আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বনসৃজন ও পরিবেশরক্ষা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে।

বনসৃজন ও পরিবেশরক্ষা – প্রবন্ধ রচনা
আয় আমাদের অঙ্গনে অতিথি বালক তরুদল
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মানবের স্নেহ সঙ্গে নে, চল্ আমাদের ঘরে চল্।
ভূমিকা –
গাছই হল পৃথিবীতে প্রাণের অগ্রদূত। তাই মানুষ সৃষ্টির পূর্বেই বৃক্ষশ্রেণি মানুষের জন্য খাদ্য ও শীতল ছায়া সৃষ্টি করে প্রতীক্ষা করছিল তার আবির্ভাবের। পৃথিবীতে মানুষের আগমনের পরে অরণ্যই সেদিন তাকে দিয়েছিল খাদ্য, ছায়া, বিশুদ্ধ অক্সিজেন ও নিরাপদ আশ্রয়। কিন্তু কালক্রমে মানুষই অরণ্য ধ্বংস করে পৃথিবীকে বৃক্ষহীন করে তুলেছে। তবে ক্রমশ মানুষ বুঝেছে এভাবে অরণ্যের ধ্বংসসাধন আত্মহননেরই নামান্তর। বৃক্ষসৃজন মানুষের সেই বোধোদয় ও শুভবুদ্ধিরই প্রকাশ।
বৃক্ষরোপণের উদ্দেশ্য –
মানুষ অরণ্য বিনাশের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জলবায়ুকে নষ্ট করেছে। বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে বায়ুস্তরে দূষিত কণা ও উপাদানের পরিমাণ বাড়ে, বৃষ্টিপাত ও ঋতুচক্রের চরিত্র বদলে যায়। ফলে প্রকৃতির সার্বিক তাল-মিলের ছন্দপতন ঘটে।
অরণ্য ও ভারতীয় সভ্যতার বিকাশ –
ভারতীয় সভ্যতা অরণ্যনির্ভর। অরণ্যে ঢাকা শ্যামল পটভূমিকায় স্থাপিত তপোবনই ছিল এই সভ্যতার অন্যতম পীঠস্থান। জনভূমি ও বনভূমির মধ্যে ছিল আত্মার সম্পর্ক। কিন্তু পাশ্চাত্য সভ্যতার নগরকেন্দ্রিকতা অরণ্যকে ধ্বংস করে তার ওপর ইট-কাঠ-পাথরের কৃত্রিম ইমারত স্থাপন করে মানবজাতির কবর রচনা করেছে। ভারতীয় বিজ্ঞানীই প্রমাণ করেছেন যে, গাছেরও প্রাণ আছে। নাগরিকতায় ক্লান্ত কবিও প্রার্থনা করেছেন, দাও ফিরে সে অরণ্য, লহ এ নগর।
পরিবেশদূষণ রোধ ও বনভূমি –
মানুষ তার নিশ্বাসের মাধ্যমে যে কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে উদ্ভিদ তা গ্রহণ করে পরিবেশে পর্যাপ্ত ও বিশুদ্ধ অক্সিজেন ফিরিয়ে দেয়। কলকারখানা ও গাড়িঘোড়া থেকে নির্গত দূষিত ধোঁয়া পরিশোধনেও অরণ্য সাহায্য করে। তা ছাড়া ভূমিক্ষয় রোধের দ্বারাও অরণ্য প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।
বনসৃজ্জনের উপযোগিতা –
অক্সিজেন থেকে শুরু করে খাদ্য-বাসস্থান-ওষুধ পর্যন্ত সবই অরণ্যের অবদান। যান্ত্রিক সভ্যতার বিস্তার ও অরণ্যনিধনের ফলে প্রাকৃতিক আবহাওয়ার ভারসাম্য এখন নষ্টের মুখে। বনসৃজনই এর অন্যতম প্রতিকার। তাই আজ বনভূমি ধ্বংস নয়, বনভূমি সৃজনই হোক মানুষের অন্যতম প্রতিশ্রুতি।
সামাজিক বনসৃজন –
বর্তমানে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য সামাজিক বনসৃজনের কর্মসূচি গ্রহণ করে বলা হয়েছে, একটি গাছ, একটি প্রাণ। এই উদ্যোগকে সফল করতে প্রয়োজন আবশ্যিকভাবে বৃক্ষরোপণ এবং একটি বৃক্ষচ্ছেদনের আগে দুটি করে গাছ লাগানো।
বৃক্ষরোপণ উৎসব –
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই আধুনিক ভারতে বৃক্ষসৃজন উদ্যোগের প্রথম ও অন্যতম প্রবর্তক। শান্তিনিকেতনে তাঁর কবিজীবনের গভীর উপলব্ধিকে রূপ দান করতে গিয়ে তিনি জানান,
মরুবিজয়ের কেতন উড়াও শূন্যে হে প্রবল প্রাণ।
ধূলিরে ধন্য কর করুণার পুণ্যে হে কোমল প্রাণ।।
বর্তমান ভারতে শুধু নয়, সমগ্র বিশ্বে কবি প্রবর্তিত এই বৃক্ষরোপণ উৎসবের উপযোগিতা স্বীকৃতি লাভ করেছে।
উপসংহার –
বনসৃজন সমবেত মানুষের উদ্যোগ। বৃক্ষের উপযোগিতা উপলব্ধি করে বৃক্ষচ্ছেদের পরিবর্তে অরণ্য ও অরণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে উদ্যোগটি ধরে রাখতে হবে। সভ্যতা, প্রকৃতি ও পরিবেশের অস্তিত্বরক্ষার স্বার্থেই সকলের এগিয়ে আসার প্রয়োজন আছে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বনসৃজন ও পরিবেশরক্ষা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘বনসৃজন ও পরিবেশরক্ষা’ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা।
আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন