অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের পরবাসী অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে পরবাসী অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় পরবাসী অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই পরবাসী অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।
এক সময় ছিল যখন দু’পাশে বনের মাঝখান দিয়ে আঁকাবাঁকা পথ সূর্যের আলোয় ঝকঝক করত। প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে গাছপালা দাঁড়িয়ে থাকত, আর মাঝখান দিয়ে পথটা ছন্দে এগিয়ে যেত। রাতের আলোও ছিল এক অদ্ভুত মোহময়ী, আর সেই আলো-আঁধারিতে মাঝে মাঝে দেখা যেত শ্বাপদের চোখ। কচি খরগোশরা আনন্দে নাচত।
টিলা অঞ্চলে পলাশ গাছের ঝোপ ছিল, আর সেখানে বনময়ূরের নৃত্য কত্থক নৃত্যের মতো মনে হত। নদীর তীরে তাবু ছায়ায় সোনালি সেতারের মতো সুর আর বনময়ূরের নৃত্য একাকার হয়ে যেত।
সন্ধ্যেবেলায় হরিণী নদীতে জল খেতে আসত, আর তখন কবির মনে পড়ত অন্ধমুনির তৃষ্ণা নিবারণের জন্য তার ছেলে সিন্ধুমুনির জল তোলার শব্দ। হরিণের জলপানের শব্দ যেমন শিকারীকে আকর্ষণ করত, তেমনি সিন্ধুমুনির জল তোলার শব্দও এক শিকারীকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করেছিল। চিতাও তার বিহার সেরে ফিরে আসত, আর তার বেগ বুনো এক অদ্ভুত কথাকলি নাচের মতো ছিল।
কিন্তু আজ আর কিছুই নেই। গাছপালা, বন, সবই সাফ হয়ে গেছে। বিস্তর এলাকা শুকনো প্রান্তর বই। বসতি উঠে গেছে, শুধু শুকনো হাওয়া হাহাকার করে। গ্রামের পর গ্রাম উচ্ছেদ হয়ে গেছে, নতুন শহরও গড়ে উঠছে না। ময়ূর তার সৌন্দর্যের জন্য আজ পণ্যে পরিণত।
মানুষ বোবা বনে গেছে, অসহায়। নদী, গাছ, পাহাড়, সবই আজ অপ্রয়োজনীয়। প্রকৃতি, মানুষ, গ্রাম, সবই ছিন্নমূল। সারা দেশে তাঁবু বয়ে বয়ে ঘোরা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। নিজের দেশেই পরবাসী, নিজের ঘরেই বেঘর। কবি প্রশ্ন করেন, পরবাসী কবে তার স্বভূমি ফিরে পেতে পারবে?
সম্ভবত এই ধ্বংসের হাত থেকে প্রকৃতি, মানুষ, পরবাসী কেউই আর কখনোই রক্ষা পাবে না।
কবি বিষ্ণু দে-র প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
কবি বিষ্ণু দে-র প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’।
তাঁর লেখা দুটি প্রবন্ধ বইয়ের নাম লেখো।
তাঁর লেখা দুটি প্রবন্ধ বইয়ের নাম হল – ‘যামিনী রায়’ এবং ‘সেকাল থেকে একাল’।
পথ কীসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে?
বিষ্ণু দে রচিত ‘পরবাসী’ কবিতায় পথ প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে।
চিতার চলে যাওয়ার ছন্দটি কেমন?
পরবাসী কবিতায় চিতার চলে যাওয়ার ছন্দটি লোলুপ এবং হিংস্র।
ময়ূর কীভাবে মারা গেছে?
ময়ূর মারা গেছে পণ্য হওয়ার জন্য।
প্রান্তরে কার হাহাকার শোনা যাচ্ছে?
প্রান্তরে শুকনো হাওয়া হাহাকার শোনা যাচ্ছে।
পলাশের ঝোপে কবি কী দেখেছেন?
পলাশের ঝোপে কবি দেখেছেন হঠাৎ আনন্দ শিহরনে বন ময়ূরের কত্থক নৃত্যবিভঙ্গ।
জঙ্গলের কোন্ কোন্ প্রাণীর কথা কবি এই কবিতায় বলেছেন?
জঙ্গলের খরগোশ, বনময়ূর, হরিণ, চিতা এই চারটি প্রাণীর কথা কবি এই কবিতায় বলেছেন।
কবি বিষ্ণু দে রচিত পাঠ্য কবিতাটির নাম (পদধ্বনি/ঘোড়সওয়ার/পরবাসী)
পরবাসী।
বিষ্ণু দে-র বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ (সম্রাট/ফেরারী ফৌজ/উর্বশী ও আর্টেমিস)।
উর্বশী ও আর্টেমিস।
দুদিকে ঘন বনের মাঝে রয়েছে (আলোছায়া পথ/ঝিকিমিকি পথ/কাদামাখা পথ)।
ঝিকিমিকি পথ।
কবি দেখেছেন বনময়ূরের (কথাকলি/কথক/ভরতনাট্যম) নৃত্য।
কথক নৃত্য।
নদীর কিনারে চুপি চুপি জল খায় (শেয়াল/হরিণ/বাঘ)।
হরিণ।
সিন্ধুমুনি ছিলেন (বিশ্বামিত্র মুনির/অন্ধমুনির/কণ্বমুনির) ছেলে।
অন্ধমুনির পুত্র।
লুব্ধ হিংস্র ছন্দে চলে গেল (সিংহ/চিতা/ভালুক)।
চিতা।
ময়ূর মরেছে (পালকে/পণ্যে/পেখমে)।
পণ্যে।
রাতের আলোয় থেকে-থেকে জ্বলে _।
চোখ।
নেচে লাফ দেয় _ খরগোশ।
কচি-কচি।
হঠাৎ _ বনময়ূরের কথক।
পুলকে।
_ নেই, ময়ূর মরেছে পণ্যে।
পত্তন।
কেন এই দেশে মানুষ _ অসহায়?
মৌন।
কেন নদী গাছ পাহাড় এমন _?
গৌণ।
বিষ্ণু দে-র জন্ম ও মৃত্যু কত খ্রিস্টাব্দে?
বিষ্ণু দে-র জন্ম হয় ১৮ জুলাই, ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে এবং মৃত্যু হয় ৩ ডিসেম্বর, ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে।
বিষ্ণু দে কোন পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা?
বিষ্ণু দে ‘সাহিত্যপত্র’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা।
তাঁর দু-তিনটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
বিষ্ণু দে রচিত দু-তিনটি কাব্যগ্রন্থ হল – ‘চোরাবালি’, ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’, ‘অন্বিষ্ট’ ইত্যাদি।
পরবাসী কবিতায় কোন্ দুটি নৃত্যের কথা বলা হয়েছে?
পরবাসী কবিতায় ‘কথক’ এবং ‘কথাকলি’ নৃত্যের কথা বলা হয়েছে।
কথক কোন্ ঘরানার নৃত্যশৈলী?
কথক জয়পুর, লখনউ, বেনারস ঘরানার নৃত্যশৈলী।
কথাকলি কোথাকার ধ্রুপদি নৃত্যশৈলী?
কথাকলি কেরালার ধ্রুপদি নৃত্যশৈলী।
কবিতাটিতে পরবাসী কে?
কবিতাটিতে পরবাসী কবি বিষ্ণু দে স্বয়ং।
কবিতাটিতে কোন্ কোন্ দ্বৈত শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে?
কবিতাটিতে ‘ঝিকিমিকি’, ‘তালে-তালে’, ‘থেকে-থেকে’, ‘কচি-কচি’, ‘চুপি-চুপি’ ইত্যাদি দ্বৈত শব্দের প্রয়োগ দেখা যায়।
পরবাসী কবিতায় কোন্ কোন্ বিশেষ্য-বিশেষণের প্রয়োগ কবি করেছেন?
পরবাসী কবিতায় ‘ঝিকিমিকি পথ’, ‘কচি-কচি খরগোশ’, ‘নিটোল টিলা’, ‘সোনালি সেতার’, ‘কথাকলি বেগ’ প্রভৃতি বিশেষ্য-বিশেষণের প্রয়োগ কবি করেছেন।
সিন্ধুমুনি কে? ‘সিন্ধুমুনির হরিণ আহ্বান’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
পুরাণে বর্ণিত সিন্ধুমুনি অন্ধমুনির পুত্র।
সিন্ধুমুনির কলশিতে জল ভরার শব্দ আর হরিণের জলপানের শব্দের মিল আছে। তাই কবি ‘সিন্ধুমুনির হরিণ আহ্বান’-এর কথা বলেছেন।
কবি এক সুন্দর ও স্বাভাবিক দিনের বর্ণনা দিয়ে কবিতা শুরু করেছেন। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য, পাখির কলরব, হরিণের জলপান – সব মিলিয়ে এক অপার্থিব পরিবেশ। কিন্তু আজকের দিন অনেক আলাদা। প্রকৃতির ধ্বংস, বনভূমির উজাড়, মানুষের বেদনা – সবই কবিকে আক্ষেপে ভরিয়ে তোলে।
কবি প্রশ্ন করছেন – পরবাসী কবে তার স্বভূমি গড়ে তুলতে পারবে? এই প্রশ্নের উত্তর কবিতায় নেই। বরং, কবি প্রকৃতির ধ্বংসের প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং মানুষের প্রতি সতর্কবার্তা জানিয়েছেন।
এই কবিতা আমাদের মনে প্রশ্ন জাগিয়ে তোলে – আমরা কি করছি আমাদের প্রকৃতির সাথে? আমরা কি ভাবছি না আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা?
কবির এই কবিতা আমাদের সকলকেই ভাবতে বাধ্য করে যে, আমাদের প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত। আমাদের সকলেরই মিলে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করা উচিত।