচ্ছায়া’ বলে উল্লেখ করেছেন।

ওই পথ দিয়ে/জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে। – এভাবে কবিতায় উত্তম পুরুষের রীতি কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, অন্তত পাঁচটি পঙ্ক্তি উদ্ধৃত করে বুঝিয়ে দাও।

উত্তম পুরুষের রীতি ব্যবহারকারী পাঁচটি পঙ্ক্তি হল –

  • জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে
  • আমি বললুম, না ওখান দিয়েই যাব
  • ওখান দিয়েই আমার শর্টকার্ট
  • আমরা খালি ট্যাক্সি খুঁজছি
  • অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে দেখলুম।

উপরিউক্ত প্রতিটি পঙ্ক্তিতেই লেখক উত্তম পুরুষকে ব্যবহার করেছেন অত্যন্ত সচেতনভাবে। তবে সর্বক্ষেত্রে লেখকই যে উত্তম পুরুষ তেমন নয়। রাস্তার মোড়ের আড্ডাবাজ কর্মহীন ভবঘুরের জবানিতে লেখক উত্তম পুরুষকে ব্যবহার করে সাম্যতা ও সর্বজনীনতা বজায় রাখতে চেয়েছেন।

কারা ওরা? – কবিতা অনুসরণে ওদের পরিচয় দাও।

ওরা বলতে এখানে সেইসব ছেলেদের কথা বলা হয়েছে, যারা সমাজে কর্মহীন ছন্নছাড়ার দল। সকলে মনে করে ওদের ঘরদোর নেই, জীবনের কোনো শিকড় নেই, তারা রীতিনীতি মানে না, আইনকানুনের ধার ধারে না, সামাজিক ভদ্রতা-সৌজন্য বা শালীনতা-অশালীনতার মাত্রা বোঝে না, অর্থাৎ ওদের সব কিছুই ইতিবাচক এবং সর্বত্রই তারা প্রত্যাখ্যাত। তারা নেই রাজ্যের বাসিন্দা।

কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের “ছন্নছাড়া” কবিতা শুধু একটি ছোট্ট ঘটনার বর্ণনা নয়, বরং সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। এখানে আমরা দেখতে পাই, সমাজের অবহেলিত মানুষদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কতটা নেতিবাচক। কিন্তু যখন প্রয়োজন, তখন তাদের প্রতি আমাদের মনোভাব কতটা পরিবর্তিত হতে পারে।

কবি এই কবিতায় দেখিয়েছেন যে, ছন্নছাড়া মানুষরাও আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের প্রতি আমাদের কর্তব্যবোধ আছে। তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি, সম্মান এবং সহযোগিতার প্রয়োজন।

কবিতার শেষে, যখন গাছ ও প্রকৃতির বর্ণনা আসে, তখন আমরা দেখতে পাই যে, ছন্নছাড়া মানুষদের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তির মনেও পরিবর্তন আসে। তার পাষাণের মতো কঠিন হৃদয়ে কোমলতার স্পর্শ লাগে।

এই কবিতা আমাদের সকলকেই ভাবতে বাধ্য করে যে, আমাদের সকলেরই সমাজের অবহেলিত মানুষদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত। তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করা উচিত

Share via:

মন্তব্য করুন