বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা – প্রবন্ধ রচনা

Rahul

নমস্কার বন্ধুরা! আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা বিষয়ক প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করবো।

মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষাগুলিতে বিজ্ঞানচর্চা প্রবন্ধ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই বিষয়টি বারবার পরীক্ষায় দেখা যায় এবং ভালো নম্বরের জন্য এই প্রবন্ধটি ভালোভাবে লিখতে পারা গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা – প্রবন্ধ রচনা

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা – প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা –

ইংরেজ আমলে ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাবে বিজ্ঞান-চর্চার মাধ্যমও হয়েছিল ইংরেজি ভাষা। কিন্তু এর পরিণামে বিজ্ঞানশিক্ষা সর্বজনীন হয়ে উঠতে পারেনি। মাতৃভাষার সঙ্গে হৃদয়ের যে সংযোগ তাকে কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছিল না বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে। তবুও সেই পরাধীন ভারতেই মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় উদ্যোগী হয়েছিলেন কিছু আলোকিত ব্যক্তিত্ব।

শুরুর কথা –

উনিশ শতকের সূচনা থেকেই পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞান বিষয়ক নানা রচনা বাংলায় অনূদিত হতে থাকে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে জন ক্লার্ক সম্পাদিত এবং শ্রীরামপুর মিশন থেকে প্রকাশিত দিগদর্শন পত্রিকা। স্কুল বুক সোসাইটি ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে চালু করে একটি প্রাণী বিষয়ক পত্রিকা পশ্বাবলী। এইভাবে খুবই বিক্ষিপ্তভাবে শুরু হয়েছিল বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা।

বাংলা ভাষায় চিকিৎসাবিজ্ঞান –

রাধাগোবিন্দ কর ছিলেন একজন বিলেতফেরত চিকিৎসক। অন্য অনেক জাতীয়তাবাদী এবং সামাজিক কাজের সঙ্গে মাতৃভাষায় চিকিৎসাবিজ্ঞানচর্চা ছিল তাঁর স্বপ্ন। ধাত্রীসহায়, অ্যানাটমি, সংক্ষিপ্ত ভেষজতত্ত্ব, সংক্ষিপ্ত শিশু ও বালক চিকিৎসা তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। আর-একজন চিকিৎসক লালমাধব মুখোপাধ্যায় অনুবাদ করেন সি ম্যাকনামারা-র যুগান্তকারী গ্রন্থ এ ম্যানুয়েল অব দি ডিজিজেস অব দি আই, নাম দেন ‘অক্ষিতত্ত্ব’। উনিশ শতকের শেষে বিখ্যাত বিজ্ঞানী চুনীলাল বসু তার গবেষণার পাশাপাশি বেশ কিছু চিকিৎসা ও রসায়ন বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ফলিত রসায়ন, রসায়নসূত্র, পল্লীস্বাস্থ্য ইত্যাদি। মনোবিজ্ঞানের ওপরে প্রথম বাংলা বই রচনা করেছিলেন গিরিন্দ্রশেখর বসু।

স্মরণীয় বিজ্ঞানীদের মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা –

পৃথিবীবিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বিজ্ঞান বিষয়ক ভাবনাচিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন তাঁর অসামান্য গ্রন্থ অব্যক্ত-তে। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় লিখেছেন হিন্দু রসায়নশাস্ত্রের ইতিহাস, বাঙালির মস্তিষ্ক ও তার অপব্যবহার ইত্যাদি গ্রন্থ। প্রফুল্লচন্দ্রের সহকারী প্রিয়দারঞ্জন রায় রচনা করেন অতিকায় অণুর বিচিত্র কাহিনী।

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে স্মরণীয় ব্যক্তিগণ –

তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক অক্ষয়কুমার দত্ত রচনা করেছিলেন ভূগোল, বাহ্যবস্তুর সহিত মানব প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার, পদার্থবিদ্যা ইত্যাদি গ্রন্থ। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক চেতনার মিশ্রণে তিনি তাঁর বিজ্ঞান বিষয়ক রচনাগুলোকে শিল্পসৃষ্টির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর প্রকৃতি, জিজ্ঞাসা, পদার্থবিদ্যা, বিচিত্রজগৎ, ভুগোল ইত্যাদি গ্রন্থে বিজ্ঞান বিষয়ক ভাবনার প্রাণবন্ত উপস্থাপনা লক্ষ করা যায়। বিজ্ঞানের তথ্যকে সহজভাবে পরিবেশন করেছিলেন জগদানন্দ রায়ও। তাঁর গ্রহনক্ষত্র, প্রাকৃতিকী, বৈজ্ঞানিকী, পোকামাকড় ইত্যাদি গ্রন্থ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার আদর্শ উদাহরণ। বাংলার কীটপতঙ্গ গ্রন্থের রচয়িতা গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য, নব্যবিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যার নবযুগ ইত্যাদি গ্রন্থের লেখক চারুচন্দ্র ভট্টাচার্যের নামও এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য।

রবীন্দ্রনাথ –

ঠাকুরবাড়িতে বিজ্ঞানচর্চার এক গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যোতির্বিদ্যায় আগ্রহ ছিল। স্বর্ণকুমারী দেবী লিখেছিলেন বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ পৃথিবী, সৌরপরিবারবর্তী পৃথিবী ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান বিষয়ে ভাবনার প্রকাশ পাওয়া যায় তাঁর বিশ্ব পরিচয় গ্রন্থে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রহস্য আবিষ্কারের চেষ্টা ছিল এই গ্রন্থে।

সাম্প্রতিক কাল –

সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুঞ্জয় প্রসাদ গুহের আকাশ ও পৃথিবী, জিতেন্দ্রনাথ গুহের মহাকাশ পেরিয়ে, দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের মানব কল্যাণে রসায়ন ইত্যাদি অসংখ্য বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বলা যেতে পারে এই ধারাটি এখন ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে।

উপসংহার –

বাঙালির নিজস্ব মনন ও সৃষ্টিশীলতার প্রকাশ তার বিজ্ঞান বিষয়ক রচনাগুলি। একদা যে মাতৃভাষাকে বিজ্ঞানচর্চার জন্য অনুপযুক্ত ভাবা হত তাকে আশ্রয় করেই এখন তৈরি হয়েছে সৃজনশীলতার নব-মন্দাকিনী। যে-কোনো বাঙালির কাছেই এ ঘটনা অত্যন্ত গর্বের।

আরও পড়ুন – বাংলার কুটিরশিল্প – প্রবন্ধ রচনা

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় প্রায়শই এই বিষয়টি দেখা যায়। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা প্রবন্ধ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা, এবং এই রচনার মূল বিষয়গুলি মুখস্থ করলে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন। তবে, মনে রাখতে হবে যে কেবল মুখস্থ করাই যথেষ্ট নয়। বিজ্ঞানচর্চা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা এবং বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রাসঙ্গিক উদাহরণ ব্যবহার করতে পারাও গুরুত্বপূর্ণ।

Please Share This Article

Related Posts

ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায় প্রবন্ধ রচনা।

ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায় – প্রবন্ধ রচনা

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান - প্রবন্ধ রচনা

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান – প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

অধঃক্ষেপণ কাকে বলে? অধঃক্ষেপণের রূপভেদ গুলি আলোচনা করো।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা সম্পর্কে টীকা লেখো।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

বিংশ শতকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক সমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল?