এই ব্লগ পোস্টে, আমরা ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলভূমির মধ্যে পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করব। দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” অধ্যায়ের “ভারতের ভূপ্রকৃতি” বিভাগে এই প্রশ্নটি বারবার দেখা যায়।
পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি
র্ব উপকূলীয় সমভূমি ভারতের পূর্বদিকে বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত একটি বিশাল সমতল ভূমি। প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং গড়ে ১০০ কিলোমিটার প্রস্থ ব্যাপী এই অঞ্চলটি দুটি ভাগে বিভক্ত: উত্তর সরকার উপকূল এবং করমণ্ডল উপকূল।
উত্তর সরকার উপকূল
- সুবর্ণরেখা নদীর মোহনা থেকে কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত
- ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত
- উল্লেখযোগ্য হ্রদ: চিল্কা, কোলেরু (ওড়িশা), পুলিকট (অন্ধ্রপ্রদেশ)
করমণ্ডল উপকূল
- কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত বিস্তৃত
- তামিলনাড়ু রাজ্যে অবস্থিত
- দক্ষিণে কুমারিকা অন্তরীপ
পশ্চিম উপকূলভূমির
ভারতের পশ্চিমে আরব সাগরের তীরে অবস্থিত একটি সরু, দীর্ঘ উপকূলীয় সমভূমি হল পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি। প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১০ থেকে ৮০ কিলোমিটার প্রস্থ ব্যাপী এই অঞ্চলটি চারটি ভাগে বিভক্ত:
- গুজরাট উপকূলীয় সমভূমি
- কঙ্কন উপকূলীয় সমভূমি
- কর্ণাটক উপকূলীয় সমভূমি
- মালাবার উপকূলীয় সমভূমি
গুজরাট উপকূলীয় সমভূমি
- কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ থেকে মহারাষ্ট্রের উত্তর সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত
- লবণাক্ত জলাভূমি “কচ্ছের রণ” এর জন্য বিখ্যাত
- গিরনার এবং গির নামে দুটি পর্বতমালা রয়েছে
- গিরনার পর্বতের “গোরক্ষনাথ” শৃঙ্গটি কাথিয়াবাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ
কঙ্কন উপকূলীয় সমভূমি
- মহারাষ্ট্রের উত্তর সীমান্ত থেকে গোয়া পর্যন্ত বিস্তৃত
- প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ
- ঘন বনাঞ্চল এবং মনোরম সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত
কর্ণাটক উপকূলীয় সমভূমি
- গোয়া থেকে কর্ণাটকের দক্ষিণ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত
- প্রায় ২২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ
- ম্যাঙ্গালোরের কাছে নেত্রবতী নদীর মোহনায় অবস্থিত একমাত্র বদ্বীপের জন্য বিখ্যাত
মালাবার উপকূলীয় সমভূমি
- কেরালা রাজ্যের উপকূলে অবস্থিত
- “ব্যাকওয়াটার্স” নামে পরিচিত নিস্তরঙ্গ লবণাক্ত জলাভূমি এবং “কয়াল” নামে পরিচিত অসংখ্য হ্রদের জন্য বিখ্যাত
- মনোরম সমুদ্র সৈকত এবং সমৃদ্ধ
- সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত
পূর্ব উপকূলভূমি এবং পশ্চিম উপকূলভূমির তুলনা
পার্থক্যের বিষয় | পূর্ব উপকূলভূমি (বঙ্গোপসাগর-সংলগ্ন) | পশ্চিম উপকূলভূমি (আরব সাগর-সংলগ্ন) |
প্রশস্ততা | পূর্ব উপকূলভূমি বেশ প্রশস্ত (গড়ে 100 কিমি)। | পশ্চিম উপকূলভূমি খুব সংকীর্ণ। গোয়াতে সর্বনিম্ন 1 কিমি বা আরও কম থেকে মালাবার উপকূলে সর্বোচ্চ 80 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। |
উচ্চতা | সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই উপকূলভূমির উচ্চতা কম। | সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই উপকূলভূমি অনেক উঁচু। |
বালিয়াড়ি | উপকূলের প্রায় সর্বত্র বালিয়াড়ি আছে। | শুধু দক্ষিণাংশে বালিয়াড়ি আছে। |
উপকূলের প্রকৃতি | দক্ষিণাংশ ছাড়া উপকূলরেখা অভগ্ন, এজন্য বন্দরের সংখ্যা কম। | উপকূলরেখা প্রায় সর্বত্রই ভগ্ন বলে বন্দরের সংখ্যা বেশি। |
প্রবাহিত নদীসমূহ | এই সমভূমির ওপর দিয়ে মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী প্রভৃতি বড়ো বড়ো নদী প্রবাহিত হয়েছে এবং নদীগুলির মোহানাও প্রশস্ত। | নেত্রাবর্তী, সরাবতী, পেরিয়ার প্রভৃতি ছোটো ছোটো নদী এই সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং নদীগুলির মোহানাও সংকীর্ণ। |
বদ্বীপ | নদীর মোহানাগুলিতে বড়ো বড়ো বদ্বীপ আছে। | নেত্রাবতী নদীর মোহানায় একটি ছোটো বদ্বীপ ছাড়া আর কোনো নদীর মোহানায় বদ্বীপ নেই। |
হ্রদ ও উপহ্রদের উপস্থিতি | উপকূলের বিভিন্ন অংশে হ্রদ ও উপহ্রদ আছে। যেমন — চিলিকা, কোলেরু, পুলিকট প্রভৃতি। | একমাত্র দক্ষিণাংশ ছাড়া উপকূলভূমির কোথাও হ্রদ বা উপহ্রদ নেই। যেমন — ভেমবানাদ, পোনমুদি, অষ্টমুদি প্রভৃতি। |
মৃত্তিকার উর্বরতা ও কৃষিতে ভূমিকা | মৃত্তিকা উর্বর এবং উপকূলভূমির সর্বত্রই কৃষিতে সমৃদ্ধ। | মৃত্তিকা কম উর্বর (কোঙ্কন ও মালাবার ছাড়া), তাই কৃষিকাজও উন্নত নয়। |
বৃষ্টিপাতের পরিমাণ | বৃষ্টিপাত মাঝারি ধরনের। | বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি। |
শিল্পে ভূমিকা | পূর্ব উপকূলভূমি শিল্পে সমৃদ্ধ। | দু-একটি স্থান ছাড়া শিল্পের বিকাশ লক্ষণীয় নয়। |
যোগাযোগ ব্যবস্থা | চওড়া উপকূলভূমির জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত। | সংকীর্ণ উপকূলভূমির জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ততটা উন্নত নয়। |
এই ব্লগ পোস্টে, আমরা ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলভূমির মধ্যে পার্থক্যগুলি তুলে ধরেছি। আমরা আশা করি এই তথ্যগুলি আপনাদের জন্য দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে সহায়ক হবে।